ডঃ নূমান আলী খান, জাতীয়তা আমেরিকান, তিনি একজন আমেরিকান মুসলিম বক্তা। Bayyinah Institute নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
জন্ম ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ। [linkwww.bayyinah.tv|তার প্রতিষ্ঠান]
খান জার্মানীতে জন্মগ্রহণ করেন, তার বাবা মা পাকিস্তানি বংশের। তার পিতা সৌদিআরব রিয়াদে পাকিস্তান দূতাবাসে চাকরি করতেন। তার পর তারা আমেরিকার নিউইয়র্ক এ চলে যায় যখন সে বালক।
তাঁর মাতৃভাষা জার্মানি। কিন্তু শিশু নোমান সেখানে ছয় মাসও থাকেননি। তাঁর বাবা পাকিস্তান দূতাবাসে কাজ করতেন বলে পরিবারসহ ছয় মাস বয়সে তাঁকে পাকিস্তানে চলে আসতে হয়। এখানেও তাঁর পরিবার দু’মাসের বেশি থাকেননি; চলে যান সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় রিয়াদে, একটি পাকিস্তানি উর্দু মিডিয়াম স্কুলে। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ছয় বছর তাঁর পরিবার রিয়াদে অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা চলে যান আমেরিকায়। সেখানে তিনি খ্রিষ্টানদের পরিচালিত একটি হাইস্কুলে ভর্তি হন।
তিনি ১৯৯৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় মেধাতালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে স্থান অর্জন করেন। কিন্তু আরবিতে তার গভীর পড়াশোনা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ডক্টর আব্দুস সামি এর তত্বাবধানে। তিনি আরবি ব্যাকরণ শিখেন পাকিস্তানে।
ডক্টর আব্দুস সামি পাকিস্তানের ফয়সালাবাদের কুরআন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ যিনি সময়ে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেতেন আরবি শিক্ষা এবং কুরআনের তাফসীরের উপরে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখতে। তার অধীনে পড়াশোনায় নোমান আলী খান আরবি ভাষা ও ব্যাকরণের উপরে তীক্ষ্ণ এবং গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি পরবর্তীতে ডক্টর আব্দুস সামির কাছে আরো উপকৃত হন তার সম্পূর্ণ শিক্ষাদান পদ্ধতিকে আত্মস্থ করে। তিনি ডক্টর সামির করা কাজগুলোকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন তার নিজের ছাত্রদের উপকারের জন্য। তার আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষন হল ডা. ফাদেল আল সামারাই।
তিনি সিদ্ধান্ত নেন – যত কষ্ট করে তিনি ইসলাম ও কোরআন শিখেছেন, ততটা কষ্ট যাতে অন্য কোনো মুসলিমের করতে না হয়, সেজন্যে তিনি অনলাইনে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সিদ্ধান্তানুযায়ী ২০০৫ সালে তিনি
বাইয়্যিনাহ ইন্সটিটিউট নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন এবং বাইয়্যিনাহ টিভি নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেন। এই সাইটে কোরআনের সৌন্দর্য, আরবি ভাষা ও ইসলামের ইতিহাসের উপর বর্তমানে পাঁচ শতাধিক ভিডিও ক্লাস রয়েছে।
অনেকে অভিযোগ করে – আধুনিক তরুণরা কোরআন পড়ে না, এরা আরবি পড়তে চায় না। নোমান আলী খান এমন অভিযোগ করেন না। তাঁর কথা হলো – “আমরা যদি তরুণদের জন্যে আরবি ভাষাকে সহজ করে দিতে পারতাম, অবশ্যই তারা আরবি শিখত। আমরা যদি কোরআনকে তাদের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিতে পারতাম, অবশ্যই তারা তা গ্রহণ করত। কারণ ইসলাম মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম। সবাই বলে – আরবি ভাষা ও কোরআন শেখার জন্যে আমার কাছে এসো; কিন্তু আমি নিজেই কোরআন শেখানোর জন্যে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে উপস্থিত হতে চাই”।
নোমান আলী খান মূলত দ্য বাইয়্যিনাহ ইন্সটিটিউট ফর এ্যারাবিক অ্যান্ড কুরআনিক স্টাডিজ-এর প্রতিষ্ঠাতা, সি.ই.ও. এবং প্রধান উপদেষ্টা। নোমান আলী খান নাসাঊ ইউনিভার্সিটি কলেজে আরবির অধ্যাপক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালনের পর ২০০৬ সালে বায়্যিনাহ ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মূলত তার দাওয়াত প্রচার করে থাকেন ভিডিও বক্তৃতার মাধ্যমে। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশনে নিয়মিত বক্তব্য দিয়ে থাকেন। নুমান আলী খান ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন— জীবন, পরিবার এবং ইসলামী মূল্যবোধের উপরে তিনি আলোকপাত করে থাকেন।
বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করেছেন বিভিন্ন জায়গায় ১০ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে সাত বছরের বড় একটি প্রজেক্টে। এই প্রজেক্টে কুরআনের শাব্দিক শৈল্পিকতাকে মূল ধরে ইংরেজিতে তাফসির সিরিজ করা হচ্ছে, যার নাম ড্রিম প্রোগ্রাম। এই তাফসীর সিরিজের বিভিন্ন কন্টেন্ট রেকর্ডিং Linguistic Miracle ওয়েবসাইটটিতে ওয়ার্ড ডকুমেন্ট এবং অডিও ফরম্যাটে পাওয়া যায়। নোমান আলী খান, বর্তমানে তিনি টেক্সাসের ডালাসে বসবাস করছেন।
এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিকভাবে কুরআনের তাফসীর ও কুরআন বোঝার জন্য আরবি ভাষা শিক্ষার উপর লেকচার দিয়ে থাকেন। ইসলামী ব্যক্তিত্বগণের জীবনীভিত্তিক অভিধান দ্য ফাইভ হান্ড্রেড মোস্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল মুসলিমস -এর পঞ্চম সংস্করণে নোমান আলী খানকে কোন র্যাংঙ্কিং ছাড়াই বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিমদের মধ্যে একজন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া, বাইয়্যিনাহ.কম,।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:২০