somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যশ চোপড়া : ‌'রোমান্স রাজা'র প্রস্থান

২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতীয় সিনেমায় একটি যুগের অবসান হল। বলিউডের কিংবদন্তি পরিচালক যশ চোপড়া প্রয়াত হলেন। রোববার মুম্বাইয়ের লীলাবতি হাসপাতালে ৮০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বলিউডে রোমান্টিক সিনেমার রূপকার এই চিত্রপরিচালক। সম্প্রতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হন যশ চোপড়া, সেরেও উঠছিলেন। কিন্তু এ দিন দুপুরে হঠাৎই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আর সন্ধ্যার সময়ই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনায় একই সঙ্গে সফল, এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গোণা যাবে। এমনই একজন ছিলেন যশ চোপড়া। ১৯৫৯ সাল থেকে একাধারে চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করে বলিউডে তিনি রাজেন্দ্র কুমার থেকে অমিতাভ বচ্চন কিংবা শাহরুখ খানের মতো অসংখ্য তারকাই তৈরি করেননি, বরং নিজেকেও তিনি তারকার আসনেই বসিয়েছেন। দীর্ঘ ৫৬ বছরের চলচ্চিত্র জীবনে যশ চোপড়া ছবি প্রযোজনা করেছেন ৫৩টি, পরিচালনা করেছেন ২২টি এবং ৩টি ছবির সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। যশ চোপড়ার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের প্রায় সবগুলো ছবিই পেয়েছে দর্শকপ্রিয়তা। ব্যবসা সফল ছবির তালিকা করলেও তাতে সিংহভাগই আসবে তার ছবির নাম। আগামী মাসের দিওয়ালীতে (১৪ নভেম্বর) যশ চোপড়া পরিচালিত সর্বশেষ ছবি ‘যাব তাক হ্যায় জান’ মুক্তি পাবার কথা রয়েছে। শাহরুখ খান অভিনীত এই ছবিটিকে এরই মধ্যে চলচ্চিত্র বোদ্ধারা বছরের সেরা ব্যবসা সফল ছবি হিসেবে আগেই মন্তব্য করেছেন। সেজন্য বলা যায়, মৃত্যুর আগেও যশ চোপড়া যেমন ভারতীয় চলচ্চিত্রে নিজের আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন, তেমনি মৃত্যুর পরও তিনি তার দৌন্ডর্ড প্রতাপ বজায় রাখবেন। কারণ, তার ছবিগুলো তো দর্শকদের কাছে এখনও সমান জনপ্রিয়।

বলিউডকে বিশ্ব চেনে চলচ্চিত্রের গান, রোমান্স আর ডায়লগের জন্য। আর এই তিনটিই ছিল যশ চোপড়ার চলচ্চিত্রের বৈশিষ্ট্য। তাঁর চলচ্চিত্র তৈরির ধরণ তাঁকে আলাদা জায়গা করে দিয়েছে। যশ চোপড়া পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘বীর-জারা’ (২০০৪), ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ (১৯৯৭), ‘লামহে’ (১৯৯১), ‘চাঁদনী’ (১৯৮৯), ‘সিলসিলা’ (১৯৮১), ‘ত্রিশুল’ (১৯৭৮), ‘কাভি কাভি’ (১৯৭৬), ‘জসিলা’ (১৯৭৩), ‘ইত্তেফাক’ (১৯৬৯), ‘ওয়াক্ত’ (১৯৬৫) প্রভৃতি।

১৯৩২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ভারতের লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন যশ চোপড়া। ১৯৫৯ সালে মুক্তি পায় তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘ধুল কা ফুল’। এর আগেই তিনটি ছবিতে তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৬ সালে যশ চোপড়া নিজের নামে যশরাজ ফিল্মস নামের ছবি প্রযোজনা সংস্থা খোলেন। সেই যশরাজ ফিল্মস এখন বলিউডের সেরা প্রযোজনা সংস্থা।

চলচ্চিত্র নির্মাণের বিচারে ভারতে প্রথম ও বিশ্বে ২৭তম অবস্থানে রয়েছে যশরাজ ফিল্মস। বানিজ্যিক দিক থেকে সবচেয়ে সফলও এটি। এই প্রযোজনা সংস্থা থেকেই কেবল গত ১২ বছরে তার প্রযোজিত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো- ‘এক থা টাইগার’ (২০১২), ‘লেডিস ভার্সেস রিকি ভাই’ (২০১১), ‘মেরি ব্রাদার কি দুলহান’ (২০১১), ‘মুঝছে ফ্রেন্ডশিপ কারোাগি’ (২০১১), ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ (২০১০), ‘পেয়ার ইমপসিবল’ (২০১০), ‘দিল বোলে হারিপ্পা’ (২০০৯), ‘নিউইয়র্ক’ (২০০৯), ‘রাব নে বানা দি জোড়ি’ (২০০৮), ‘বাচনা এ হাসিনো’ (২০০৮), ‘থোরা পেয়ার থোরা ম্যাজিক’ (২০০৮), ‘তাহসান’ (২০০৮), ‘আজা নাচলে’ (২০০৭), ‘চাক দে ইন্ডিয়া’ (২০০৭), ‘ঝুম বারা বার ঝুম’ (২০০৭), ‘ধুম-২’ (২০০৬), ‘ফানা’ (২০০৬), ‘সালাম নমস্তে’ (২০০৫), ‘বান্টি অর বাবলী’ (২০০৫), ‘ধুম’ (২০০৪), ‘হাম তুম’ (২০০৪), ‘সাথিয়া’ (২০০২), ‘মুঝে দোস্তি কারোগি’ (২০০২) প্রভৃতি।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন পদ্মভূষণ খেতাবপ্রাপ্ত এই গুণী নির্মাতা। এ ছাড়া পুসান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে এশিয়ার সেরা চলচ্চিত্র নির্মাতার পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার, আইফা, দাদা সাহেব ফালকে, কিশোর কুমার পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন যশ চোপড়া। এ ছাড়া ফ্রান্সের সেরা বেসামরিক পুরস্কার ‘লিজিয়ন অব অনার’এ ভূষিত হয়েছেন যশ চোপড়া। প্রথম ভারতীয় হিসেবে বাফটার আজীবন সদস্যপদ লাভ করেন তিনি।

যশ চোপড়ার মৃত্যুতে গোটা বলিউড শোকাহত। অমিতাভ বচ্চন থেকে শাহরুখ খান- সবাই তাঁদের শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। টুইটার আর ফেসবুকেও যশ চোপড়ার মৃত্যৃতে শোকের ছায়া। বলিউডে যশ চোপড়ার অবস্থানটি কেমন ছিলো তা বোঝা যায় শাহরুখ খানের এই কথাতেই- ‘বাকিদের ছবি তৈরি হয় ক্যামেরা, সাউন্ড, লাইট আর ক্যাসেট দিয়ে আর যশের ছবিগুলো হয় হৃদয় দিয়ে। তাই কখনো কখনো তার ছবি দেখতে দিল তো পাগল হোতা হ্যায়।’
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ২:০৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×