somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তানজীর আহমেদ সিয়াম
সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি কোন ব্লগার নই মন চায় তাই লিখি তথ্য-উপাত্ত সবার সাথে শেয়ার করি ।nজব এর পাশাপাশি এয়ার টিকেট ও ট্রাভেল ভিসার ব্যাবসা করি ।nধন্যবাদn

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৬ই নভেম্বর, একাত্তরে পাকি হার্মাদ বাহিনীর কলজে পানি করা, 'দাস পার্টি'র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জগতজ্যোতি দাস শ্যামা বীর বিক্রম'র ৪৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী। রাষ্ট্রীয় ভাবে দিনটিকে স্মরণ করা হয়নি, আমাদের বিস্মরণের স্রোতে শহীদ জগতজ্যোতি দাস ভেসে গিয়েছেন।
অথচ, এই বীর মুক্তিযোদ্ধা'কে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি'তে ভূষিত করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর তাঁকে মরণোত্তর 'বীর বিক্রম' উপাধি দেয়া হয়, ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ সনদ নম্বর ১৫৪।
শহীদ জগতজ্যোতি দাস রইবেন সাধারণ মানুষের ভিড়ে। তাঁর আত্মার চিরশান্তি প্রার্থনা করি।
বাঙলার জ্যোতিঃ শহীদ জগতজ্যোতি দাস শ্যামা 'বীর বিক্রম




★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★


একাত্তর এসেছিলো বাঙলাদেশের মাটি থেকে অভিজাততন্ত্রের শেকড় চিরতরে উপড়ে ফেলার দুঃসাহস নিয়ে। একাত্তরের বীরেরা এসেছিলো ধর্ম, বর্ণ, সামাজিক, অর্থনৈতিক শ্রেণিভেদ মুছে ফেলতে, ঘূর্ণিঝড় হয়ে। আজ জগতজ্যোতি দাসের কথা আমরা জানিনা, যেন মনে রাখার প্রয়োজনই নেই।
শহীদ জগতজ্যোতি আমাদের স্মৃতি প্রকোষ্ঠে বিস্মৃত হয়ে যাওয়া এক অসীম সাহসীর উপাখ্যান। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরে এসে আমরা দেখতে পাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি দাস’কে নিয়ে লিখিত প্রবন্ধ বা ইতিহাসভিত্তিক রচনার সংখ্যা ১০ টির অধিক নয় !! আমাদের নির্লজ্জতার এক নিষ্ঠুর বলি শহীদ জগতজ্যোতি দাস, ডাকনাম শ্যামা। যার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল “দাস কোম্পানি” নামে ৩৬ (মতান্তরে ২৫) জনের মুক্তিযোদ্ধা দল।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি ১৯৭১ সালে ছিলেন মাত্র একুশ বছরের এক কলেজ ছাত্র। তো, এই কলেজ ছাত্র কি করেছিলো তা আপনাদের একটু মনে করিয়ে দেই। ভাটিবাংলার বিশাল হাওরবেস্টিত এলাকা - সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জের প্রায় প্রতিটি থানা মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন হয়েছিলো তার নেতৃত্বে। ৩৬ (মতান্তরে ২৫) জনের দল নিয়ে তার বাহিনী ‘দাস কোম্পানি’ । সাব সেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিলো তাহিরপুরের বড়ছড়া (টেকেরঘাট)। সেই তাহিরপুর থেকে জামালগঞ্জ, দিরাই, খালিয়াজুড়ি,মদন, মার্কুলি, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, বাহুবল হয়ে আশুগঞ্জ পর্যন্ত সে ছোটে বেড়াতো দেশী নৌকা নিয়ে।
মার্কুলির কাছে পাক আর্মির জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার কৃতিত্ব তার। জগতজ্যোতির ও তার দাস কোম্পানির ভয়ে ভৈরব থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষনা করতে বাধ্য হয় পাক আর্মি এবং এয়ার সাপোর্ট সহ বিশেষ কমান্ডো টিম পাঠানো হয় শুধুমাত্র শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি'কে নিশানা করে।
