somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ "বৈশাখ"

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে খুব ভোর বেলা ঘুম ভাঙলো রহিমের। সূর্যের আলো বের হবার আগেই তিন চাক্কার রিক্সা নিয়ে ধুলো ময়লার ঢাকা শহরে বেরিয়ে পড়লো। রাস্তা একেবারেই ফাঁকা ফাঁকা। পরিচিত শহরটা কেমন যেন আজকে একেবারেই অপরিচিত লাগছে। রাস্তার মাঝে মাঝে নতুন রং করা হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। লাল, হলুদ রঙ্গে সুন্দর করে কিছু কিছু জায়গাতে বড় বড় করে "শুভ নববর্ষ ১৪২১" লেখা। কিছু ছেলে পেলে দল বেঁধে এ গলি থেকে ও গলিতে দৌড়াদৌড়ি করছে। মনে হয় এই ছেলে গুলোই সারা রাত জেগে এসব আলপনা আঁকা আকি করেছে! রহিমের মাথায় এসব নিয়ে কোন চিন্তা নেই। মাথায় চিন্তা ছেলে-মেয়েদের নিয়ে। তিন দিন ধরে ছোট মেয়ে "সাবিনা" বায়না ধরেছে একটা নতুন জামার জন্য! রহিম কিছুতেই রাজি হয়না, কিন্ত মেয়ের চোখের অশ্রু দেখে মন কে কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারলোনা রহিম! তাই কথা দিয়েছে ১ লা বৈশাখের দিন অবশ্যই একটা নতুন বৈশাখী জামা কিনে দেবে সে। এই কথা শোনার পর সাবিনার চোখে মুখে যে আনন্দের জোয়ার দেখতে পেয়েছিল রহিম তাতেই রহিমের দুঃখ কষ্টের টানাটির সংসারের কথা মুহূর্তের মধ্যে মন থেকে মুছে গিয়েছিল। একটি বারের জন্য হলেও মনে কিছুটা স্বস্তির ছোঁয়া পেয়েছিল রহিম। কিন্ত পরক্ষনেই ছেলের এক জোড়া নতুন জুতা কেনার বায়নার কথা শুনে মুখটা সাথে সাথেই মলিন হয়ে যায় রহিমের! মেয়েকে নতুন জামা কিনে দিতে পারলে তাঁকে কেন নতুন জুতা কিনে দেবেনা? তাই ছেলেটার পাগল করা বায়না! ছেলের মন রক্ষার্থে ওকেও কথা দিয়েছে রহিম এক জোড়া জুতা কিনে দেবে! দু' দিন ধরে ঘরে কোন বাজার নেই! আজকে বাজারও করতে হবে। গত রাতে আবার স্ত্রী বলল,
ওগো কতদিন ভালো মন্দ খাইনা! একটু ভালো কিছু খেতে মন চাই! শুনেছি সবাই নাকি
বৈশাখে ঘটা করে আনন্দ করে পান্থা ইলিশ খায়! আমাদের তো ইলিশ কেনার মতো অতো সামর্থ্য নেই! শুধু পান্থায় খাবানি। কিন্ত শুধো পান্থা খেতে কেমন লাগে? একটু পুঁটি মাছ যদি পাও তাহলে নিয়ে এসো। সবাই মিলে একসাথে পান্থা পুঁটিই খেলাম! এক বুক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রহিম জবাব দিলো আচ্ছা তাই হবে!
রিক্সার সিটে বসে স্ত্রী সখিনার কথা চিন্তা করতে করতে, চার পাঁচজন তরুণ ছেলেদের দেখা মিললো রহিমের।
এদের মধ্যে একজন রহিমকে উদ্দেশ্যে করে,
এই মামু যাবেন নাকি..পুরো কথা শেষ করার আগেই রহিম তাদের জবাব দিলো যেখানে যান যামু, উঠে পড়েন!
পাঁচ জন নিয়ে চালাইতে পারবা?
হুম, পারবো! উঠে পড়েন...
একসাথে পাঁচটা ছেলেকে রিক্সায় উঠিয়ে চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে রহিমের। অনেক কষ্ট করে করে এক একবার প্যাডেল ফেলছে রহিম। শরীরের ঘাম ছুটে যাচ্ছে কিন্ত আজ কোন কষ্ট অনুভব হচ্ছেনা রহিমের! মাথার মধ্যে ছেলে শাহিনের নতুন জুতো কেনার দামের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে!
কত নিতে পারে এক জোড়া জুতা? লাস্ট গত ২ বছর আগে এক জোড়া জুতা কিনে দিয়েছিল
৩০০ টাকা দিয়ে সেই হিসেবে এখন আরো দুশো টাকা বাড়তে পারে! একদিনে পাঁচশো টাকা
কিভাবে ইনকাম করবো!? মেয়ের একটা নতুন জামা কিনতে দেড়শো টাকা তো লাগবেই?
বাজারের জন্য আরো দুই, তিনশো" অনেক চিন্তায় দু ফোঁটা চোখের জ্বল মনের অজান্তেই রহিমের চোখ দিয়ে বেয়ে পড়লো।
মামা! এখানে থামেন। মনে হয় কোন পিকনিক স্পটে চলে এসেছে রহিম। ছেলে গুলো রিক্সা থেকে নেমে একশো" টাকার একটা নোট দিলো! রহিম বলল, আমার কাছে তো ভাংটি নাই!
ছেলে গুলো পুরোটাই রাখতে বলল। পুরোটা রাখার কথা শুনে রহিমের মুখ হাঁসিতে ভোরে গেলো।
রহিম চলে যাচ্ছিলো এর মধ্যে আর দুই, তিনজন ছেলে দৌড়িয়ে এসে রহিম কে একটু সামনে যাওয়ার জন্য ঠিক করলো। তাঁরা এখানেই আবার ব্যাক আসবে। ছলেগুলো বক্স আনতে যাচ্ছে! গান বাজাবে।
কারো মনে খুশির জোয়ার আর কারো মনে দুঃখের বসবাস!

