somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গৃহপালিত কুমির (ট্র্যাজেডিক ঘটনা)

২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মাইকে বাজচ্ছে, 'একটি হারানো সংবাদ! একটি হারানো সংবাদ! আজ দুপুর ১২টার সময় একটি কুমির হারানো গিয়াছে। হারানোর সময় কুমিরটির পরনে ছিল একটি খাঁজকাঁটা লেঙ্গুর ও কাঁটা কাঁটা মোটা চামড়া। যদিও কেউ এই কুমিরের সন্ধ্যান পেয়ে থাকেন - তবে অবশ্যই তাকে আগে খাবার দিবেন। সকালে না খেয়েই হারিয়ে গিয়েছে। তারপর আমাদেরকে জানাবেন।' 'একটি হারানো সং....'

চা খাইতেছিলাম। কুমির হারানোর খবর শুইনা পানের পিচকিড়ির মত মুখের চা ফালায়া দিলাম। কী ধরনের ফাইজলামি এইটা!!! কুমির হারায় ক্যামনে? হারানো তো পরের কথা কুমির পালেই বা ক্যাডা বাসায়?

ঐদিকে মাইকে চলতেই আছে কুমিরের নিখোঁজের কথা। তাড়াতাড়ি কইরা মাইকের দিকে ছুটলাম। আগে এরে দুইটা চটকনা তারপরে জিজ্ঞাস করুম কাহিনী কী আসলে? এই দিন-দুপুরে পাগলামী করার মানেটা কী?

মাইকওয়ালা রিকশার কাছে গিয়ে তো আরেক টাশকী খাইলাম। মাইকে তো কথা কইতেছে আমার ছোট ভাই। আমাদের বাসায় তো কোন কুমির নাই। তাইলে মাইকে কুমির কুমির চিল্লায় ক্যা? পাগল হইয়া গেছে নাকী পুরাপুরিই? নাকি কারো উপকার করতেছে মাইক মাইরা? তাইলে হারাইছেডা কার? এলাকা তো দূরে থাক - পুরা শহরে কারো বাড়িতে কুমির আছে বইলাই আমি জন্মের পরে শুনি নাই।

'অই! তর হইছে কী? কুমির হারাইছে কুমির হারাইছে চিল্লাইতাছস ক্যারে?'
'ভাইয়া! তাড়াতাড়ি বাসায় যাও। অবস্থা সবার খারাপ হয়া গেছেগা।' প্রায় কানতে কানতেই কইলো।
'অবস্থা খারাপ ক্যান?'
'কুমিরটা হারায়া গেছে দেইখা।'
'হায়রে মরার! আবার কুমির! আরে কার কুমির হারাইছে?'
'আমগরটা।'
'আমগর কুমির? আমগর কুমির কবে আছিলো?'
'সকালেও আছিলো, এখন নাই।' আবার কান্দা কান্দা ভাব শুরু। 'তুমিই তো আনছিলা। বাথরুমের সামনে থাকতো।'

মাথার উপরের আকাশটা খান খান বত্রিশ খান হইয়া মাথায় পড়া শুরু করলো। আমি কুমির আনছিলাম? কোন দুঃখে? আমি কি আসলেই চা খাইছিলাম নাকি চায়ের বদলে অন্য কিছু খাওয়ায়া দিছে?
'বাসাত যাও তাড়াতাড়ি। অবস্থা বেশি খারাপ।' বইলা আবার কুমির হারানোর মাইক মারা শুরু করলো।

বাসার দিকে হাঁটা দিলাম। রাস্তায় যার সাথেই দেখা হয় সে ই দেখি কুমির হারানো নিয়া দুঃখ প্রকাশ করতেছে। 'কুমিরটা অনেক ভালা আছিলরে ভাই।' 'ভাই! চিন্তা কইরো না, আমরা কুমিরটারে খুইজ্জা বাইর করমুই। ঠান্ডা থাহো ভাই।'

আর আমার মাথায় এখনো ঢুকতেই আছে না - কুমির বইলা প্রাণীটা আমার বাসায় আসলোই বা কেমন কইরা? ঠান্ডা গরম তো পরে হমু - আগে তো আমার বুঝতে হইবো আসলে কী হইছে।

আরো অনেকের কাছেই কুমিরের দুঃখপ্রকাশ দেখতে দেখতে বাসায় গেলাম।

বাসায় দেখি মরা কান্না চলতেছে। মানুষের ভীড়ে আমি নিজের হাতও দেখতে পারতেছি না। খালি কুমিরের মালিক দেইখা মনে হয় ভীড় আগাইয়া সামনে যাইতে পারছি। নাইলে, আর ঐ ভীড় কাইটা সামনে যাওয়া সম্ভবই আছিলো না।

যাইতেই নানী দেইখা কয়, 'ভাইরে! এইডা কী হইলো রে ভাই!' কানতেছে সমানে।
'কী হইছে?'
'হুনছস না তুই? কুমিরটারে ক্যাডা উঠায়া লইয়া গেছেগা'
'আরে ধুরু! কিয়ের কুমিরটা? কুমির আইলো কইত্তে?'
'তুই আনছিলি মনে নাই তর?'

