somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উত্তরের জেলা লালমনিরহাট

০৯ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি শেখ ফজলল করিম

সম্প্রতি ঘুরে এলাম বাংলাদেশ। সল্প সময় নিয়ে হলেও এবার ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিলো দেশের বেশ কটি জেলা। ছুটির প্রায় শেষের দিকে বেরিয়েছিলাম বাংলাদেশের উত্তরের জেলা লালমনিরহাট। তিসতা নদীর কাক-চক্ষু স্বচ্ছ জলের টানে ঘর ছেড়ে বেরুনো। দুটি নাম না বললে অকৃজ্ঞতা প্রকাশ পাবে। লালমনিরহাট ভ্রমণের উৎস ছিলো আরিফুল ইসলাম (আরিফ) এবং শফিকুল ইসলাম। আরিফের বাড়ি তিসতা এবং শফিকুলদের বাড়ি কাকিনায়। ওদের সহযোগীতায় ভ্রমণ পিপাষূ মানুষটি ঘুরে এলাম লালমনিরহাট। ওদের প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ। এখানে সাক্ষাত পেলাম বরণ্য কবি শেখ ফজলল করিমের।লালমনিরহাট সদর হতে অথবা কালীগঞ্জ উপজেলা সদর হতে সড়কপথে কবি শেখ ফজলল করিমের বাড়ি ও কবর দেখতে যাওয়া যায়। কালীগঞ্জ উপজেলা সদর হতে সড়কপথে এর দুরত্ব ১০ কি.মি.। কবি ফজলল করিমের বাড়ি চেনার জন্য ১২ জুলাই ১৯৯৩ সালে রংপুর থেকে পাটগ্রাম যাওয়ার পথে কাকিনায় কবি বাড়ি প্রবেশ দ্বারে "কবি স্মৃতিফলক" উন্মোচন করেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক জনাব কাজী ফরিদ আহম্মদ।

