somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: "আয়না"

২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আয়না কান্নাভরা অভিমানী চোখ নিয়ে এক নিঃশ্বাসে নিলয়কে "ভালবাসি" বলে ফেললো! কিন্তু মেয়েটা লজ্জা আর ভয়ে চোখ তুলতে পারছে না। এমন সময় নিলয় বললো,

"কি বললে তুমি? ভালবাসো? আমাকে?"

"হু...."

"নিজের চেহারাটা আয়নাতে দেখছো কখনও? তোমাকে নিয়ে দাঁড়াবো কোথায়?"

"ভালবাসতে চেহারা লাগে?"

"ভালবাসতে সবই লাগে, টাকা পয়সা, রুপ লাবণ্য সবই লাগে.."

"তুমি কি মনে কর তোমার ক্লাসের ওই সুন্দরী ঢঙ্গি মেয়েগুলো তোমাকে ভালবাসবে? কখনও না!"

"তুমি যাও তো নিজের টাইপের কিছু খুজে নাও। ফেয়ার এন্ড লাভলী মাখো প্রতিদিন, যেদিন চেহারা ঠিক হবে সেদিন এসো।"


এমন সময় নিলয়ের এক বান্ধবী এসে বললো, "কিরে তুই এখানে কি করিস?" নিলয় তখন অট্টো হাসি দিয়ে বললো, "দোস্ত শোন শোন, আয়না আমাকে প্রপোজ করছে তাই ওকে বুঝাচ্ছি ওর ভালবাসার বয়স হয় নি।"


আয়না সেখানে আর থাকলো না! স্বাভাবিক পায়ে হেটে চলে গেল! এখন সে কাঁদার জায়গা খুঁজছে। কোথায় গেলে একটু শান্তি পাবে সেই স্থান খুঁজছে! কারণ আয়না এখন বাসায় যাবে না। গেলেই মা বাবার কাছে ধরা পরে যাবে! এখন ক্যাম্পাস থেকে অনেক দুরে চলে এসেছে সে! বিশাল বট গাছের নিচে বসে কাঁদছে সে! সে যাকে এত আপন ভাবে সেই আজ তাকে এত বড় কষ্ট দিল! ভেবেই কেঁদে যাচ্ছে সে!


আয়না, নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তের মাঝামাঝি পরিবারের মেয়ে। মায়াবী মেয়েটা ফ্যাশন নামের বিষয়টা কি জানে না। আসলে ওর মত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ডিকশনারিতে বিলাসিতা শব্দটা নেই। আছে সুখে থাকার অভিনয় করে দুঃখকে ঢেকে রাখা। বাবার অবস্থা যখন ভাল ছিল তখন জমি কিনে একটা পাঁকা বাড়ি করেছিলেন যার ফলে বাসা ভাড়া দেয়ার ঝামেলা থেকে আয়নার পরিবার বেঁচে গিয়েছে! আর্থিক অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক খারাপ। মা বাবা প্রতিনিয়ত বিয়ের কথা বলছে কিন্তু সে মানা করে দেয়। নিজের হাত খরচ চালানোর জন্য তিন চারটা টিউশনি করে দুইটা ছাগল আর দুই জোড়া কবুতর কিনেছে। ছাগল যা দুধ দেয় আর কবুতর যখন বাচ্চা দেয় তখন যদি কেউ বাচ্চা কিনতে চায় তাহলে বিক্রি করে দেয়। তবে কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করার সময় সে খুব দুঃখ পায়! কারণ বাচ্চাগুলোকে আয়না নিজেই ওদের মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে দেয়! নিজেকে অনেক স্বার্থপর মনে হয় তখন ওর! তবে এবার সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাই হোক আর কোন কবুতরের বাচ্চাকে সে বিক্রি করবে না!


নিলয়, মা বাবার একমাত্র সন্তান! অনেক আদরের আর ওকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন তাদের। কিন্তু নিলয় কে দেখে মনে হয় না সে তার মা বাবার স্বপ্ন পুরণ করতে পারবে। বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে অনেক বড় ডাক্তার হবে, সারা দেশ নিলয়কে একনামে চিনবে! কিন্তু নিলয়ের সেদিকে কোন খেয়াল নেই! নিলয়ের পরিবারের অবস্থা খুবই ভাল। বাবা একজন শিল্পপতি আর মা অ্যাডভোকেট! আর ছেলে মা বাবার টাকা এখানে সেখানে বাজে বন্ধুদের জন্য উড়িয়ে দেয়! ছেলে যখন ডাক্তার হতে পারলো না তখন অন্তত বাবার প্রতিষ্ঠানটার দেখাশোনা করুক,কিন্তু সেটাও নিলয় করবে না! বাইক আর বি.এম.ডাব্লিউ নিয়ে রাস্তা দাপিয়ে বেড়ানো তার নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে!


