somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুঃসহ স্মৃতি ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়া

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ করেই ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ গেল। ২৫ নভেম্বর। কেমন যেন মনে হচ্ছিল আজ কোন বিশেষ দিন, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না। অবশেষে মনে পড়লো।



২২ নভেম্বর ২০১২, বৃহস্পতিবার। অনেক প্রতিক্ষার পর ডাকযোগে প্রেরিত এডমিশন কনফার্মেশন ফর্ম হাতে পেলাম। সকালে ফর্ম হাতে পাওয়ার পরই চক্ষু ছানাবড়া। ২৩-২৫ তারিখের ভিতরেই এডমিশন কনফার্ম করা লাগবে। চিন্তা ছিল একটাই। আজই ফর্মের যত আজাইরা ফর্মালিটি, যেমন কলেজে গিয়ে অধ্যাক্ষের সহ কয়েকজন প্রথম শ্রেণি গেজেটেড কর্মকর্তার দারস্থ হওয়া, এগুলো শেষ করতে হবে। মনে করেছিলাম শেষ হবে না কাজ গুলো। কিন্তু কিভাবে যেন শেষ হয়ে গেল।



তড়িঘড়ি না করলেও পারতাম, তবুও মনে হল যেন এডমিশন কনফার্ম যত দ্রুত করা যায় ততই ভাল। যেই ভাবা সেই কাজ। ঝিনাইদহ থেকে চট্টগ্রামের বাসের টিকেট মেনেজ করলাম। সারাদিনের দৌড়া দৌড়িতে শরীর সায় দিচ্ছিল না, তবুও মনের জোরে যাত্রা করলাম। প্রথমে যশোর থেকে ঝিনাইদহ পৌছালাম। বিকাল ৫ টায় বাস ছাড়বে। শীতকালীন বেলা। সন্ধ্যা হবে হবে ভাব। অবশেষে সাড়ে ৫ টায় বাস আসলো এবং ৬ টায় যাত্রা শুরু করলাম। তখনো বার বার মন বলছিল, আজ যাওয়ার দরকার নেই।



বাস চলতে শুরু করলো। ছিলাম বাসের ২য় সারির একদম বামে। সারাদিনের ধকল কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করলাম ঘুমাবার। আনুমানিক রাত ৮ টায় বিকট শব্দে ঘুম ভাঙলো। ফরিদপুরের বদরপুর। চারিদিকে বিস্ময়কর নিস্তব্ধতা। ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি কি হয়েছে। হঠাৎ গুমরে ওঠা চিৎকার। বাম হাত মনে হল ভিজে আছে। কিছুক্ষন পরেই এম্বুলেন্স, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। স্থান হল ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হসপিটাল। হাতে পড়লো ২২ টা সেলাই। তখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি হল।



২৩ নভেম্বর ২০১২, শুক্রবার। লক্ষ্য তখনো একটাই। আমাকে চট্টগ্রামে পৌছাতে হবে। হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়ে তাই যাত্রা শুরু করলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া শরীর কিন্তু ইস্পাত কঠিন মনবল নিয়ে উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা তখনো চালিয়ে যাচ্ছি।



২৪ নভেম্বর ২০১২, শনিবার। ঢাকার অর্থপেডিক হসপিটাল এ ড্রেসিং করালাম। নিজের ভিতরে আরও একটু শক্তি সঞ্চয় করে রাতে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।



২৫ নভেম্বর ২০১২, রবিবার। সকালে চট্টগ্রাম পৌছালাম। ছোট মামার বাসায় গিয়ে হালকা ফ্রেস হয়েই ছুটলাম একাডেমীতে। অবশেষে এডমিশন কনফার্ম করলাম। শরীর, মন সম্পূর্ণ ভেঙেচুরে একাকার। সবকিছুই যেন চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। আর কিছুতেই যেন উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই। তবুও, এখনো কিছু একটা অধরা। অনেক বেশি হোম সিক হয়ে পড়লাম। সিদ্ধান্ত আমাকে নিতেই হত। সিদ্ধান্ত নিলাম যশোর যাওয়ার। অবশেষে ৭ টার বাসে উঠে বসলাম, সম্পূর্ণ একা। মনের ভিতর তখন একটাই আশা, সকালেই নীড় হারা আহত পাখি আবার তার নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। অবশেষে প্রতিক্ষার প্রহর পেরিয়ে পরদিন সকাল ৮ টায় যশোর এসে নামলাম ।



আজ ২৫ নভেম্বর ২০১৫। সেই দুঃসহ স্মৃতির ৩ বছর। সময় কত না দ্রুত পার হয়ে যায়। ৩ বছর পার হয়ে গেল, আর আমি কিনা ভুলে গিয়েছি। দুঃসময় কে ভুলে যাওয়া মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু আমি ভুলে যেতে চাই না। হয়তো সেদিন আমি বাংলাদেশ মেরিন একাডেমীর একজন গর্বিত সদস্য হতে পেরেছিলাম, কিন্তু তার থেকেও বড় পাওয়া ছিল নিজের ক্ষমতা কে উপলব্ধি করা। পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের ভিতরে অসাধারণ ক্ষমতা আছে। শুধু প্রয়োজন সময়মত উপলব্ধি করা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৯
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×