কবি শেখ ফজলল করিমের কবর

তৎকালীন মুসলিম কবি-সাহিত্যিকগণের মধ্যে কবি শেখ ফজলল করিমের অবস্থান ছিল প্রথম সারিতে। তাকে বলা হয় সাহিত্য বিশারদ,কাব্য রত্নাকার নীতিভূষণ। কবি শেখ ফজলল করিম লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায় ১৮৮২ সালের ১ মার্চ জম্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তার বাবার নাম আমীর উল্লাহ সরদার এবং মায়ের নাম কোকিলা বিবি। পিতামহ জসমত উল্লাহ সরদার ছিলেন জমিদার শম্ভুরঞ্জন রায় চৌধুরীর একজন বিশ্বস্থ কর্মচারী। ছোটবেলা থেকেই কবির লেখা-পড়ার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ ছিল, এমনি কি তার যখন তিন-চার বছর তখন তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে স্কুলে চলে যেতেন। তিনি পাঁচ বছর বয়সে কাকিনা স্কুলে ভর্তি হন। প্রায় প্রতি বছরেই বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য তিনি পুরস্কৃত হতেন। ফজলল করিম মাত্র ১২ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতার বই সরল পদ্য বিকাশ হাতে লিখে প্রকাশ করেন। ষষ্ঠ শ্রেণীতে তাকে রংপুর জেলা স্কুলে ভর্তি করা হলে তিনি তা ছেড়ে কাকিনা স্কুলে ফিরে আসেন। সেখান থেকেই ১৮৯৯ সালে মাইনর পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। এরপর তাকে আবারও রংপুর জেলা স্কুলে দেওয়া হলে স্কুলের বাধাধরা পড়াশোনায় মন বসাতে না পেরে তিনি সেখান থেকে আবারও ফিরে আসেন এবং জ্ঞানার্জনে উৎসাহী হয়ে প্রচুর বই পড়তে থাকেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বসিরন নেসা খাতুনের সাথে ফজলল করিমের বিয়ে হয়। এরপর অনেক কারণে তার স্কুল জীবনের ইতি ঘটে। শুরু হয় জ্ঞানচর্চা, আধ্যাত্মিক ও সাহিত্য সাধনা। নিরন্তর জ্ঞানচর্চার জন্য কবি নিজ বাড়িতেই ১৮৯৬ সালে করিমস আহমদিয়া লাইব্রেরী নামে একটি ব্যক্তিগত পাঠাগার গড়ে তোলেন। কবি বাল্য বয়েসেই হোমিওপ্যাথিক চিকিতসা আয়ত্ব করেছিলেন এবং নিজ বাড়িতে বসেই দরিদ্র মানুষদের বিনা পয়সায় চিকিতসা সেবা দিতেন। সাহিত্য সাধনার প্রতি গভীর ভালোবাসার টানেই তদকালীন প্রায় দেড় হাজার টাকা ব্যয়ে নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন সাহাবিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস নামের একটি ব্যক্তিগত ছাপাখানা। তিনি কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় তার পদচারনা ছিল দৃপ্ত। কবিতা ও কাব্য ছাড়াও কবি লিখেছেন অসংখ্য প্রবন্ধ, নাট্যকাব্য, জীবনীগ্রন্থ, ইতিহাস, গবেষনামূলক নিবন্ধ, সমাজ গঠন মূলক তত্বকথা, গল্প, শিশুতোষ সাহিত্য, চরিতগ্রন্থ, সমালোচনামূলক রচনা, পুথি সম্পাদনা। প্রকাশিত অপ্রকাশিত সবমিলিয়ে জীবদ্দশায় কবি ৫৪টির মত গ্রন্থ রচনা করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, কাব্যগ্রন্থ-তৃষ্ণা (১৯০০), পরিত্রানকাব্য (১৯০৪), ভগ্নবীণা বা ইসলামচিত্র (১৯০৪), ভক্তি পুষ্পাঞ্জলি (১৯১১), উপন্যাস লায়লী-মজনু, ধর্মবিষয়ক পথ ও পাথেয়, এছাড়াও সেসময়ের প্রায় সকল পত্র পত্রিকায় তার অসংখ্য কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, উপন্যাস, অনুবাদ প্রকাশিত হয়।
সেই সময়ের শেক্সপিয়র হিসেবে আখ্যায়িত কবিকে ১৩২৩ বঙ্গাব্দে নদীয়া সাহিত্য সভা সাহিত্য বিশারদ উপাধিতে ভূষিত করেন। রৌপ্য পদক পান পথ ও পাথেয় গ্রন্থের জন্য, কাশ্মীর শ্রীভারত ধর্ম মহামন্ডল রৌপ্য পদকে ভূষিত করেন। কবি আজ প্রয়াত কিন্তু কবির কাব্য মালা অমর। ঘুরে দেখেছি কবি বাড়ি, কবির ব্যবহৃত আসবাবপত্র। যে কলম দিয়ে লিখেছিলেন--

কোথায় স্বর্গ?
কোথায় নরক?
কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝেই স্বর্গ-নরক
মানুষেতে সুরাসুর...


সেই কলমটিও রয়ে গেছে অক্ষত। কথা বলেছি ৭৭ বছর বয়সী কবির নাতি শেখ ওয়াহিদুন্নবীর সাথে।

শেখ ওয়াহিদুন্নবী

তিনি খুব মিষ্টভাষী ও সদালাপী লোক। খুব কম সময়ে মানুষের মাঝে ভালবাসা বিলিয়ে দিতে পারেন সহজ করে তা সল্প সময় কথা বলেই বুঝতে পারলাম। কারন, এই স্বভাব তার উত্তোরাধীকার সূত্রে পাওয়া। তিনি আমাদেরকে কবির সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরলেন। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ফজলুল করিম ছিলেন দ্বিতীয়। তার পারিবারিক ডাক নাম ছিল মোনা। কবির সেই টিন আর কাঠের গড়া ঘরটি আজো রয়ে গেছে।

