somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে❑রাজীব নুর

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মূল পোস্ট...
১ম পর্ব- -- ২য় পর্ব - ৩য় পর্ব - ৪র্থ পর্ব - ৫ম পর্ব - ৬ষ্ঠ পর্ব - ৭ম পর্ব - ৮ম পর্ব - ৯ম পর্ব - ১০ম পর্ব




~ অনেককেই দেখেছি ১০০টি ভাল বইয়ের তালিকা তৈরি করেছে। কিন্তু আমার ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও আমি আমার প্রিয় বইয়ের তালিকা তৈরি করতে পারিনি। কারন সেই বই গুলো আমি পরে শেষ করতে পারিনি। এখন মনে হচ্ছে, বাংলা সাহিত্যের সেরা বইয়ের তালিকা তৈরি করা যেতে পারে। এবং আমার ধারনা আপনারা সবাই আমার সাথে একমত হবেন। বই আমাদের মানুষ করেছে, আমাদের সুসভ্য করেছে৷ তাই আজ যারা বই-বিমুখ, যারা শুধু কম্পিউটার, পানশালা আর টিভি সিরিয়ালে আনন্দ পায়, তাদের কি সভ্য বলা যাবে?
.
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার। তাকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, 'ভালো বই কাকে বলে?' উত্তরে তিনি বলেছিলেন, 'যে বইটা পাঠককে ভাবায়, সেটাই ভালো বই।' বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই আমার পছন্দের বইয়ের তালিকার সাথে একমত হবেন আশা করি। পাঠকদের কাজ হল বই পড়া। বইয়ের মধ্য থেকে নিজের জন্য আনন্দ খুজে ফেরা। ''তিনটি ভাল বই একবার করে পড়ার চেয়ে একটি ভাল বই তিনবার পড়া বেশি উপকারী।”
.
আমাদের জীবনের আয়ু তো সীমিত। বইপত্র নিয়ে এলোমেলো পড়তে গিয়ে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। বইটি পড়ার আগে ভাবতে হবে আমি এই বইটি কেন পড়ব, বইটি থেকে কী চাই। যা পড়া হয়, তা আত্মস্থ করা গুরুত্বপূর্ণ। বই পড়ার মূল উদ্দেশ্য থাকতে হবে আত্মিক উন্নয়ন। আপনার বইয়ের শেলফ যত বেশি সম্ভব ভিন্ন ধরনের বই দিয়ে ভর্তি করবেন, আপনার অ্যাডভেঞ্চারও তত বেশি হবে।
.
১। 'শেষের কবিতা' ও 'গোড়া' লেখক- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উপন্যাসের নায়কের নাম গোরা। মূলত গোরার পিতা ইংরেজ। সিপাহি বিদ্রোহের সময় এক ব্রাম্মন পরিবারের গোয়ালে তার জন্ম। জন্মের সময় সে মাকে হারায়। ব্রাম্মন দম্পতি তাকে মাতা-পিতার পরিচয়ে বড় করে। এই গোরা কালক্রমে বড় হিন্দু নেতা হয়ে যায় এবং ইংরেজ বিরোধী। এবং শেষের কবিতায় বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার অমিত রায় প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত এবং রোমান্টিক যুবক। তর্কে প্রতিপক্ষকে হারাতে সিদ্ধহস্ত। এই অমিত একবার শিলং পাহাড়ে গেল বেড়াতে । আর সেখানেই এক মোটর-দুর্ঘটনায় পরিচয় ঘটল লাবণ্যর সাথে। এই বইটি দুটি আমি প্রতি বছর একবার করে পড়ি। ঠিক করেছি আমৃত্যু পড়ে যাব।
.
২। 'প্রদোষে প্রাকৃতজন' লেখক- শওকত আলী। উপমহাদেশের এক কোনায় বাংলাদেশে হঠাৎ করে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের ইসলাম গ্রহণ যে কারণেই হোক একটি সর্ব অজ্ঞাত ঘটনা। লীলাবতীর মধ্যে আবহমান বাঙালী নারীকেই পাই। বইটি লিখতে লেখকের প্রায় ১৫ বছর লেগেছে। আজীবন মনে রাখার মত অসাধারণ একটি বই।
.
