somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রন্থাগার নাকি কারাগার!

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেবার প্রচন্ড গরম! রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ইলেক্ট্রিসিটির আসা যাওয়া মাথার উপর গনগনে সূর্য মস্তিষ্কের কোষে কোষে বাড়িয়ে দিচ্ছিল তাপমাত্রা। রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব একটা অনুকুলে ছিল না। পরীক্ষার পড়াগুলো জমা করে রেখেছিলাম লাইব্রেরীতে বসে পড়ব বলে, সবমিলিয়ে এমন এক পরিস্থিতি যে কান পাতলেই ফটিকজল ফটিকজল শব্দ শোনা যায়। জানি না সেটি কি আসলে পাখিরডাক ছিল, নাকি আমার ভগ্নহৃদয়ের গহীন থেকে উঠে আসছিল ফটিকজল!

এমনি এক ক্লান্ত দুপুরে অবসন্ন মনে সাজানো গোছানো নোটপত্র নিয়ে হাজির হলাম লাল রঙে রঙ্গিন লাইব্রেরীতে। সেখানকার এয়ার কন্ডিশনে আমার মস্তিষ্কের তাপমাত্রা কমাবে বলে! কিন্তু কি আশ্চর্য আমাকে গেটম্যান থামিয়ে দিয়ে বলল, না যেতে পারবেন না। পরে জানতে পারলাম লাইব্রেরীতে নতুন নিয়ম হয়েছে কম্পিউটার প্রিন্টেড কোন কাগজপত্র নিয়ে ভেতরে প্রবেশ নিষেধ! কিন্তু মান্ধাতা আমলের হাতেলিখা ফটোকপি নোট নিয়ে গ্রন্থাগারে প্রবেশ জায়েজ আছে! কি আশ্চার্য, কি উদ্ভট নিয়ম! মস্তিষ্কের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল, লাইব্রেরীর ভিতরে থাকা টেলিফোন দিয়ে প্রশাসক স্যার কে অভিযোগ করবার চেষ্টা করলাম কিন্তু ব্যার্থ হলাম। তাই সেখানে বসে দরখাস্ত লিখলাম, এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

স্যার যেহুতু ফোন ধরলেন না তাই ভাবলাম আমাদের আরো সংগঠিত হওয়া দরকার। পরে বন্ধুদের নিয়ে আবারো প্রক্টর স্যারের সাথে কথা বললাম ফোনে। স্যারকে ক্ষতির আশঙ্কার কথা জানালে তিনি বললেন ব্যপারটি গ্রন্থাগারে জানাতে বললেন। বললাম স্যার আমরা ছাত্র উপদেষ্টা মাতিন স্যারের সাথে কথা বলেছি তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন লাইব্রেরীর নিচ তলায় একটি উন্মুক্ত কক্ষ দেবেন ডিসকাসন করবার জন্য। স্যার বললেন হ্যাঁ এরকম একটা পরিকল্পনা আছে।

অনেক চেষ্টা চরিত্র করবার পরে গ্রন্থাগারের প্রশাসক স্যার কে পাওয়া গেল। তিনি এধরনের ক্ষতির আশঙ্কা ফু মেরে উড়িয়ে দিলেন। সেদিন স্যার বোঝাতে চেয়েছিলেন গ্রন্থাগার মানে গ্রন্থ থাকবে, গ্রন্থ! আর আমরা বলতে চেয়েছিলাম যদি তাই হয় তবে তাকে, গ্রন্থের "গুদামঘর" নামটাই শ্রেয়। গ্রন্থাগারে পড়াই মুখ্য, গ্রন্থ তো থাকবেই। তিনি আমাকে সেইরকম ঝাড়ি মারলেন। তোমরা পড়াশুনা কর না পরীক্ষার আগে গরমের অযুহাত লাইব্রেরীর অজুহাত, না? শুনে আর কিছু বললাম না! কারন যে সমষ্টিক স্বার্থ নিয়ে কথা বলছিলাম তিনি সেটি ধরতেই পারেন নাই। তিনি আমাকে একটা ফ্রি এডভাইজ দিলেন, শোন বাবা আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখন হলের রুমের ফ্যান ছেড়ে দিয়ে খোলা গায়ে শুধু লুঙি পরে পড়তাম। তোমার খুব সমস্যা হলে এমন করতে পার। যেহুতু বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছে আর তিনি যখন বুঝবেই না তাই বিনয়ের সাথে সালাম দিয়ে রেখে দিলাম।

ছাত্র উপদেষ্টা স্যারের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছিল। স্যারের সমালোচনা করছি না। স্যার চমৎকার করে গুছিয়ে কথা বলেন, আমার ভালো লাগে। তাইতো তার কথা শুনি আর গিলি। প্রথমেই স্যার আমার পরিচয় নিলেন, আমি সাংবাদিক বা কোন নেতা কি না! যখন বললাম স্যার আমি ও আমরা অতি সাধারণ কয়েকজন শিক্ষার্থী তখন মনেহলো স্যার খানিকটা টেষ্ট হারিয়ে ফেললেন! তবু স্যার সময় দিয়ে কথা বললেন। আমি অকৃতজ্ঞ নই। আমার স্মরণ আছে স্যারের বোন পত্রিকা পড়ে নাম্বার কালেক্ট করে আমাকে একবার ফোন দিয়েছিল বাসায় আসবার জন্য। বাসায় গেলে নাস্তা খাওয়ালেন আর জেনে নিলেন, আমরা কারা, কিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে চাই, কবে, কোথায় বিস্তারিত জানলেন। এবং ১০টি নতুন কম্বল দান করলেন। আমি নাম ভুলে যেতে পারি ঘটনা ভুলি না! তো স্যার বললেন গ্রন্থাগারের নিচতলায় একটা রুম ছেড়ে দেবেন, শিগ্রহী।

