বিশ্বের সকল মুসলিম মায়েদের উচিত তার সন্তানকে এ ভাবে নিজের হাতে অর্থসহ কোরাআন শিক্ষা দেওয়া। তাহলে সমাজ, রাস্ট্র তথা সম্পূর্ণ বিশ্ব একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বে পরিণত হবে। শুধু রিডিং আরবী শিক্ষা না, তার সাথে অথর্ এবং তাফসিরের জ্ঞানও দেওয়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, “ইকরা বিসমি রাব্বিকাললাযি খালাক, খালাকাল ইনসানা মিন আলাক, অর্থ- পড় তোমার সৃষ্টিকর্তার নামে, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত পিন্ড থেকে। (সুরা আলাক, আয়াত নং ১-২)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নবুয়্যুত প্রাপ্তির পূর্বে ত্রিশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর প্রায়ই মক্কার অদূরে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কাটাতেন। তাঁর স্ত্রী খাদিজা নিয়মিত তাঁকে খাবার দিয়ে আসতেন। আবার মাঝে মাঝে গিয়ে দেখতেন যে, আগের খাবারগুলো তিনি এখনও খাননি। তিনি খাবার পরিবর্তন করে দিয়ে আসতেন। কখনও বিরক্ত হতেন না।
এখনকার দিনের মেয়ে হলে তার স্বামীকে কি বলতো, জানেন?? ধুর..... তোমার খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নাই, সংসার ফেলে রেখে তুমি এইসব কি তামশা শুরু করছো। সারাদিন কাজ নাই, কাম নাই, হেরা গুহায় এসে ধ্যান করা শুরু করে দিছ, তাই না? চল মার্কেটে যাই, আমার মোবাইলে যে এমবি নাই তোমার কি হুশ আছে ??? ফেসবুক চালাতে পারতেছি না। অথচ দেখুন হযরত খাদিজা (রাঃ) কতটা ধৈর্য্যশীল নারী ছিলেন।
হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এমনি একদিন ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিবরাইল তার কাছে আল্লাহর প্রেরিত বাণী নিয়ে আসেন এবং তার বুকের সাথে বুক মিলিয়ে মোলাকাত করলেন, বললেন ইকরা (পড়), রাসুল (সাঃ) বললেন আমি পড়তে পারিনা, জিবরাইল (আঃ)আবার বললেন ইকরা (পড়), নবীজি (সাঃ) আবারও উত্তর দিলেন আমি পড়তে পারিনা। তৃতীয় জিবরাইল (আঃ) তাকে বুকের সাথে বুক মিলিয়ে স্বজোরে চাপ দিলেন এবং বললেন যে ইকরা (পড়), তখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পড়তে শুরু করলেন। এজন্য হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)কে বিশ্বশিক্ষক বলা হয় কারণ তাঁকে কোন মানুষ বা জ্বীন শিক্ষা দেয়নি স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জিবরাইল (আঃ) ফেরেশতার মাধ্যমে তাকে শিক্ষা দিয়েছেন। কোরআন শরীফের সর্বপ্রথম শব্দ হল ইকরা (পড়)। অতপর তাঁকে এই আয়াতগুলি পড়তে বলেন :
”পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিণ্ড থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না”। (সুরা আলাক-আয়াত-১-৩)
এরপর জিবরাইল(আঃ) অদৃশ্য হয়ে গেলেন।মুহাম্মদ(সাঃ) এত ভয় পেয়ে যান যে সারা শরীরে কম্পন শুরু হয়। তিনি বুঝতে পারছিলেন না আসলে কি ঘটে গেয়েছিল। তিনি দ্রুততার সাথে মক্কায় ফিরে ফিরে আসেন। এই অবস্থায় তিনি তাঁর প্রাণের বন্ধু আবু বকর রাঃ এর কাছে পরামর্শের জন্য ছুটে যাননি, যাননি বিজ্ঞ অভিজ্ঞ প্রবীণ ব্যক্তিত্ব তাঁর আপন চাচা আবু তালিবের কাছে যিনি তাঁকে লালন পালন করে বড় করেছিলেন। তিনি শুধু ছুটে গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী খাদিজা(র।)এঁর কাছে!
থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে নিজ ঘরে হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ করেই খাদিজা(রাঃ) কোলে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং কম্বল দিয়ে নিজের গা জড়িয়ে দেয়ার জন্য বলেন। বারবার বলতে থাকেন, ‘আমাকে আবৃত কর!’ ‘আমাকে আবৃত কর!’ খাদিজা(রাঃ) স্বামীর এই অবস্থা দেখে তাঁকে গভীর ভাবে জড়িয়ে রাখলেন। কম্পিত দেহের শঙ্কা কমানোর চেষ্টা করলেন, অভয় দিলেন, আশংকা দূর করার চেষ্টা করলেন। জিজ্ঞাস করেন, আপনার কি হয়েছে তো বলুন? তিনি জবাব দিলেন যে, সম্ভবতঃ শয়তান আমাকে আশ্রয় করেছে! সাথে সাথে এই সম্ভাবনার কথা খাদিজা(রাঃ) নাকচ করে দিয়ে বলেন, না, আল্লাহর কসম, তিনি এই ভাবে আপনার মর্যাদাহানি করতে পারেন না! খাদিজা(রাঃ) তাঁর স্বামীকে অকুণ্ঠচিত্তে সমর্থন দিলেন এবং স্বামীকে দিলেন তাঁর দ্ব্যর্থহীন আস্থা। সংকট কালে খাদিজা(রাঃ) উপর মুহাম্মদ(সাঃ) এঁর গভীর নির্ভরশীলতা ছিল। (এই ভাবে উম্মতে মুহাম্মদীর সকল পুরুষের উচিত তাদের স্ত্রীদের উপর নির্ভর করা) খাদিজা(রাঃ) সর্বপ্রথম নবী মুহাম্মদ(সাঃ) পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। খাদিজা(রাঃ)ই তাঁকে নবী হিসাবে প্রথম তাঁকে অনুসরণ করেন, উৎসাহ দিলেন এবং তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলামী রীতি রেওয়াজ চর্চা শুরু করেন।(আজকের দিনে এই প্রজন্মের নারীদেরও উচিত সংকটকালে খাদিজা(রাঃ) এর মত স্বামীর পাশে দাঁড়ানো)
তবে এখনকার এইদিনে এইযুগে খাদিজা(রাঃ) এর মত ধৈর্য্যশীলা নারী পাওয়া কি সম্ভব ?? যে নারীটি সবসময় তার স্বামীকে উৎসাহ দিবে, অনুপ্রেরণা জোগাবে, সুখে-দু:খে বিপদে-আপদে পাশে থাকবে !!!
------ আরো আলোচনা অব্যাহত রাখার চেস্টা করবো। ইনশাআল্লাহ।
ফেসবুকে আমি-
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:১৩