somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালির ঈদে নতুনত্ব!

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঈদে বেড়ানো:
একুশ শতকের শুরু থেকেই বাঙালির ঈদ উৎসবে কিছু কিছু নতুন বিষয় যোগ হয়েছে। একেবারে বড়লোক পাড়ার লোকজন ঈদ মৌসুমে দুই দফা বিদেশ সফর করে। প্রথম দফায় কেনাকাটা দ্বিতীয় দফায় বেড়ানো। তাদের বেড়ানো দেশের তালিকায় থাকে ইউরোপ, আমেরিকা, আর এশিয়ার হলে ভারত, জাপান, কোরিয়ায়। উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণি বরং সেই তুলনায় অনেক পিছিয়ে। তারা বড়জোর একবার পরিবার নিয়ে বাইরে বেড়াতে যায়। আর তা এশিয়ার কয়েকটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ঈদ উৎসবে সেটা এখন ধীরে ধীরে নিয়মিত হচ্ছে। মধ্যবিত্তরা সবাই কর্মস্থল থেকে ছুটি পেলেই ছোটে গ্রামের বাড়িতে। আর নিম্নবিত্তরা ঈদ উৎসবে দান-খয়রাত পাবার পর ঈদের পরদিন গ্রামের বাড়িতে ছোটে।

ঈদের কেনাকাটা:
বড়লোকদের কেনাকাটা হয় দেশের বাইরে। হেতিরা কী কী কেনে আমার কোনো আইডিয়া নাই। উচ্চ মধ্যবিত্তরা ঈদের সময় বাজারে নতুন আসা ফ্যাশনের দিকে আগ্রহী থাকে। তারা গমন করে এসি মার্কেটে। মধ্যবিত্তরা সস্তা মার্কেট থেকে গরমে সিদ্ধ হয়ে কেনাকাটা করে। আর একেবারে নিম্নবিত্তরা কেনাকাটা করে ফুটপথ থেকে। হকাররাই তাদের মূল ভরসা।

যাত্রাপথে নিয়মিত দুর্ভোগ:
ঈদ উৎসবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা কর্মস্থল থেকে বাড়িতে যাবার জন্য প্রতিবছর পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে বেশি দুর্ভোগ হজম করে। এদের হজম শক্তি প্রতিবছর ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাস, ট্রেন, লঞ্চ সবখানে প্রতিবছর উপচেপড়া ভীড় এরা উপভোগ করছে।

পথে পুলিশের চাঁদাবাজি:
প্রতিবছর ঈদের সময় পথে পুলিশের চাঁদাবাজি একটি নিয়মিত ঘটনায় নিয়েছে। প্রশাসন থেকে প্রতিবছর দাবি করা হয় সবাই খুব নির্বিঘ্নে ঈদ উৎসব পালন করেছে। সাবাস বাংলাদেশ।

যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি:
প্রতিবছর ঈদের সময় বাস, ট্রেন ও লঞ্চের ভাড়া নিয়মিতভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণ তা বিনাদ্বিধায় মেনে নিচ্ছে।

টিকেট কালোবাজারি:
প্রতি বছর ঈদের সময় ট্রেন ও বাসের টিকিট কালোবাজারি হয়। লঞ্চে কেবিনের ক্ষেত্রে এটা নিয়মিত হয়। জনগণ মুখ বুজে এসব মেনে নিচ্ছে। জনগণের হজমশক্তি মাশাল্লা বৃদ্ধি পাচ্ছে।


যাত্রপথে দুর্ঘটনা:
প্রতিবছর ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন আজ পর্যন্ত এই সড়ক দুর্ঘটনার যথাযথ ব্যাখ্যা ও তার সমাধানে আগ্রহী নয়।

