তোমার বিয়ের ছবি দেখলাম
--------- ড. রমিত আজাদ
মাঝে মাঝে তোমাকে দেখতাম,
কখনো চলার পথে, কখনো দালানের সিঁড়িতে,
কখনো বা জারুল গাছের নীচে।
চঞ্চলা তবু নিশ্চলা এক পারসিক প্রসূন।
তবে ঐ নিয়ে ভাবিনি কখনো,
মাথাতেই আসেনি,
ভাববার অবকাশই বা ছিলো কোথায়?
সব কিছুই হাওয়ায় মিলিয়ে যেত,
যদি তুমি সেদিন না আসতে।
জানিনা কোন প্রহর ছিলো ঐটি,
ক্লান্ত দুপুর, নাকি পড়ন্ত বিকেলে?
আধুনিক দালানে লগ্ন বোঝা যায়না।
তোমার বান্ধবী ছিলো সাথে,
একা আসতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলে হয়তো।
আমি সেদিন বুঝতে পারিনি তোমার নয়নের ভাষা।
শুধু দেখেছিলাম, তুমি পিঙ্গলনয়না।
তারপর থেমে থেমে মাঝে মাঝে আসতে,
মুখে থাকতো কিছু মামুলি কথা,
অলংকারহীন কান, গলা, হাত
আটপৌরে তোমার মতো,
তোমার প্রসঙ্গ গুলোও ছিলো ভানশূণ্য নিরলঙ্কার।
মাঝে মাঝে স্পন্দিত তোমার পিঙ্গলনয়ন দুটো
কিছু হয়তো বলতে চাইতো,
হয়তো বলতে চাইতো,
"তুমি কি কিছুই বোঝনা? সব কথা মুখে বলা যায়?"
এতো কিছুর পরেও বুঝতে পারিনি তোমার মন,
পুরুষের অন্তর, সে হয়তো কমই বোঝে।
তোমার পিঙ্গল নয়ন তুলে, হয়তো তুমি বলতে চেয়েছিলে,
চলো আজ আমরা কল্পনাপ্রি হয়ে যাই,
চলো আজ আমরা দুটি চঞ্চল প্রজাপতি হয়ে যাই,
চলো আজ আমরা পৃথিবীটাকে নতুন করে দেখি,
চলো আজ আমরা তারার ভূবনে ছুটি,
দুটি আলোর কণিকা হয়ে।
একদিন তোমার বান্ধবী আমাকে বলেছিলো,
"আপনি কি কাজ আর কবিতা ছাড়া কিছুই বোঝেন না?
কেমন কবি আপনি?"
কি দুরন্ত অভিযোগ!
কি বুঝতে হবে সেটাই তো বুঝিনি!
অতঃপর কবিমন আলোড়িত হয়েছিলো, যখন জেনেছিলাম
তুমি আমার মনের দাবীদার।
তবে সেই আলোড়ন ছিলো মৃদু,
যা কোনদিনই ঝঁন্ঝা হয়ে ওঠেনি।
যামিনীর পর যামিনী তোমাকে নিয়ে ভাবিনি,
বুকে ব্যাথা হয়েও কখনো তীক্ষ্ণ বাজোনি,
শুধু মাঝে মাঝে ভেসে উঠতে মনে,
হাতির ঝিলের জলে ওঠা, অনুগ্র বুদবুদের মতো।
তোমাকে হারানোর কিছু ছিলোনা,
পাওয়ার বাসনাই যেখানে হয়নি!
আমি তোমার নাম আকাশেও লিখিনি,
বাতাসেও লিখিনি,
হৃদয়ে তো লিখিইনি।
অথচ সেই তুমিই আজ আমাকে কবিতা লেখালে!
সস্মিত অভিব্যক্তি প্রেমের সূচনা করে,
যার শেষ হয় অশ্রুপাতে,
সে অশ্রুপাত মিলন সুখেই হোক,
আর বিরহ দুখেই হোক।
আমি তোমার সস্মিত অভিব্যক্তিই বুঝতে পারিনি,
অশ্রুপাতের লব্ধি হবে কোথায়?
ছেলেবেলার রূপকথার গল্পে শোনা
সেই রাজকুমারীটির সাথে তোমার মিল ছিলো হয়তো,
কিন্তু আমি তাকে উদ্ধার করা সেই রাজকুমারটি হতে চাইনি।
ধীরে ধীরে সরে যেতে যেতে
একসময় কনীনিকার আড়ালে হারালে,
হয়তো নীরব অভিমান নিয়ে।
যার খোঁজও আমি রাখিনি।
আজ আকাশজালে আচমকা দেখলাম,
তোমার বিয়ের ছবি।
একদম অচেনা এক পরী, মধুর বিয়ের সাঁজে।
হঠাৎ বুকের মাঝে এমন হলো কেন?
কি যেন ছলকে উঠলো অকস্মাৎ!
এ কি ভয়ানক ক্ষোভ, নাকি তীব্র যন্ত্রণা?
নিদারূণভাবে ভাবতে চাইলাম,
ঐ লোকটির হাতে হাতে রাখা, এ তুমি নও,
অন্য, অন্য কোন নারী।
অলঙ্কারের ভারে নুয়ে পড়া,
রাঙা শাড়ীর সাঁজে, এ তুমি নও,
অন্য, অন্য কোন পরী।
আমাকে কেউ বুঝিয়ে বলতে পারবেন,
যাকে উপেক্ষা করেছি নিরন্তর,
আজ তার বিয়ের ছবি দেখে,
মন এমন চাইলো কেন?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৪