somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রায়ের বাজার বধ্যভূমি, যেখানে আকাশ থমকে থাকে...

২০ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধ

এই সে বধ্যভূমি। ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের উষালগ্নে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনীর বাঙালি-বুদ্ধিজীবী নিধনের এ সেই স্থান। এখানেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বাঙালি জাতির বিবেক, চেতনা, মননশীলতা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক- এ মাটির শ্রেষ্ঠ সন্তান- বুদ্ধিজীবীদের। পরিত্যক্ত ইটের ভাটার এ বধ্যভূমি থেকে আজো ভেসে আসে শৃংখলিত হাত পা, উৎপাটিত চোখ, বেয়নেটবিদ্ধ শহীদের আর্তনাদ; শোনা যায় স্বাধিকার প্রত্যাশী প্রতিবাদী কণ্ঠের গোঙানি আর মানুষরূপী রক্তলোলুপ হায়েনার মারণ-উল্লাস। এখানে আকাশ থমকে আছে, বাতাস ভারী, পত্রপল্লব অনড়, শোক ভাষাহীন। এ নির্বাক শোক, আর বেদনারই বিমূর্ত প্রতীক এ স্মৃতিসৌধ।
“সোনার বাংলা আমরা গড়বোই”- এই হোক নাম জানা, অজানা অসংখ্য শহীদের অতৃপ্ত আত্মার প্রতি আমাদের শেষ অঙ্গীকার।
]


রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ এলাকায় বাঁ দিকের প্রধান গেট দিয়ে ঢুকতেই পাশে দেয়ালের গায় উপরের এই হৃদয়-নিংড়ানো লেখাগুলো সহজেই চোখে পড়বে সবার। তবে সোনার বাংলা গড়তে হলে প্রথমেই যে সেই সব কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ঘাতকদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় তুলতে হবে, সে কথাটি বধ্যভূমির দেয়ালে লেখা না থাকলেও স্বজনহারানো প্রতিটা বাঙালির বুকে উৎকীর্ণ হয়েই আছে। এই অমোচ্য দাগ সহজে মোছার নয়, তা সেই যুদ্ধাপরাধীরা যেমন ভালো করেই জানে, তেমনি আমাদের সরকারগুলো তা হৃদয় দিয়ে কতটুকু বোঝে বা বোঝার চেষ্টা করে, আমরা জানি না।


দেয়ালে উৎকীর্ণ লেখাগুলোর ঠিক নীচে দেয়া তথ্য-ফলক থেকে আমরা জানতে পারি, এই ‘রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি সৌধ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ৩০শে অগ্রহায়ণ ১৪০৩, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৬।’ এবং ৩০শে অগ্রহায়ণ ১৪০৬, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৯-এ তিনিই এর শুভ উদ্বোধন করেন।


স্থপতি মোঃ জামী আল-সাফী ও স্থপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ-এর প্রণীত স্থাপত্য-নক্সা অনুযায়ী গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের গণপূর্ত অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত এই রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধটির বিশাল ব্যাপ্তি নিয়ে ভিন্নমাত্রিক নির্মাণশৈলী এক অন্যরকম মনোবিক্ষেপ তৈরি করে দেয়। এক ভাবগম্ভীর শোক-বিহ্বলতা ছড়িয়ে আছে সবখানে। সৌধ এলাকায় পা রাখলেই বিশাল কালো শোকস্তম্ভটির মতোই এক বিশাল শূন্যতা এসে গ্রাস করে ! স্বজন-হারানো বাঙালির বুকের গভীরে রাখা পাথর-চাপা কষ্টগুলোই উন্মুক্ত হয়ে পড়ে যেন। আকাশে বাতাসে কেবল শূন্যতা আর শূন্যতা...।


গোটা আবহই বলে দেয়, এটা কোন হল্লা করার জায়গা নয়। মৌনতার গুঞ্জনে দোলে কষ্ট-ক্ষরণের জন্যই এখানে আসতে হয়। আর কান পেতে শুনতে হয় সেই কথাটি, প্রজন্ম’৭১-এর কষ্ট-মিছিলে একাত্তরের শহীদদের সন্তানেরা যে প্রশ্ন-ফলকটি গেথে দিয়েছে দেয়ালের গায়- ‘তোমাদের যা বলার ছিল বলছে কি তা, বাংলাদেশ ?’


ডান দিকের অন্য গেট দিয়ে বেরিয়ে এলে দেয়ালে আটকানো আরেকটি ফলক চোখে পড়বে। ওখানে লেখা- ‘রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ৩০শে অগ্রহায়ণ ১৪০০ বাংলা, ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৯৩ ইং।’


এটুকু পড়ে আমার মতো ইতিহাস-কানা’রা অবশেষে একটা বিভ্রান্তি নিয়েই ফিরবেন ! আর ভাববেন, দুই সময়কালের দুইজন প্রধানমন্ত্রী একই স্মৃতিসৌধের দুইবার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন ! কেন...?




(বধ্যভূমির আরো ছবি.. )
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×