কবি শেখ ফজলল করিমের বাড়ি

ঘরের সামনেই আছেন কবি চিরনিদ্রায় শায়িত। এটা কবির পারিবারিক কবরস্থান। কবি বাড়ির সম্মুখে আছে একটি পুকুর। শেখ ওয়াহিদুন্নবী আক্ষেপ করে বললেন- সরকারি কোনো পিষ্ঠপোষকতা তারা তেমন একটা পাননি। কবির নামে একটি পাঠাগার স্থাপিত হয়েছে কাকিনা বাজারের পাশে। তিনি জানালেন এই পাঠাগারটি যদি কবি বাড়ির পাশে হতো তা হলে কবির পরিচিতি এবং কবি পরিবারের প্রতি সাধারন জনতা/পাঠক/পর্যটক সর্বস্তরের মানুষের আগ্রহ আরো প্রবল হতো। জনাব ওয়াহিদুন্নবী বললেন তারা নাকি ওই পাঠাগারের জন্য জমিও বরাদ্দ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন তাদের ইচ্ছে মতো স্থানে ২০০৫ সালে "কবি ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগার" স্থাপন করেন।

কবি ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগার

তাছাড়া দেখা গেলো কাকিনা বাজার নিকটস্থ পাঠাগার থেকে কবির বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটিও অত্যন্ত সরু । পাঠাগার থেকে কবি বাড়ির দূরত্ব আনুমানিক ১ কি.মি. হবে।
কাকিনায় ঘুরতে যেয়ে আরো একজন বরেণ্য ব্যক্তির সাক্ষাত পেলাম। তিনি হলেন জনাব শফিকুল ইসলাম।

এ্যাথলেট শফিকুল ইসলাম

শফিকুল ইসলাম আন্তর্জাতিক এ্যাথলেটিকস এ বাংলাদেশের জন্য জয় ছিনিয়ে এনে গর্বিত করেছেন পুরো জাতিকে। জাতীয় ভাবেও তিনি বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহন করে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অর্জন করেন। ১৯৯৫ সালে রাইফেলস এ্যাথলেটিকস প্রতিযোগীতায় শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের স্থান দখল করেন। ১৯৯৯ সালে জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় নির্বাচিত হন কাকিনার এ্যাথলেট হিসেবে।

বিভিন্ন সময়ে অর্জিত পদকসমূহ

জনাব শফিকুল ইসলাম জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক অর্জন করে কাকিনা তথা পুরো বাংলাদেশের খ্যাতি অর্জন করেছেন।
এই গ্রামে দেখতে পাওয়া যাবে বেশ কিছু কুমার বাড়ি। মাটি দিয়ে সুচারু শৈলীতে কুমার বৌ-ঝিরা বানাচ্ছেন কলস, হাঁড়ি, সরা ইত্যাদি দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্র।

কাঁচা মাটির পাত্র রোদে শুকানো হচ্ছে

কাদা মাটি দিয়ে বানানো বাসন-কুসন প্রথমে ২/১ দিন রৌদ্রে শুকিয়ে চড়িয়ে দেন মাচায় আগুনে পোড়ার জন্য।

পোড়ানোর আগে এভাবে মাচায় তুলা হয় কাঁচা মাটির পাত্র

কাঁচা মাটির এসব তৈজসপত্র কয়েকদিন পোড়ানোর পর শক্ত হয় তখন টুকা দিলে টনটন করে বেজে ওঠে আর তখনই উপযুক্ত হয় ব্যবহারের জন্য।
ঘুরে দেখেছি কাকিনায় অবস্থিত উত্তর বাংলা কলেজ। ১৯৯৪ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠা কারেন গ্লাসগোর স্ট্রাথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ড. মোজাম্মেল হক।


