অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি- আমাদের এলাকায় কোনো গাছ নেই।
আমি যখন ছোট ছিলাম, প্রতিটা বাড়িতে অনেক গুলো করে গাছ ছিলো। এমনকি অনেক বাড়িতে আমি কুয়া পর্যন্ত দেখেছি। আমাদের পাশের বাসায় অনেক গাছ ছিলো। আম গাছ, জাম গাছ, জাম্বুরা গাছ, কামরাঙ্গা গাছ এবং কাঠাল গাছ। আমি নিজে জাম খেয়েছি। বেশ স্বাদ ছিলো। মোটা মোটা জাম। কামরাঙ্গা গুলো ছিলো ভীষন মিষ্টি। এত মিষ্টি কামরাঙ্গা আমি আর কোথাও খাই নাই। পাশের বাসার বাউন্ডারির দেওয়ালে উঠে আমি নিজের হাতে আম, জাম আর কামরাঙ্গা খেতাম। অবাক বিষয় এখন সে বাড়িতে কোনো গাছ নেই। তারা সমস্ত গাছ কেটে সেখানে পাচ টা বিল্ডিং তৈরি করেছে।
আমাদের সামনের বাড়িতে ছিলো পেয়ারা গাছ।
আমি লুকিয়ে লুকিয়ে সেই পেয়ারা খেয়েছি। পেয়ারার গুলো দারুন স্বাদ ছিলো। বাড়িটার নাম আমরা দিয়েছিলাম, পেয়ারা বাড়ি। পেয়ারা বাড়ির পাশেই ছিলো একটা মেসবাড়ি। সেই মেসবাড়িতে ডালিম গাছ ছিলো। আমি দেয়ালের উপর উঠে ডালিম সংগ্রহ করতাম। সেই ডালিম স্কুলে টিফিনের সময় খেতাম। এই মেসবাড়িতে চারটা আম গাছ ছিলো। কত আমি খেয়েছি। জাম গাছও ছিলো। এখন এই মেস বাড়িতে দুটা বিশাল বিল্ডিং উঠেছে। আমাদের পুরো এলাকা গাছ শূন্য! মানুষের কথা কি বলব আমাদের বাড়িতেই গাছ নেই। গাছ ছাড়া বাঁচবো কি করে আমরা? আমাদের গ্রামে অনেক গাছ ছিলো। এখন গ্রামেও গাছের সংখ্যা কম।
এখন আমাদের এলাকায় কোনো টিনসেড বাড়ি নেই।
নেই কোনো গাছ। নেই পুকুর, নেই কুয়া। নেই খোলামেলা কোনো জায়গা। জানালা খুললে বা ব্যলকনিতে দাঁড়ালে আকাশ দেখা যায় না। দেখা যায় পাশের বাসার ব্যলকনি অথবা রান্নাঘর। যারাই বাড়ি করেছে, এক হাত জায়গা ছাড়েনি। একটা বাড়ির সাথে আরেকটা বাড়ি লাগানো। সত্য কথা বলি, আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। ছাদে গেলেও লাভ নাই। চারপাশে বড় বড় বিল্ডিং। আকাশটা পর্যন্ত ঢেকে গেছে। শুধু আমাদের এলাকা না, ঢাকা শহরের বেশির এলাকায় একই দশা। গাছ নেই। চিপা চিপা গলি। গলিতে আবার ভ্যান গাড়িতে সবজি বিক্রি করছে, মাছ বিক্রি করছে। রিকশা, বাইক আর গাড়িতে সারাদিন ভর জ্যাম লেগেই থাকে। সুখী দেশের তালিকায় আমাদের দেশের নাম নেই। এক নম্বর তালিকায় আছে ফিনল্যান্ড। ফিনল্যান্ড দেশটির চার ভাগের তিন ভাগ হচ্ছে বনভূমি। গজব দেশের তালিকা করলে নিশ্চয়ই আমাদের দেশের নাম এক নম্বরে থাকবে।
কতদিন খালি পায়ে মাটিতে হাঁটি না।
ঘাস দেখি না। ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটি না। আমাদের এলাকায় কাচা রাস্তা নেই। গাছ দেখতে হলে, প্রান ভরে নি;শ্বাস নিতে হলে যেতে হবে বোটানিক্যাল গার্ডেন অথবা রমনা পার্কে। অবশ্য বোটানিক্যাল গার্ডেন বা রমনা পার্কে গিয়েও শান্তি নেই। সেখানে দুনিয়ার ইতর লোকের আনাগোনা। তারা পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে। ইতর লোক তো ব্লগেও আছে। যাইহোক, আমাদের এলাকায় কোনো কারনে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। বাড়ি করার সময় কেউ এক হাত জায়গা ছাড়েনি বরং রাস্তা থেকে আধা হাত জায়গা নিয়ে নিয়েছে। ঢাকা শহরের মানুষ গুলি আসলে অপরাধী। সবাই অপরাধী। ঢাকা শহরে সবাই সবাইকে ঠকাচ্ছে। একজন আরেকজনকে ঠকাতে পারলেই ভাবে জিতে গেছি। আলহামদুলিল্লাহ্।
আমাদের এলাকায় একটা কবরস্থান আছে।
মানুষ মরে গেলেও সেখানে কবর দেওয়া যায় না। ক্ষমতাবান কাউকে দিয়ে ফোন করাতে পারলে মৃত মানুষ কবর দেওয়া যায়। নয়তো অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে হয় লাশ। আমাদের এলাকায় চারপাশে শুধু রেস্টুরেন্ট। আর শপিং সেন্টার। আমার মনে হয় এলাকায় আগেই (ছোটবেলা) ভালো ছিলাম। সবাই সবাইকে চিনতাম। কারেন্ট চলে গেলে সবাই এক জায়গায় জোড়ো হয়ে গল্প করতাম। এখন আমি এলাকার কাউকে চিনি না। এত এত ফ্লাট। অসংখ্য মানুষ থাকে।এক ভাড়াটিয়া চলে যায় আরেক ভাড়াটিয়া আসে। নিজের এলাকায় নিজেকেই অপরিচিত বলে মনে হয়। দোকানদারকে চিনি না। রাস্তার মোড়ে যেসব বখাটে আড্ডা দেয় ওদেরও চিনি না। বখাটে তো দূরের কথা আমাদের এলাকার কাউন্সিলরকে চিনি না। এমপিকেও চিনি না। আমরা কেউ কাউকে চিনি না। অথচ একই এলাকায় থাকি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৪