৩। 'লৌহকপাট' লেখক, 'জরাসন্ধ' (ছদ্মনাম)। আসল নাম- চারুচন্দ্র চক্রবর্তী। বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্ব শেষ করে এক তরুণ যুবক চাকরির সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে শেষপর্যন্ত যে কাজটি পেলেন, সেটি হল কারা বিভাগে। ছোটখাটো একটি জেলের ডেপুটি জেলারের পদ। সম্পূর্ণ একটা নতুন জগতের সঙ্গে পরিচয় ঘটল সেখানে।
পরিচয় হল বদর মুন্সীর মত ভয়ঙ্কর ডাকাতের সঙ্গে - খুন,জখম, নারীধর্ষণ যার কাছে ছেলেখেলা। কিন্তু সেই লোকটিই একবার ডাকাতি করার সময়ে গৃহস্বামীকে কথা দিয়েছিল, শুধু টাকা-গয়নাই নেবে - নারীর সম্মান নষ্ট করবে না। কিন্তু দলের একজন সেই হুকুম মানে নি বুঝতে পেরে, নিজেই ধরা দিল সেই অপবাদের বোঝা নিজের মাথায় নিয়ে।
.
৪। 'অন্তর্লীনা' লেখক- নারায়ণ সান্যাল। গল্পের নায়ক কৃশানু মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। বুদ্ধিদীপ্ত, কিন্তু সাধারণের দৃষ্টিতে স্মার্ট নয়, কারণ সে লাজুক, ইন্ট্রোভার্ট, নিজের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে ভালবাসে। এছাড়া তার মধ্যে আছে এক শিল্পীমন, সে সাহিত্যের ছাত্র, ছবিও আঁকে। অথচ তার স্কেচবুকে নেই কোনও নারীর ছবি। তার বয়সী এক যুবক শিল্পীর কাছে একটু অস্বাভাবিক ঘটনা, সন্দেহ নেই। শুধু স্কেচবুক বলে তো নয়, সে ট্রামে উঠে চেষ্টা করে লেডিজ সীট থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে, তার সহপাঠী মেয়েদের মুখের দিকে সে কখনও তাকায়না পর্যন্ত। উপন্যাসটা পড়তে শুরু করলে, ভাল লাগতে শুরু করবে।
.
৫। 'খোয়াবনামা' পূর্ববাংলার আঞ্চলিক ভাষাকে অবলম্বন করে যে কি চমৎকার উপন্যাস লেখা যায় তার সার্থক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস খোয়াবনামার মাধ্যমে। আঞ্চলিক ভাষার অধিক ব্যবহার রয়েছে বইটিতে, রয়েছে কিছু খিস্তি-খেউরও। ’৪৭ এর দেশভাগ গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে খোয়াবনামা।
.
৬। 'শুন বরনারী' লেখক- সুবোধ ঘোষ। জন্মেছিলেন ১৯০৯ সালে ঢাকার বিক্রমপুরে জেলায়, মৃত্যু ১৯৮০ সালে। সহজ সরল একটি উপন্যাস। এ উপন্যাসকে সম্পর্কে হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন- অতি সাধারণ উপন্যাস মুগ্ধ হয়ে বারবার পড়েছি। হিমাদ্রিশেখর দত্ত ওরফে হোমিও হিমু। পেশায় হোমিও চিকিৎসক। যদিও কেউ তাকে ডাক্তারি করতে দেখেনা। লোকের ছেলেপেলে পড়িয়ে রোজগার চলে। আর,আসল কাজ হচ্ছে পরোপকার, মানে, অমুকের সাথে অমুক জায়গায় যেতে হবে,অমুকের মেয়েকে ট্রেনে করে হোস্টেলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা, অমুক কে তীর্ত্থে নিয়ে যাওয়া, এইসব। না করতে পারেনা হিমু। এমন কাজেই ডাক পড়ে তার।
.
৭। 'কবি' লেখক- তারাশঙ্কর। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর মধ্যে এটি একটি।কবি উপন্যাসের নায়ক একজন কবি । তবে কবি বলতে আমরা সাধারনত যা বুঝি সেই কবি তিনি নন,উপন্যাসের নায়ক নিতাইচরন একজন কবিয়াল । একবার এক মেলাতে এক বিখ্যাত কবিয়াল না থাকাতে নিতাইকে মঞ্চে তুলে দেয়া হয়,তারপরে নিতাই তার প্রতিদ্বন্দ্বী কবিয়ালকে প্রায় ঘায়েল করে ফেলে শেষে তার প্রতিপক্ষ কবিয়াল নিতাইয়ের পরিবার নিয়ে অশ্লীল আক্রমণ করে কবিয়াল লড়াইয়ে জিতে যায়,কিন্তু অই মঞ্চেই নিতাই জয় করে নেই হাজারো মানুষের মন।
.
