বসন্তের সবুজ যৌবনা পত্রপল্লবের উপর বৈশাখের তীব্র খর দাবাদহ,
পূর্ণিমার উৎসবে জোছনার সায়রে ভেসে যাওয়া পৃথিবীর চক্রাকার
নিয়মে অমাবশ্যার অনন্ত আঁধারে পদার্পণ,
নিজের প্রবল শৌর্য প্রতাপে দিনকে রাতের আঁধার হতে পৃথক করেও
অস্তাচলে দাঁড়িয়ে থাকা সূর্যের--
দিনের শেষ ভাগে নিস্তেজ অসহায় আত্মসমর্পণ,
অনন্ত বিষাদের দুঃস্বপ্নের রাত্রির পরেও
আরেকটা সুনীল-শুভ্র প্রভাতের হাতছানি,
দিবারাত্রির কোন এক সময়ে-- জন্ম, মৃত্যু আর মিলনের যুগপৎ মঞ্চায়ন,
এক দিকে মুমূর্ষ মানব জনমের চির-বিদায়ের সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে
শেষ মুহূর্তের অবিনাশী হাহাকার,
অন্যদিকে সদ্য জন্ম নেয়া মানব শিশুর জগৎ-ভ্রমনানন্দের
গগন-বিদারী চিৎকার,
একদিকে সাফল্য-প্রাপ্তির ঐতিহাসিক উপাখ্যান,
অন্যদিকে ব্যর্থতার শোকাবহুল শত শত দীর্ঘশ্বাস--
এ সবই জীবন মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ,
মুদ্রার এক পিঠে অদৃশ্য দ্যোতনায় মুখরিত থাকে
অনন্ত সুখের অলিখিত গীতি-বিতান,
অন্যপিঠে কোন এক অচিন রাগিনীর সুরে সদা বহমান থাকে
অসহ্য অনিঃশেষ দুখের ভয়াল কলতান,
মুদ্রার এক পিঠের একাংশের সাময়িক পরিসমাপ্তি--
অন্যপিঠের অবধারিত সূচনাপর্বের নীরব বার্তা বয়ে নিয়ে আসে,
কাজেই এ পিঠের অনন্ত সুখের খরস্রোতায় ভাসতে ভাসতে--
ও পিঠের অসহনীয় দুঃখের ভয়াল রাত্রির অবধারিত উপস্থিতিকে হেলায় অস্বীকার করা যেমন বোকামির নামান্তর,
ঠিক তেমনি অশান্ত দুঃখের করাল গ্রাসে আটকে পড়ে--
সুখকে রূপকথার মহামূল্যবান জীয়নকাঠি ভেবে নিয়তিকে ক্রমাগত গালমন্দ করে যাওয়াও মূর্খতারই চর্চা নিরন্তর;
তাই, জীবনের মর্মার্থের জয়-গান ধ্বনিত হবে কেবল তখনই--
যখন অসীম সুখের মাঝেও আগত দুঃখের মোকাবেলায়--
চির জাগ্রত, সদা প্রস্তুত থাকা যাবে,
জীবনের মর্মার্থের জয়-গান ধ্বনিত হবে কেবল তখনই--
যখন অনন্ত দুঃখের মাঝেও বিষাদের বুক খুঁড়ে মূর্তমান করা যাবে--
আগত নির্মল, অনন্ত সুখের হাতছানি।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ২:২৯