তাঁরা বক্স নিয়ে ফিরে এলো। রহিমের হাতে আরো একশ" টাকা ধরিয়ে দিয়ে ছেলেগুলো চলে গেলো। এখনো অনেক টাকার প্রয়োজন! রহিম রিক্সা নিয়ে টেনে চলে গেলো।

সারা দিন রিক্সা চালিয়ে সন্ধ্যার কিছু আগে আগে রহিম বাসায় ফিরলো। সকাল ধরে বসে অপেক্ষা করতে থাকা সাবিনা, শাহিন মন মরা হয়ে বস্তির মধ্যে ছোট্ট মাঠটার পাশে বসে অন্যোন্য ছেলে মেয়েদের আনন্দ উল্লাস দেখছে। প্রতিমধ্যে সাবিনা, শাহিনের মা দৌড়াতে দৌড়াতে ছেলে মেয়েদের সামনে এসে তাদের বাবার বাড়িতে ফেরার খুশির সংবাদ জানালো। বাবা ফেরার কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো দুই ভাইবোন। উৎফুল্ল মনে দৌড়িয়ে বাড়িতে ফিরলো সাবিনা, শাহিন। মেয়ের হাতে তাঁর নতুন বৈশাখী জামা তুলে দিলো রহিম। সাবিনা খুশিতে তিড়িং বিড়িং নাচ শুরু করলো। ছেলে শাহিনের হাতে জুতোর বদলে এক জোড়া চামড়ার স্যান্ডেল তুলে দিলো।
স্যান্ডেল দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো শাহিনের। রহিম বলল, "বাবা! মন খারাপ করিস না!
সাম্নের মাসে তোরে জুতা কিনে দেবো। এবার টাকায় কুলাতে পারলাম না! সাম্নের মাসে ঠিকই কিনে দেবো! বাবার মুখে এমন কথা শুনে মুহূর্তেই মুখের হাঁসি আবার ফিরে এলো শাহিনের।
ছেলের মুখে হাঁসি দেখে সারা দিনের গ্লানি যেনো ধূলিসাৎ হয়ে গেলো রহিমের। স্ত্রীর মুখের দিকে তাকালো রহিম, সখিনা বলল" আমার কিছুই চাওয়ার নেই! ছেলে মেয়ের খুশি দেখে আমার চাওয়া পূর্ণ হয়ে গেছে! স্ত্রীর এমন মধুর ভালোবাসা দেখে রহিমের শত কষ্টের মাঝেও হৃদয়ের মাঝে অজস্র ভালোবাসার পরশ লেগে ওঠে। এক টুকরো হাঁসির চাঁদ জেগে ওঠে মনের আকাশে।

উৎসর্গঃ
সেইসব খেটে খাওয়া মানুষদের কে, যারা হাজার কষ্টের মাঝে থেকেও একটি দিন একটি মুহূর্ত হাঁসি খুশির মাঝে নিজেকে বিলেয়ে দেই! এই বৈশাখ তাদের জন্যই!
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×