৮। 'তবুও একদিন' লেখক- সুমন্ত আসলাম। বইটি একটু সময় নষ্ট করে পড়ে ফেলুন। ভালো লাগবেই।
.
৯। ‘লালসালু’ লেখক- সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ। বেশ কয়েকটি শক্তিশালী নারী চরিত্রের প্রাধান্য পেয়েছে এই উপন্যাসে,তাদের মধ্যে জমিলা অন্যতম। জমিলা অত্যন্ত সাহসী এক নারী। মজিদ নামের প্রতিকী দ্বারা ভ্রান্ত না হয়ে, মজিদের সাথে না লেগে থেকে সে পরিবর্তন চেয়েছে। ধর্মকে পুঁজি করে যারা সমাজকে শোষন করে জমিলার মৃত্যু তাদের কপালে কলংকের চিহ্ন এঁকে দেয়।
.
১০। 'হাজার বছর ধরে' লেখক- জহির রায়হান। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র টুনি,অবশ্য অনেকে আম্বিয়াকেও কেন্দ্রীয় চরিত্র বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। তবে আম্বিয়ার চেয়ে টুনির জীবনের উত্থান পতনকেই লেখক বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। টুনি গ্রামের সহজ, সরল, চঞ্চল এক মেয়ে। টুনির পরিণতি হয়েছে হৃদয় চিরে যাওয়ার মতো কষ্টকর। শেষ পর্যন্ত শূন্য বুকে বাপের বাড়ি ফিরে টুনি,তবুও শৃংখল ভাঙ্গেনি।
.
নিজের পছন্দের উপর ভিত্তি করেই বই পড়া উচিত। অন্যের পছন্দ বা ভাললাগার মূল্য না দিয়ে নিজের পছন্দ অনুসারে বই বাছাই করুন। অনেকের কাছে ভাল লেগেছে, এমন বই আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। এছাড়া কোন বই অনেকেই পড়েছে বলে আপনাকেও পড়তে হবে এমন কোন কথা নেই। অন্যের পছন্দের বই আপনাকেও পড়তে হবে, এমন মনে করাটা বোকামী। প্রত্যেকের নিজস্ব একটি ভাললাগার জগৎ থাকে। কারো ভূতের গল্প পছন্দ, কারো ফুটবল আবার কারো বা ভ্রমণকাহিনী। কারো পছন্দ বা প্ররোচনায় বই বাছাই না করে নিজের দিকে তাকান। নিজে যা চান তাই করুন, অন্যের চাপে নয়।
.
নিজের যে বইটি পড়তে ভাল লেগেছে, অন্যকেও সেই বই পড়তে উৎসাহ দিন। পছন্দের বই নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা করুন। ভাই-বোনকে নিজের পছন্দের বই পড়তে উৎসাহ দিন। তাদেরকে তাড়াতাড়ি বইটি শেষ করতে তাগাদা দিন, যাতে আপনি তাদের সাথে কথা বলতে পারেন। বই পড়ার আনন্দ ভাগাভাগি করা বই পড়ার চেয়ে আরো বেশি আনন্দদায়ক।
.

~ ১১। 'দৃষ্টিপাত' লেখক-যাযাবর। বইটি প্রকাশিত হওয়া মাত্রই বাঙালী শিক্ষিত সমাজে যে আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছিল তাহা যেমন বিস্ময়কর তেমনি অভূতপূর্ব । 'দৃষ্টিপাত'-এ রাজনৈতিক আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে ইতিহাস, স্থাপত্য, সঙ্গীত, মনুষ্যচরিত্র নিয়ে নানান আলোচনা । নিরস ভাবে নয়, গল্প ও ঘটনার সহজ প্রবাহের সঙ্গেই সেগুলি এসেছে; করেছে বইটিকে তথ্য-সম্বৃদ্ধ । ১৯৫০ সালে সমকালীন বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ বই হিসেবে 'দৃষ্টিপাত' নরসিংহ দাস পুরস্কারে সন্মানিত হয় ।
.
