
অনুভূতি-১(পরীর আগমন)
অনুভূতি-২(শ্যামল চোখের ছায়ার পরে শূণ্যতা ভাসে.........)
কর্মব্যস্ত সকাল কখনই ঝিমিয়ে পড়েছে।এখন প্রখর উত্তপ্তময় দুপুর।আকাশ থেকে মনে হয় আগুন ঝরছে।বাতাসে আগুনের ছোঁয়া।রাস্তায় খুব কম লোকজনের যাওয়া আসা।সামনে একটি বিশাল বট গাছ।তার ছায়ায় একটু থামলাম।প্রচন্ড পিপাসা পেয়েছে।ব্যাগ থেকে বোতল বের করে পানি খেলাম।গ্রামটার নাম এখনও জানা হয়নি।আমি এখন যেখানে থেমে আছি,সেটা একটা মাঠ।চারিদিকে খুবই নির্জন।নির্জন দুপুর!!দারুন তো!!!এরকম নির্জন দুপুর এর আগেতো পাওয়া হয়নি,অবাকই হলাম আমি।আর একটু সামনে এগিয়ে গেলাম।সামান্য একটু বাগান মতো জায়গা,বসে পড়লাম।নির্জন দুপুর ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে ফেলছে আমাকে।তপ্ত হাওয়ার ছুটোছুটি,পাতায় পাতায় শিহরন ধ্বনি,সব কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি।তপ্ত হাওয়া মাটিতে লুকিয়ে থাকা শুকনো পাতার দলকে উড়িয়ে নিয়ে যায়।শুকনো পাতার মর্মর আওয়াজ দুপুরের নিস্তব্ধতার মাঝে কিছুটা বেদনা বিধুর মনে হয়।
সামনে একটা পুকুর।টলটলে পানিতে সূর্যের আলোর খেলা,জ্বলছে হীরার কুঞ্জের মতো।একটা দাঁড়কাক পানিতে পাখা মেলে পড়ে আছে।হঠাৎ ঢিল মারলাম,অবাক হয়ে গেলাম,আরে এতো বেঁচে আছে,দিব্যি ঊড়ে চলে গেলো।অদ্ভুত,আমিতো ভাবলাম মরেই গেছে মনে হয়।
এই নির্জনতার এত জাদু!!??মনে হচ্ছে আমার সামনে রূপকথার সেই ঘুমন্ত রাজপুরীর ছবি ভেসে উঠছে।আমি যেন এক তেপান্তরের মাঠের ওপর দিয়ে ছুটে চলেছি।ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছি,বাঁচাতে হবেতো রাজকন্যাকে।এইসব উদ্ভট চিন্তায় আমি হারিয়ে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ ভিখারীর হাঁক শুনে মোহ ভেঙ্গে গেলো,আমার কানের গভীরে যেন বলে গেল,জীবন তো এমনই!!
লড়তে লড়তে বাঁচা অথবা বাঁচতে গিয়ে লড়াই।
একটু ঘুম লাগছে,কিন্তু নির্জন দুপুর আমাকে ঘুমুতে দিচ্ছে না।কোথাও যেতে দিচ্ছে না।
কত কী মনে পড়ছে,গা ছম ছম করছে,আগুন ঝরা এই নির্জন দুপুরে।আমি চেয়ে আছি,যেনো দেখছি মহলের কপাট খুলে যাচ্ছে একটার পর একটা।এই নীল নির্জন দুপুরে আমি অন্দর মহলে ঘুরতে লাগলাম।কক্ষে কক্ষে সাজান কত হাসি-কান্না,কত দীর্ঘশ্বাস,কত কথা!!আমাকে পেয়ে যেন রূপকথারা জেগে ওঠে!!!
এমনি তন্দ্রাচ্ছন্নের মতো কতক্ষন কাটালাম জানি না,কুকুরের চিৎকারে ঘোর কাটলো।রোদের রঙ বদলাতে শুরু করছে। নির্জন দুপুর আবার সরব হতে চায়।অনুভব করি নির্জনতা কোন বিচ্ছিন্ন সত্বা নয়। নির্জন দুপুর দিন-রাত্রিরই এক অখন্ড রূপ।কোলাহল ব্যস্ততারই এক ভিন্ন চেহারা।আমি যেন নির্জন দুপুরের পূর্ণতা পেলাম আজ,এক অখন্ড সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি হিসেবেই উদ্ভাসিত হলো।এই স্তব্ধ-শান্ত দুপুর যেন ধরিত্রীর সঙ্গে আমার জন্ম-জন্মান্তরের সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দেয়।তখন আরও কত কী ছায়া ছবির মতন ভেসে চলে মনের উপর দিয়ে!!!
এক মহৎ উপলব্ধি ভাস্বর হয়ে ওঠে নিসর্গ লোকের এই খন্ড মুহুর্তটি।মনে হচ্ছে যেন আমার সামনে উদ্ঘাটন হলো নির্জন দুপুরের সত্য স্বরুপটি.......................
ছবি কৃতজ্ঞতাঃকাঠের খাঁচা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১২:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



