মানুষকে অহরহ বলতে শুনি “ আমার হৃদয় নেই , মন নেই , আমি রোবট টাইপ , আমি কষ্ট ফিল করতে পারি না ইত্যাদি”
আমি জানি না মানুষ কি দিয়ে আসলে ফিল করে, মন, হৃদয় নাকি অন্যকিছু।
তবে জোর গলায় বলতে পারি মানুষের বুকের ভেতরে কিছু একটা আছে যার যোগসূত্র সরাসরি মস্তিষ্কে রাখা অতিতের মধুর স্রিতি গুলোর সাথে , যে স্রিতি গুলো মনে উকি দিলে ঐ সময়ে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রবল চাপ পরে বুকের মধ্যে থাকা ঐ অজানা যন্ত্রে। যে চাপ নিঃশ্বাস আটকে দেয় প্রায় , হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচলের গতিকে কুমিয়ে অস্বস্তি তে ফেলে দেয় মানুষকে । মানুষ তখন চেষ্টা করে স্রিতি গুলোর প্রবাহ মস্তিষ্কে আসার দরজাকে রুদ্ধ করে দিতে ।
মানুষ বলে “ আমার বৃষ্টি ভালো লাগে ” আবার কেউ বলে “বৃষ্টি আমার বিরক্ত লাগে ”
আমার আসলে বৃষ্টি ভালো খারাপ দুটোই লাগে, তবে সময় ভেদে । কিন্তু চারদিক অন্ধকার করে দেয়া, দমকা ঝড়ো হাওয়া সহ বৃষ্টি আমি ভয় পাই । ঝর কে ভয় পাই না , ভয় পাই এর সাথে জড়িত শৈশবকে।
ঘরের মধ্যে ঘর , টিনের চালায় ঝুম ঝুম বৃষ্টি আর দব দব শব্দ করা ঝর।
চারদিক অন্ধকার করে আকাশের দুই প্রান্ত থকে ধেয়ে আসছে মেঘ , প্রবল বাতাশ , গাছ গুলো একবার বায়ে তো আর একবার ডানে হেলছে , মনে হচ্ছে গাছের চুরা বুঝি মাটি ছুতে চায় । ছেলে স্কুলে, তাই মায়ের মনেও ঝর , এ ঝর ভয়ের ঝর। উঠনের এ প্রান্তে একবার তো ঐ প্রান্তে আর একবার দৌরে যায় মা, আর উকি দিয়ে খুজে “এই বুঝি ছেলে এল ঘরে , সাইকেল এ ক্রিং ক্রিং শব্দ করে ঝর সুরুর আগেই ”। মা যেন মেঘ কে প্রতিনিয়ত অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছে যাতে দুই মেরুর মেঘের মীলন না ঘটে ছেলে আচলে আসার আগে । সুরু হাল্কা বৃষ্টি, ছেলে ভিজে একাকার ,তবে পৌঁছে মায়ের চোখের পাড় ।
দৌরে ঘরে যায় মা ছেলে । ঘরের মধ্যে দুম দাম শব্দ, জানালা গুলো বুঝি দমকা হাওয়ার তাড়া খেয়ে , হুমড়ি খেয়ে পড়ে, চূর্ণ বিচূর্ণ হচ্ছে । এবার প্রতিযোগিতা সুরু জানালা বন্ধ করার ।
জানালা বন্দ রুদ্ধ দ্বার, দুম করে বিকট শব্দ , চারদিক অন্ধকার।ঝরের তাড়নায়, তারে তারে ঘর্ষণে ট্রান্সফরমার বিরক্ত হয়ে বুঝি উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলে “ আমি পারব না আর”
কখন বিদ্যুৎ আসবে ঘরে বলা দুস্কর। মোম বাতি , কুপি বাতি আর হ্যারিকেন এই নির্ভর ।
মা নিয়ে যায় গোসল কড়াতে , নয়তো আসবে জ্বর । গোসল শেষ, চারদিক চুপ চাপ
শুধু ঝুম ঝুম বারী বর্ষণ টিনের চালায় । মাঝে মাঝে তীব্র আলোর ঝলকানি দিয়ে বিকট গ্রুম আওাজ করে খেলা করছে ঝর ।
বোনের হাতে ভাতের থালা , গুছিয়ে গুছিয়ে তুলে দিচ্ছে মুখে ভাতের লোকমা । শেষে গিয়ে না পরে পরে আম, জাম, কাঁঠাল, কলা ।
খাওয়া শেষ , চারদিক অন্ধকার মাঝখনে কালো ধোঁয়া ওড়ান হলুদ আলোর কুপি বাতি , তার সাথে ঝুম ঝুম আওয়াজ ... কেমন জানি অসম্ভব সুন্দর সিক্ত এক পরিবেশ । স্বর্গীয় অনুভুতি।
অল্প আলয় চলছে এবার “ ঘরের মধ্যে ঘর বানিয়ে কাল্পনিক ভবিষ্যৎ কে বাস্তব রুপ দেয়ার খেলা ”
চার টা বিছানার ১৬ টা বালিশ আর দুইটা কাথার ঘর । বালিশের উপর বালিশ তুলে , তিনটা দেয়াল সামনে ফাকা বর্গ করে, কাথার চালা তুলে দিয়ে তৈরি হল ঘর ।
বোন এবার বলে আমার “ যাব যখন দূরে চলে , বাবার মত কাজের ছলে ... থাকব ভাই বোন সুখের ছলে , এমন করে ঘরটি তুলে ’’
কতনা পরিকল্পনা ভাই বোন এর ,। কলেজ থকে আসবি , ক্লান্ত হয়ে বসবি ... অফিস থেকে আসব আমি তবু হবনা ক্লান্ত ...
তোর মুখে দানা তুলে তবেই যেন সান্তি মিলে । পুজা পার্বণ ঈদ এলে , আসব ভাই বোন বাবা মায়ের কলে ।
বড় হতে হবে , অনেক বড় , বাবা মা যেন মাথা উঁচু করে বলতে পারে “ এই আমার ছেলে, এই আমার মেয়ে ’’ এমন করে খেলার ছলে কখন যেন ঘুম বাসা বাধে চোখে ।ঝরের তীব্রতা কুমে , মেঘের গর্জনও ফিকে হয় ... ঘুম যায় ভাই, বোনের কোলে পা টি তুলে ।
বড় হওয়ার প্রতিযোগিতায় চলে এসেছি অনেক দূরে , প্রথমে ভাই বোন মিলে , কিছু দিন বাদে বোন চলে যায় পড়ের বাড়ি, ভাই হয়ে যায় একা ।
চলছে জীবন নিজ গতিতে, বাবা মা বশে শুন্য কোলে পথ চেয়ে আজ একা ।
এর চেয়ে মধুর স্রিতি কি হতে পাড়ে আমার জানা নাই , তবে আজ শুধু অতীতের পটে আকা ।
অন্ধকার করা দমকা হাওয়া আর দুম দুম শব্দ করা ঝর আসলেই বুকের মদ্ধটা কেমন জানি ফাকা ফাকা লাগে ... আর দম বন্ধ করা অব্যাক্ত অনুভূতি ...............