প্রসঙ্গ: পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আবুল কালাম এবং পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদের খান, দুই জনের পার্থক্য নিয়ে কিছু কথা।
গতকাল মারা গেছে ভারতের পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আবুল কালাম। এ পরমাণু বিজ্ঞানীকে ভারত রাষ্ট্রীয়ভাবে বেশ সম্মান দিয়েছে। সে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলো ছিলো বেশ কয়েকবছর। তার মৃত্যুর পর ভারত ৭ দিনের শোক ঘোষণা করেছে। মিডিয়ায় পজিটিভ প্রচারের কারণে সারা বিশ্বে সকলেই তাকে ভালো হিসেবেই চিনে এবং পজিটিভ প্রচারের কারণে সম্মানও পেয়ে থাকে।
এবার আমি বলবো, ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ মানে পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খানের কথা। একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন, এপিজে আবুল কালামকে যেখানে ভারতসহ সারা বিশ্বে সম্মানিত করা হয়েছে, সেখানে পাকিস্তানের পরমাণু বোমার জনক আব্দুল কাদির খানকে সবাই কঠিনভাবে নিগৃহিত করছে, সবাই তাকে নিকৃষ্ট চোখে দেখছে। তাকে জেল খাটতে হচ্ছে, গৃহবন্দি থাকতে হচ্ছে। এটাই কিন্তু মিডিয়ার কারসাজি। আমেরিকার চোখে যে ভালো, মিডিয়ার চোখে সেই ভালো। আর আমেরিকার চোখে যে খারাপ মিডিয়ার চোখে সেই কিন্তু খারাপ। বলাবাহুল্য সাধারণ পাবলিকের মনমগজ কন্ট্রোল করে ঐ মিডিয়াই।
আমি বলবো, পৃথিবী শ্রেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খান কখনই তার যথাযোগ্য মর্যাদা পাননি। চীনে চৌকশ হ্যাকার ধরা পড়লে সরকার তাকে মোটা বেতন দিয়ে নিজ গৃহে সম্মানের সাথে রেখে দেয় আর বাংলাদেশে চৌকশ হ্যাকার ধরা পড়লে তাকে জেলের ঘানি টানতে হয়। কারণ চীন বুঝে প্রযুক্তি উন্নতি করতে হলে তাকে প্রযুক্তি ট্যালেন্টদের সম্মান দিতে হবে, আর বাংলাদেশ সেটা বুঝে না। আর এ কারণেই প্রযুক্তি গ্রহণে বাংলাদেশকে চীনের মুখাপেক্ষী থাকতে হচ্ছে।
পৃথিবী শ্রেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খানের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
পোখরান পরমাণু বিস্ফোরণের অন্যতম কারিগর হিসেবে এপিজেকে ভারতরত্ন পুরষ্কার দেওয়া হয়, আর পাকিস্তানের পরমাণু বোমার জনককে দেয়া হয় জেল, মামলা, নিগ্রহ, অপবাদ আর গৃহবন্দিত্ব।
আমি দেখেছি প্রায় সব মুসলমান ভারতের এপিজে আবুল কালামের নাম জানে, কিন্তু আব্দুল কাদির খানের নাম জানে কয় জন ? উল্টো আব্দুল কাদির খানকে চেনে সন্ত্রাসী হিসেবে। কারণ আব্দুল কাদির খান নিজ মুখেই বলেছিলো:
১) “আমি চেয়েছিলাম সকল মুসলিম দেশ পরমাণু প্রযুক্তি সমৃদ্ধ হোক। তাই ইরান ও লিবিয়াকে আমি পরমাণু প্রযুক্তি সরবরাহ করেছিলাম”। ---আব্দুল কাদির খান
২) “লিবিয়ার গাদ্দাফি এবং ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের মতো নেতাদের হাতে যদি পরমাণু বোমা থাকত, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা যে তাণ্ডব চালাচ্ছে তা চালানোর সাহস পেত না।” ---আব্দুল কাদির খান
শুধু তাই নয়, কৌশলী এ পরমাণু বিজ্ঞানী আমেরিকাকে দমাতে উত্তর কোরিয়াকেও পরমাণু প্রযুক্তি দিয়েছিলো। বর্তমানে খুব গরীব হয়েও যারা আমেরিকার মত দেশকে প্রায়শয়ই হুমকি ধামকি দেয় তার মধ্যে উত্তর কোরিয়াই প্রধান এবং সেটাও তাদের সেই পরমাণু প্রযুক্তির বলে বলিয়ান হয়ে।
আর এ কারণেই বর্তমানে আমেরিকার চোখে এক নম্বর সন্ত্রাসী হচ্ছে সেই আব্দুল কাদির খান, মোসাদের গুপ্ত ঘাতকদের কিলিং লিস্টে শীর্ষে আব্দুল কাদিরের নাম। পাকিস্তান সরকার আব্দুল কাদির খানকে জেল থেকে মুক্তি দিলে ফ্রান্সসহ তাবৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন হৈ-হুল্লা শুরু করে দেয়।
সবার শেষে বলতে হয়, ভারতীয় পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আবুল কালাম ছিলো নিরামিষ ভোজী, নিয়মিত গীতা পাঠকারী, কৃষ্ণের একনিষ্ঠ ভক্ত একজন অগ্নি উপাসক। তার পরমাণু আবিষ্কারগুলো ছিলো শুধু হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র ভারতের জন্য। তার বিশ্বাসগত আচরণ এবং কর্ম হিন্দুদের অনুকূল ছিলো বলেই আজ ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের কাছে কাছে এপিজে আবুল কালাম হিরোর মর্যাদা পেয়েছে।
অন্যদিকে, আব্দুল কাদির খান চেয়েছিলো মুসলিম জাতিকে শক্তিশালী করতে। সে পাকিস্তান, ইরাক, ইরান, লিবিয়াসহ মুসলিম রাষ্ট্রগুলো মধ্যে পরমাণু প্রযুক্তি সরবরাহ করতে পেরেছিলো বলেই বিশ্ব মিডিয়ার চোখে সে একজন ভিলেন, একজন জেলখাটা আসামী, চিরজীবনের জন্য গৃহব্ন্দী এবং একই সাথে অবুঝ মুসলিম জাতির কাছে নিগৃহিত ও অপমানিত, কারণ মুসলিম জাতি কখনই জানে না প্রাপ্যকে উপযুক্ত সম্মান দিতে।
এপিজে আবুল কালাম এবং আব্দুল কাদির খানের মধ্যে পার্থক্য শুধু এখানেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৫