আয়না চুপচাপ বাড়ি এসে হাত মুখ ধুয়ে কবুতরের কাছে চলে গেল। কবুতরগুলোকে সকালে খাবার দেয় নি তাই এখন খাবার দিচ্ছে! পানি পাল্টিয়ে ভাল বিশুদ্ধ পানি দিল। কবুতরের বাকবাকুম শব্দে অনেক ভাল লাগছে। হঠাৎই সে ভাবতে লাগলো, "আমি কি দেখতে এতই খারাপ যে আমাকে আজ এত অপমান করলো?" এমন সময় আয়নার মা রান্নার কাজে সাহায্য করার জন্য আয়নাকে ডাকে।


রাত্রে খাওয়া শেষ করে বাসার ছাদে বসে শুধু নিলয়ের কথা ভাবছে। কেন নিলয় এমন করলো! এমন আচরণ তো আয়নার পাবার কথা ছিল না। ক্যাম্পাসে নিলয়ের প্রতিটা কথা আর ওর সুন্দরী বান্ধবীর ভেংচি কাঁটা চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠটেই কেঁদে ওঠে সে! কিছুক্ষণ থাকার পর রুমে চলে যায় সে।


নিলয় সেই রাত ১১টা থেকে টিনার সাথে কথা বলছে! দুইটা শব্দ বলার পর বিশ বাক্যের হাসি হাসে টিনা! নিলয় আর কি করবে, সেও টিনার সাথে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত হাসতে থাকে! শুধুশুধু টাকা খরচ যাকে বলে। টিনা বললো, "কাল তাহলে ক্যাফেতে দেখা করি?" নিলয় বাধ্য ছেলের মত টিনার কথায় সম্মতি জানালো!


পরেরদিন, রেস্টুরেন্টে দেখা করে ওরা! বেশ ব্যয়বহুল রেস্টুরেন্ট! কলসী থেকে পানি ঢালার মত করে টাকা খরচ করে যাচ্ছে নিলয় অথচ ভাবছেও না টাকাগুলো ওর বাবা খুব কষ্টে রোজগার করেছেন। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে টিনাকে বাসায় পৌছে দিয়ে ফিরছিল এমন সময় আয়নার সাথে দেখা হয় নিলয়ের! আয়না হাসিমুখে বললো, "একটা কথা বলতে চাই, সময় হবে শোনার?"

নিলয় অতি অহংকারী ভাব নিয়ে বললো, "বল, শুনি....!"

"মাথার চুলগুলো ঠিকভাবে আঁচড়ে নিও, এতে তোমাকে ভাল দেখায় না। আর বেসলেট গুলো তোমার হাতে বড্ড বেমানান লাগে। ওগুলো ফেলে দিও..."

নিলয় তিরস্কারের হাসি দিয়ে বললো, "মেনি মেনি থ্যাংকস মাই কেয়ারটেকার....!"

আয়না আবারও বললো, "তোমার বাবার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখ, তোমার সকল ভুল বুঝতে পারবে। আসি।"

আয়নার কথাগুলাকে কোন প্রকার গুরুত্ব দিল না নিলয়।



আয়না বাসায় ফিরে প্রতিদিনের মত কবুতরগুলোকে খেতে দিল। ছাগল গুলো কোথায় আছে তারও ঠিক নেই! ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথে নিলয় আর টিনাকে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতে দেখে সে! সেখানে নিলয়ের জন্য দারিয়ে থাকে আয়না। সে জানে নিলয় এপথ দিয়েই ফিরে আসবে। আয়না বেশি কষ্ট পায় যখন নিলয় ওর কথা গুলোর তিরস্কার করে। মরে যেতে ইচ্ছে করে তার! তবুও বেঁচে আছে ওর মা বাবার জন্য। কারণ আয়নার বিয়ে হয়ে গেলে সে তার মা বাবার দেখাশোনা করতে পারবে না! নিলয়ের সেই তাচ্ছিল্য করা বারবার আয়নার চোখের সামনে ভেসে উঠছে! কি পরিমাণ কষ্টে আছে সে তা বুঝতে দিচ্ছে না কাউকে। দিন দিন চোখের নিচে কালো দাগ বসে যাচ্ছে! মা বাবা এটা খেয়াল করলেন। আয়নাকে এব্যাপারে বললে সে বলে ক্যাম্পাসে ইদানীং পড়ার খুব চাপ দিচ্ছে! আয়না সিদ্ধান্ত নিল সে নিলয়ের কোন খোজ খবর রাখবে না! অনেক কষ্ট হচ্ছিল এ সিদ্ধান্ত নিতে! তবুও সে নিলয়ের কোন খেয়াল রাখবে না। মা বাবা যতদিন আছে ততদিন তাদের সেবা করে যাবে।


ইদানীং টিনাকে কল করলে ওয়েটিং দেখায়! ঘন্টার পর ঘন্টা ওয়েটিং! নিলয় ভেবে পাচ্ছে না টিনার কি হল! এত সময় ধরে ওয়েটিং কেন থাকবে সে! আবারও কল করল নিলয়। রিসিভ করে এক নিঃশ্বাসে বললো, "কি হল, কার সাথে কথা বলছিলে? এত সময় ওয়েটিং কেন?" টিনা এক বাক্যে বললো, "আরে বল না, মামা কল করেছিল।" "মামার সাথে এত কিসের কথা?" "থাকতে পারে না বুঝি? আচ্ছা কল কাটো, আব্বু কল করেছে।"