জগতজ্যোতি দাস 'বীর বিক্রম'
★★★★★★★★★★★★★★★
সহযোদ্ধাদের রক্ষার জন্য একাকী লড়ে প্রাণ দিয়ে যাওয়া বাঙলার সূর্য সন্তান, ভাটি অঞ্চলের মাহানায়ক শ্যামা।হবিগঞ্জের আজমীরিগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে এক অখ্যাত নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম দুঃসাহসী এই মুক্তিযোদ্ধার। বাবা জীতেন্দ্র চন্দ্র দাস ও মা হরিমতি দাসের কনিষ্ঠ পুত্র জগৎজ্যোতি দাস, জন্ম ২৬ এপ্রিল, ১৯৪৯ সালের । বাবা ও বড় ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও তিনি ১৯৬৮ সালে ২য় বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোন। ১৯৬৮ সালে তিনি ভর্তি হোন সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে। ১৯৭১ সালে ছিলেন এইচএসসি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।
যুদ্ধের রনকৌশল রপ্ত করতে ট্রেনিংয়ের জন্যে চলে যান মেঘালয়ে। প্রায় ৩২ দিনের প্রশিক্ষন পর্বের মধ্যে ইকো-১ ট্রেনিং ক্যাম্পের ডিউটি সার্জেন্ট এর দয়িত্ব পালন করেন। ঐ সময়ে এ্যামবুশে পা দিলে কিভাবে বের হওয়া যায়, গ্রেনেড নিক্ষেপ, বিমান ধংশ, স্থলপথে শত্রুকে পরাস্ত করার কৌশল সহ গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধের ময়দানে একজন দক্ষ সৈনিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন জগৎজ্যোতি। নেতৃত্বের গুনাবলী থাকায় ৩৬ (মতান্তরে ২৫) জনের সাহসী যুবক নিয়ে গড়ে তোলেন দাস কোম্পানি। সহ-অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন ইলিয়াছ। শহীদ জগতজ্যোতি দাস বীরবিক্রম তার প্রথম কোম্পানী কমাণ্ডার ছিলেন। তাঁর দ্বিতীয় কোম্পানী কমাণ্ডার ছিলেন ইটনার ছিলনী গ্রামেরই সহযোদ্ধা শহীদ সিরাজুল ইসলাম বীরবিক্রম এবং সর্বশেষ কোম্পানী কমাণ্ডার ছিলেন মতিউর রহমান বীরবিক্রম।
মুক্তিযুদ্ধে টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের অধীনে বিস্তৃর্ণ ভাটি অঞ্চল শত্রুমুক্ত রাখার দায়িত্ব পড়েছিল তাঁর উপর। দিরাই, শাল্লা, ছাতক, আজমিরিগঞ্জ, বানিয়াচং, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার নৌপথ পাক দখলমুক্ত রাখার যুদ্ধে প্রাণের বাজি রেখে লড়ে যান দাস কোম্পানির যোদ্জদ্ধারেসব অঞ্চলে তিনি ছিলেন পাকি বাহিনীকে দলিত-মথিত করে এগিয়ে যাবার অগ্রপথিক।
শুধু মাত্র তাঁর সাহসী অভিযানের কারনে পাকিস্তান সরকার রেডিওতে ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়, “ এই রুট দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের জানমালের দায়িত্ব সরকার নেবে না”। মাত্র ১৩ জন সহযোদ্ধা নিয়ে বানিয়াচঙে পাকবাহিনীর ২৫০ জন সেনা ও দোসরদের অগ্রগতি রোধ করে দেন, যুদ্ধে প্রাণ হারায় পাকি বাহিনীর ৩৫ জল্লাদ। পাকি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের কাছে জগৎজ্যোতি ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক। বিশাল ভাটিবাংলায় পাকি বাহিনীকে পরাভূত করতে দাবড়ে বেড়িয়েছেন তিনি।
