somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"গণমাধ্যম" বনাম "অনলাইন গণমাধ্যম"

২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ই-মেইল মারফত জানতে পারলাম, ২১ মে থেকে নতুন একটি অনলাইন টিভি (৭১নিউজ.টিভি)-এর যাত্রা শুরু হয়েছে। যে কোন নতুন মিডিয়ার যাত্রা শুরু অবশ্যই অভিনন্দনের দাবি রাখে। তবে আমার দৃষ্টিভঙ্গি এক্ষেত্রে ভিন্ন। আর এই ভিন্ন বিষয়টি খোলসা করার জন্যই এই পোস্টের অবতারণা।

যত দিন যাচ্ছে ততই ইন্টারনেট হাতের মুঠোয় চলে আসছে। ইন্টারনেটের মূল্যও পূর্বের তুলনায় যেমন কমছে তেমন স্পিডও বৃদ্ধি পেয়েছে বেশ। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য আগে যাদের বাসা বা অফিসের ব্রডব্র্যান্ডই ছিল ভরসা, তারাই এখন নিজেদের মোবাইল ফোনেই থ্রিজি স্পিডের ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। এ কারণে যতই ইন্টারনেটের প্রসার ঘটছে, ততই ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ- দেশে এখন ই-কর্মাসের বিস্তার ঘটেছে। এতে ভোক্তা ও বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হচ্ছেন। তবে এই আলোচনার উদ্দেশ্য ই-কমার্স নয়। বরং ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে গণমাধ্যমের কিরূপ পরিবর্তন (নেগেটিভ ভাবে) এসেছে সেটাই তুলে ধরা।

বছর পাঁচেক আগেও দেশে এতো অনলাইন নিউজ পোর্টালের আধিক্য ছিল না। এর বিস্তার ঘটেছে মূলত ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে। এখন অনেক নিউজ পোর্টালই তাদের অ্যাপস বানাচ্ছেন যেন পাঠকরা সহজেই মোবাইলেই তাদের সাইটের নিউজ পড়তে পারেন। তবে প্রশ্নটা হলো, প্রফেশনাল নিউজ পোর্টাল/সার্ভিস আসলে দেশে কতগুলো আছে?

যে কোন ধরণের পত্রিকা প্রকাশের জন্য ন্যূনতম কিছু মানদণ্ড ফলো করা হয়। একটি অফিস (অবকাঠামো), ছাপাখানা (যদি থাকে), বিভিন্ন সেকশেনর লোকবল (নিউজ, মার্কেটিং, সার্কুলেশন, কমপিউটার প্রভৃতি), সরকারী বেতন কাঠামো অনুসরণ করা (যদি সরকারী বিজ্ঞাপনের জন্য তালিকাভুক্ত হন), সম্পাদকের যোগ্যতাসহ নানা বিষয়। তেমনি একটি প্রফেশনাল অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য এগুলোর মধ্যে যেগুলো প্রযোজ্য সেগুলো থাকা বাঞ্চনীয়। এখন প্রশ্ন হলো, দেশের শত শত নিউজ পোর্টালের মধ্যে কতগুলোকে প্রফেশনাল বলা যাবে। উত্তর খুব সহজ, খুবই সামান্য।

ডিএফপি'র অনুমতি ব্যতিত কেউ পত্রিকা প্রকাশ করতে পারে না। কিন্তু অনলাইনের ক্ষেত্রে এসবের বালাই-ই নাই। যে কেউ ইচ্ছা করলেই নিউজ পোর্টাল বের করছে। দেখা যায়, যিনি বা যারাই এসব নিউজ পোর্টালের সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন তাদের অধিকাংশেরই গণমাধ্যমে কাজের ন্যূনতম ধারণাও নেই। যে কোন নিউজ, যা খুশি তাই-ই অহরহ প্রকাশ করা হচ্ছে। নিউজের নেই কোন মানদণ্ড, নেই কোন চেকিংয়ের ক্ষেত্র। সত্য-মিথ্যা বা মনগড়া অনেক কিছুই প্রকাশ করা হচ্ছে অনলাইন নিউজ পোর্টালে। অনলাইন একটা নীতিমালার কথা দীর্ঘদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এই নীতিমালা হলে আদৌ কি এসবের পরিবর্তন হবে কিনা সেটা নিয়েই আমি সন্দিহান। মোটাদাগে বলা যায়, নিউজের প্রসারের ক্ষেত্রে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর ভূমিকা যেমন অনস্বীকার্য, তেমনি সাংবাদিকতার মানের অবনমনের জন্যও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোই মূলত দায়ী।