নিলয় কল কেটে দিল। হঠাৎ ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে এগারোটা বাজে! ভাবলো এখন কেন ওর আব্বু কল করবে! টিনা তো ওর মা বাবার সাথেই থাকে! আবারও কল করলো টিনাকে কিন্তু আবারও ওয়েটিং, ঘন্টার পর ঘন্টা ওয়েটিং! নিলয় কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে খালা ফোন দিয়েছে! আজ খালা, কাল মামা, তারপর কাজিন এগুলো বলে কাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে টিনা! নিলয় বুঝে ফেলেছে টিনা এখন আগের মত নেই! নতুন কাউকে পেয়েছে নিশ্চয়ই! টিনার জন্য নিলয়ের রাতের ঘুম চোখ থেকে হারিয়ে গেছে।


পরেরদিন টিনার বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হল। বাসার সামনে পৌঁছাতেই দেখা টিনা একটা ছেলের বাইকে উঠে পেছন থেকে বেশ গভীরভাবে জড়িয়ে ধরেছে! নিলয় বিশ্বাস করতে পারছে না টিনা এমন কাজ করবে! চুপচাপ ফিরে এল সেখান থেকে! এদিকে আয়নাকেও দেখছে না কয়েকদিন হল! এখন রাতদিন বাসার চারদেয়ালের মাঝেই কাঁটে নিলয়ের! মা বাবাও তেমন কিছু বলে না। এক বিকালে বারান্দায় বসে থাকা অবস্থায় দেখে ওর বাবা গাড়ি থেকে নামলো। হঠাৎ মনে পরলো আয়না ওকে বলেছিল ওর বাবার মুখের দিকে তাকাতে....! নিলয় খুব ভাল করে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে কপালের তিনটা ভাজ আরও গাঢ় হয়েছে! মাথার চুলের পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে! চেহারায় অনেক হতাশা ছাপ! নিলয় এখন বুঝতে পারছে ওর কোথায় কি পরিমাণ ভুল ছিল! আজ সে আয়নাকে বেশি মিস করছে! সে ভাবছে কিভাবে একটা মেয়েকে ক্যাম্পাসে অপমান করেছিলাম, কত কথাই না শুনিয়েছিলাম! তারপরও আমার অবহেলা ভুলে আমার কাছেই ফিরে এসেছিল! আমি নিজেই তাকে আমার কাছে আসতে দেই নি!


রাতে খাওয়ার পর রুমে গিয়ে আয়নার সামনে দারিয়ে নিজেকে দেখলো নিলয়! চিড়ুনি হাতে নিয়ে মাথার চুল গুলো ঠিকভাবে আঁচড়িয়ে নিল! তারপর নিজেকে দেখলো....! হুম আয়না ঠিকই বলেছিল। চুলগুলো ঠিকভাবে আঁচড়ালে নিলয়কে আরও সুন্দর লাগে! তারপর হাতের বেসলেট গুলো খুলে রেখে দিল! নিলয় নিজেকে দেখে বিশ্বাস করতে পারছিল না যে এটা সে! সকালে নিলয়ের মা বাবা টেবিলে বসে নাস্তা করার জন্য নিলয়কে ডাকছেন। নিলয় দরজা খুলে দেখে মা বাবা ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন! বাবা দুই তিনবার চোখ বড় বড় করে দেখলেন আর মা চুল থেকে পা পর্যন্ত দেখছেন! নিলয় একটা লাল টাই, সাদা শার্ট আর প্যান্ট পরে দারিয়ে আছে! নিলয় বললো,

"ভূত দেখছো নাকি? এমন করে তাকানোর কি আছে??"

নিলয়ের বাবা বিস্মিত হয়ে বললেন,

"আজ কি তোর জন্মদিন?"

"না তো।"

"কোন বন্ধু-বান্ধবের জন্মদিন?"

"না তো....!"

"আমার জন্মদিন?"

"না তো....!"

"তোর মায়ের?"

"তাও না..."

"আজ কি আমাদের বিবাহবার্ষিকী?"

"ধুর, কি বলতেছ এগুলা???"

"তোর কোনো স্পেশাল দিন আজ?"

"হুম......!"


নিলয়ের মা-বাবা ছেলের এমন কথায় একেবারে হকচকিয়ে উঠলেন! মা জিজ্ঞেস করলেন, "কিসের স্পেশাল দিন আজ?" নিলয় এক নিঃশ্বাসে বললো, "আমি আজ থেকে আব্বুর অফিসে যাবো......!"


