somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সয়াসসের ঘ্রাণে ভরপুর এক চাইনিজ সন্ধ্যা

৩০ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত বুধবারের কথা। মিউনিখ শহর সেদিন লন্ডন হয়ে গেছে। সকাল থেকে টিপটিপ বৃষ্টি। আকাশে সূর্যের ‘স’-ও নেই। সব মিলিয়ে কেমন একটা বিষণ্ন পরিবেশ। কিছু কাজ জমে আছে। যেগুলো ওই দিন শেষ না করলেই নয়। তারপরও কেন যেন ইচ্ছা করছে না। মেঘলা দিনের অলসতা আমাকে কবজা করে ফেলেছে। এই কবজায় আটকা পড়ে আমার যে খুব খারাপ লাগছে, তা নয়। কিন্তু অস্থির লাগছে। অস্থিরতা বিড়ালের বাচ্চা নয় যে, কোলে নিয়ে পুষতে হবে। এটাকে তাড়াতে হবে। এক কাপ মিন্ট চা বানালাম খুব আয়োজন করে। চায়ের সঙ্গে টা হিসেবে বাদামের কোটা। যেনতেন বাদাম নয়। বাদামের গায়ে ওয়াসাবির কোটিং। ওয়াসাবি হলো জাপানিজ হর্সর‍্যাডিশ। চরম ঝাল। এই ঝালের কোনো মা-বাপ নেই। আমি আবার ঝাল খেকো মানুষ। মিন্ট চায়ের সঙ্গে ওয়াসাবি দেওয়া বাদাম খেতে ভালোই লাগছে। কিন্তু অস্থির ভাবটা কমছে না। কিছু একটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।

মিসেস বিটনারের গাড়ির আওয়াজ পাচ্ছি। টেনিস কোর্ট থেকে ফিরলেন বোধ হয়। তার বন্ধুবান্ধবের অভাব নেই। তারা সপ্তাহান্তে এক জোট হয়ে আড্ডা দেন। এখন আর তাদের টেনিস খেলা হয় না। কারও হাঁটু ব্যথা, কারও হার্টের সমস্যা। তবুও টেনিস কোর্টের পাশে বসে কফির কাপে আড্ডাটা ভালোই জমে। আমার এত কিছু জানার কারণ হলো, আমাকে একদিন ধরে নিয়ে গিয়েছিল মিসেস বিটনার। আমি একটু বেশি মাত্রার ঘরকুনো। এটা তার চোখে পড়ার পর থেকে আমাকে জোর করে এদিক সেদিক নিয়ে যাওয়াটা তিনি একটা দায়িত্ব হিসেবে নিয়ে নিয়েছেন।
এই বাড়িতে ভাড়া থাকি আজকে প্রায় চার মাস। বিটনারও ভাড়া থাকেন। তিনি ফার্স্টহ্যান্ড ভাড়াটে। আমি সেকেন্ডহ্যান্ড। তাঁর ভাড়া করা একতলার একটা রুম নিয়ে আমার রাজত্ব। রাজত্ব বলছি এ কারণে, নিজের রাজত্ব ছাড়া কেউ এত এলোমেলো থাকার সাহস পায় না। প্রথম প্রথম ঘরটা সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতাম। এখন আর সম্ভব হয় না। সময়ের অভাব। মুশকিল হচ্ছে প্রায়ই ঘরে ফিরে দেখি বিছানাপত্র সুন্দর করে ভাঁজ করে রাখা। বুঝতে অসুবিধা হলো না কার কাজ। এক সন্ধ্যায় বিটনারকে বললাম, দেখো, কোনো দরকার নাই কষ্ট করে আমার জিনিসপত্র গোছগাছ করা। এটা তো আমি নিজেই করতে পারি।

কয়েক দিন পর আবিষ্কার করলাম বাথরুমে আমার চুল মোছার তোয়ালেটা ধুয়ে ভাঁজ করে রাখা। মহা যন্ত্রণা। কিন্তু বুঝলাম, বলে লাভ নেই। জার্মানদের মাথায় কিছু একটা ঢুকে গেলে সেটা থেকে বের করা মোটামুটি অসম্ভব ব্যাপার। মাঝখান থেকে আমার মধ্যে ভাড়াটে ভাব চলে গিয়ে একটা পোষ্য-পোষ্য ভাব চলে এসেছে। বিটনার আমার রুম ভ্যাকিউম ক্লিনার দিয়ে ক্লিন করে দেন। তোয়ালে ধুয়ে দেন। বিছানাপত্র পর্যন্ত ঠিকঠাক করে দেন। পোষ্য-পোষ্য না লাগার তো কোনো কারণ নেই।

সেদিন বুধবার রাতে খেয়েদেয়ে থালাবাটি ডিশ ওয়াশারে ঢোকাচ্ছি, এমন সময়ে তিনি হন্তদন্ত হয়ে এসে বললেন, ‘এই উইকএন্ডে কি তোমার টাইম হবে? তাহলে চল চাইনিজ খেয়ে আসি। একজনের পয়সায় দুজন খাওয়া যাবে, এই অফারটা আবার দিচ্ছে ওরা।’ তাকিয়ে দেখলাম তাঁর হাতে কুপন। এর আগে তাঁর সঙ্গে বার দু-এক যাওয়া হয়েছে ওই রেস্তোরাঁয়।

আমার ধারণা মাসে একবার রেস্তোরাঁয় কুপন ছাড়ে আর বিটনার খবরের কাগজ থেকে কুপন কেটে বসে থাকেন দ্বিতীয় কাউকে জোগাড়ের ধান্দায়। আর গত কয়েক মাস যাবৎ এই দ্বিতীয় কেউটা হচ্ছি আমি! যা হোক, আজকে আমার খাদ্য ভাগ্য মনে হয় ভালোই যাবে। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে রেডি হচ্ছি। বিষণ্ন সন্ধ্যাটাকে আর বিষণ্ন মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সয়াসসের ঘ্রাণে ভরপুর এক চাইনিজ সন্ধ্যা।


২৪/০৭/২০১১
রিম সাবরিনা জাহান সরকার
মিউনিখ, জার্মানি।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×