somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ: হলদে ডানার "ইসলামী রাজনীতির বিরোধিতার অন্তরালে"

৩০ শে জানুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হলদে ডানা "ইসলামী রাজনীতির বিরোধিতার অন্তরালে" তে যা বলেছেন সে প্রসঙ্গে কিছু কথা...
এদেশের বেশির ভাগ মানুষ ধর্মপ্রাণ এবং শতকরা ৮৬ জন বাংলাদেশী মুসলমান। এ কথা সর্বজন বিদিত। অথচ এদেশের ২.৪ শতাংশের মত লোক (সর্বশেষ অনু্ষ্ঠিত নির্বাচনের আলোকে) জামায়াত ইসলামী দলটির সমর্থক ও অনুসারী। এই পরিসংখ্যানের সরল স্বীকারোক্তি আপনার লেখাতেও প্রতিফলিত:
"সারাদেশে কয়জন জামায়াত করে আর কয়জনই বা শিবির করে।"
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে এত বিপুল সংখ্যক ইসলাম ধর্মাবলম্বীর দেশে জামায়াত ইসলামীর সমর্থক এত কম কেন? আপনার করা আরেকটি মন্তব্য ("আসলে সমস্যা জামায়াত শিবির কে নিয়ে নয়, সমস্যা ইসলামকে নিয়ে।") দিয়ে আপনি নিশ্চিতভাবেই বুঝাতে চেয়েছেন, বাংলাদেশে ইসলামের পতাকাবাহী একমাত্র দল জামায়াত ইসলামী। তা আরো প্রকটভাবে প্রমাণিত হয় যখন আপনি বলেন,"জামায়াতের মধ্যে যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে তবে আওয়ামী লীগ বিএনপি কেউ এগিয়ে আসুক ইসলামের পতাকা হাতে, সুসংগঠিত চেষ্টা চালাক, আমরা পাশে থাকবো, ছুটে যাব। কেউ তো আসছেনা। তাই আপাতত যারা আছেন, তাদের সাথেই আমরা আছি। " আপনি ইসলামের অগ্রগতির বাহন হিসেবে জামায়াতকে যেভাবে প্রতিষ্ঠা দিতে চাইছেন সে নিয়ে আমি কোন কথা বলতে চাই না। কারন এর যুতসই প্রত্যুত্তর দেওয়ার মতো এই বাংলাদেশেই শত শত ইসলামি রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক দল, সংঘটন রয়েছে। শুধু একটি কথা বলবো, জামায়াতের মওদুদী ব্রান্ডের ইসলাম প্রকৃত অর্থে কতটুকু নিগুড় ইসলাম সে বিষয়ে বিশিষ্ট ইসলামী আলেম ওলামাদের ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আমি শুধু বলতে পারি, আপনার দাবিটিকে আমার কাছে যারপর নাই উচ্চাভিলাষী মনে হচ্ছে।
এখন চোখ দেওয়া যাক আরেকটু গভীরে। যে প্রশ্নটিকে সামনে রেখে আপনি আকাশ কুসুম বিশ্লেষন ভিত্তিক উত্তর খুজলেন সেটিকেই এখন সামনে নিয়ে আসি।
"সংখ্যায় এত কম হওয়ার পরও কেন জামাতিদের পেছনে লাগে মানুষ?" । সব কিছু বলার আগে আপনাকে ধন্যবাদ দিবো এই কারনে যে অন্তত আপনার মধ্যে আত্মোপলব্ধি হয়েছে যে এদেশের মানুষ জামাতকে ঘৃণা করে এবং আপনার মধ্যে একটা ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। আমি ভাই আশাবাদী মানুষ, এই প্রশ্ন যখন আপনার মনে এসেছে তখন এই রকম উল্টা-পাল্টা ভাবতে ভাবতে একদিন ঠিক আসল উত্তরটি পেয়ে যাবেন। তখন আপনার চেতনা সত্যই জাগ্রত তবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আপনি সঠিক জায়গাটিতে যেতে পারেন নি। কারন যুক্তির বলয়ে এখনও প্রবেশ করতে পারেননি আছেন মস্তিস্ক ধোলাই অবস্থায়। যুক্তিই যদি বুঝতেন তাহলে নিজের চক্করে নিজে পড়তেন না। চক্করে কি করে পড়লেন, দেখুন-
