মধ্য দুপুর।
মধ্য দুপুর সময়টা খুব অদ্ভুত! বুকের মধ্যে যেন কেমন করে! সূর্য ঠিক মাথার উপর থাকে বলে- নিজের ছায়াও খুঁজে পাওয়া যায় না। চারপাশে যা দেখা যায় সবই বড় ভালো লাগে। অথচ বুকের মধ্যে কেমন অস্থিরতা কাজ করে।
ঢাকা শহরের রাস্তার পাশের চায়ের দোকান গুলো আমার খুব প্রিয়। আসলে এই চায়ের দোকান গুলো জ্ঞানের ভান্ডার। আমি নিয়মিত রাস্তার পাশের চায়ের দোকান গুলোতে যাই। চা খাই আর আশে পাশের লোকজনদের কথা গুলো খুব মন দিয়ে শুনি। কত রকম বিষয় নিয়ে যে আলোচনা হয়- তা চায়ের দোকানে না গেলে বুঝা সম্ভব নয়। এখান থেকেই আমি আমার লেখার সরঞ্জাম পাই।
এক সময় আমার খুব ইচ্ছা ছিল- বড় করে একটা চায়ের দোকান দিবো। সারাদিন দুনিয়ার মানুষজন এসে আমার দোকানে চা খাবে-গল্প করবে। আর আমি খুব মন দিয়ে তাদের গল্প শুনব। এই ইচ্ছাটা আমার এখনও আছে। টাকার অভাবে ব্যবস্থা শুরু করতে পারছি না।
আজ দুপুরবেলা চারিদিকে কাঁচের মতোন স্বচ্ছ রোদ ছিল। আমি রোদে পুড়তে পুড়তে রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে এক কাপ চা খেলাম। খুব মুগ্ধ হলাম। দারুন চা। আশ্চর্য ব্যাপার সাথে সাথে আমার রবীন্দ্রনাথের কথা মনে পড়ল। আমার এক সময় ধারনা ছিল রবীন্দ্রনাথ চা খেতেন না। বিশেষ করে রাস্তার পাশের কোনো দোকান থেকে। রবীন্দ্রনাথ কি কখনও এমন কড়া রোদে মধ্যদুপুরে রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খেয়েছেন? খেলেও আমার মতো মুগ্ধ কী হয়েছেন?
আমার চা খাওয়া শেষ। আরেক কাপ খাবো কিনা ভাবছি- ঠিক এই সময় আমার সামনে একটি ছেলে এসে দাঁড়ালো। হাসিখুশি মুখ। কাধে ক্যামেরার ব্যাগ । ছেলেটিকে আমার খুব অস্থির মনে হচ্ছিল। ছেলেটির সামনে দিয়ে একটা মেয়ে যাচ্ছিল । মেয়েটিকে খুব রুপসী বলা যাবে না। আকাশি রঙের শাড়ি পরা। চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া। দুই হাত ভরতি কাচের চুড়ি আর কপালে বড় একটা টিপ।
ছেলেটা, মেয়েটিকে বলল- শুনুন।
মেয়েটি এক আকাশ অবাক দৃষ্টি নিয়ে ফিরে তাকালো।
ছেলেটি বলল- আচ্ছা, ক’টা বাজে বলেন তো?
মেয়েটি বলল, আমার হাতে ঘড়ি নেই, জানি না কয়টা বাজে।
ছেলেটি বলল- আহ হা আন্দাজে বলুন।
মেয়েটি বলল- আমার আন্দাজ ভালো না।
ছেলেটি বলল- আচ্ছা, মোবাইলে সময় দেখে বলুন।
মেয়েটি হেসে বলল- আমার মোবাইল আজ ভুলে বাসায় রেখে এসে পড়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৫