কিছুক্ষণের জন্য বাসার চাকর চাকরানিসহ সকলের কর্মকাণ্ড থেমে গেল! অ্যাডভোকেট আর শিল্পপতি সাহেব ভেবে পাচ্ছেন না তাদের সন্তানকে হঠাৎ কে এত পাল্টে দিল! বাবা তৎক্ষণাৎ খাওয়া ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে অফিসের দিকে ছুটলেন। তারপর বললেন, "আজ পিতাপুত্র মিলে অফিসেই লাঞ্চ করবো!" তারপর ছেলেকে নিয়ে অফিসে ঢুকতেই সবাই অবাক হয়ে গেল! কানাকানি পরে গেল একে অপরের মাঝে! নিলয়ের বাবা বললেন,

"এক্সকিউজ মি লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান, লেট মি ইন্ট্রডিউস মাই অন এন্ড অনলি সান মি. নিলয় যে আজ থেকে আমার এই প্রতিষ্ঠানের দেখাশোনা করবে।"


একে একে নিলয়কে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন ওর বাবা। দুপুরে একসাথে খাওয়া দাওয়া করলেন তারা। নিলয়ের আজকের দিনটা সারাজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে। এত আনন্দ, এত খুশি সে জীবনেও পায় নি। আবারও বাবার দিকে তাকালো নিলয়। গতকাল বাবার চেহারা হতাশায় আচ্ছন্ন ছিল কিন্তু আজ বাবার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে! আবারও মনের মাঝে শান্তির হাওয়া বয়ে গেল। এসবের পিছনে আয়নার অবদান বেশি। বেচারি মেয়েটাকে ভুল বুঝে কত কিছুই না বলেছে সে! আজ অফিসের পর আয়নার কাছে ক্ষমা চাইতে যাবে নিলয়। সিদ্ধান্ত ফাইনাল। অফিস ছুটি হয়েছে। নিলয় ওর বাবাকে বললো, "আব্বু আমি একটু এক বন্ধুর সাথে দেখা করে আসছি। তুমি বাসায় যাও।" বাবা বললেন, "গাড়ি নিয়ে যাও।" "না আমি হেটেই যেতে পারবো।" "ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবে।" বাবার মুখ থেকে একথাটা শুনে অন্যরকম একটা ফিলিংস কাজ করছে নিলয়ের মনে! জীবন এখন হঠাৎ করে ভাল লাগতে শুরু করেছে নিলয়ের কাছে! একরাশ ভাল লাগার অনুভূতি নিয়ে আয়নার বাসার গলির দিকে পা বাড়ালো। আয়নার বাসা কোনটা সেটা নিলয় জানে না! গলিতে হাটার সময় ওদিক সেদিক তাকাতে গিয়ে দেখলো এক ব্যক্তি ওর দিকে এগিয়ে আসছে! ভদ্রলোককে খুব চেনা চেনা লাগছে নিলয়ের! তিনি নিলয়ের সামনে এসে বললেন,

"আপনি আমাদের চেয়ারম্যান স্যারের ছেলে নিলয়! হঠাৎ এখানে কি মনে করে এলেন?"

নিলয় খুব লজ্জা পেল! বাবার বয়সের ভদ্রলোক নিলয়কে আপনি করে বলছে এটা মোটেও মেনে নেয়া যায় না।

নিলয় বললো, "আঙ্কেল আপনি আমার বাবার বয়সের আর আমি আপনার ছেলের মত, প্লিজ আপনি করে কথা বলবেন না।"

"আচ্ছা, তো এখানে কি মনে করে এসেছো?" নিলয় একবার ভাবলো উনাকে বলে দেই কিন্তু কি মনে করে আর বললো না! পরে বললো, "এমনি শুধু হাটতে হাটতে আমি এখানে এলাম।"

"ওহ! এসেছোই যখন তো আমার বাসায় চলো, সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।" নিলয় যাবে না বললো কিন্তু ভদ্রলোক নিলয়কে জোর করে নিয়ে গেল!


বাসায় পৌছে ভদ্রলোক নিলয়কে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, "মেয়েটা কোথায়? ডাকো ওকে।"

একটুপর মেয়েটা আসলো। নিলয় মেয়েটাকে দেখে অবাক হয়ে গেল! মেয়েটা হল আয়না! আয়নার বাবা বললো, "এ হচ্ছে আমাদের চেয়ারম্যান স্যারের একমাত্র ছেলে।"

"আর এই হল আমার একমাত্র মেয়ে।" আয়না নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, "আসসালামু আ'লাইকুম, ভাল আছেন?"

নিলয়ের খুব কষ্টে হচ্ছে আজ। যে আয়না তার সাথে তুমি করে কথা বলতো আজ সে তাকে আপনি করে বলছে! আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে নিলয়! আয়নাও জানে নিলয় তাকেই দেখছে! তারপর আয়না ওর বাবা কে বললো, "তোমরা কথা বল আমি নাস্তা নিয়ে আসছি..."


আয়না রান্নাঘরে কিছুক্ষণ ঠায় হয়ে দারিয়ে থাকলো! আজ নিলয় তার সব কথা রেখেছে। মাথার চুল সুন্দর করে আঁচড়িয়েছে, হাতের বেসলেটগুলো খুলে রেখেছে! শার্ট আর প্যান্টে খুব সুন্দর লাগছিল নিলয়কে দেখতে! ভাবতে ভাবতে চোখে কিছুটা অশ্রু এসে গেল! তারপর চোখ মুছে তিন কাপ চা বানিয়ে নিয়ে গেল। চায়ের ট্রে টা টেবিলে রাখলো আয়না। তিনটা কাপ দেখে নিলয় কাঁপা কণ্ঠে আয়নাকে বললো, "আপনার চা নেই?"

আয়না বললো, "আমার কাজ আছে, পরে খেয়ে নেব। আপনি খেয়ে নিন।"
এরপর আয়না সেখানে আর দাঁড়ালো না। রুম থেকে বের আবারও কেঁদে উঠলো সে!


নিলয় চায়ে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে! প্রতিটা চুমুকে মায়ের হাতের চায়ের স্বাদ পাচ্ছে সে! কিন্তু কষ্ট সেই একটা কথায়, তাহলো আয়না ওকে এখন আপনি করে কথা বলে! চা শেষ করে আর সেখানে দেরি করে নি নিলয়!


নিলয় মনমরা হয়ে বাসায় ফিরে কারও সাথে কথা বলেনি! মা বাবা এটা খেয়াল করলেন। মা নিলয়ের রুমে গিয়ে দেখলেন নিলয়ের চোখজোড়া লাল হয়ে আছে! একটু পরে বাবা ঢুকলেন নিলয়ের রুমে। বললেন,
"আজ কিন্তু আমার খুব খুশি লাগছে!"
নিলয় কোন কথা বলছে না!
মা বললেন, "একটা সত্যি কথা বল তো।"
নিলয় মায়ের দিকে তাকালো, "কি কথা?"
"এঘটনার পিছনে মূল আসামী কে?"
নিলয় খুব ভয় নিয়ে বললো, "আব্বুর অফিসের আসাদ আঙ্কেলের মেয়ে আয়না......"




পরেরদিন,



নিলয় অফিসে গেল কিন্তু মনটা আয়নার কাছেই রেখে এসেছে। যেভাবেই হোক আজ আয়নার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে! তাই বেলা ১১টার দিকে অফিস থেকে সোজা ক্যাম্পাসে চলে গেল! এদিক সেদিক খোজার পর আয়নাকে পাওয়া গেল সেই বটগাছের নিচে! নিলয় দ্রুত পায়ে হেটে আয়নার কাছে গেল! আয়না নিলয়কে দেখে খুব স্বাভাবিক ব্যবহার করলো! নিলয় আজ নিজ থেকেই মুখ খুললো,

"আমাকে কি আরেকটা বার সুযোগ দেয়া যায়?"

"আমার ভুল হয়ে গেছে, প্লিজ আমাকে মাফ করবেন।"

"আপনি করে বলছো কেন?"

"সেদিন বলেছিলেন না, আমি আপনার টাকা পয়সার জন্য আপনার পিছনে ঘুরি! তো এই গরীবের কাছে কেন এসেছেন?"

"গরীর তুমি নও, গরীর আমি। তোমার মত মন যার আছে সেই বড়লোক।"

"আমি আপনার জীবন থেকে চলে এসেছি, এখনও নিজের মত কাউকে পাই নি।"

"তোমার মত করে নিজেকে তোমার সামনে নিয়ে এসেছি, তোমার সামনে যে আছে সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে, তাকে কি ক্ষমা করা যায়? তাকে কি তোমার দুঃখের সুখের সাথী করে নেয়া যায় না?"


আয়না কোন কথা বলছে না! তার প্রিয়জন আজ তার সামনে তবুও সে তার মনের কথা বলতে পারছে না! অনেক অভিমান জমা আছে নিলয়ের প্রতি। এক পর্যায়ে সেখান থেকে উঠে যায় আয়না! হাটতে শুরু করে! নিলয় ডাকতে থাকে কিন্তু সে শোনে না নিলয়ের আওয়াজ, সামনে গিয়ে দারায় তবুও থামে না আয়না! আশেপাশের মানুষ তাদের তামাশা দেখছে তবুও নিলয় ওকে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থামলো না আয়না! হনহন করে রিক্সায় উঠে চলে গেল! নিলয় বুঝতে পারলো কতটা কষ্ট সে আয়নাকে দিয়েছে! কি পরিমাণ কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে সে! আয়নার ফোন নাম্বার ছিল নিলয়ের কাছে কিন্তু আয়না নাম্বার চেঞ্জ করে ফেলেছে!



অফিসে,

জনাব আসাদের অপেক্ষায় আছেন শিল্পপতি। চিন্তা করছেন নিলয়ের পছন্দের মেয়ের সাথেই নিলয়ের বিয়ে হোক। পিয়ন গিয়ে আসাদ সাহেবকে ডাকলেন। চেয়ারম্যানের ডাক পেয়ে ভয়ে ঘাম ঝরাতে থাকেন! কারণ চেয়ারম্যান যখনই তাকে ডাকেন কোন না কোন দোষ-ত্রুটি বা ভুল তুলে ধরেন!


"মে আই কা... কা... কা...কাম ইন স্যার!"

"ওহ ইয়েস ইয়েস কাম ইন, প্লিজ হ্যাভ এ সিট....!"


