ক্লাসে যাওয়ার সময় হয়েছে। তাহসিন দ্রুত নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। শার্টটা গায়ে দিতে গিয়েই বাঁধলো বিপত্তি। গতকাল নিউমার্কেট থেকে কিনেছে।অনেক পছন্দ হয়েছে তার। সাইজে একটু বড় ছিল। তাতে কি, টেইলরের দোকান থেকে ফিটিং করে নিলেই তো হবে। তাই সে পিছিয়ে পড়েনি।
টেইলরের দোকানে গিয়েছিল সে। পরিচিত টেইলর। তাকে দেখেই একগাল হাসি দিয়ে বলেছিল, 'আরে তাহসিন ভাই যে! প্যান্ট নাকি শার্ট? '
'শার্ট '
'ঠিক আছে রেখে যান। যাবার সময় নিয়ে যাবেন। '
'ফিটিং টা যেন সুন্দর হয়। '
এখন টেইলরের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। বিড়বিড় করে বলল, 'ব্যাটা ছাগল, কাজ তো কিছুই পারেনা। মাপ না নিয়ে বেশি পন্ডিতগিরি করতে চায়। একটা শার্টও সুন্দরভাবে ফিটিং করতে পারে না! '
যাবার সময় একটা ঝাড়ি দিয়ে আবার ফিটিং করাবে বলে মনস্থির করল।
দ্রুতগতিতে রিকশা ছুটে চলছে। টেইলরের দোকানের সামনে যেতে না যেতেই তাহসিন বলল, 'এই চাচা একটু দাঁড়াও। '
রিকশাচালক থামলো, তবে বিরক্তি নিয়ে মনে মনে বলল, 'যেখানে সেখানে শুধু থামাথামি। এইসব সাহেবদের সময়ের দাম আছে অথচ আমার সময়ের কি দাম নাই? '
বিরসমুখে টেইলরের দিকে তাকিয়ে বলল, 'ফিটিং তো কিচ্ছু হয়নি। কি করলেন? '
আবারও সেই একগাল হেসে বলল, 'কর্মচারী করেছে। কাজের চাপ থাকায় সে বুঝে উঠতে পারেনি। কিছু মনে কইরেন না।আপনার সিক্সপ্যাক বডির ফিটিং টা এইবার আমি করে দেব। '
কর্মচারী ফ্যালফ্যাল করে মালিকের দিকে তাকায়। কারণ কাজটা তার মনিবই করেছিল। অথচ দোষ চালান করে দিল তার উপর!
মাপ নিয়ে শার্ট ফিটিং করতে বসল দর্জি। আড়চোখে দেখে নিয়ে তাহসিনের রিকশা দোকান পার হতে না হতেই বিরক্তি প্রকাশ করে বলল, 'যে কদুর মতো বডি! ফিটিং পছন্দ হবে কি করে? '
মনিবকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য কর্মচারীও তাল মিলিয়ে বলল, 'ঠিক বলেছেন বস। এরা একেকজন নিজেকে সালমান খান ভাবে! '
ক্লাস শেষে বাসায় ফিরছে তাহসিন। আশেপাশে কোনো রিকশা চোখে পড়ছে না। তাই বাকি পথটুকু হেঁটেই যাওয়ার জন্য মনস্থির করল। ফুটপাট ধরে আনমনে কিছু ভাবতে ভাবতে হাঁটছে। হঠাৎ একটা ওড়নার আঁচলের ঝাপটা লাগল তার মুখে। কিছু বুঝে উঠার আগেই কেউ যেন কোমল কন্ঠে বলে উঠল, 'সরি '।
তাকিয়ে দেখল সুন্দরী একটা মেয়ে। মুখে কিছুটা অপ্রস্তুত ভাব। বয়সটা ঠিকঠাক অনুমান করতে পারলো না সে। ১৮-২০ বা ২০-২২ বছরের মতো হতে পারে। মেয়েটির সাথে আরও একটি মেয়ে আছে। সে যেন কান্ডকারখানা পরখ করে মুখ টিপে হাসছে। তাহসিনও কিছুটা থতমত খেয়ে গেল। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ' ইট'স ওকে। '
আর কোনো কথা হয়নি। যে যার পথে চলতে শুরু করল। কয়েক কদম সামনে এগিয়ে পেছন ফিরে তাকালো তাহসিন। শুনতে পেল অপর মেয়েটি সেই মেয়েটিকে ঠাট্টা করে বলছে, 'ছেলেটা কিন্তু বেশ হ্যান্ডসাম। '
পরক্ষণেই মেয়েদুটোও পেছনফিরে তাকালো। চোখে চোখ পড়তেই তাহসিন দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল।সোজা নিজ পথ ধরে হাটতে লাগল। আর পেছনে তাকালো না। মেয়েটা সুন্দরী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সে জীবনে তো অনেক সুন্দরী মেয়ে দেখেছে,তবে এই মেয়েটিকে কেন যেন তার বেশি ভালো লাগছে।এই এলাকা তার চেনাজানা। খুব খোঁজাখুঁজি করলে হয়তো সে মেয়েটিকে খুঁজেও পাবে। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করল ।নিজেকে এই বলে বোঝানোর চেষ্টা করল 'এখন কোনো মেয়ের পিছনে ছুটোছুটি করা যাবে না।' কিন্তু সে কি পারবে নিজেকে ঠিক রাখতে? এই বয়সটাই যে বড় গোলমেলে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৮ রাত ১০:৫১