somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...(০৯)

১০ ই মে, ২০০৮ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...(০৯)

তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল,১৯৯৩)


‘পয়সা রোজগার করতে হলে মাথানীচু করতেই হয়। সত্যি সত্যিই হোক কি অভিনয় করেই হোক, যে যত বেশী রোজগার করে তার মাথা তত বেশী নোয়াতে হয়- যা বাইরে থেকে দেখা যায় না।
আমাদের মাথা কারো পায়ে শারীরিকভাবে নোয়াতে হয় না, নিজের আদর্শ ও আত্মাভিমানকে ছোট করে নিজেকে নীচু করতে হয়। সেটা একটা দারুণ কষ্টকর অভিজ্ঞতা। যার আত্মাভিমান যত বেশী, তাকে এই কষ্টটা তত বেশী করে বাজে। অভিনয়ের ছলে মাথা নোয়াতেও বাজে। অথচ মাথা না নুইয়ে এ দুনিয়ায় বাঁচাই মুস্কিল।’

- বুদ্ধদেব গুহ (একটু উষ্ণতার জন্যে)।

জীবিকার উপায় না থাকলেও প্রেম হয়তো আসে, কিন্তু প্রেমাস্পদ কাছে আসে কি না এর উত্তর যুবকের জানা নেই। এই অর্থহীন মূল্যবান জীবিকার খোঁজেই একদিন যুবকটি বেরিয়ে পড়লো। সে বেশ আগের কথা। প্রেমাস্পদ মেয়েটি রয়ে গেলো সেই পুরাতন বৃত্তে। এই বৃত্ত ভাঙার সাধ্য মেয়েটির আছে কি ? অথবা ঐ যুবকের ? তারা জানে না। হয়তো জানতে চায়ও না। প্রেমাস্পদকে খুব কাছে পাওয়ার জন্যে যুবক চলে গেলো অ-নে-ক দূরে। তারপর অ-নে-ক অ-নে-ক কথা রূপা। সে কি তোমার ভালো লাগবে ?
জীবিকার নতুন বৃত্তে জড়িয়ে পড়া অসহায় যুবকের মাথায় উপরের কথাগুলো এমোন তীব্র সত্য হয়ে ঝরতে লাগলো যে, সে বিদ্রোহী হয়ে ওঠতে চাইলো। কিন্তু এ যে অভিমন্যুর সপ্তবুহ্যের মরন-ফাঁদ ! উপায় না জেনে ঢুকলে আর বেরনো যায় না। উপায় যে তার জানা নেই ! ভেসে ওঠলো একটি মেয়ের মুখ। কী ভীষণ পবিত্রতায় মাখানো একটি মুখ ! পৃথিবী থেকে কত মনোরম দিন রাত্রি চলে যাচ্ছে, ক্ষয়ে যাচ্ছে তাকে ফাঁকি দিয়ে। মনে হলো সমস্ত পৃথিবীটাই তাকে প্রতারিত করলো, প্রতারণা করলো। ক্ষোভে দুঃখে বিদ্রোহী আত্মা ফেটে পড়তে চাইলো, সুতীব্র অভিমানে চিৎকার করে কাঁদতে চাইলো। কিন্তু এখানে কান্নার কোন স্থান নেই- কান্নাকে নির্দয় হাসির মুখোশ এটে ঢেকে রাখতে হয় !

‘এক মহরূম চলে মীর হম-হী আলম সে,
বরনহ্ আলমকো জমানহ্ নে দিয়া কেয়া কেয়া কুছ।’


(এক আমিই বঞ্চিত হয়ে চললাম, দুনিয়া থেকে ;
নয়তো কালপ্রবাহ দুনিয়াকে কতই না দিয়েছে ।) - মীর-তকী মীর।

থাক রূপা, এই যুবকের আবেগী কান্না শুনে তোমার কোন কাজ নেই। তার কান্নাকে ভাবাবেগ বলে তাচ্ছিল্যে উড়িয়ে দিলে সে আরো কষ্ট পাবে। সত্যিই তো মেয়েটিকে কাছে পাওয়ার জন্যে তার মনটা কেমোন যেনো হয়ে যায়। খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে যুবকটি বিড়বিড় করে পাঠ করে-

‘ তুমি কি কখনও শুনতে পাও তোমাকে আমি কত ডাকি, কতবার ডাকি। তুমি কি কখনও মাঝরাতে ঘুম ভেঙে উঠে জানালায় এসে দাঁড়াও, জানালায় দাঁড়িয়ে তারাভরা আকাশের দিকে চেয়ে তুমি কি একবারও জানতে পাও যে একজন হতভাগা লোক তার গোলমেলে রুক্ষ জীবনের মধ্যে এই রাতের জানালায় দাঁড়িয়ে তোমার দিকে, তোমার ধ্রুবতারার মত নীল ও শান্ত সহজ সত্তার দিকে চেয়ে আছে। সে তোমাকে তার জীবনে অনুক্ষণ যেমনভাবে উপলব্ধি করে, তোমার অস্তিত্ব তার সমস্ত মনকে যেমন করে প্রতি মুহূর্তে আচ্ছন্ন করে রাখে, তুমি কি তাকেও তেমনি করে উপলব্ধি কর ? না কি কখনও করো না... ? কখনও বোঝ না, সে তোমাকে এ জীবনে কি দিয়েছিল !’
-বুদ্ধদেব গুহ (একটু উষ্ণতার জন্যে)।

রূপা, ‘ জীবনে এমন অনেক থাকা থাকে যা থাকাকালীন তাদের অস্তিত্ব বা দাম আমরা বুঝতে পারি না। হয়ত কেউই পারে না। যখন তা আর আমাদের থাকে না, তখনই টুকরো টুকরো কথা, বাসি ফুলের গন্ধের মত চাপা স্মৃতি ফিরে ফিরে মনে আসে। মনে না আসলে, যে-কোনো বিচ্ছেদই অনেক সুখকর হত। কিন্তু আমরা যতই কঠোর স্বার্থপর বা আধুনিক হই না কেন, তবুও তা আসে। স্মৃতির ফেউ কিছুতেই দ্রুত ধাবমান অনিশ্চয় বর্তমানের পিছন ছাড়ে না।’
-ঐ।


চলবে...

আগের পর্ব (০৮): Click This Link
পরের পর্ব (১০): Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০০৮ রাত ১১:০৮
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×