জামালপুর মুক্ত করার অভিযানে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হন জগৎজ্যোতি, হারাতে হয় তাঁর সহযোদ্ধা বীর সিরাজুল ইসলামকে। মাত্র ১০-১২ জন সহযোদ্ধা নিয়ে তিনি মুক্ত করেন শ্রীপুর। খালিয়াজুড়ি থানায় ধ্বংস করে দেন শত্রুদের বার্জ। আগস্ট মাসে কোন গুলি করা ছাড়াই দিরাই-শাল্লায় অভিযান চালিয়ে কৌশলে আটক করেন দশ সদস্যের রাজাকারের দলকে। যারা এলাকায় নির্যাতন চালাচ্ছিল, খুন, ধর্ষণ ও লুটপাট চালাচ্ছিলো। রানীগঞ্জ ও কাদিরীগঞ্জে অভিযান চালিয়েও জ্যোতি আটক করেন ঘরের শত্রু রাজাকারদের। ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার জামালগঞ্জ থানা ও নৌবন্দর সাচনাবাজার শত্রুমুক্ত করে আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন।
স্বাধীন বাংলা বেতারে তাঁর বীরত্বগাঁথা, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রণকৌশল আর কূট চালে তাঁকে মূল টার্গেট করা হয়। সুযোগের সন্ধানে মেতে উঠে পাকি-দোসর রাজাকাররা। তাঁর নেতৃত্বে সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কের বদলপুর ব্রীজ বিধ্বস্থ করা হয় আর তাঁরই কৃতিত্বের কারণে ভারতীয় কমান্ড বাহিনীর মেজর জি,এস,ভাটের প্রশংসা লাভ করেন। ১৭ আগস্ট পাহাড়পুরে কমান্ডার জগৎজ্যোতির রণকৌশল আর বীরত্বে রক্ষা পায় অসংখ্যা নিরীহ নর-নারী। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে তাঁর বীরত্বগাঁথা প্রচার হয়। জগৎজ্যোতি একা হাতে একটি এলএমজি নিয়ে দখন করে নেন জামালপুর থানা যেখানে আস্তানা গেড়েছিল স্থানীয় পাকি-দোসর রাজাকাররা।
১৬ নভেম্বর ১৯৭১, শহীদ জগতজ্যোতি জানতেন না এই দিনে তাঁর অন্তিম অভিযান পরিচালিত হবে। শহীদ জগতজ্যোতিদ তাঁর অধীনস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্যস্থল ছিল বাহুবল (মতান্তরে বানিয়াচং)।
কিন্তু লক্ষ্যস্থলে যাবার পূর্বেই বদলপুর নামক স্থানে হানাদারদের কূট-কৌশলের ফাঁদে পা দেন জগৎজ্যোতি। বদলপুরে ৩/৪ জন রাজাকার ব্যবসায়ীদের নৌকা আটক করে চাঁদা আদায় করছিল। দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ জ্যোতি রাজাকারদের ধরে আনার নির্দেশ দেন।
কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দেখেই পিছু হঠতে থাকে কৌশলী রাজাকাররা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন জগৎজ্যোতি- ভাবতেও পারেননি কী ফাঁদ তাঁর সামনে। সাথের ১০/১২ জন মুক্তিযোদ্ধা আর সামান্য গোলাবারুদ নিয়ে তাড়া করেন রাজাকারদের। অদূরেই কুচক্রী পাকসেনাদের বিশাল বহর আর প্রচুর সংখ্যক গোলাবারুদ নিয়ে অপেক্ষা করছিল তাঁর। অজান্তেই চক্রব্যূহে প্রবেশ করেন জগৎজ্যোতি। আগে থেকে প্রস্তুত পাকি বাহিনীর বিশাল বহরের ফাঁদে পড়ে যান জগৎজ্যোতি ও তাঁর সহযোদ্ধারা। ঘুঙ্গিয়ারগাঁও থানা [বর্তমানে শাল্লা উপজেলা সদর] পাক ক্যাম্প থেকে মাত্র ২০০ গজ দুরে রাজাকার আর পাকি বাহিনীর আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে দাস কোম্পানি।
রণাঙ্গণে পরিস্হিতির ভয়াবহতা চিন্তা করে এক পর্যায়ে জ্যোতি তার দলকে বাচানোর জন্য রিট্রিট করার নির্দেশ দিয়ে একটি মাত্র এলএমজি নিয়ে নিজে কাভারিং ফায়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন । এজন্য জ্যোতি সহযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিনকে নির্দেশ দেন যাতে অন্যরা তাদের জীবন বাঁচিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যায় । এরপর দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন মাত্র দুইজন, জ্যোতি ও ইলিয়াছ। তারা যুদ্ধ করতে থাকেন একটানা কিন্তু হঠাৎ সহযোদ্ধা ইলিয়াস পাঁজরে গুলিবিদ্ধ হন। জ্যোতি পিছু না হটে তার মাথার লাল পাগড়ি খুলে শক্ত করে ইলিয়াসের বুকে‌ এবং পিঠে বেঁধে দেয়, যাতে তার রক্তক্ষরণ থেমে যায়।