"চেয়ারম্যান স্যারের শরীর ঠিক আছে তো! আজ হঠাৎ এত আপ্যায়ন! ভয় ভয় লাগছে!" আসাদ সাহেব ভাবতে লাগলেন!

"স্যার আপনি ডেকেছেন?"

"হুম..."

"জ্বী বলুন,"

"আসলে ছেলের জন্য একটা ভাল, শিক্ষিত, সংসারী মেয়ে দরকার। অনেকদিন হল খুজছি এবং আজ অবশেষে পেয়েই গেলাম!"

"জ্বী স্যার..."

"আচ্ছা, তো আজ বিকালে মেয়েকে দেখতে যাচ্ছি।"

"জ্বী স্যার..."

"আচ্ছা এক কথায় বলি।"

"জ্বী স্যার..."

"আবার জ্বী স্যার! এই মিয়া সোজা কথা বুঝতে এত দেরি করছেন কেন?"

"জ্বী স্যার..."

"আবার জ্বী স্যার.....!"

"না মানে, কোন কথা স্যার, কেমন কথা স্যার?"

"কথা হল, আপনার মেয়েটাকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে, পুত্রবধূ হিসাবে দেখতে চাই, এবং আমার নিজের মেয়ের মত করে দেখে শুনে রাখবো। প্লিজ দ্বিমত পোষণ করবেন না। কিছুই চাই না শুধু আমার মেয়ে ছাড়া!"

"কিন্তু স্যার আপনারা বড়লোক! এবং আপনাদের স্ট্যাটাস আর আমাদের স্ট্যাটাস আকাশ পাতাল তফাৎ....!"

"এসব জানি না, তবে আপনি বড়লোক। কারণ আপনি আপনার কলিজাটা আমাদের কাছে দিচ্ছেন। জীবনের আশাকে দিচ্ছেন। আর যাই হোক আমি আপনাকে ছাড়ছি না।"

"স্যার আমি ম্যানেজ করতে পারবো না স্যার, কোথায় আপনি আর কোথায় আমি!"

"আমার শুধু আপনার মেয়েকে চাই, আর কিছু চাই না। এবার বাসায় যান। আজ আপনার ছুটি। বাকি কথা আমার মেয়েকে দেখার সময় বলবো।"

আসাদ সাহেব মনে মনে খুব খুশি! এমন পরিবার থেকে বিয়ে আসবে তা তিনি কল্পনা করেন নি! এরপর অফিস থেকে তিনি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যান।



আয়না বাসায় ফিরে খুব সাবধানতার সাথে বাথরুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ নিঃশব্দে কেঁদে ফ্রেস হয়ে বের হয়ে যায়। কবুতরগুলো কে খেতে দিয়ে নিচে নেমে এল। নিচে নেমে দেখে বাবা চলে এসেছে! আজ অনেক ভাল মুডে আছেন! আয়না জিজ্ঞেস করলো, "আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলে?"
বাবা হাসি মুখে বললো, "অফিস আজ তাড়াতাড়ি ছুটি হয়েছে!" বলে বাথরুমে যাচ্ছিলেন তখন আয়না আবারও বললো, "আব্বু একটা কথা বললো।" তিনি বলতে বললেন।

"আমি বিয়ে করবো! আমার জন্য যে পাত্র দেখেছিলে তাদের ডাকো!"

আয়নার কথা শুনে আসাদ সাহেব আকাশ থেকে পরলেন! যে পাত্রকে দেখতে পারতো না আজ তাকেই বিয়ে করার জন্য সিদ্ধান্ত নিল!

আয়নার মা অন্য রুম থেকে দৌড়ে এসে বললো, "কি বললি? এটা বলতে এত দেরি লাগালি কেন?" আসাদ সাহেব আবারও টেনশনে পরে গেলেন! বিকালে চেয়ারম্যান স্যার আসবেন! কি বলবে তাদের! আয়নার মা বললো, "তুমি হা করে দারিয়ে আছো কেন? যাও তাদের খবর দাও!" তারপর আয়নার দিকে ঘুরে দারিয়ে বললো, "মা তুই ভিতরে যা।"

আয়না চলে যাওয়ার পর আসাদ সাহেব দাঁত চেপে ধীরে রেগে বললেন, "একটু পর চেয়ারম্যান গোটা পরিবার নিয়ে আসবেন আয়নাকে দেখার জন্য! কি বলবো আর কি জবাব দেব তাদের? এত ভাল ঘর থেকে বিয়ে এসেছে আর তুমি মেয়ের ব্রেনটা অন্যদিকে ওয়াস করে দিলে!"

"তাহলে এখন কি করবো? আর আগে বল নি কেন?"

