somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের সর্বোচ্চ চুড়ায় 'বাংলাদেশী দল নিয়ে' অভিযান প্রথম পরিচালনাকারী 'খান ভাই' এর সাথে এক সকাল।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাকলাই ও কেওক্রাডং এর মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়ার একটা ভিউ।

ষাটোর্দ্ধ একটি যুবক, নাম ইয়াহিয়া । ঠিকমত বলতে গেলে ইয়াহিয়া খান । দেশের ট্রেকার মাউন্টেনিয়ার বা এডভেঞ্চার একটিভিষ্টরা ডাকে ' খান ভাই' নামে। দেশের ট্রেকিং ইতিহাসে একজন স্বীকৃত পায়ইনিয়ার জনাব ইয়াহিয়া খান । বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু চুড়াটায় সবার আগে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন বৃটিশ অভিযাত্রী জিনজে ফুলেন। ফুলেনের পর খান ভাই -ই প্রথম একটা দলকে গুছিয়ে নিয়ে সেখানে পৌছাতে পেরেছিলেন ।

অনেক দিন ধরেই খান ভাইএর সাথে দেখা করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু সুযোগ হচ্ছিল না। দেশের শীর্ষ চুড়া গুলো নিয়ে লিখতে গিয়ে এগুলোর অভিযান-অভিযাত্রার কথাও এসে গেলে , সেই সাথে দেশের সবচেয়ে উচু পাহাড়টাতে সবার আগে অভিযান চালানো খান ভাই এর অভিযানের বর্ণনা সরাসরি শোনার দরকারটা অবশ্যম্ভাবী পর্যায়ে পরিণত হল । কেননা ওনার অভিযানের গল্পটা শুধু গল্প নায়, অপরিহার্য ইতিহাসের একটা অংশ আমার কাছে। বন্ধু প্রতীম রবিউল হাসান মনার দারস্হ হলাম, মনা জানাল শুক্রবার সকাল ৭:৩০ রমনায় উনি থাকেন, ফিটনেস ধরে রাখার জন্য শরীরচর্চা করেন। আগের রাতে মনা রাংগামাটি থেকে ফিরছিল খাগরাছরি - রাংগামাটির একটা ট্রিপ শেষ। বাস লেট হওয়ায় রমনায় সময় মত থাকতে পারলনা মনা, আর আমিও চলে গেলাম ভ্রমণ বাংলাদেশের অফিস লালবাগে। সেখান থেকে ফোনে খান ভাই এর সাথে ফোনে যোগাযোগ, আর ওনার অনুমতি নিয়ে মনা আর আমি গেলাম দেখা করতে।

শুরুতে খান ভাইএর সাথে দলের সদস্য ছিল অপার শশি সালাউদ্দিন । শেষে অনুরোধ করে যোগ দিল খালেদ ওয়ালিদ আর বেগ। পরের গল্পটা বিস্তারিত লিখব কোন পোষ্টে , আশা রাখি । সংক্ষেপে বলতে গেলে এতটুকু যে কুরবাণীর ঈদের ছুটিতে সুযোগ বের করে দল গঠন আর প্রস্তুতি সম্পন্ন হল। বান্দরবান থেকে বলিপাড়া -থানচি হয়েই ঢুকতে হবে গহীণ পাহাড় আর বন জংগলে । প্রথমেই ঝালমিষ্টি অভ্যর্থণা মিলে গেল বলি পাড়ার ক্যাম্প কমান্ডার সাহেবের কাছ থেকে। এই ঈদের সময় এখানে কেন? পরিবার ছেড়ে , ঘর বাড়ি ফেলে আসার আর সময় পেলেন না ? আপনাদের উদ্দেশ্য কি ? কেন এসেছেন ? ঈদের সময় কেন ? এ সময় তো সবাই পরিবারের সাথে সময় কাটায় ! সবাই তো এখন ঘরে ফিরে ! এই সময় ঘর ছেড়ে আসার কারণ কি ????????????

