ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ জীবন যাপনে খলিফাদের অনুসরণ করেন । রাতে একা একা হেঁটে বেড়ান। কোনো নাগরিক দেখা করতে চাইলে সহজেই দেখা করেন। লাখ লাখ ভক্তের কাছ থেকে আসা চিঠি পড়েন এবং এর উত্তর দেন। এসব চিঠির মধ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকতে পারে যা তার জীবনের জন্য হুমকি বলে আশঙ্কা করা হলেও দমে যান না তিনি। এ ব্যাপারে নিরাপত্তাকর্মীদের বিধিনিষেধও মানেন না। এ কারণে তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকে। নিজেকে জনগণের সেবক ভাবতেই ভালোবাসেন। মাহমুদ আহমাদিনেজাদ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই ইরানের সবচেয়ে দামি কার্পেটগুলো দান করেছিলেন তেহরানের একটি মসজিদে। তিনি অনেক সময় মিউনিসিপ্যালিটির পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সঙ্গে রাস্তাও পরিষ্কার করেন। শহরের যেখানে তার বাসা ও প্রেসিডেন্টের অফিস সেখানে অনেকবার প্রেসিডেন্ট সাধারণ পোশাকে নেমে পড়েছেন পরিচ্ছন্নতা অভিযানে। তার অধীনে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তির আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে একটি দলিলে সই করতে হয়। তাতে অনেকগুলো শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। দলিলে স্পষ্ট উল্লেখ থাকে, ওই ব্যক্তিকে হতে হবে দরিদ্র। মন্ত্রী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিজস্ব ও তার আত্মীয়-স্বজনের একাউন্টের ওপর নজরদারি করা হবে। পদ ছেড়ে যাওয়ার আগে অবশ্যই সততার স্বাক্ষর রাখতে হবে। ক্ষমতা গ্রহণের আগে প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ নিজেই প্রথম নজির হিসেবে নিজের সহায়-সম্পদের হিসাব দিয়েছেন রাষ্ট্রের কাছে।
আহমাদিনেজাদের সম্পদ বলতে ১৯৭৭ মডেলের একটি পিউজিওত- ৫০৪ গাড়ি। তেহরানের দরিদ্রতম এলাকায় বেড়ে ওঠা আহমাদিনেজাদ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন পুরনো একটি ছোট বাড়ি। তার একাউন্ট ছিল শূন্য। ওই একাউন্টে পরে ইউনিভার্সিটির বেতন হিসেবে ২৫০ ডলার জমা হয়েছে। এখনো পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়িতে বসবাস করেন অর্থনীতি, রাজনীতি এবং কৌশলগত দিক দিয়ে তেল সমৃদ্ধ দেশ ইরানের এ প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনো বেতনও নেন না।
সাধারণ কর্মচারীদের মতো প্রতিদিন একটি ব্যাগে করে অফিসে নিয়ে আসেন সকালের নাশতা। তাতে থাকে কিছু স্যান্ডউইচ বা রুটি, জলপাই তেল আর পনির। প্রেসিডেন্ট পত্নী নিজ হাতে প্রস্তুত করে দেন এ খাবার। প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ সরলতায় আরও নজির স্থাপন করেছেন। তার জন্য বরাদ্দ ‘দ্য প্রেসিডেন্টস এয়ারক্রাফট’ এর বদলে ব্যবহার করেন একটি মালবাহী বিমান। যাতে নেই কোনো বিশেষ ব্যবস্থা। প্রেসিডেন্টের ম্যানেজার বা সহকারীর অফিস বাতিল করেছেন। ফলে যেকোনো মন্ত্রী পূর্বানুমতি ছাড়াই তার অফিসে ঢুকে পড়তে পারেন। খরচ বাঁচানোর জন্য তিনি লাল গালিচা সংবর্ধনা, ফটোসেশন, ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন অথবা দেশের কোনো স্থান পরিদর্শনকালে বিশেষ কোনো সম্মান দেয়ার রীতি বন্ধ করেছেন। সরলতার আরও উদাহরণ রেখেছেন তিনি। তিনি বিছানার পরিবর্তে মেঝেতেই মাদুরের ওপর চাদর বা কম্বল বিছিয়ে ঘুমাতে পছন্দ করেন। বাড়িতেও তিনি মাঝে মাঝেই গেস্টরুমে মাদুর বিছিয়ে ঘুমান। নামাজ আদায় করতে যেখানে জায়গা পান সেখানে দাঁড়িয়েই নামাজ আদায় করেন। সামনের সারিতে দাঁড়াতেই হবে এমন কোনো তাগিদ তার নেই। আর খাবার খেতে দেখা যায় সবার সঙ্গে ডাইনিং রুমের মেঝেতে বসে। একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়কের এমনই হওয়া সাজে।
একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়কের এরকম যোগ্যতাই প্রথমে দরকার। যাকে দেখে জনগন ভয় নয় শান্তির পরশ পাবে।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প
তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন