somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিনা টিকিটে বন্ধু নাজিরের সঙ্গে মহানগর প্রভাতীতে!!!

২৩ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ থেকে ঠিক ১৩ বছর আগের কথা। ২০০৩ সালের ২৪ জুলাই। বন্ধু নাজিরের নেতৃত্বে আমরা চার বন্ধু নাজির, রিয়াজ, পুলক আর আমি আখাউড়া যাচ্ছিলাম নাজিরদের বাড়িতে। নাজির বলেছিল, আমরা এয়ারপোর্ট থেকে চট্টগ্রামগামী সকালের ট্রেন ধরব, তোরা সকাল সাতটার আগেই এয়ারপোর্ট রেল স্টেশনে আসবি।

রিয়াজ, পুলক আর আমি তখন একসাথে থাকি কাঁঠালবাগানে। আমরা তিন জন সকাল সাতটার আগেই এয়ারপোর্ট রেল স্টেশনে হাজির হলাম। নাজির আসবে মিরপুর থেকে। কিছুক্ষণের মধ্যে নাজিরও পৌঁছালো। আমরা মহানগর প্রভাতীর অপেক্ষায়। পুলক প্রস্তাব করলো, ট্রেন আসার আগে টিকিট কেটে নাস্তা কইরা ফেলাই?

নাজির ধমক দিয়ে কইলো, নাস্তা ট্রেনে করিস। আর টিকিট ফিকিট লাগতো না। তোরা কার লগে যাইতাছোস, এখনো চিনলি না! নাজিরের কোনো দিন টিকিট লাগে না।

তো কী আর করা। আমরা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি আর সকালের টাটকা সংবাদপত্রে চোখ বুলাচ্ছি। সবগুলো পত্রিকা হেডলঅইন করেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে ছাত্রদল ও পুলিশের তাণ্ডব! মধ্যরাতে ছাত্রদল ও পুলিশ শামসুন্নাহার হলে অভিযান চালায়। ছাত্রীদের বেদম প্রহার ও লাঞ্চনার পাশাপাশি কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়। সারা রাত থানায় আটক ছাত্রীদের নির্যাতন করা হয়।

আমরা সবাই তখন কিছুটা চিন্তিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গরম হয়েছে। অর্থ্যাৎ সামনে কঠোর আন্দোলন আসেতেছ! হয়তো ভিসি আনোয়ারউল্লাহকে হটানোর দিকেই এটা মোড় নেবে।

ততক্ষণে ট্রেন এসে গেছে। আমরা লাফিয়ে লাফিয়ে মহানগর প্রভাতীতে উঠে পড়লাম। আমাদের কারোর কাছেই টিকিট নাই। আমরা আখাউড়া পর্যন্ত যাব। ট্রেনে ওঠার সময় পুলক, রিয়াজ আর আমি উঠেছি যে কামরায়, নাজির সেই কামরায় উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা ট্রেনের জানালা দিয়ে নাজিরকে বললাম, তুই যে কোনো একটা কামরায় উঠে পড়। নাজির পেছনের দিকে একটা কামরায় উঠল।

আমরা ট্রেনের ভেতরে পেছনের দিকে নাজিরের দিকে যাচ্ছিলাম আর নাজির আমাদের দিকে আসছিল। ঘটনা মাত্র কয়েক মিনিটের। এর মধ্যে বন্ধু নাজির টিটিদের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েছে! টিকিট ছাড়া আর কেউ নাজিরের সঙ্গে আছে কিনা জিজ্ঞেস করে আমাদের কথাও অ্যাডভান্স জেনে গেছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে টিটি আমাদের তিনজনকেও পাকরাও করলো। ট্রেনের একেবারে সামনের দিকে ড্রাইভারের পাশে ইঞ্জিন রুমের কাছে একটা কামরায় আমাদের নিয়ে আটকানো হলো। এখন উপায়?

আমরা পরামর্শ করলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার একটা জুতসই ব্যাখ্যা দিয়ে টিটিদের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার। আমরা ছোট্ট বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকতে ফুকতে এই কাহিনী ফাঁদলাম। কিছুক্ষণ পর টিটি এসে আবার ধমক দিলেন, এই আপনারা বারান্দায় কেন? সেই সুযোগে আমরা আমাদের পরিকল্পিত ঘটনা খুলে বললাম। বললাম, রাতে ভার্সিটিতে ঝামেলা হয়েছে। হল ভ্যাকেন্ট হয়েছে। আমরা এখন বাড়িতে যাচ্ছি। টিকিট কাটার টাকা নাই। কাহিনী হয়তো টিটি সাহেবরা বিশ্বাস করলেন। বললেন, আপনারা এই কামরার বাইরে কোথাও যাবেন না। যদিও আমাদের ওই বারান্দা পর্যন্ত যাবার একটা অলিখিত পারমিশান হয়ে গেল! বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়ার মজা আমরা সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।

যতবার আমাদের সেই বিড়ম্বনার কথা মনে পড়েছে, ততবার আমরা তিনজন নাজিরকে আচ্ছামত গালাগালি করেছি। জবাবে নাজির বললো, তোরা চুপ কর। আখাউড়া গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর আখাউড়া রেল স্টেশনে নেমেই নাজির আমাদের পছন্দ মত জিনিসপত্র দিয়ে ভারি আপ্পায়ন করলো। আহা, যাবার পথে, বিকালে বিরতিতে, আবার সন্ধ্যায় ফিরতি ট্রেনে ওঠার আগে নাজিরের সেই আপ্পায়ন একদম ভোলার না।

দুপুরে নাজিরদের বাড়িতেও আমাদের জন্য বিশাল খাবারের আয়োজন হয়েছিল। কিন্তু বিকালে ফেরার পথে নাজির যে কাহিনী শুরু করলো, তা থেকে বাঁচার জন্য আমরা তিন জন প্রায় গোটা বিকাল স্টেশনে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ালাম। মহানগর পারাবাত স্টেশনে আসার পরেই আমরা যখন লাফিয়ে লাফিয়ে আবার ট্রেনে উঠলাম, তখন নাজির আবার আমাদের দেখে চিৎকার করলো, কিরে তোরা কই আছিলি? তোগো খুঁইজা পাই না! আমরা ট্রেনের জানালা দিয়ে কইলাম, সেই আলাপ পরে, আগে তুই লাফিয়ে ট্রেনে ওঠ হারামজাদা!

বন্ধু নাজির এখন আর বেঁচে নাই। পরের বছর একটি মাইক্রোবাস বন্ধু নাজিরকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছিল! বন্ধু নাজিরের কথা এখনো অনেক মনে পড়ে। অনেক পাগলা বন্ধু ছিল একটা নাজির। নাজির তুই কোথায় এখন কেমন আছিসরে বন্ধু! বন্ধু কী খবর বল? কত দিন দেখা হয় না!!

.....................................
২৩ জুলাই ২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×