বুড়ির সাথে কথা কওয়া আরেক সময় নষ্ট। আম্মার সাথে দেখা। দেখি কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলায়া ঢোল বানায়া ফালছে।
'বাবারে এইডা কী সর্বনাশটা হইলো? ক্যাডা করলো এই কামডা?'
'কুমিররে ক্যাডা উঠায়া লইয়া যাইবো মরার লাইগা? আর কুমির আইলো কইত্তে?'
'তুই ই তো আনছিলিরে বাবা। কত ভালা আছিল কুমিরটা। এই জায়গাডাত থাকতো।' বাথরুমের সামনের দিকটা দেখাইলো। ঐখানেই থাকতো কুমির।

সবচেয়ে আজব কথা হইলো, কুমিরটা নাকি আমি আনছি আর আমারই মনে নাই।

ছোট বোনগুলা অজ্ঞান হওয়ার প্রতিযোগীতায় লাগছে। কে কত বেশিবার অজ্ঞান হইতে পারে - ঐডাই দেখতেছে। কুমির হারানোর পর থেইকা নাকি একটা কইরা চিৎকার দিয়াই পইড়া অজ্ঞান। আবার উইঠা চিক্কুর-অজ্ঞান। কুমিরের দুঃখ সইতেই পারতেছে না তারা।

পাঁচ বছরের ছোট বোনটা আমারে দেইখা দৌড়ায়া আসলো। যাক এতক্ষণে জ্ঞানবুদ্ধিওয়ালা কাউরে পাইছি। আসল ঘটনা কইলে সে ই কইতে পারবো। আমার কাছে আইসাই ফুঁপায়া ফুঁপায়া কান্না শুরু করলো।
'কী হইছে? কাঁদো কেন?'
'কু... কু... কুমির...'
'কুমির কী? কামড় দিছে?'
'না হারায়া গেছে।' বইলা এইবার আর ফুঁপায়া না, হাউমাউ কইরা কান্না শুরু করলো।

কোন রকমে বুকে টাইনা আইনা আদর কইরা ঠান্ডা করছি। কথাও দিছি কুমির আমি খুঁইজ্জা নিয়াই আসমু।

কিন্তু আমি এখনও জানিনা কুমির আসলো কিভাবে আর কবে? আর থাকলে হারাইবৈ বা ক্যামনে?

বাথরুমের সামনে ফ্লোরে নাকি কুমির থাকতো। পানি ছাড়া কুমির। কুমিরের কি সর্দি লাগছিল নাকি?

জায়গাটার সামনে তাকাইলাম। খালি খালি লাগতেছে। কিছু একটা ছিল এখন নাই। হুট কইরা মনে পড়লো। দাঁড়ানো থেইক্কা পইড়া গেলাম। আম্মা আর নানী দৌড়ায়া আইসা ধরলো।
হতিবিহবল ভাবে একবার আম্মা আর নানীর দিকে চাইলাম। কইলাম, 'আ...আম... আমার কুমিরটা কই?'
.
.
.
.
.
.
.
.
.
এরপর। মোবাইলের তীক্ষ্ণ চিৎকারে ঘুম ভাঙলো। কিসের কুমির? কিসের হারানো?
এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছি।
.
.
.
.
.

কয়েকদিন আগে ঠিক এই স্বপ্নটাই দেখছি। দুনিয়াতে এত কিছু থাকতে আমি কেন কুমির হারানোর স্বপ্ন দেখছি জানিনা। এরপরে মিনিমাম বিশটা মানুষরে জিজ্ঞাস করছি, 'ভাইরে! আমি তো রাইতে স্বপ্ন দেখছি। আমার গৃহপালিত কুমিরটা হারায়া গেছে। এইডার মানে কী?'
কোন জবাব পাই নাই। সবাইরেই দেখছি হাসতে হাসতে শ্বাসকষ্ট উঠাইতে।

কেউ কি জবাবটা দিতে পারবেন? খুবই টেনশিত আমি। /:) B:-/
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:১৪
৪৪টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×