somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।। এক নজরে বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনীসমূহ ।।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ৪ ঠা নভেম্বর ২০১৩। আজ বাংলাদেশে সংবিধান দিবস। ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর বাংলাদেশে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল। যেটি ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছিল। আজ বাংলাদেশের সংবিধানের বয়স ঠিক ৪১ বছর। এই ৪১ বছরে বাংলাদেশের সংবিধানে মোট ১৫ টি সংশোধনী আনা হয়েছে। চলুন আমরা সেই ১৫ টি সংশোধনী কি কি সেগুলো একটু দেখে আসি।
১. প্রথম সংবিধান সংশোধনী:
১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের প্রথম সংশোধনী পাস হয়। প্রথম সংবিধান সংশোধনে সংবিধানের ৪৭ আর্টিকেলের সঙ্গে একটি নতুন আর্টিকেল যুক্ত করা হয়। যেটি সংবিধানে আর্টিকেল ৪৭ (ক) নামে পরিচিত। যেখানে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের আন্তর্জাতিক বিচার অনুসারে বিচারের আওতায় এনে বিচারের কথা বলা হয়েছে।
২. দ্বিতীয় সংবিধান সংশোধনী:
১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী পাস হয়। যেখানে সংবিধানের আর্টিকেল ২৬, ৬৩, ৭২ ও ১৪২ কে সাময়িকভাবে রহিত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে প্রেসিডেন্টকে। আর আর্টিকেল ৩৩ এর ক্ষমতায়ন করার জন্য একটি নতুন আর্টিকেল যুক্ত করা হয়েছে আর্টিকেল ১১ -এর সঙ্গে। যেটি ১১ (ক্) নামে পরিচিত। যে ক্ষমতা বলে প্রেসিডেন্ট দেশে জরুরী অবস্থা জারী করতে পারবেন। আর তখন সংবিধানে বর্ণিত কিছু মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রের জনগণ ভোগ করতে পারবে না।
৩. তৃতীয় সংবিধান সংশোধনী:
১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী পাস হয়। যেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ২৫ বছর মেয়াদি ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি অনুমোদন করা হয়। যেখানে দুই দেশের সীমানা নির্ধারণ ও ছিটমহল বিনিময়ের কথা রয়েছে।
৪. চতুর্থ সংবিধান সংশোধনী:
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকারের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়। সকল ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে প্রদান করা হয়। মাত্র ৪টি সংবাদপত্র রেখে বাকিগুলো বাতিল করা হয়। বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল নামে দেশে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল থাকার আইনগত বৈধতা দেওয়া হয়। বিচারবিভাগের কিছু স্বাধীনতা রহিত করা হয়।
৫. পঞ্চম সংবিধান সংশোধনী:
১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পাস হয়। যেখানে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সামরিক শাসন, সকল অর্ডিন্যান্স, আইন ও কার্যকলাপকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। যেটি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ নামে বেশি পরিচিত।
৬. ষষ্ঠ সংবিধান সংশোধনী:
১৯৮১ সালের ১০ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে সংবিধানের আর্টিকেল ৫১ ও ৬৬ কে সংশোধন করে বলা হয় যে, রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীগণের অফিস হবে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান।
৭. সপ্তম সংবিধান সংশোধনী:
১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী পাস হয়। যেখানে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সামরিক শাসন, সকল অর্ডিন্যান্স, আইন ও কার্যকলাপকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। আর বিচারপতিদের অবসরের বয়স সীমা ৬২ থেকে ৬৫ তে বাড়ানো হয়।
৮. অষ্টম সংবিধান সংশোধনী:
১৯৮৮ সালের ৯ জুন বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। যেখানে আর্টিকেল ২, ৩, ৫, ৩০ ও ১০০ তে সংশোধন আনা হয়। যাতে বলা হয়, বাংলাদেশে একটি ইসলামী রাষ্ট্র। ঢাকার বাইরে ৬টি হাইকোর্টের শাখা খোলা হয়। বাংলা ও ঢাকা'র ইংরেজি বানান সংশোধন করা হয়। আর দেশের কোনো নাগরিক বিদেশ থেকে কোনো সম্মাননা নিতে চাইলে প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাগবে।
৯. নবম সংবিধান সংশোধনী:
১৯৮৯ সালের ১১ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের নবম সংশোধনী পাস হয়। যেখানে রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। দুই টার্মের বেশি কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন প্রেসিডেন্ট।
১০. দশম সংবিধান সংশোধনী:
১৯৯০ সালের ১২ জুন বাংলাদেশ সংবিধানের দশম সংশোধনী পাস হয়। যেখানে আর্টিকেল ৬৫ সংশোধন করা হয়। সংসদে ৩০ টি সংরক্ষিত মহিলা আসন বরাদ্ধ করা হয়। আর সেই সংরক্ষিত আসন ১০ বছরের জন্য বরাদ্ধ হবে।
১১. একাদশ সংবিধান সংশোধনী:
১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট বাংলাদেশ সংবিধানের একাদশ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্ধিন আহমেদ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রেসিডেন্টের সকল দায়িত্ব পালন করবেন আর ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ৯ অক্টোবর ১৯৯১ পর্যন্ত নতুন প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ্বাসকে ক্ষমতা হস্তান্তর করে প্রধান বিচারপতি পুনরায় স্বপদে ফিরে যাবেন।
১২. দ্বাদশ সংবিধান সংশোধনী:
১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকারের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ রহিত করা হয়।
১৩. ত্রয়োদশ সংবিধান সংশোধনী:
১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে নির্বাচনকালীন সময়ে দেশে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। যে সরকারে একজন প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন, যিনি হবেন সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। আর ১০ জন হবেন নিরপেক্ষ উপদেষ্টা।
১৪. চতুর্দশ সংবিধান সংশোধনী:
২০০৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী পাস হয়। সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ করা হয়। আর বিচারপতিদের অবসরের বয়স সীমা ৬৫ থেকে ৬৭ তে বাড়ানো হয়। এছাড়া প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী'র অফিসের আলাদা আলাদা ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
১৫. পঞ্চাদশ সংবিধান সংশোধনী:
২০১১ সালের ৩ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে সংবিধানের সংরক্ষিত মহিলা আসন ৪৫ থেকে ৫০-এ বাড়ানো হয়। সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম ও ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। আর সংবিধানের অষ্টম ও একাদশ সংশোধনী'র আংশিক পরিবর্তন করা হয়।
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×