যুদ্ধের এক পর্যায়ে জগতজ্যোতি দাস বিকেল ৩টায় নতুন ম্যাগাজিন লোড করে পজিশন নিয়ে শত্রুর অবস্থান দেখার জন্য মাথা উঁচু করতেই একটি বুলেট তার বুকে বিদ্ধ হয়। জগতজ্যোতি তখন ‘আমি আর নাই, আমি গেলাম’ বলে কৈয়াবিলের পানিতে ডুবে যান।
লোকমুখে শোনা যায়, গুলিবদ্ধ হওয়ার পরেও তিনি জীবিত ছিলেন। তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় অত্যাচার করতে করতে। তাঁর গায়ে পেরেক বিদ্ধ করে সেই ছবি খবরে ছাপানো হয়।
আজমিরিগঞ্জ বাজারে নিয়ে আসা হয় তাঁর লাশ। তখন ছিল ঈদের বাজার। শত শত লোকের সামনে খুঁটির সাথে বেঁধে ক্ষত-বিক্ষত করা হয় তাঁর লাশকে। রাজাকাররা থু থু ফেলতে থাকে তাঁর উপর। এমনকি জগৎজ্যোতির মা-বাবাকেও ধরে আনা হয় বিভৎস লাশ দেখাতে। পরিবারে যখন স্বজন হারানোর কান্নার রোল তখন আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় জগৎজ্যোতির বাড়িতে। ভাসিয়ে দেওয়া হয় তাঁর ক্ষত-বিক্ষত লাশ ভেড়ামোহনার জলে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ জানান, বীরগতিপ্রাপ্ত জগৎজ্যোতিকে বীরশ্রেষ্ট খেতাব দেওয়ার ঘোষনা দেওয়া হয়েছিল একাধিকবার এবং তার বীরত্বগাথা প্রচার হচ্ছিল সম্মানের সঙ্গে। অল ইন্ডিয়া রেডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয় জগৎজ্যোতির বীরত্বগাঁথা।
অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ মরণোত্তর পদক প্রদানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে জগৎজ্যোতিকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক প্রদানের ঘোষণা সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পরে প্রতিশ্রুতি থেকে ফিরে আসেন বাংলাদেশ সরকার, কোন এক অজ্ঞাত কারণে। ১৯৭২ সালে জগৎজ্যোতিকে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। বাস্তবে পুরস্কার প্রদান করা হয় তারও দুই যুগ পরে।
এই বীরের মৃত্যু'র পর স্বাধীন বাংলা বেতারে ঘোষিত হয়েছিল তাকে দেয়া হবে সর্বোচ্চ খেতাব। কিন্ত ভাটির মহানায়ক শহীদ জগতজ্যোতি দাস শ্যামাকে আজও দেয়া হয়নি সেই সর্বোচ্চ খেতাব। আইনের ম্যার প্যাচে সরকার ঘোষিত বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি শুধু ঘোষনাই রয়ে গেল।
কিন্তু কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর জগৎজ্যোতির সহযোদ্ধাদের যারা বেঁচে আছেন তাঁদের আজও জানা নদে। যারা বেঁচেছিলেন স্বাধীনতার পরেও তাঁরাও এই প্রশ্নের উত্তর না পেয়েই চলে গেছেন পরপারে। এ প্রশ্ন এখন আমাদের বিবেকের কাছে? কোন মুক্তিযোদ্ধাই পুরস্কারের লোভে যুদ্ধে যান নি, গিয়েছিলেন মাতৃভূমি স্বাধীন করতে। আমরাই তাঁদের শ্রদ্ধাভরে খেতাবে ভূষিত করি, আমরাই পুরস্কার প্রদান করি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে। তবে কেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি দাস শ্যামা, প্রতিশ্রত সম্মানও পাননি?
বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি বদলে, তিনি হয়ে গেলেন বীর বিক্রম !!!
এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো বা পাওয়া যাবে না। অন্ধকার বদ্ধঘরের দেওয়ালে প্রতিধ্বনিত হতে হতে থেমে যাবে একসময়।
তথ্য সুত্রঃ মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী’র একাত্তরের দিরাই-শাল্লা ।
ছবিঃ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি দাসের পেরেক ঠোকা মৃতদেহ।

১৬ই নভেম্বর, একাত্তরে পাকি হার্মাদ বাহিনীর কলজে পানি করা, 'দাস পার্টি'র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জগতজ্যোতি দাস শ্যামা বীর বিক্রম'র ৪৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী। রাষ্ট্রীয় ভাবে দিনটিকে স্মরণ করা হয়নি, আমাদের বিস্মরণের স্রোতে শহীদ জগতজ্যোতি দাস ভেসে গিয়েছেন।
অথচ, এই বীর মুক্তিযোদ্ধা'কে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি'তে ভূষিত করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর তাঁকে মরণোত্তর 'বীর বিক্রম' উপাধি দেয়া হয়, ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ সনদ নম্বর ১৫৪।
শহীদ জগতজ্যোতি দাস রইবেন সাধারণ মানুষের ভিড়ে। তাঁর আত্মার চিরশান্তি প্রার্থনা করি।
বাঙলার জ্যোতিঃ শহীদ জগতজ্যোতি দাস শ্যামা 'বীর বিক্রম




★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
একাত্তর এসেছিলো বাঙলাদেশের মাটি থেকে অভিজাততন্ত্রের শেকড় চিরতরে উপড়ে ফেলার দুঃসাহস নিয়ে। একাত্তরের বীরেরা এসেছিলো ধর্ম, বর্ণ, সামাজিক, অর্থনৈতিক শ্রেণিভেদ মুছে ফেলতে, ঘূর্ণিঝড় হয়ে। আজ জগতজ্যোতি দাসের কথা আমরা জানিনা, যেন মনে রাখার প্রয়োজনই নেই।
শহীদ জগতজ্যোতি আমাদের স্মৃতি প্রকোষ্ঠে বিস্মৃত হয়ে যাওয়া এক অসীম সাহসীর উপাখ্যান। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরে এসে আমরা দেখতে পাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি দাস’কে নিয়ে লিখিত প্রবন্ধ বা ইতিহাসভিত্তিক রচনার সংখ্যা ১০ টির অধিক নয় !! আমাদের নির্লজ্জতার এক নিষ্ঠুর বলি শহীদ জগতজ্যোতি দাস, ডাকনাম শ্যামা। যার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল “দাস কোম্পানি” নামে ৩৬ (মতান্তরে ২৫) জনের মুক্তিযোদ্ধা দল।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি ১৯৭১ সালে ছিলেন মাত্র একুশ বছরের এক কলেজ ছাত্র। তো, এই কলেজ ছাত্র কি করেছিলো তা আপনাদের একটু মনে করিয়ে দেই। ভাটিবাংলার বিশাল হাওরবেস্টিত এলাকা - সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জের প্রায় প্রতিটি থানা মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন হয়েছিলো তার নেতৃত্বে। ৩৬ (মতান্তরে ২৫) জনের দল নিয়ে তার বাহিনী ‘দাস কোম্পানি’ । সাব সেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিলো তাহিরপুরের বড়ছড়া (টেকেরঘাট)। সেই তাহিরপুর থেকে জামালগঞ্জ, দিরাই, খালিয়াজুড়ি,মদন, মার্কুলি, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, বাহুবল হয়ে আশুগঞ্জ পর্যন্ত সে ছোটে বেড়াতো দেশী নৌকা নিয়ে।
মার্কুলির কাছে পাক আর্মির জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার কৃতিত্ব তার। জগতজ্যোতির ও তার দাস কোম্পানির ভয়ে ভৈরব থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষনা করতে বাধ্য হয় পাক আর্মি এবং এয়ার সাপোর্ট সহ বিশেষ কমান্ডো টিম পাঠানো হয় শুধুমাত্র শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি'কে নিশানা করে।
