somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দূর অতীতের দিনপঞ্জী

২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিসেম্বর, ২০০৯

যখন বাসায় ফিরলাম ততক্ষণে দিনের আলো মরে ভুত। আজকে আমার কোন কাজই হয় নি। ক্লান্তি চেপে ধরেছে। ছোট্ট একটা কাজ হলেও কিছুটা তৃপ্তি পেতাম। মন অতৃপ্তিতে ছেয়ে আছে। এক আধটা দিন বোধহয় এমন যায়। অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়। “শুকনো সাগর খটখট” দিবস পালন করেছি আজকে। কিন্তু বেশিক্ষণ মনমরা হয়ে থাকা আমার স্বভাবে নেই। লেখালেখি করলে মন ভাল হয়ে যেতে পারে। তাই কম্পিউটার খুলে বসা।

আমার লেখালেখির ব্যাপারটা আমার মা জানে না। জানলে বিপদ। মাঝবয়সী কোনো মৌলানার সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে পারে। তখন আমি পাকাপোক্তভাবে গৃহবন্দী হয়ে যাব। সারাদিন ঘরে বসে বালিশের ওয়াড় সেলাই করব। আর মাঝে মাঝে নিনজা বোরখা পরে পাশের বাসার ভাবীর কাছে গল্প করতে যাব। লেখালেখি করতে দেখলে দর্জাল শাশুড়ি মুখ ঝামটা দিয়ে বলবে, “মেয়েছেলের আবার কিয়ের লিখাপড়া? যাও গিয়ে ভাত চড়াও, আমার ছাওয়াল চলি আসতিছে মাদ্রাসা থিকে। এইমাত্র মুমাইল করে কলো।” আমি মন খারাপ করে নাজিরশাইল চাউলের ভাত রানতে রওনা দিব রান্নাঘরের দিকে। এই গ্রীক ট্র্যাজেডি ঘটতে দেয়া যাবে না। যেকারণে মাকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে।

মায়ের চাপাচাপিতে পড়ে যেতে হয়েছিল এক মিটিঙে। মহিলা বিজ্ঞানীদের সভা। একপর্যায়ে সভাপতি আমাকে দাঁড় করিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কয়েক সেকেন্ড পর আবিষ্কার করলাম আমি তাদের সমিতিতে আজীবন সদস্য হবার প্রশ্নে বাম দিকে মাথা কাত করে সায় দিয়ে দিয়েছি। আমাকে সে হিসাবে নাকি মাঝে মাঝে দু-চারটা বিজ্ঞান বক্তৃতাও দিতে হবে। জীন বিজ্ঞানীরা নাকি মানষের আয়ু দেড়শ বছর করে দিচ্ছে। এই বিষয়টা জানতে তাদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেল। পরিচয়ের পালা শেষ হতে বসে পড়লাম। খুব ক্লান্ত লাগছে। বক্তৃতা এখন আর কানে ঢুকছে না তেমন। ক্লান্তি পঞ্চইন্দ্রিয়ের এক এক জনকে ধরে তার ক্ষমতা খর্ব করে দিচ্ছে। একটা দুটো শব্দ ভুল করে কানে বাড়ি খাচ্ছে। চোখ ঢুলুঢুলু করছে। মুখা হা করে ঘুমিয়ে পড়তে পারি। তাই একটু গা ঝাড়া দিয়ে নড়েচড়ে বসলাম। ঘড়ির দিকে পাঁচ মিনিট তাকিয়ে থাকার পর পাঁচটা পঁয়ত্রিশ থেকে পাঁচটা ছত্রিশ বাজল। আজব! সময় কি থমকে গেল নাকি?

বসে থেকে থেকে আমি জীবন্ত মমি হয়ে যাবার ঠিক আগ মুহূর্তে মিটিঙ শেষ হল। খাবারের একটা প্যাকেট ধরিয়ে দেয়া হল। সবাই খাচ্ছে। আমি হাত-পা গুটিয়ে রাখলে খারাপ দেখায়। অনিচ্ছায় তাকালাম প্যাকেটের ভেতর। রস জবজবে জিলাপী আমি পছন্দ করি না। আপেলটা আধোয়া হবার সম্ভাবনা বেশি। তবে সমুচা খাওয়া যেতে পারে। ভুল করলাম সেখানেই। এক কোণা মুখে নিয়ে টান দিতেই সমুচাটা রাবারের মতো লম্বা হতে থাকল। পানি দিয়ে কোনো রকম গিললাম আর কি। এরপর একটা হাইব্রিড পানীয় আসল। অর্ধেকটা সময় মনে হল এটা চা আর বাকিটা সময়ে ভাবলাম কফিও হতে পারে। কিংবা হতে পারে পঞ্চইন্দ্রিয়ের আরেকটা ইন্দ্রিয় ইন্তেকাল করেছে।

গাড়িতে ওঠার সময়ে মনে হল পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় উঠছি। পঙ্খিরাজ আমাকে স্বর্গে পৌঁছে দেবে। নিজের বাসাকে বেহেশত মনে হচ্ছে রীতিমত। “হোম, স্যুইট হোম” কথাটা যে বলেছিল, তার উপলব্ধি তো অসাধারণ! আজকে কি আর কোন কাজ করা হয়ে উঠবে? বুঝতে পারছি না। করা দরকার। আখন্দ স্যার একটা কাজ দিয়েছেন। সেটা বৃহস্পতিবারের আগে করে তাঁকে দেখানো দরকার। উনি আমার থিসিসের সুপারভাইজার। ওনাকে ঘোরানো উচিত হবে না। দেখি কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে। আপাতত কাজের কাজ যেটা হয়েছে, তা হল দেহের অবসাদ না কাটালেও আমার মন ভাল হয়ে গেছে পুরোপুরি। খুশিখুশি লাগছে। একটা গান শুনে ফেললে খারাপ হয় না। বারো আনা খুশির সাথে চার আনা গান, সমান সমান ষোল আনা সুখ।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ২:১০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×