কলেজে ঢুকতেই হাতের ডান পাশে চোখে পড়বে প্রাচীনকালের বিলুপ্তপ্রায় একটি স্থাপত্বের ধ্বংসাবশেষ। উল্লেখ্য, কালীগঞ্জ তথা কাকিনায় বিভিন্ন জমিদার বংশের স্থাপত্ব লক্ষ্য করা যায়।

জমিদারদের স্থাপত্বের ধ্বংসাবশেষ

প্রাচীনকালে কাকিনার জমিদার ছিলেন মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরী। কাকিনার জমিদার শম্ভুচন্দ্র রায় চৌধুরী ১২৬৩ বঙ্গাব্দের ১৮ কার্তিক তাকে দত্তক গ্রহণ করে নাম রাখেন মহিমা রঞ্জন। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর তিনি জমিদার হিসাবে স্বীকৃত হন। তিনি একজন প্রজাবৎসল, শিক্ষানুরাগী এবং সাহিত্য-সংস্কৃতিমনা জমিদার ছিলেন। সেই সময়কার বিলুপ্ত বা অর্ধবিলুপ্ত ধ্বংসাবশেষ কাকিনার বিভিন্ন স্থানে দেখতে পাওয়া যায়।

লালমনিরহাট জেলার অধিকাংশ এলাকায় প্রচুর তামাক চাষ হয়। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ভিন্ন ভিন্ন তামাকের জাত পরিলক্ষিত হলো। তাছাড়া এই অঞ্চলে আলু, ভূট্টা, ধান ইত্যাদি ফসলের মাঠ দেখতে পেলাম।

ঘুম ভেঙ্গেছিলো ট্রেনের লম্বা হুইসেলে। পুম্ পু….মমমমম…… খট্খট্ খট্খট্ খট্খট্ খট্খট্….। ট্রেন চলে যায় রেল লাইন ধরে বহুদূরে। দেখেছি তিসতা রেল স্ট্যাশন। তিসতা রেল স্ট্যাশনে রয়েছে জংশন।

তিস্তা রেল স্ট্যাশন

তিসতা থেকে দুটি লাইন দুই দিকে চলে গেছে। একটি কুরিগ্রামের উলিপুর হয়ে রমনা বাজারে গিয়ে শেষ হয়েছে আরেকটি লাইন পাটগ্রাম হয়ে ভারত সীমান্ত এলাকা বুড়িমারী গিয়ে শেষ হয়েছে। তিসতা রেল স্ট্যাশনের প্রায় ৫/৬ শো মিটার দুরে তিসতা রেল ব্রীজ। রেল ব্রীজটি পড়বে তিসতা থেকে রংপুরের পথে।

তিস্তা রেল ব্রীজ

তিসতা নদীতে সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে একটি সড়ক সেতু। তিস্তা রেল সেতুর পাশাপাশি একটি সড়ক সেতু নির্মাণের জন্য এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০০১ সালে ৮৭ কোটি ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে তিস্তা সড়ক সেতু নিমার্ণের উদ্যোগ নেয়া হয়।২০০১ সালের ১ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবে তখন সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

তিস্তা সড়ক সেতু

এর ৬ বছর পরে পুনঃনির্ধারিত মোট ৯৯ কোটি ৬২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয় ধরে পুনরায় ২০০৬ সালের ৭ মে তিস্তা নদীর ওপর ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ ও ১২.১১ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট সড়ক সেতুর নির্মান কাজ শুরু করা হয়। অবশেষে ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে তিসতা সড়ক সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে সর্ব সাধারনের জন্য খুলে দেয়া হয়।

