গতকাল সুরভিকে নিয়ে ইফতারী করতে বুমারসে গিয়েছিলাম। প্রচুর মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, বসার জায়গা নেই । যাই হোক, আমাদের টেবিলে এক পিচ্চিকে বসিয়ে পিচ্চির মা গিয়েছে ইফতারী আনতে। পিচ্চির মা আমাদের উপর দায়িত্ব দিয়ে গেছেন- পিচ্চিকে দেখে শুনে রাখতে। বাচ্চাটা খুবই কিউ। খুব মায়া কাড়া চেহারা। ইফতারী আনতে যাওয়া মানে যুদ্ধে যাওয়া এমন অবস্থা। সেখানে প্রচন্ড ভিড়। যাই হোক, ভদ্রমহিলা ইফতারী আনতে সক্ষম হয়েছেন।
মহিলা ফিরে এসে আমাদের ধন্যবাদ জানালেন। আযান দিতে এখন পনের মিনিট বাকি। মহিলা হঠাত বললেন, আমার একটা ওষুধ কিনতে হবে। ওষুধ খেয়েই ইফতারী খেতে হবে। আমি যাবো আর আসবো। আপনারা মেয়েটাকে দেখে রাখুন। মহিলা ছুটে চলে গেলেন। বাচ্চাটা এসে আমার পাশে বসলো। আমি বললাম, তোমার নাম কি? বাচ্চা বলল- রাইবা। আযান দিয়ে দিল। রাইবার মা ফিরে এলো না। রাইবার মা'র কিনে আনা একগাধা ইফতারী টেবিলেই পরে থাকলো।
আমরা রাইবাকে নিয়ে ইফতারী শেষ করলাম। সুরভি রাইবাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিল। আমি রাইবাকে বললাম, তুমি ভয় পেও না, মন খারাপ করো না। কিছুক্ষনের মধ্যেই তোমার মা চলে আসবেন। আর যদি না-ও আসে, তাহলে তোমার কোনো সমস্যা নাই। আমি তোমাকে নিয়ে যাবো আমার বাসায়। আমি দুষ্টলোক নই। রাইবা'র কাছ থেকে জানলাম- তার বাবা মালোশিয়া থাকে। বাসা খিলগা। রাইবার আর কোনো ভাই বোন নেই।
পুরো বুমারস খালি হয়ে গেল। রাইবা'র মা আর ফিরে এলেন না। আমি আর সুরভি এক ঘন্টা বসে থাকলাম। আমি মন স্থির করে ফেললাম- রাইবাকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো। তবে পুরো ঘটনা পুলিশকে জানিয়ে রাখবো। রাইবা মন খারাপ করে গেটের দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝাই যাচ্ছে মাকে দেখা গেলে রাইবা ছুটে দৌড় দিবে মার দিকে।
রাইবাকে নিয়ে বুমারস থেকে নিচে নামলাম। কি করবো(?) বুঝতে পারছি না। বাসায় নিয়ে যাবো, না আরও কিছু সময় অপেক্ষা করবো। ঠিক এই সময় দেখি রাইবা'র মা কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসছেন। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে কি কান্না! জানতে পারলাম, ওষুধ কিনতে ফার্মেসী গিয়ে হঠাত অজ্ঞান হয়ে যান। কয়েকজন ধরাধরি করে ফার্মেসীতেই শুইয়ে রাখেন। মাথায় পানি দেন। জ্ঞান ফিরলেও, শারীরিক দুর্বলতার কারনে উঠতে পারছিলেন না।
মেয়েকে মা'র কোলে ফিরিয়ে দিলাম। ভদ্রমহিলা সুরভিকে জড়িয়ে ধরে কি কান্না! আমাদের তার বাসার ঠিকানা দিলেন। এবং জোর করে আমাদের কাছ থেকে কথা নিলেন- একদিন আমরা যাবো। যেতেই হবে। তাদের রিকশা করে দিলাম। রাইবা তার চোখের পানি মুছতে মুছতে আমাদের টা টা দিলো। রাইবার মা-ও চোখের পানি মুছতে মুছতে আমাদের টাটা দিলেন। আমরাও রাইবা ও তার মা উদ্দ্যেশে হাত নাড়লাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:৫৭