যাই হোক 'এই সেই' বুঝিয়ে থানচি বলি পাড়া পার হয়ে টিম ঘুকে গেল কাইতন পাড়া এলাকায়। 'এই সেই' বুঝানোর কারণ হচ্ছে সীমন্ত এলাকার এই প্রত্যন্ত দূর্গম গন্তব্য প্রশাসণের কাছে জানালে কোন অবস্হাতেই সামনে এগুতে দেবে না ।'খান ভাই' এর বক্তব্য 'টেকনলজী থেকে আমি অনেকটাই পিছিয়ে থাকা লোক' । দলে সদ্য যোগ হওয়া খালেদ (সজল) কম্পিউটার-ইন্টারনেট, সামিট পজিশন- কো-অর্ডিনেট ইত্যদী নিয়ে তার হুলুস্হুল অবস্হা । স্বেচ্ছা প্রণদিতভাবেই রুট ফাইন্ডিং এর দায়িত্বটা অলিখিতভাবে নিয়ে ফেলল।

( আমি, লেখকের অভিজ্ঞতা পজিশন - কোঅর্ডিনেট ম্যাপ আর গুগুল আর্থ এসবের ঠিক ঠিকানা জংগলে পড়লে ঠিক থাকেনা , তাবত পাহাড়কে তখন এক লাগে- উত্তরকে দক্ষইন মনে হয় পুবকে পশ্চিম ) স্বেচ্ছা প্রণদিত রুট ফাইন্ডার ভাই এর অবস্হাও কাইতন পাড়া এলাকায় গিয়ে অনেকটা সেরকম হয়েছিল । খান ভাই পুরাণো পথ ধরলেন । পূর্ব পরিচিত বাকলাই (মূলত বাকত্লাই) পাড়ার পথ ধরলেন । বৃটিশ অভিযাত্রী ফুলেন সাহেবের গাইড মাষ্টার লালময় বোম এই বাকলাই এর-ই বাসিন্দা। আর এ বিষয়ে একটা ফিচারও এসেছিল ছুটির দিনে। দিনশেষে বাকলাই গিয়ে খোজ করে বের করা হল মাষ্টারকে । তিনি সারাদিন পথ চলে সদ্যই থানচি থেকে বাকলাই পৌছেছেন। দুইদিন পর বড় দিন । ( বোম সম্প্রদায়ের সবাই খ্রীষ্টান) তাই সব মিলিয়ে লালময় ঘর ছেড়ে অভিযানে বের হতে রাজী না। লাালময় এর স্ত্রীও এ বিষয়ে মহা অসন্তুষ্ট । ( ভেবে দেখেন ঈদের দুই দিন আগে বৌ বাচ্চা ফেলে, ঈদ বাদ দিয়ে , অচেনা কিছু লোকের সাথে কে্য যদি অভিযানে বের হয় আমাদের কার বৌ খুশী থাকবে?)

বাকলাই ক্যাম্পেও আর্মিকে ম্যানেজ করা একটা ভাল ধকল । ক্যাম্পে মায়ানমার সীমান্তের কথা বললে এক কদমও চলতে দিবে না । বরং জোড় কদম ফিরতে পথে চালিয়ে দিবে ।সীমন্তবর্তী চুড়ায় যেতে হলে ক্যাম্প গুলোতে মূলত 'এই সামনে যাব' 'আসে পাশে দেখব' টাইপের কিছু বলে পার পেতে হয়। আর মাষ্টারকে ম্যানেজ করা হয়েছিল বাড়তি কিছু 'টিপস' টেকনিকে। যাই হোক বাকলাই থেকে কয়েক হাজার ফুট নীচে রেমাক্রি খাল, খাড়া নামত হয় অনেকটা পথ। সেখান থেকে আবার উপরে উঠে শালুকিয়া : ত্রিপুরা পাড়া । দুই সম্প্রদায়ের খ্রীষ্টান বাস করে সেখানে। দুই গোষ্ঠী থেকেই দুইজন দুইজন গাইড কাম জংগল কাটার নেওয়া হল সাথে করে আর বাকলাইএর লালাময় তো আছেই ।