"বলার সুযোগটা কোথায় দিলে শুনি?" কিছুক্ষণ তর্ক করার পর বললেন, "তুমি কি জানো আয়না চেয়ারম্যান স্যারের ছেলেকে ভালবাসে?" আয়নার মা বিস্মিত হয়ে গেল!
আসাদ সাহেব আবার বললেন, "গতকাল বিকালে ছেলে এসেছিল আয়নাকে দেখার জন্য! না হলে ২৪ ঘন্টা পূর্ণ হওয়ার আগেই কিভাবে চেয়ারম্যান স্যার আমার কাছে মেয়ে চাওয়ার জন্য আসে!" তিনি আবারও বললেন, "যাই হোক, আমি চেয়ারম্যান স্যারের ঘরেই মেয়েকে দেব। যাও বেশিকরে রান্নাবান্না কর।"



আয়না বসে বসে ভাবলো কাজটা করা ঠিক ওর হয় নি। নিলয় আরেকটাবার সুযোগ চেয়েছিল। সুযোগটা দিলে হয়তো আজ ওর এমন কষ্ট হত না আর নিলয়কেও কষ্ট পেতে হত না। নিলয় বাসায় ফেরার সময় দেখতে পায় টিনার সাথে একটা ছেলে! একসাথেই রেস্টুরেন্টে ঢুকলো! অথচ আয়না কোনদিনও তার কাছে ভালবাসা ব্যতীত কিছু চায় নি! নিলয়ের ইচ্ছা হচ্ছিল গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে টিনাকে একটা চড় মেরে আসি। তারপরও সে আগালো না। এরপর বাসায় ফিরে গেল।


বাসায় ঢুকতেই বাবা বললেন, "নিলয় সাহেব, আমার বউমা দেখতে কেমন লাগলো?" নিলয় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল! সে আয়নার সাথে দেখা করতে গেল এ খবর বাবা জানলো কিভাবে? "না... না.. না.. যা.. যা.. যাই নি তো!" "ওহ তাই?" নিলয় বুঝে উঠতে পারছে না ওর বাবা কিভাবে জানলো যে সে আয়নার কাছে গিয়েছিল! মা একটু মুচকি হেসে বললেন, "আজ বউমা দেখতে যাবো!" একথা শুনে নিলয় আকাশ থেকে পরার মত বিস্মিত হয়ে গেল! লক্ষী ছেলের মত মাথা নাড়িয়ে জ্বী আচ্ছা বলে ভেজা বিড়ালের মত নিজের রুমে চলে গেল। আর যাই হোক আজ তাহলে আয়নাকে আবার দেখতে পাবে সে। ভাবতেই মনটা খুশিতে নেচে উঠছে নিলয়ের!


দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে নিলয়ের বাবা আসাদ সাহেব ফোন দিয়ে বললেন তারা রওনা দিয়েছেন! নিলয়ের যেন রাস্তা আর সময় কোনটাই ফুরাতে চাচ্ছে না! কেন যে আজ ওর এমন হচ্ছে!


আয়নার মা বাবা মেয়েকে তৈরি করে ফেলেছেন! কিন্তু ঘরে কাজে সাহায্য করার জন্য বাড়তি লোক না থাকায় তারা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন! এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল অর্থাৎ পাত্রপক্ষ হাজির! তাদের ঘরে বসতে দিয়ে আয়নার মা চলে গেলেন আর আসাদ সাহেব তাদের সাথে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছেন!


আয়নার মা এসে আয়না বলতে লাগলেন, "শোন মা, এই চা নাস্তা নিয়ে যা। নম্র-ভদ্রভাবে কথা বলবি, যা বলে তার উত্তর দিবি, অতিরিক্ত কথা বলতে যাবি না আর হ্যাঁ সালাম দিতে একদম ভুলবি না।" সর্বশেষে আয়নার কপালে একটা চুমু দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা আবারও বললেন, "আল্লাহ আমার মেয়েটাকে সুখি কর, আমীন।"


আয়না নাস্তা নিয়ে সামনে আগাচ্ছে আর পিছনে ওর মা সাথে সাথে আসছে! মনে মনে বলছে, "আমার বুঝি এখনই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে যে আম্মু আগেই চোখ ভিজানো শুরু করেছে! আর ছেলেপক্ষের লোকজনও কেমন আজিব! একটা কল কি করছে সাথে সাথেই হাজির!"

নিচের দিকে তাকিয়ে সালাম দিয়ে নিলয়ের মা-বাবা কে চা দিল। নিলয়কে চা দিতে গিয়ে আয়না ভয় পেয়ে যায়! সে কি স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তবে আছে বুঝতে পারছে না! কোনরকম কেঁপে কেঁপে চা দিয়ে নিলয়ের থেকে খানিকটা দুরে বসলো আয়না! এরপর নিলয়ের মা বাবা আয়নার ইন্টার্ভিউ নেয়া শুরু করলেন। তারপর মেয়ের মা বাবা নিলয় আর আয়নাকে একান্ত কিছু আলাপ আলোচনা করার জন্য অন্য রুমে পাঠালেন!

আয়না বললো, "কেন এসেছো?"

"তোমার হাতের এক কাপ চা সকালে ও সন্ধ্যায় পাওয়ার জন্য।"

"আবেগের কথা বাদ দাও, কেন এসেছো সেটা বলো?"

"আমি আমার আমির কাছে এসেছি। তার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি। আর যেন এমনটা না হয় সেজন্য ভালবাসা দিতে এসেছি!"

"আজ যদি আমি ফিরিয়ে দেই?"

"তাহলে ভাববো তুমি প্রতিশোধ নিয়েছো!"

