somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীতের সঙ্গে আসছে নতুন আপদ।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আর কয়েক দিন পরেই স্কুলের সব পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। নতুন ক্লাসে ওঠার আগ পর্যন্ত ছুটি। এই ফাঁকে কেউ দাদা বাড়ি বা মামা বাড়ি বেড়ানোর পরিকল্পনা করে ফেলেছে। শিশুদের বায়না রাখতে চেষ্টা করবেন সবাই। যদিও আজকাল শহুরে লোকজন তেমন একটা গ্রাম মুখী হন না, তবু অনেকেই আছেন শীতের পিঠে, পায়েসের স্বাদ নিতে গ্রামে যাবেন।

শীতের অনেক মজাদার খাবারের মধ্যে খেজুর রস অন্যতম। অনেকেই এই রসের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে চাইবে না। আজকের লেখা এই খেজুর রস নিয়ে।

বিগত ক-বছর হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতে নতুন এক জীবাণুর প্রাদুর্ভাব ঘটে। নিপাহ ভাইরাসের কথা বলছি। এই ভাইরাসের প্রথম দেখা মেলে মালয়েশিয়ার পেনিনসুলায় ১৯৯৮ সালে। ধারণা করা হয় শুকরের শরীর থেকে এর উদ্ভব ঘটেছে আরও আগে সম্ভবত ১৯৯৪ সালে। তবে পরবর্তীতে সিংগাপুর ও ভারতেও রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাস বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় ২০০১ সালে। নিপাহ ভাইরাস ছড়ায় মূলত বাদুড়ের মাধ্যমে।

নিপাহ ভাইরাস রোগটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে। যে পরিবারে একজন নিপাহ ভাইরাস রোগী পাওয়া যায়, ওই পরিবারে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ার খুব আশঙ্কা থাকে। অসতর্কতার কারণে কয়েক বছর আগে ইন্টার্নি চিকিৎসকও নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।



নিপাহ ভাইরাস কী?
এটি একটি Emerging zoonotic ভাইরাস অর্থাৎ জন্তু থেকে মানুষে ছড়ানো ভাইরাস। ভাইরাসটি মস্তিষ্ক বা শ্বসনতন্ত্রে প্রদাহ তৈরির মাধ্যমে মারাত্মক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। এটি Henipavirus জেনাস এর অন্তর্গত একটি ভাইরাস।

নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকা খুবই প্রয়োজন।

নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ:
নিপাহ ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ৮ থেকে ১২ দিন পর সাধারণতঃ রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। আবার লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও ভাইরাসটি ৪ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।

১ আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমত জ্বরে আক্রান্ত হয়। এরপর মস্তিষ্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয় এবং সে মানসিকভাবে অস্থিরতায় ভোগে।
২ মন-মেজাজ সব সময় উত্তেজিত থাকে। মাঝে মাঝে খিচুনিও হতে পারে।
৩ বমি বমি ভাব, পেশিতে ব্যথা, আলো সহ্য করতে না হওয়া।
৪ ঘুম ঘুম ভাব, মাথা ঝিমঝিম করা, জাগ্রত/সচেতন অবস্থার পরিবর্তনসহ অন্যান্য মানসিক সমস্যা হতে পারে।
৫ প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এক পর্যায়ে রোগী প্রলাপ বকতে শুরু করে এবং অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

নিপাহ ভাইরাসের বাহকঃ
নিপাহ ভাইরাস ছড়ায় মূলত বাদুড়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এই সময়টাতেই খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। আর বাদুড় গাছে বাঁধা হাড়ি থেকে রস খাওয়ার চেষ্টা করে বলে ওই রসের সঙ্গে তাদের লালা মিশে যায়। সেই বাদুড় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে এবং সেই রস খেলে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এ ভাইরাস।

সাবধানতাঃ
যেহেতু নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শতকরা প্রায় ৭৫ জনই মারা যায় তাই একে সাবধানতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। শরীরে প্রবেশের ৮ থেকে ১২ দিন পর রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। তাই নিকট সময়ে বা কমপক্ষে গত একমাসে যারা খেজুরের রস খেয়েছেন, তাদের সবাইকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। আক্রান্ত মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে এ রোগ। তাই যারা রোগীদের সেবা দিয়েছেন এবং মৃতদের সৎকার করেছেন, তাদের দিকেও লক্ষ রাখতে হবে। নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে খেজুরের রস, আধা খাওয়া পেঁপে, পেয়ারা, বরইয়ের মতো ফল না খাওয়াই ভালো। এ রোগে আক্রান্তদের পরিচর্যা করতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রোগীর ব্যবহৃত কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী ভালোভাবে পরিষ্কার না করে আবার ব্যবহার করা যাবে না। রোগীর পরিচর্যা করার পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। রোগীর কফ ও থুতু যেখানে সেখানে না ফেলে, একটি পাত্রে রেখে পরে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। রোগীর সঙ্গে একই পাত্র খাওয়া বা একই বিছানায় ঘুমানো যাবে না। রোগীর শুশ্রূষা করার সময় মুখে কাপড়ের মাস্ক পরে নিতে হবে। খেজুরের রস পান করতে চাইলে অবশ্যই রস গরম করে স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে পান করতে হবে। ৭০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রাতেই নিপাহ ভাইরাসের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। গাছে হাঁড়ি বাঁধার পরে বাঁশের তৈরি বিশেষ পর্দা দ্বারা ভালভাবে ঢেকে দিতে হবে যেন কোনও ক্রমেই হাঁড়ির রস বা রস চোয়ানোর চোঙ বাদুড়ের সংস্পর্শে না আসতে পারে। বাদুড়ের বসত গাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা বাদুরের মল থেকে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। যে এলাকা নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় সে এলাকায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ হওয়ার পর আরও অন্তত ২১ দিন পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে।

চিকিৎসা:
এ ভাইরাস প্রতিরোধে বা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য কোন সরাসরি টিকা বা ওষুধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে উপসর্গ অনুযায়ী আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয়। উপসর্গগুলি দেখা গেলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করালে অনেক সময় রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।

আমরা যারা সচেতন তারা আরও সতর্ক হব। আমাদের গ্রামের যারা বিষয়টা সম্পর্কে এখনও পরিষ্কার মতো জানে না, তাদের সচেতন করতে হবে। এই শীতে একটা ভাল কাজ আমরা করতে পারি। সবার শীতের ভ্রমণটা হয়ে উঠুক আনন্দময়।
(তথ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×