কথা শেষ করবার পূর্বে আবারো তিনি নাম জিজ্ঞেস করলেন। আন্তরিক ভাবে বললেন, আমি খুব খুশি হয়েছি তুমি সরাসরি আমাকে ফোন দিয়েছ। বললাম স্যার আপনার চেম্বারে গিয়েছিলাম কিন্তু পাই নাই। তিনি আরো গদগদ সুরে আমাকে ধন্যবাদ জানালেন। ভাবলাম স্যার সত্যি খুশি হয়েছেন, সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে! কিন্তু না, আমরা ভুল ছিলাম, যখন শুনি ছোট ভাইরা আজ এই দাবীর জন্য রাস্তায় দ্বাড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, আন্দোলন করবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখন ভীষণ কষ্ট হয়! এখন বুঝি তিনি আসলে সেদিন খুশি হন নাই, আমাকে খুশি করেছিলেন মাত্র! সেদিন যে কয়েকজন সংঘটিত হয়েছিলাম তাতে মনে হয় তখনই এই উদ্ভট নিয়ম ছুড়ে ফেলে দিতে পারতাম। স্যারের ছলনার কাছে হেরে গেছি, হেরে গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, এর প্রমান বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল। রাবির কোন অবস্থান নাই! না জানি আরো কোথায় কোথায় হারতে হবে রা বি কে!

সেদিনের পর থেকে যাওয়া হয় নাই গ্রন্থাগার নামের এই কারাগারে! সেখানকার উদ্ভট নিয়ম শৃঙ্খলার গ্যাঁড়াকলে পড়তে চাই নাই আমি কিংবা আমার মত শতশত শিক্ষার্থী। এখন শুনি খানিকটা ফাঁকাই পড়ে থাকে। গ্রন্থাগার যখন নাকি কারাগারে পরিণত হয় তখন এমনটাই ঘটে!

এ থেকে বেরিয়ে আসবার জন্য তিনটি দাবী তুলি....
১। স্পাইরাল নয় এমন কম্পিউটার প্রিন্টেড কপি ফটোকপি নিয়ে গ্রন্থাগারে প্রবেশাধিকার দিতে হবে।

২। দিনরাত ২৪ঘন্টা গ্রন্থাগার খোলা রাখতে হবে।

৩। অবিলম্বে চাকুরী সংক্রান্ত বইপত্র গ্রন্থাগারে সরবারাহ করতে হবে।

যদি এর একটি দাবী মানা না হয় তবে লিখিত জবাব দিতে হবে, কেন? পাশাপাশি আমাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানাতে হবে স্পষ্ট করতে হবে....

বাংলাদেশের অন্য কোন পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে কম্পিউটার প্রিন্টেড কাগজপত্র নিয়ে ঢুকতে দেয়া না? যদি এমন উদ্ভট নিয়ম কোথাও না থাকে, তবে কেন রাবি শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে তাদের ক্ষতি করা হচ্ছে? এর হাইপো থিসিস কি?

রা বি কেন্দীয় গ্রন্থাগারের বইপত্র আসলেই কি সম্পদ নাকি বোঝা? যদি বোঝা হয়ে থাকে তবে কেন আবর্জনা পরিস্কার করা হচ্ছে না?

গ্রন্থাগারের এই সম্পদ বা বোঝার কত ভাগ ব্যবহার হচ্ছে? এর পরিসংখ্যান আমরা জানতে চাই আমাদের জানানো হউক।

শোনা যায় গ্রন্থাগার পরিচালনার জন্য প্রায় শ খানেক দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মচারী কর্মকর্তা কাজ করেন। তো আমরা জানতে চাই, এর মধ্যে কত জন প্রফেশনাল? কতজন দক্ষ?

পেশার প্রশ্ন আসতেই প্রশ্ন জাগে, আচ্ছা আমাদের রাবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রশাসক স্যার তো লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশুনা করেন নাই! তাকে শাস্তি হিসেবে এই দ্বায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয় নাই তো?

শুনেছি ই-রিসোর্স নামে অনেক অর্থ ব্যায়ে জার্নাল ও বইপত্র কেনা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো আমাদের এই সম্পদ সম্পর্কে কতজন শিক্ষার্থী জানেন? বা জানানো হয়েছে? রা বি লাইব্রেরী মার্কেটিং সম্পর্কে আমাদের গ্রন্থাগারের এ পর্যন্ত কি উদ্যোগ নিয়েছেন?
(আরো হাজারো প্রশ্ন আছে! এগুলোই চুড়ান্ত নয়)

রাবির শিক্ষার্থীদের আহবান করছি সবাই আওয়াজ তুলুন একসাথে। "ভেঙ্গে ফেল কারাগার, বানিয়ে আবার গ্রন্থাগার"। নয়তো আজ মাত্র বিসিএস পরীক্ষায় তথা আমাদের একটি অঙ্গের পঙ্গুত্ব প্রকাশ পেয়েছে কালকে অন্য আরেকটি অঙ্গে প্রকাশ পাবে তারপরের দিন সমস্ত শরীর প্যারালাইজড হবে। এভাবেই তো মৃত্যু হয়!

আমরা চ্যালেঞ্জ করি, লাইব্রেরী সারারাত খোলা থাকলে, প্রিন্টেড কপি নিয়ে প্রবেশাধিকার দিলে, চাকুরীর বইপত্র দিলে শিক্ষার্থীরা আগের থেকেও বেশি পড়বার জানবার সুযোগ পাবে, বেশি শিখার সুযোগ পাবে, অনেক জ্ঞান বাড়বে, সত্যিকারের প্রজ্ঞাবান মানুষ হবেন যা দেশ ও জাতীর জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×