জগতজ্যোতি দাস 'বীর বিক্রম'
★★★★★★★★★★★★★★★
সহযোদ্ধাদের রক্ষার জন্য একাকী লড়ে প্রাণ দিয়ে যাওয়া বাঙলার সূর্য সন্তান, ভাটি অঞ্চলের মাহানায়ক শ্যামা।হবিগঞ্জের আজমীরিগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে এক অখ্যাত নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম দুঃসাহসী এই মুক্তিযোদ্ধার। বাবা জীতেন্দ্র চন্দ্র দাস ও মা হরিমতি দাসের কনিষ্ঠ পুত্র জগৎজ্যোতি দাস, জন্ম ২৬ এপ্রিল, ১৯৪৯ সালের । বাবা ও বড় ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও তিনি ১৯৬৮ সালে ২য় বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোন। ১৯৬৮ সালে তিনি ভর্তি হোন সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে। ১৯৭১ সালে ছিলেন এইচএসসি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।
যুদ্ধের রনকৌশল রপ্ত করতে ট্রেনিংয়ের জন্যে চলে যান মেঘালয়ে। প্রায় ৩২ দিনের প্রশিক্ষন পর্বের মধ্যে ইকো-১ ট্রেনিং ক্যাম্পের ডিউটি সার্জেন্ট এর দয়িত্ব পালন করেন। ঐ সময়ে এ্যামবুশে পা দিলে কিভাবে বের হওয়া যায়, গ্রেনেড নিক্ষেপ, বিমান ধংশ, স্থলপথে শত্রুকে পরাস্ত করার কৌশল সহ গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধের ময়দানে একজন দক্ষ সৈনিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন জগৎজ্যোতি। নেতৃত্বের গুনাবলী থাকায় ৩৬ (মতান্তরে ২৫) জনের সাহসী যুবক নিয়ে গড়ে তোলেন দাস কোম্পানি। সহ-অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন ইলিয়াছ। শহীদ জগতজ্যোতি দাস বীরবিক্রম তার প্রথম কোম্পানী কমাণ্ডার ছিলেন। তাঁর দ্বিতীয় কোম্পানী কমাণ্ডার ছিলেন ইটনার ছিলনী গ্রামেরই সহযোদ্ধা শহীদ সিরাজুল ইসলাম বীরবিক্রম এবং সর্বশেষ কোম্পানী কমাণ্ডার ছিলেন মতিউর রহমান বীরবিক্রম।
মুক্তিযুদ্ধে টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের অধীনে বিস্তৃর্ণ ভাটি অঞ্চল শত্রুমুক্ত রাখার দায়িত্ব পড়েছিল তাঁর উপর। দিরাই, শাল্লা, ছাতক, আজমিরিগঞ্জ, বানিয়াচং, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার নৌপথ পাক দখলমুক্ত রাখার যুদ্ধে প্রাণের বাজি রেখে লড়ে যান দাস কোম্পানির যোদ্জদ্ধারেসব অঞ্চলে তিনি ছিলেন পাকি বাহিনীকে দলিত-মথিত করে এগিয়ে যাবার অগ্রপথিক।
শুধু মাত্র তাঁর সাহসী অভিযানের কারনে পাকিস্তান সরকার রেডিওতে ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়, “ এই রুট দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের জানমালের দায়িত্ব সরকার নেবে না”। মাত্র ১৩ জন সহযোদ্ধা নিয়ে বানিয়াচঙে পাকবাহিনীর ২৫০ জন সেনা ও দোসরদের অগ্রগতি রোধ করে দেন, যুদ্ধে প্রাণ হারায় পাকি বাহিনীর ৩৫ জল্লাদ। পাকি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের কাছে জগৎজ্যোতি ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক। বিশাল ভাটিবাংলায় পাকি বাহিনীকে পরাভূত করতে দাবড়ে বেড়িয়েছেন তিনি।
জামালপুর মুক্ত করার অভিযানে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হন জগৎজ্যোতি, হারাতে হয় তাঁর সহযোদ্ধা বীর সিরাজুল ইসলামকে। মাত্র ১০-১২ জন সহযোদ্ধা নিয়ে তিনি মুক্ত করেন শ্রীপুর। খালিয়াজুড়ি থানায় ধ্বংস করে দেন শত্রুদের বার্জ। আগস্ট মাসে কোন গুলি করা ছাড়াই দিরাই-শাল্লায় অভিযান চালিয়ে কৌশলে আটক করেন দশ সদস্যের রাজাকারের দলকে। যারা এলাকায় নির্যাতন চালাচ্ছিল, খুন, ধর্ষণ ও লুটপাট চালাচ্ছিলো। রানীগঞ্জ ও কাদিরীগঞ্জে অভিযান চালিয়েও জ্যোতি আটক করেন ঘরের শত্রু রাজাকারদের। ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার জামালগঞ্জ থানা ও নৌবন্দর সাচনাবাজার শত্রুমুক্ত করে আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন।