এবার আসি গণমাধ্যমের অন্যতম দুটি চ্যাপ্টার টেলিভিশন ও রেডিও'র প্রসঙ্গে। দেশে যে কোন টেলিভিশন ও রেডিও চালানোর জন্য সরকার কর্তৃক অনুমতির প্রয়োজন হয়। তবে অনলাইন রেডিও কিংবা টিভির ক্ষেত্রে এসবের বালাই এখন পর্যন্ত নাই। ব্যাপারটা অনেকটা পূর্বের প্যারায় আলোচনা করা নিউজ পোর্টালগুলোর মতো। ফলে গত কয়েক বছর আমরা অসংখ্য অনলাইন রেডিও'র কথা শুনেছি। এসব রেডিও'র বেশ কিছুর কথাই জানি, যেগুলো এখন আলো থেকে অন্ধকারে চলে গেছে। অর্থাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারী অনুমতি প্রাপ্ত একটি গণমাধ্যম ইচ্ছা করলেই যেমন কাজ শুরু করতে পারে না, তেমনি ইচ্ছা করলেই সেটি বন্ধ করা যায় না। বিশেষ করে সেটি যদি মালিকপক্ষ বন্ধও করে দেন তবে এতে কর্মরতদেরকে ক্ষতিপূরণ দেবার বিধান রয়েছে।

কিন্তু অনলাইন গণমাধ্যমগুলোতে এসবের বালাই-ই নেই। তারা ইচ্ছা করলেই যাত্রা শুরু করে, ইচ্ছা করলেই স্থগিত রাখে, আবার ইচ্ছা করলেই তাদের সাইট ক্লোজ করে দেয়। এ কারণে অনেক অনলাইন গণমাধ্যমে কর্মরতরা মূলত এক ধরণের আস্থাহীনতায় ভোগেন। হুটহাট করে কর্মী ছাটাই তো এসব প্রতিষ্ঠানের নিত্য অভ্যাস। উপরন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান তো "ওয়ানম্যান শো"! অর্থাৎ, যিনি মালিক তিনিই গণমাধ্যম চালান। তার নেই কোন কর্মী, নেই কোন অফিস। একটা ল্যাপটপই তার অফিস। এ রকম ব্যক্তিকেন্দ্রীক সাইটের সংখ্যা যে মোটেই কম নয়, সেটিই কেবল বলার আছে। বাকিটা পাঠকই কল্পনা করে নিন।

এবার আসি, ভূমিকায় যে বিষয়টির অবতারণা করেছিলাম, সেই অনলাইন টিভির কথা প্রসঙ্গে। দেশে এখনো অনলাইনে নিউজ পোর্টাল বা রেডিও'র বিস্তারের মতো টেলিভিশনের বিস্তার ঘটেনি। তবে ২/১ বছরের মধ্যে এটির বেশ ঘনঘটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নতুন আসা এসব অনলাইন টিভি চ্যানেলগুলোর কেউ কেউ বেশ গুছিয়ে কাজ করছেন, কিন্তু অন্যদের অবস্থা এখনো বিগেনার পর্যায়ে। মনে রাখাটা জরুরি, যে কোন গণমাধ্যমই বিন্তু খেলনা কোন উপাদান নয়। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সুতরাং, একটি গণমাধ্যম, সেটি সরকার কর্তৃক স্বীকৃতই হোক বা ব্যক্তির ইচ্ছার প্রতিফলন হোক না কেন, সাধারণ পাঠক বা দর্শকের কাছে কিন্তু সমান গুরুত্ব পায়। এর মাধ্যমেও কিন্তু পাঠক/দর্শককে বিভ্রান্ত করার সুযোগ থাকে। বিশেষ করে টিভি বা রেডিওতে প্রচারিত অনুষ্ঠান বা নিউজের মান যেন শ্রোতা ও দর্শকদেরকে বিভ্রান্ত না করে সেদিকে অন্তত নজর রাখাটা জরুরি।

এ কথা মনে রাখাটা জরুরি যে, অ্যালেক্সার তালিকায় উপরে ঠাঁয় পাবার অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টালই তাদের সাংবাদিকতার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছেন। তেমনি অনলাইন রেডিও বা অনলাইন টিভি চ্যানেলগুলো যেন তাদের অনুষ্ঠান বা নিউজ দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে লজ্জায় না ফেলেন সেদিকে দৃষ্টি দেয়াটা জরুরি।

অনেক হয়েছে, এবার এসব কিছু দেখভালের জন্য কোন উপায় বের করা দরকার। দরকার নির্দিষ্ট নীতিমালা বা সরকারী নজরদারির। নচেৎ, সব না হলেও অনেক কিছুই যে এক সময় নষ্টদের হাতেই চলে যাবে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।


প্রকাশিত
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×