"আর যদি গ্রহণ করি?"

"এখন থেকে সারাটা জীবন শুধু তোমার জন্য বেঁচে থাকবো, তুমি আমার না হলেও তোমার জন্য বেচে থাকবো। শুধুই তোমার জন্য।"

আয়না কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো! আয়নার নিরবতা দেখে নিলয় বললো, "কিছু বলছো না যে?" আয়না তবুও চুপ! নিলয় আবারও বললো, "প্লিজ আজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না।"

আয়না নিরবতা ভেঙে বললো, "ভাবছি কবে তোমার বুকে মাথা রাখতে পারবো!"


আয়নার সম্মতিতে নিলয়ের দেহে প্রাণ ফিরে আসলো! তারপর আর কিছু বলার সময় পায় নি তারা! নিলয় আয়নার নাম্বারটা নিল। এখন আর একাকি মনে হবে না নিজেকে! আয়নাও খুশি!


নিলয়ের বাবা বললো, "তো বেয়াই, শুভকাজের দিন তারিখ ঠিক করা যাক!" "অবশ্যই অবশ্যই!" উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের দিন তারিখ ধার্য হলো!


এরপরের দিনগুলো বেশ তাড়াতাড়ি চলে গেল! বিয়ের বাজার করা, পোশাক, দাওয়াত দেয়া ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। আয়না নিলয় একসাথে শপিং করতে বের হয়েছে! এভাবে দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো!


কমিউনিটি সেন্টারে একেরপর এক মানুষ এসে আয়নাকে দেখে যাচ্ছে! আশে পাশে আয়নার দুই একটা বান্ধবী আর কাজিনরা আছে! এদিকে নিলয়ের সাথে ওর অনেক বন্ধু-বান্ধব আছে। সবাই মজা করছে, আড্ডা দিচ্ছে, কেউ কেউ গানের তালে নাচতে আরম্ভ করেছে! আয়না মা বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে তারাও অনেক খুশি আজ। এমন একটা দিনের জন্য হয়তো সে অপেক্ষা করেছিল! আজ তার নিজেকে সুখি বলে মনে হচ্ছে! অনেক সুখি ও ভাগ্যবান!


নিলয়ও নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছে! আয়নার জন্যেই আজ তার এই বিবর্তন! টিনার সাথে বিয়ে হল নিলয়ের জীবনে দুঃখের অন্ত থাকতো না! আয়নার ভালবাসা বুঝতে সে অনেক সময় লাগিয়েছে! আজ সে এক বড়লোক গরীরকে ভালবাসা কি সেটা বুঝতে শিখিয়েছে! বরও ভাগ্যবান নিলয়!


বাসর ঘরে বসে নিলয় আয়নাকে বললো, "আজ রাতে আমি কি কিছু পাবো?"

"হুম, যা চেয়েছিলে সেটা পাবে।"

"তাহলে দাও..!"

"তাহলে সামনে তাকিয়ে থাকো, পিছনে তাকালেই যা চেয়েছিলে সেটা পাবে না!" বলে আয়না বিছানা থেকে নেমে দুটো কাপে ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে নিলয়কে বারান্দায় আসতে বললো। মেহেদীরাঙা হাতে চায়ের কাপ নিয়ে নিলয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, "তুমি যেটা চেয়েছিলে সেটা এখানে!"

"তুমি কিভাবে চা আনলে?"

"তুমি বলেছিলে না সকাল সন্ধ্যায় এক কাপ চা হলেই চলবে! আমি জানতাম আজ সন্ধ্যায় তোমাকে চা দিতে পারবো না তাই বাসা থেকে বানিয়েই ফ্লাক্সে রেখে দিয়েছিলাম।"

নিলয় কি বলবে বুঝতে পারছে না! নিজেকে বড়ই অপরাধী লাগছে! কেন এই মেয়েকে সে এত অবহেলা করেছিল ভেবে পাচ্ছে না!

চা খাওয়া শেষে নিলয় কাপগুলো রুমে রেখে আবার বারান্দায় গেল। আয়নার বললো, "এবার আমার চাওয়াটা পূর্ণ কর!"

আয়নাকে কাছে টেনে নিলয় আয়নার মাথাটা নিজের বুকে রেখে বললো, "আর কি চান মহারানী?"


"কিছুই না, শুধু সারাজীবন তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই...."



[কিছু কথা: পৃথিবীতে অভাগা তারাই যারা হাতের কাছে ভালবাসা পেয়েও তার গুরুত্ব বুঝতে পারলো না। ছেলেরা কাউকে মন দিয়ে ভালবাসলে যেমন আর কোন মেয়ের কথা ভাবতে পারে না, মেয়েরাও যাকে মন দিয়ে ভালবাসে তাকেও ভুলতে পারে না। মেয়েদের ভালবাসা নিয়ে কেউ একজন বলেছেন, "নারীর ভালবাসা পুরুষের চেয়ে উত্তম!" ৫টি বর্ণের ছোট বাক্যটির অর্থ বুঝার চেষ্টা করুন।]
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৯
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×