স্বাধীন বাংলা বেতারে তাঁর বীরত্বগাঁথা, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রণকৌশল আর কূট চালে তাঁকে মূল টার্গেট করা হয়। সুযোগের সন্ধানে মেতে উঠে পাকি-দোসর রাজাকাররা। তাঁর নেতৃত্বে সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কের বদলপুর ব্রীজ বিধ্বস্থ করা হয় আর তাঁরই কৃতিত্বের কারণে ভারতীয় কমান্ড বাহিনীর মেজর জি,এস,ভাটের প্রশংসা লাভ করেন। ১৭ আগস্ট পাহাড়পুরে কমান্ডার জগৎজ্যোতির রণকৌশল আর বীরত্বে রক্ষা পায় অসংখ্যা নিরীহ নর-নারী। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে তাঁর বীরত্বগাঁথা প্রচার হয়। জগৎজ্যোতি একা হাতে একটি এলএমজি নিয়ে দখন করে নেন জামালপুর থানা যেখানে আস্তানা গেড়েছিল স্থানীয় পাকি-দোসর রাজাকাররা।
১৬ নভেম্বর ১৯৭১, শহীদ জগতজ্যোতি জানতেন না এই দিনে তাঁর অন্তিম অভিযান পরিচালিত হবে। শহীদ জগতজ্যোতিদ তাঁর অধীনস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্যস্থল ছিল বাহুবল (মতান্তরে বানিয়াচং)।
কিন্তু লক্ষ্যস্থলে যাবার পূর্বেই বদলপুর নামক স্থানে হানাদারদের কূট-কৌশলের ফাঁদে পা দেন জগৎজ্যোতি। বদলপুরে ৩/৪ জন রাজাকার ব্যবসায়ীদের নৌকা আটক করে চাঁদা আদায় করছিল। দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ জ্যোতি রাজাকারদের ধরে আনার নির্দেশ দেন।
কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দেখেই পিছু হঠতে থাকে কৌশলী রাজাকাররা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন জগৎজ্যোতি- ভাবতেও পারেননি কী ফাঁদ তাঁর সামনে। সাথের ১০/১২ জন মুক্তিযোদ্ধা আর সামান্য গোলাবারুদ নিয়ে তাড়া করেন রাজাকারদের। অদূরেই কুচক্রী পাকসেনাদের বিশাল বহর আর প্রচুর সংখ্যক গোলাবারুদ নিয়ে অপেক্ষা করছিল তাঁর। অজান্তেই চক্রব্যূহে প্রবেশ করেন জগৎজ্যোতি। আগে থেকে প্রস্তুত পাকি বাহিনীর বিশাল বহরের ফাঁদে পড়ে যান জগৎজ্যোতি ও তাঁর সহযোদ্ধারা। ঘুঙ্গিয়ারগাঁও থানা [বর্তমানে শাল্লা উপজেলা সদর] পাক ক্যাম্প থেকে মাত্র ২০০ গজ দুরে রাজাকার আর পাকি বাহিনীর আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে দাস কোম্পানি।
রণাঙ্গণে পরিস্হিতির ভয়াবহতা চিন্তা করে এক পর্যায়ে জ্যোতি তার দলকে বাচানোর জন্য রিট্রিট করার নির্দেশ দিয়ে একটি মাত্র এলএমজি নিয়ে নিজে কাভারিং ফায়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন । এজন্য জ্যোতি সহযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিনকে নির্দেশ দেন যাতে অন্যরা তাদের জীবন বাঁচিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যায় । এরপর দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন মাত্র দুইজন, জ্যোতি ও ইলিয়াছ। তারা যুদ্ধ করতে থাকেন একটানা কিন্তু হঠাৎ সহযোদ্ধা ইলিয়াস পাঁজরে গুলিবিদ্ধ হন। জ্যোতি পিছু না হটে তার মাথার লাল পাগড়ি খুলে শক্ত করে ইলিয়াসের বুকে‌ এবং পিঠে বেঁধে দেয়, যাতে তার রক্তক্ষরণ থেমে যায়।
যুদ্ধের এক পর্যায়ে জগতজ্যোতি দাস বিকেল ৩টায় নতুন ম্যাগাজিন লোড করে পজিশন নিয়ে শত্রুর অবস্থান দেখার জন্য মাথা উঁচু করতেই একটি বুলেট তার বুকে বিদ্ধ হয়। জগতজ্যোতি তখন ‘আমি আর নাই, আমি গেলাম’ বলে কৈয়াবিলের পানিতে ডুবে যান।
লোকমুখে শোনা যায়, গুলিবদ্ধ হওয়ার পরেও তিনি জীবিত ছিলেন। তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় অত্যাচার করতে করতে। তাঁর গায়ে পেরেক বিদ্ধ করে সেই ছবি খবরে ছাপানো হয়।
আজমিরিগঞ্জ বাজারে নিয়ে আসা হয় তাঁর লাশ। তখন ছিল ঈদের বাজার। শত শত লোকের সামনে খুঁটির সাথে বেঁধে ক্ষত-বিক্ষত করা হয় তাঁর লাশকে। রাজাকাররা থু থু ফেলতে থাকে তাঁর উপর। এমনকি জগৎজ্যোতির মা-বাবাকেও ধরে আনা হয় বিভৎস লাশ দেখাতে। পরিবারে যখন স্বজন হারানোর কান্নার রোল তখন আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় জগৎজ্যোতির বাড়িতে। ভাসিয়ে দেওয়া হয় তাঁর ক্ষত-বিক্ষত লাশ ভেড়ামোহনার জলে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ জানান, বীরগতিপ্রাপ্ত জগৎজ্যোতিকে বীরশ্রেষ্ট খেতাব দেওয়ার ঘোষনা দেওয়া হয়েছিল একাধিকবার এবং তার বীরত্বগাথা প্রচার হচ্ছিল সম্মানের সঙ্গে। অল ইন্ডিয়া রেডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয় জগৎজ্যোতির বীরত্বগাঁথা।
অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ মরণোত্তর পদক প্রদানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে জগৎজ্যোতিকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক প্রদানের ঘোষণা সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পরে প্রতিশ্রুতি থেকে ফিরে আসেন বাংলাদেশ সরকার, কোন এক অজ্ঞাত কারণে। ১৯৭২ সালে জগৎজ্যোতিকে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। বাস্তবে পুরস্কার প্রদান করা হয় তারও দুই যুগ পরে।
এই বীরের মৃত্যু'র পর স্বাধীন বাংলা বেতারে ঘোষিত হয়েছিল তাকে দেয়া হবে সর্বোচ্চ খেতাব। কিন্ত ভাটির মহানায়ক শহীদ জগতজ্যোতি দাস শ্যামাকে আজও দেয়া হয়নি সেই সর্বোচ্চ খেতাব। আইনের ম্যার প্যাচে সরকার ঘোষিত বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি শুধু ঘোষনাই রয়ে গেল।
কিন্তু কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর জগৎজ্যোতির সহযোদ্ধাদের যারা বেঁচে আছেন তাঁদের আজও জানা নদে। যারা বেঁচেছিলেন স্বাধীনতার পরেও তাঁরাও এই প্রশ্নের উত্তর না পেয়েই চলে গেছেন পরপারে। এ প্রশ্ন এখন আমাদের বিবেকের কাছে? কোন মুক্তিযোদ্ধাই পুরস্কারের লোভে যুদ্ধে যান নি, গিয়েছিলেন মাতৃভূমি স্বাধীন করতে। আমরাই তাঁদের শ্রদ্ধাভরে খেতাবে ভূষিত করি, আমরাই পুরস্কার প্রদান করি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে। তবে কেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি দাস শ্যামা, প্রতিশ্রত সম্মানও পাননি?
বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি বদলে, তিনি হয়ে গেলেন বীর বিক্রম !!!
এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো বা পাওয়া যাবে না। অন্ধকার বদ্ধঘরের দেওয়ালে প্রতিধ্বনিত হতে হতে থেমে যাবে একসময়।
তথ্য সুত্রঃ মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী’র একাত্তরের দিরাই-শাল্লা ।
ছবিঃ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি দাসের পেরেক ঠোকা মৃতদেহ।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৩৪
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×