এই সমাজে কারো প্রতি কারো বিশ্বাস নেই।
আজ থেকে পনের বা বিশ বছর পর কি হবে তা ভাবতে গেলে অস্থির লাগে। বর্তমানে নিজের পরিবারের বাইরে কাউকে বিশ্বাস করতে গেলেই ঠকতে হয়। এই যে কারো প্রতি কারো বিশ্বাস, ভালোবাসা আর সম্মান নেই তাহলে এই সমাজ-দেশ চলছে কি করে? আজকের শিশুরা ভবিষ্যতে কি করবে? কিভাবে বাঁচবে এই নোংরা দেশে? নোংরা সমাজে? এখনই একজন আরেকজনকে দিনের বেলা কুপিয়ে মেরে ফেলছে। ধর্ষন করছে। ধর্ষন করেও থামছে না মেরে ফেলছে।
আমার নিজের কথাই বলি, সেদিন দুপুরে মগবাজার মোড় দিয়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলাম। হঠাত একলোক বলল, ভাই কেমন আছেন? কি খবর? আমি লোকটিকে চিনতে পারছি না। পরিচিত হলে অবশ্যই চিনতে পারতাম। লোকটি আমার সাথে হ্যান্ডশেক করার উদ্দেশ্যে হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। আমি যা বুঝার বুঝে গেলাম। লোকটি এখন আমার মোবাইল, ম্যানিব্যাগ নিয়ে যাবে। নিশ্চয়ই আশেপাশে তার আরও লোকজন আছে। একটু পর লোকটি আমার সমস্ত কথা বলে দিল। এমন কি আমার বাসার নম্বর সহ। বুঝলাম লোকটি এক সময় আমাদের এলাকায় দীর্ঘদিন ছিল। লোকটি ছিনতাইকারী নয়। অথচ আমি কি সব ভেবে নিলাম। ছিঃ। এখন নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে। কেন আমি অপেক্ষা না করে লোকটির সম্পর্কে আগের খারাপ ধারনা করলাম?
মগবাজার মোড় থেকে মালিবাগ আসতেই আমি এক পরিচিত লোক দেখলাম। উনি আমার এক শিক্ষকের বন্ধু। আমি দেখেই চিনতে পারলাম। বহু বছর আগে একবার সে আমার বাসায়ও এসেছিলেন। নানান পদের রান্না করে তাদের খাইয়ে ছিলাম। সুরভির রান্নার খুব প্রশংসা করেছিল। আমি সালাম দিয়ে বললাম, স্যার কেমন আছেন? ভদ্রলোক ভয় পেয়ে গেলেন। যেন আমি একটু পরেই বলবো, পকেটে কি আছে বের করেন। লোকটি ভয় পেলে দ্রুত চলে যাচ্ছিল। আমার নিজের কাছে নিজের খুব লজ্জা লাগলো। আজকাল সালাম দিয়ে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করলেও সবাই কেমন ভয়ে থাকে। একটু আগে মগবাজার মোড়েও এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে আমার সাথে। কারো প্রতি কারো বিশ্বাস নেই, ভরসা নেই।
সকালবেলা পরিস্কার জামা কাপড় বের হয়েছি। ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি। বাস ধরবো। আমার সামনে থাকা একলোক একদলা থু থু ফেলল। কয়েক ফোটা থুথু উড়ে এসে আমার গায়ে লাগলো। আমার প্রচন্ড রাগ লাগলো। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। এতই রাগ হলো যে, মনে মনে দুইটা কুৎসিত গালি দিয়ে দিলাম। ঠিক এ ঘটনার দুই ঘন্টা পর আমি নিজেই থু থু ফেললাম। আমার পেছন থেকে আসা এক লোকের গায়ে থু থু লাগতে গিয়েও লাগেনি। এই লোকটিও নিশ্চই মনে মনে আমাকে গালি দিয়েছে। আসলে আমরা নিজের ভুল গুলো চোখে দেখি না। অন্যের ভুল গুলো আমাদের চোখে খুব ধরা পড়ে। তাই আগে নিজের সমস্ত ভুল গুলো শুধরানো উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:২১