সাত-আট বছর আগের অভিযাণের খুটি নাটি সব বিষয় মনে করে বলতে গিয়ে কোন কোন জায়গায় ঠেকে যাচ্ছিলেন খান ভাই । অভিযাণের অন্যতম সদস্য অপারকে ডাকলেন খুটি নাটি সহ বিস্তারিত বলার জন্য । টেবিলের দূর প্রান্তে অন্যদের সাথে গল্প করছিলেন অপার। বাংলাদেশের হাতে গোনাকয়েকজন পর্বতারোহীদের একজন অপার। ওনার প্রতি একটা শ্রদ্ধাবোধ ছিল আগে থেকেই । কর্পোরেট পর্বতারোহণের যুগে পাহাড় চুরির যে মহামারী আমাদের রথী-মহারথীদের গ্রাস করেছে, তিনি তাথেকে এখনও গা বাচিয়ে রাখতে পেরেছেন- এটাই ওনার প্রতি শ্রদ্ধার মূল কারণ । যাই হোক ওনার সাথে আলোচণার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি কোনটাই ছিল না । কিছুটা নার্ভাস বোধকরলাম । আমার জানামতে বাংলাদেশের স্বীকৃত পর্বতারোহীরা (দুই - একজন পূর্ব পরিচিত ছাড়া ) কেউই আমাকে ভালো চোখে দেখে না । আর একটা কারণ ছিল ছোট বেলা থেকেই আমি খুব রক্ষণশীল ধারায় বড় হয়েছি, স্কুল-কলেজে বা পরিবারে-কর্ম ক্ষেত্রে মহিলাদের সাথে কথা বলটে অভ্যস্ত হয়নি । যাই হোক খান ভাই এর কাছে আমার প্রশ্ন গুলো করছিলাম আর অপার কিছু বললে মাথা নীচু করে হু-হা করে উত্তর দিচ্ছিলাম । উনি হয়ত এতে বিব্রত হয়েছেন তবে এখন কি আর করার ! যাই হোক খান ভাই আর অপার দুজনই অভিযাণের বিস্তারিত বললেন । আর অসীম আগ্রহ নিয়ে আমি সেটা মাথায় গেথে নিতে চেষ্টা করলাম।

শালুকিয়া থেকে সামিট পুশদিয়ে যথারীতি চিকন কালা পারা হয়ে ওনারা চুড়ায় পৌছালেন। লীড নিয়েছিলেন খান ভাই, পিছনে খালেদ তারপর অন্যরা ।সেখানে গিয়ে তারা ফুলেনের সামিট বোতল পান । জিপিএস রিডিং পান ৩৪৫০ থেকে ৩৫০০ ফুটের মাঝে । ছবি ভিডিও হল । ফিরতি পথে আবার শালুকিয়া হয়ে বাকলাই ।

বাকলাই থেকে খালেদ-ওলিদের দলটা এগিয়ে গিয়েছিল বেশ কিছুটা - সম্ভবত জলদি ঢাকা ফিরে সংবাদ সম্মেলন বা প্রেস রিলিজ এমন কিছু একটা করার জন্য । থাইক্যং পাড়াতে তাদের সাথে দেখা হয় নেচার এডভেঞ্চার ক্লাবের রুবেল - সাজ্জাদ দের সাথে । নেচার এডভেঞ্চারকে একরকম হতাশায় ঠেলে দিয়ে রুমা বাজারের পথে পা বাড়ায় খালেদ-ওয়ালিদ । বিধি বাম হয় সেখানেও । আর্মি কি কারণে যেন (আসলে অনুমতি না নিয়ে ভিতরে অভিযান চালানোর জন্যা) বিরূপ হয়েছিল আগে থেকেই, আর সেখানে তাদের একটা ভাল ঝামেলা পোহাতে হয় আর্মির কাছে । পাহাড়ে যারা অভিযান চালান তারা যানেন আর্মি( প্রশাসন) এর সাথে লোকোচুরি খেলেই এক্সট্রীম ট্রেকিং আর এক্সপ্লোরের কাজ গুলো করতে হয় । এখানে যে দল যত ভাল, তাদের 'আউটপুট -ও তত বেশী !'

যাই হোক নেচার এডভেঞ্চার-ও যথারীতি সামিট করেছিল তবে দেশী প্রথম দল তারা হতে পারেনি, তারা হয়েছিল দ্বিতীয় ( এতটুকু-ই কম কিসের?) খান ভাইদের সাথে ওদের দেখা হয়েছিল ফিরতি পথে দার্জিলিং পাড়ায় । অভিনন্দন খান ভাই এর দলকে, অভিনন্দন নেচার এডভেঞ্চার কে।

অনেক শুনেছিলাম ওনার কথা, দেখা করার সুযোগ হয়নি । তবে ওনাকে যেমন পেলাম সেটা বলেই আপাতত পোষ্ট থেকে বিদায় নিচ্ছি ।ওনার মাঝে মনষিক দৃঢ়তা দেখলাম, ঔদ্ধত্ব ছিলনা । পছন্দ অপছন্দের বিষয়ে স্পষ্টবাদিতা দেখতে পেলাম, অভদ্রতা দেখলাম না । সৌজন্য ছিল লৌকিকতা ছিলনা । ব্যক্তিত্ব অনুভব করলাম অথচ বিনয় সেটা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ধন্যবাদ খান ভাই , ভাল থাকবেন , এই কামনাই করি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:০২
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×