ভোর সাত টায় ঘুম থেকে উঠেছি।
অনেক সময় নিয়ে দাঁত ব্রাশ করেছি। মাড়ি ছিলে গেছে। গোসল শেষ করে, নাস্তা না করে বাসা থেকে বের হয়েছি। ফেসওয়াশ মাথায় মেখেছি আর শ্যাম্পু মুখে মেখেছি। এই বোকামির জন্য নিজের উপর নিজের খুব রাগ লেগেছে। এই রাগের কারনে সকালে বাসা থেকে নাস্তা না খেয়ে বের হয়েছি। নিজেকে শাস্তি দিয়েছি। সকাল সাড়ে ৮ টায় বাসা থেকে বের হয়েছি। ভেবেছিলাম আজ সারাদিন বোটানিকেল গার্ডেনে থাকব। বাসে উঠেছি কিন্তু কাওরান বাজার গিয়ে বাস থেকে নেমে পড়েছি।
সকাল দশটায় রিহাবের অফিসে গেলাম।
যার কাছে গেলাম সে দেখা করে না আমার সাথে। এর আগে অনেকবার এসেছি- কিন্তু দেখা করে না। পিয়নকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে সে মিটিং এ আছে। মিটিং কখন শেষ হবে ঠিক নাই। বুঝতে পারছি, পুরাই মিথ্যা কথা। বেশির ভাগ অফিসের লোকজন দেখা করে না। গেলেই পিয়ন বলে, স্যার মিটিং এ আছে। মিটিং কখন শেষ হবে ঠিক নাই। অর্থ্যাত আপনি চলে যান। সব অফিসের অবস্থা এই রকম। একই ডায়লগ। স্যার মিটিং এ, অথবা স্যার বিদেশে গেছে। আমার প্রচন্ড রাগ লাগে। ইচ্ছা করে তাদের কলার চেপে ধরি।
চলে গেলাম ধানমন্ডি।
সেখানে বিরাট জ্যাম। অসংখ্য মানুষ। সবাই নমিনেশন ফরম সগ্রহে ব্যস্ত। যারা নমিনেশন ফরম নিতে আসছে তারা সাথে করে বিরাট এক দল নিয়ে আসছে। অসংখ্য বাইক। পিক-আপে সাউন্ড সিস্টেম। খুব গান বাজনা হচ্ছে। হিন্দী গানের সুর নকল করে মনোনয়ন প্রত্যাশীকে নিয়ে লেখা গান। সবার হাতে পোস্টার, ফেস্টুন আর ব্যানার। আমি মিশে গেলাম এই ভিড়ের মধ্যে। আমিও তাদের সাথে স্লোগান দিচ্ছি। নৌকা-নৌকা করে চিল্লাচ্ছি। গাড়ি, বাস আর বাইকের বিকট হর্ন, মানুষের গ্যাদারিং। খুব'ই বাজে অবস্থা।
নমিনেশনওয়ালাদের সাথে মিলে, আমি চোখ মুখ খিচিয়ে স্লোগান দিচ্ছি। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম- সবাই আমার দিকে কেমন চোখে যেন তাকাচ্ছে। মনে হয় আমার নৌকা-নৌকা চিৎকার তাদের ভালো লেগেছে। দুপুর দুইটা বাজে। খুব ক্ষুধা লেগেছে। অবশ্য কিছুক্ষন আগে সুরভি ফোন করে বলেছে- বাসায় চলে আসো। ডাল-ভাত যা রান্না করেছি খেয়ে যাও। আমি মানা করে দিয়েছি। ধানমন্ডি থেকে বাসায় যেতেও আড়াই ঘন্টা সময় লাগবে। যাই হোক, ক্ষুধার্থ পেটে চিৎকার দিয়ে আরাম পাচ্ছি না। মাঠে নামতে হয় ভরা পেটে। পকেটের অবস্থাও ভালো না। কি যে করি!
এমন সময়, একজন আমার কাছে এসে বলল, আপনি রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবেন, না আপনার জন্য পার্সেল? আমি খুব ব্যস্ততার সাথে বললাম। স্লোগান রেখে যাই কি করে? পার্সেল। পার্সেল। কিছুক্ষনের মধ্যে এক লোক আমার হাতে এক বাটি মোরগ পোলাউ আর একটা পানির বোতল দিয়ে গেল। অনেকের সাথে মিলে-মিশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমরা খেয়ে নিলাম। আমরা সাধারন কর্মী। আমাদের অনেক দায়িত্ব। খেয়ে-দেয়ে আমি ধানমন্ডি থেকে চলে এলাম। সাইন্স ল্যাবের ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে ভাবলাম- পকেটে ত্রিশ হাজার টাকা থাকলে আজ ঠিকই একটা নমিনেশন ফরম কিনে নিতাম।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪২