অপুর সাথে আমার গতকাল প্রায় বারো বছর পর দেখা।
বারো বছর! আমার ছোট্টবেলার বন্ধু অপু। দুইজনের কেউই আর ছোট নেই। অপুর চোখে চশমা, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। কিন্তু চোখের ভাষায় সেই ছেলেবেলা।
দুপুরের ঝাঝালো রোদে চিটাগাং GEC মোড়ের Sub-Zero তে বসে থাকা অপুকে চিনতে আমার বেশ কয়েক মুহূর্ত লেগেছে। কিন্তু ততক্ষনে অপু ঝাপিয়ে পড়েছে আমার উপর। হ্যাঁ, আমাদের ছোটবেলার সেই সর্পরাজ অপু।
ছোটবেলায় দস্যিপনায় অপুর সমতুল্য কেউ ছিলো না। ডালিয়া আপুদের পেয়ারা থেকে শুরু করে হাজী সাহেবের কাঠালের মুচি চুরি করা সবকিছুতেই ছিল ওর অগাধ পারদর্শীতা।
আমরা ওকে ডাকতাম সর্পরাজ অপু বলে। ওর এই অদ্ভুত নামের পেছনে আছে আরেক গল্প। ছোটবেলায় আমরা জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে পাখির বাচ্চা ধরতাম। তেমনি এক সকালে পাখির ছানার খোঁজে জঙ্গলে ঘুরছি এমন সময় অপুর ডাকাডাকি।
'দোস্ত দেখ দেখ এই সাঁপটা আমারে কামড় দিছে'
আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, আধ হাত লম্বা একটা সাপের কামড় খেয়েও অপুর মুখে ভয় বা যন্ত্রনার বিন্দুমাত্র ছাপও নেই। বরং ওর ঠোটের কোনে মিটিমিটি হাসি। আরো অবাক হয়ে দেখলাম যে সাঁপটা ওকে কামড় দিয়েছিলো সেইটা কিছুক্ষন বৃত্তাকারে ঘুরে চিৎ হয়ে মরে গেছে। অপু তখনো দিব্যি হাসতেছে!!
এরপর রাতারাতি অপুর নাম ফুটে গেছে। সবার কাছে অপু 'সর্পরাজ অপু' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
এরপরেও নাকি অপু বেশ কয়েকবার সাঁপের কামড় খেয়েছে। সাপগুলোর কি হয়েছে জানি না, তবে অপু এখনো সুস্থ্য শরীরেই আমার সামনে বসে আছে।
গল্প আরো আছে...
আমাদের স্কুলের মডেল কন্যা নিপাকেও একদিন প্রোপোজ করে বসেছিলো অপু। শৈশবের প্রেম, আবেগের চেয়ে বন্ধুদের সামনে প্রেস্টিজের দাম তখন অনেক বেশি। তাই তো প্রত্যাখ্যান করায় অপুর ধাক্কা খেয়ে নিপার জায়গা হয়েছিলো পাশের নর্দমার ড্রেনে।
কোন বিদায় সম্ভাষন না। হঠাৎই চলে গিয়েছিলো ছেলেটা।
যাওয়ার সময় শুধু বলেছিলো, 'আরে ধূরর, মন খারাপ করিস না। চিটাগাং কি আমি আজীবন থাকতে যাচ্ছি? দুইদিন পরেই চলে আসবো।'
ছেলেটা হয়তো সেদিন বোঝেই নি আগামী এক যুগেও তার দুইদিন শেষ হবে না।
ও হয়তো কোনদিন দেখবেও না কাটাগুলো না ঘুরলেও ওর দেয়া CASIO ঘড়িটা এখনো আমার কাছে আছে। হয়তো ও কখনো জানবেও না ওর প্রতিটা স্মৃতি আমি সযত্নে ধরে রেখেছি।