somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্প : " ওরা ত্রয়ী "

১০ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যুদ্ধ শব্দটি শুনলেই যেন একটা বিভীষিকাময় গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির প্রতিচ্ছবি আমাদের মনের আয়নায় ভেসে ওঠে। যুদ্ধ শুধু মাঠে ময়দানে হয় না। কখনও কখনও নিজের মনের সাথেও যুদ্ধ করতে হয়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও যেন একটা যুদ্ধক্ষেত্র।এই যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হয়েই সবিতা, রিফা আর জিনিয়ার স্বপ্নজয়ের যাত্রা শুরু হয়েছে। সবাই জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে বিভোর।

সবেমাত্র ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস শুরু হয়েছে। তিন জন একই রুমের বাসিন্দা । ইতিপূর্বে কেউ কারও সাথে পরিচিত ছিল না। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে প্রত্যেকেই একে অপরের অনেক আপন হয়ে উঠেছে। ব্যাপারখানা ভেবে রিফা নিজেই অবাক হয়ে যায়। সে ভাবে এইতো কিছুদিন আগে কোথায় ছিলাম? আর এখন কোথায় আছি! এই প্রিয় বান্ধবীগুলোও কোথা থেকে জুটে গেল! জীবনটা তার অনেক আনন্দময় হয়ে উঠেছে এমন প্রিয় মানুষগুলোকে কাছে পেয়ে।

এদের মধ্যে জিনিয়া একটু বাচ্চা টাইপের। আবেগ তাকে একটু বেশিই স্পর্শ করে। অবশ্য মেয়েদের একটু আবেগ বেশি থাকে। হয়তো এই চঞ্চলতার কারণে জিনিয়াকে বেশি পছন্দ করে রিফা আর সবিতা। কাছের মানুষের ছোট ছোট অপ্রিয় আচরণগুলোই তাকে আরও কাছে টানে যখন সে দূরে থাকে। সবিতা তুলনামূলকভাবে তাদের চেয়ে একটু কম কথা বলে। আর অপরদের চেয়ে যেন একটু বেশিই সুন্দরী। রিফা সবাইকে মাতিয়ে রাখতে ওস্তাদ।কথা বলার সময় যেন সে হেসে কুটিকুটি হয়ে যায়। এসব কারণে অন্য বন্ধু -বান্ধবরাও অনেকেই তার সাথে মজা নিতে ছাড়ে না। এভাবে বেশ সরল পথেই অগ্রসর হচ্ছে তাদের ক্যাম্পাস লাইফ।তাদের সমস্ত কাজকর্ম যেন সুতোয় গাঁথা। পড়তে বসা,খাওয়া -দাওয়া, গান শোনা, মুভি দেখা, আড্ডা দেওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত কাজই যেন তারা একসঙ্গে করতো। এমনকি নাক ডেকে ঘুমানোর বেলাতেও এর ব্যতিক্রম হত না।সুযোগ পেলেই ক্লাসেও এ ত্রয়ী একসঙ্গে বসতো সবসময়।
একদিন তাদের ক্লাসেরই আরেক বন্ধু জনি টিপ্পনী কেটে জিজ্ঞেস করল, 'কিরে তোদের তিনজনের সংসার কেমন চলছে? ' গরগর করে আরও কয়েকটা আপত্তিকর বাক্য নিঃসৃত হল তার মুখ থেকে।সচরাচর বন্ধু -বান্ধবরা একসঙ্গে হলে যেমনটা হয়ে থাকে।
সবিতার অন্তরটা যেন জ্বলে উঠলো। জনি মাঝেমাঝেই তাদেরকে এভাবে জ্বালাতন করে। তিনজন পরস্পরের দিকে দৃষ্টিপাত করে চোখের ইশারায় সিদ্ধান্ত নিল জনিকে আজ একটু উচিত শিক্ষা দিতে হবে।
জিনিয়া তাকে বলল, 'এ্যাই তুই একটু এদিকে আয়। দরকার আছে। '

একটুখানি এগিয়ে আসতে না আসতেই কিছু বুঝে উঠার আগেই তিনজনকে তেড়ে আসতে দেখে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে পালাতে গিয়ে ধপাস করে পিছলে পড়ল মেঝেতে। খিলখিল করে হেসে উঠলো সবাই।
রিফা বলল, 'আবার বলবি? '
'না, আর কক্ষনো বলবো না। এইবারের মতো ছেড়ে দে। '
'ঠিক আছে। এবারের মতো মাফ করে দিলাম। '

ব্যথায় কুঁকড়াচ্ছে বেচারা জনি। তখন তার প্রতি মায়া হল ওদের। তাকে টেনে তুললো ওরা। শার্টের ধুলোবালিও ঝেঁড়েমুছে পরিষ্কার করে দিল। খুঁড়িয়ে হাটার ভান করল সে। যেন অনেক ব্যথা পেয়েছে পায়ে।তিনজনকে বোকা বানিয়ে খানিকটা দূরে গিয়ে আবার বাঁদরামি শুরু করে দিল। তিনজনের চোখই ছানাবড়া হয়ে উঠলো। ভেবেছিল ও সত্যিই অনেক ব্যথা পেয়েছে। কিন্তু এ কি! কিছুই তো হয় নি!

দিনের বেলা ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা নিয়ে রুমে রীতিমতো কথার আসর বসে এ ত্রয়ীর। এক জনকে ছাড়া যেন আরেকজন থাকতে পারে না। মনের যত কথা আছে এক এক করে সব প্রাণখুলে বলতে থাকে। এমনকি কার কোন ছেলেকে বা কেমন ছেলেকে ভালো লাগে এসব অনেক প্রাইভেসি দিয়ে রাখা প্রাইভেট কথাগুলোও গরগর করে বলে ফেলতে পিছপা হয় না কেউ!

এভাবে বেশ সানন্দেই তাদের কয়েকটা বছর কেটে গেল। কিন্তু ইদানীং তাদের মধ্যে আগের সেই প্রাণচাঞ্চল্য যেন আর নেই। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। আচার আচরণেও কৃত্রিমতা ফুটে উঠে যা রিফা একদমই পছন্দ করে না। পরস্পরের প্রতি আন্তরিকতারও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতো চেনা এই মানুষগুলোকে এখন যেন অনেক অচেনা মনে হয়।অনেক দূরের কেউ। হয়তো কখনও তাদেরকে অসহনীয়ও লাগে। কোনো জানা অথবা অজানা কারণে তিনজন এখন আর একরুমে একসঙ্গে নেই। প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা কক্ষে থাকে এখন। একে অপরকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

প্রায় ১.৫ -২ বছর হল সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। নিজের মতো করে সংসারও গুছিয়ে নিয়েছে। কোনো বন্ধুবান্ধবের সাথে আর খুব একটা যোগাযোগ হয় না। অবসর সময়ে রিফার প্রিয় সঙ্গী চায়ের কাপ। গ্রীন টি তার ফেভারিট। চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে সে হারিয়ে যায় গভীর স্মৃতির সাগরে। মনে পড়ে ক্যাম্পাস জীবনের নানান ঘটনা যা স্মৃতির ঝুলিতে সঞ্চিত হয়ে আছে। তিন বান্ধবীর খুনসুটিতে মেতে উঠা। এখনও ঘটনাগুলি তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে।ইচ্ছে করে ওদেরকে একটু ছুঁয়ে দিতে। আবার সেই দিনগুলো ফিরে পেতে। কিন্তু তা কি আর আদৌ সম্ভব হবে? কত বিচিত্র মানুষের জীবন!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:২৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×