নবনির্মিত তিস্তা সড়ক সেতু

রংপুর বিভাগের জেলা কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিস্তা সড়ক সেতু। তিসতায় জল নেই। শুকনো মৌসুম। শুধু ধুধু বালু চর। তিসতা শুকিয়ে গেছে উজান থেকে বাঁধের ফলে। সরু তিসতা বয়ে যাচ্ছে সাপের মতো এঁকেবেঁকে। তিস্তার টলটলে জল এঁকেবেঁকে স্রোতহীন মৃদু ভাবে বয়ে যেনো মিশে গেছে কুয়াশার ধোঁয়াটে আভায় দুর দিগন্তে। সরু নাউ নিয়ে লগি বেয়ে মাঝি যাচ্ছে দুরের গায়ে।

মাঝি নৌকা বেয়ে যাচ্ছে তিস্তা নদীতে

গ্রামের ছেলেমেয়েদের দল বেঁধে মাছ ধরা। নেংটা ছেলেটা কী আনন্দ-উল্লাসে ধরতেছিলো “বৈরাতি” মাছ।

নেংটা ছেলেটা ধরছে বৈরাতি মাছ

ছোট মাছকে স্থানীয়রা বৈরাতি মাছ বলে। আমিও মাছের লোভ সামলাতে পারলাম কৈ, নেমে পড়লাম হাঁটু জলে। ছোট ছোট মাছ কিলবিল করছিলো। কী দারুন সৌন্দর্য্য ভর দুপুরে সূর্যের আলো আর বৈরাতি মাছের যুগল নৃত্য। এ অঞ্চলে নদীর তীরে যে বালু রয়েছে নির্মাণ কাজের জন্য এ বালু উত্তম বলে বিবেচিত। তাছাড়া এটি কাঁচ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা তার সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। চোখ ধাঁধাঁনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য তিসতার বাঁকেবাঁকে। নগরের কোলাহল থেকে দুরে বিশুদ্ধ বায়ূর অপার লীলাভূমি তিসতার চরাঞ্চল। তিসতা ও ধরলা নদী বিধৌত উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট ঘুরতে এসে মিশে গিয়েছিলাম গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও চিত্রপটের সাথে। পরিচিতি মিলেছে এই অঞ্চলের ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে। ধরলা আর তিসতার জলে নৌকা বেয়ে মাঝি গেয়ে যেতো আপন মনে- তিসতা নদীর পাড়ে পাড়ে রে… আরে ও মৈশাল গোকুলায় ছাড়ে কুশি… সাজে সকালে বাজান দুতরা নদীর পাড়ে বসি মৈশাল রে…/ ধল্লা নদী কাছাড় ভাংগে রে… পড়ে ধল্লার মাঝে….ওই মতো ভাংগিলো রে আমার বুকের ভিতরে রে… কিবে দোষে ছাড়িলেন বন্ধুরে রে….তিস্তা নদীর উজান চরে রে ফুটে কাশিয়ার ফুল…..পিরিত করি প্রানবন্ধুর করনুম একি ভুল রে…. এমন আরো কিছু সহজ-সরল ভাটিয়ালি গানের সন্ধান পাওযা যায় রিভার সঙস অফ বাংলাদেশ নামে দেবেন ভট্টাচার্যের বাংলার নদীর গানের একটি সংকলনে। গ্রামের সহজ সরল আঞ্চলিক ভাষায় রচিত হয়েছে ভাটিয়ালি ও লোকসংগীত। নদী মাতৃক এই বদ্বীপে জন্মে ধন্য হলাম। অনুরুপা রায়ের উদাস কণ্ঠে বিভোর হলাম------ তিস্তা নদীর উজান চরে রে ফুটে কাশিয়ার ফুল…..পিরিত করি প্রানবন্ধুর করনুম একি ভুল রে …..

সূত্রঃ-
১. লালমনিরহাট জেলা তথ্য বাতায়ন
২. ওয়েব কালীগঞ্জ
৩. উইকিপেডিয়া
৪. সহব্লগার সিরাজ সাঁই

বিশেষ ধন্যবাদ জানাইঃ- হজরত ভাই (কাকিনা), ছোট ভাই রাশেদ বাবু এবং আশ্রাফুল ইসলাম আরিফ (তিস্তা)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৫৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×