মলমপার্টির উৎপাত:
প্রতিবছর ঈদের সময় সাধারণ মানুষ মলমপার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারায়। অনেকে মলমপার্টির খপ্পরে পড়ে জীবনও হারায়। মলমপার্টি এখন পর্যন্ত সফলভাবে ঈদ মৌসুমে বাণিজ্য করতে পারছে। আর পুলিশ সবসময় মুখস্থ ব্যাখ্যা প্রদান করে দায় সারছে।


স্যোশাল মিডিয়ায় ঈদ:
আগে ঈদের সময় অনেকে গ্রেটিংস কার্ড পাঠাতো বন্ধুদের। এখন তা ধীরে ভিডিও, ছবি আর এসএমএস-এ পৌঁছেছে। সর্বশেষ সংযোজিত এই ভিডিও, জিআইএফ চরম বিরক্তিকর হলেও সবাই পাঠিয়ে মজা পাচ্ছে। যে যেখানে যাচ্ছে সেখানকার ছবি আপলোড করছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় আইটেম সেলফি। রান্না করা খাবার থেকে শুরু করে গরু জবাই, জবাই করা গরুর গায়ে শুয়ে সেলফি, মাংসের সাথে সেলফি, খা্বারের সাথে সেলফি, সবকিছুতে সেলফি এক ভয়াবহ সংক্রামক রোগে পরিণত হয়েছে।

ফেসবুক লাইভ:
এবারের ঈদের নয়া চমক ফেসবুক লাইভ। কেউ গরু জবাই লাইভ দেখাচ্ছে। কেউ বেড়ানো ঘুরে দেখাচ্ছে। কেউ গান শোনাচ্ছে। কেউ জাতির উদ্দেশ্য বক্তৃতা দিচ্ছে। কেউ মস্করা করতেছে। মোটামুটি যে যখন ফেসবুক লাইভ ব্যাপারটা শিখতেছে, সে যা পারুক একবার ট্রাই করতেছে।

পরিবার ও বন্ধুদের সাথে গ্রুপ ছবি:
ফেসবুকে ঈদের সময় সবচেয়ে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে গ্রুপ ছবি তোলা ও তা আপলোড করা।

জনসংযোগ:
ঈদের মৌসুমে যারা রাজনীতি করেন তারা জনসংযোগের জন্য পোস্টার ছাপিয়ে শুভেচ্ছা দিচ্ছেন। ছবিতে দলীয় নেতানেত্রীর চেয়ে নিজেদের ছবির সাইস থাকে বিশাল। কয়েক গোণ্ডা থাকে বানান ভুল। সারা বছর জনসংযোগ করুক আর না করুক ঈদের সময় এরা জনসংযোগ করছে বেশ আগ্রহ নিয়ে।

টেলিভিশনে ঈদ:
ঈদ একদিন হলেও দেশের টেলিভিশনে ঈদ চলে সাত দিন। তারা ঈদ উপলক্ষ্যে নানান কিসিমের অনুষ্ঠানের নামে মূলত বিজ্ঞাপন দেখায়। জনগণের ধৈর্য পরীক্ষা নেয় টেলিভিশনগুলো। জনগণও ভোদাই'র মমত সেই পরীক্ষা প্রতিবছরই দেয়।

অতএব সময় যত যাচ্ছে ঈদ কিন্তু আর আগের জায়গায় নাই। যত দিন যাচ্ছে ঈদের সংজ্ঞা এখন তত পাল্টে যাচ্ছে। পছন্দের পোষাক না পেলে সুইসাইড করার মত ঘটনাও ঘটছে। সবচেয়ে মজার যে ঘটনাটি ঘটছে ঈদের সময় সরকারি ছুটি কেউ পাত্তা দেয় না। ঈদের ছুটি কাটিয়ে এসে কয়েকদিন কেটে যাচ্ছে আবার যথারীতি অফিসের কাজে ফাঁকি দিয়ে ঈদ পুনর্মিলনে। বড়লোক পাড়ায় এটি ঈদ রি-ইউনিয়ন নামে পরিচিত।

-------------------------
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭






সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×