আমি শুরুতেই বলেছি এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম ইসলাম এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের ঘৃণার জায়গা হচ্ছে জামায়াত ইসলামী আর তার দোসর সংঘটনগুলো। এও ইতিমধ্যে উল্লেখ করেছি এদেশে ইসলামী দলের কোন অভাব নেই। তাহলে ইসলামকে অপছন্দ করার কারনে জামায়াতকে কেন টার্গেট করবে, তাও আবার দেশের আপামর ধর্মপ্রাণ জনসাধারণ! যে হাতেগুণা দুচার জন আমার মতো প্রথাগত ধর্মবিদ্বেষী আছে তাদের আপত্তির জায়গাটি স্বাভাবিকভাবেই ধর্মগুলোর মূল জায়গাটিতে। আওয়াজ যদি তুলতেই হয় তো তুলবো গোড়া ঘরেই, কারণ ওখানেই রয়েছে অনেক আপত্তিকর উপাদান।
আরেকটি প্রশ্ন, এদেশে ইসলামের অপরাপর দলগুলোর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু কেন হচ্ছে জামাত, সেটিও ভাববেন যখন আপনি বলবেন, জামায়াত ইসলামের পতাকা উচুস্থানে নিয়ে যাচ্ছে বা যাওয়ার আন্দোলনে আছে।
এখন তাহলে বুঝতে পারছেন আপনার নাতিদীর্ঘ্য রচনার সার বক্তব্যগুলো ধপে টিকবে না। তাই আপনার প্রতি আহ্বান থাকবে, প্রশ্নটি যখন জেগেছে আপনার মনে, সঠিক জায়গাটিতে না যাওয়া পর্যন্ত ভাবনা ছাড়বেন না। আমি আপনাকে একটু সাহায্য করতে পারি, এই যা। ভাবুন, বাংলাদেশের প্রধান ধর্ম ইসলাম হওয়া সত্ত্বেও কেন জামায়াতের প্রতি মানুষের এত ঘৃণা, এত ধিক্কার - কেন? কারনটা আর কিছু নয়, কারনটা এদেশের ওভার মেজরিটি মানুষ এই দেশের মাটিকে ভালবাসে, এদেশের স্বাধীনতার-সার্বভৌমত্বের নিশ্চয়তা চায়। তাই তারা জামায়াত কে অপছন্দ করে কেননা জামায়াতের মূখ্যতম আদর্শ হচ্ছে এই দেশের স্বাধীনতা বিরোধীতা করা।
তাই আপনার কাছে একটা অনুরোধ থাকবে, জামায়াত আর ইসলাম কে গুলিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করবেন না অথবা যারা করছে তাদের সাথে যোগ দিবেন না। ইসলাম কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জামায়াত এর জন্য সর্বসাধারণের সহানুভূতি আদায় করার চেষ্টা অবশ্যই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। একটা কথা জানবেন, যে বাঙালি মানুষটি জামায়াত আর ইসলামকে ঘৃণা করছে তার পেছনে ভিন্ন ভিন্ন কারন রয়েছে; একই কারনে জামায়াত আর ইসলামকে ঘৃণা করার কারন নাই।
পরিশেষে আপনার আত্মজিজ্ঞাসাজাত যে উপলব্ধি আপনি অর্জন করতে পেরেছেন তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি তবে তাকে একটু ঝালাই করে দিতে চাই। আপনি বলেছেন,"বাস্তব সত্য হচ্ছে আগামি পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের ক্ষমতায় জামায়াতে ইসলামীর যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।" আসলে কথাটি হবে, "বাস্তব সত্য হচ্ছে ধুরন্দর জামায়াত যদি কোন রাজনৈতিক দলের কাছে আশ্রয়-প্রশ্রয় না পায় তাহলে ইহজনমেও বাংলাদেশের ক্ষমতায় যাওয়া তো দূরে থাক ২০০১ এর মতো অংশীদারও হতে পারবে না।"
১২টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের জাতির কপালে শনি আছে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:১১



একাত্তরে যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে তারা বলেছে স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না, সুতরাং ভারতের অধীন হওয়ার চেয়ে পাকিস্তানের অধীন থাকা ভালো। তারা মনে করেছে অধীকাংশ নাগরিক তাদের দলে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।

জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×