১। রোদ আর ধুলো-বালি উপেক্ষা করে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকি। দশ মিনিট- বিশ মিনিট। বাস আর আসে না। যখন রাগ করে হাঁটা শুরু করি- তখন একের পর এক বাস আসা শুরু করে। চলন্ত বাসে তো আর লাফ দিয়ে ওঠা যায় না। প্রতিদিন একই ঘটনা।
কিন্তু আজ রাগ করেই সিনেমার নায়কদের মতো চলন্ত বাসেই লাফ দিয়ে উঠে পড়েছি। অনেক দূর যাওয়ার পর আবিস্কার করলাম ভুল বাসে উঠেছি। খুব রাগ লাগল। এই রাগ যে কার উপর জানি না। যাত্রাবাড়ি থেকে অনেক রাগ নিয়ে বাসের ভাড়ার চেয়ে দশ গুন বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশায় করে বাসায় ফিরলাম।
২। বুদ্ধদেব বসু আমার প্রিয় সাহিত্যিক।
রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর মতো সব্যসাচী প্রতিভা আর কেউ আসেনি। তার 'আমার যৌবন' বই আমার খুব ভালো লেগেছে। তিনিই প্রথম শার্ল বোদলেয়রের কবিতা অনুবাদ করেন। জীবনানন্দ দাশের প্রকৃত মূল্যায়ন বুদ্ধদেব ছাড়া তৎকালীন কেউই করেনি।
প্রতিভা বসু ছিলেন তার স্ত্রী। প্রতিভা বসুর লেখা আত্নজীবনী "জীবনের জলছবি"র মাধ্যমে বুদ্ধদেবকে ভালোভাবে চেনা যায়।
৩। অনেক বছর আগে আব্বাকে বলেছিলাম- আমি মারশাল আর্টটা আর বক্সিং শিখতে চাই ।
আব্বা বললেন- ওসব শিখতে চাস কেন? সেলফ ডিফেন্স, না গুন্ডামি করবি?
আমি একটু হেসে বললাম-যারা অন্যায় করে আমি তাদের শিক্ষা দিতে চাই।
আব্বা একটু করুন হাসি দিয়ে বললেন- সব অন্যায় কি শুধু গায়ের জোরে ঠেকানো যায়? আগে নিজে ন্যায়বান হতে হয়, সাহসী হতে হয়, মানুষকে ভালোবাসতে হয়। মানুষ কোথা থেকে জোর পায় জানিস? ভালোবাসা থেকে। মা-বাবা কে যদি ভালোবাসিস, ভাই-বোনদের যদি ভালোবাসিস, সবাইকে যদি ভালোবাসিস তাহলে দেখবি গায়ের জোরের তত দরকার হয় না। মনে রাখবি- মানুষের সবচেয়ে বড় অস্ত্র'ই হচ্ছে ভালোবাসা।
৪। অনেক মানুষই দাবি করেছে যে তাদের জীবন পরিবর্তন হয়েছে একটা বিশেষ বই পড়ে। আজিব ব্যাপার, একটা বই কি করে মানুষের জীবন বদলে দেয়?
৫। ডারউইন যা বলেছেন, তা যদি সত্যি হয় তাহলে এতকাল ধরে আমরা যা সত্যি বলে জেনে এসেছি তা সব মিথ্যে। ডারউইন বলেছেন- এই যে জীবজগৎ, এই যে সব গাছপালা, পশুপাখি, মানুষ এর কিছুই আল্লাহ সৃষ্টি করেন নি? মুসলমানরা মনে করেন আল্লাহ, হিন্দুরা মনে করেন ভগবান আর খ্রিস্টানরা মনে করেন গড। তিনিই সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু ডারউইন বলেছেন, কোনও পরমেশ্বরই এসব সৃষ্টি করেননি। প্রকৃতির সব কিছুই নিজস্ব সৃষ্টি।
বিবর্তনবাদ নামে ডারউইন একটা তত্ত্বের কথা বলেছেন। মানুষ ও প্রানীজগৎ বিবর্তনবাদের মধ্য দিয়েই চলছে। সেখানে পরমেশ্বরের কোন ভূমিকা নেই। এখন, ডারউই্নের কথা মানতে গেলে কোরআন, বাইবেল সব মিথ্যা!
ইসলাম ধর্মের বয়স তেরো শো বছর। মহাম্মদ আল্লাহর বানী প্রচার করলেন। 'আল্লাহ' সর্বশক্তিমান। মানুষের পাপ-পূর্নের নিরামক। তাহলে তেরো শ' বছর আগেকার মানুষ গুলোকে সৃষ্টি করলো কে? কিংবা এতদিন আল্লাহ কোথায় ছিলেন?
৬। ডারউইনের আর একটা তত্ত্ব হচ্ছে- 'স্টাগল ফর একজিসটেন্স'। পৃথিবীতে যত মানুষ জন্মায়, পঁচিশ বছরে তার সংখ্যা দ্বিগুন হয়ে যায়। বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধে বহু মানুষ ও প্রানী মারা যায়। এর মধ্যে যারা বাঁচে, তারাই টিকে থাকে। সারভাইভাল অফ দা ফিটেস্ট! সমস্ত প্রানী কুলের মধ্যে অবিরাম জীবন যুদ্ধ চলছে। যারা জয়ী হয়, শুধু তাদেরই অধিকার আছে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার। তাহলে ঈশ্বর-আল্লাহ , যে পিতার মতন আমাদের রক্ষনাবেক্ষণ করেছেন বলে এতকাল জেনে এসেছি, তা ঠিক নয়? মানুষের সৃস্টির সঙ্গেও আল্লাহর কোনও সম্পর্ক নেই। শিব, কালী, দুর্গা, গনেশ, বিষ্ণু-ইত্যাদি এইসব মূর্তির কোনও কিছুর মধ্যেই ঈশ্বরের প্রকাশ নেই। সবই মানুষের কল্পনা। সেই কল্পনা দিয়ে মানুষ কতকগুলো পুতুল বানিয়ে পুঁজো করে।
ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজের আমার প্রিয় শিক্ষক বললেন- ''বিবর্তনের কথা বাদ। ডারউইন এর খপ্পরে পড়ার কোনও দরকার নেই। নামাজ পড়ো। রোজা রাখো। সৎ থাকো আর বেশি বেশি করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করো।''
আমার গত এক সপ্তাহ ধরে মাথার মধ্যে যেন ঝড় বইছে সর্বক্ষন। এক এক সময় চক্ষে অন্ধকার দেখি। মনে হয় পাগল হয়ে যাবো। পাগল হওয়ার চেয়ে ঈশ্বরে বিশ্বাসী, ভক্ত হয়ে থাকা অনেক ভালো। বাঁচতে হবে তো। বেঁচে থাকাটাই বড় কথা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:১২