১২। 'তেইশ নম্বর তৈলচিত্র' লেখক- আলাউদ্দিন আল আজাদ। ১৯৬০ সালে পদক্ষেপ নামক এক পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় উপন্যাসটি প্রথম ছাপা হয় । শিল্পীর অপূর্ণতাবোধ, বেদনা এবং অশেষ সৌন্দর্যতৃষ্ণা এ উপন্যাসের প্রধানতম থিম । শিল্পীর মনের টানাপড়েন এবং নতুন ধরনের মূল্যবোধের কারণে ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ প্রসিদ্ধ হলেও এ উপন্যাসের অন্য উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এর নায়ক পরিকল্পনা।
.
১৩। 'কাবিলের বোন' ও 'উপমহাদেশ' লেখক- আল মাহমুদ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বর্তমানে ভূরি ভূরি বই প্রকাশিত হতে দেখছি আমরা । বাজার থেকে এরকম দশটি বই তুলে নিয়ে পাঠ করলে দেখা যাবে, ইতিহাস ও বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে একরৈখিকভাবে আরোপ করা হচ্ছে লেখকের অন্তরে প্রতিষ্ঠিত কোনো ধারণা । প্রত্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা কবি ও কথাশিল্পী আল মাহমুদ তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় জারিত হয়ে লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস—‘কাবিলের বোন’ ও ‘উপমহাদেশ’। মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে উত্সারিত আল মাহমুদের এ দু’টি উপন্যাস বহুল আলোচিত, পঠিত ও নন্দিত হওয়ার পরও এগুলোর মর্যাদা এখনও চিহ্নিত হয়নি । ১৯৯৪ সালে আল মাহমুদের ‘কাবিলের বোন’ উপন্যাস প্রকাশ করার কারণে বাংলা একাডেমীর একুশে বইমেলায় বাংলা সাহিত্য পরিষদের স্টলে ভাংচুর করা হয় এবং বইতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
.
১৪। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' লেখক- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমার চেতনার অনেকটা জুড়ে আছেন তিনি। দুঃখের মাঝে ধৈর্য, কষ্টের মাঝে হাসি, বিপদের মাঝে কঠিন মনোবল আর নীতির প্রশ্নে মাথা নিচু না করার মানসিকতা আমি তার জীবনীর মধ্যে পেয়েছি। তাকে জীবনের অন্যতম মহামানব ভাবতে পেরে আত্মতৃপ্তিটুকু পেয়েছি।
.
১৫। 'লোটা কম্বল' লেখক- সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। আমার পড়া একটি অম্ল-মধুর, হাস্য-রস মিশ্রিত মধ্যবিত্ত ঘরের বর্ণনা সম্বলিত চমৎকার উপন্যাস। দুই খন্ডের বই। প্রায় আটশ' পৃষ্ঠা জুড়ে এর কাহিনীর বিস্তার। বইয়ের নিজের ভাষায়, "ভেঙে যাওয়া যৌথ পরিবারের পটভূমিকায় দাঁড়িয়ে নিঃসঙ্গ এক পৌঢ়, হিমালয়ের মত যাঁর ব্যক্তিত্ব, অসম্ভব যাঁর আদর্শনিষ্ঠা, আপাত কঠোর যেন প্রুশীয়ান জেনারেল অথচ ভেতরে ভেতরে কুসুম কোমল। আর সেই মানুষটির একমাত্র মাতৃহারা যুবক সন্তান, মাঝে দুই পুরুষের ব্যবধান। পূর্বপুরুষ উত্তর পুরুষে সঞ্চারিত করতে চায় জীবনের শ্রেষ্ঠ গুণ আর মূল্যবোধ। মানুষের মত মানুষ করে তুলতে চায়।....দুই পুরুষের মূল্যবোধ আর দৃষ্টিভঙ্গির ঠোকাঠুকির মধ্যে আর এক পুরুষ। তিনি বৃদ্ধ মাতামহ। আধ্যাত্মিকতার বাতিটি তুলে যিনি খুঁজে পেতে চান সেই চির-চাওয়া পরমপুরুষটিকে..."
.
১৬। 'কড়ি দিয়ে কিনলাম' লেখক- বিমল মিত্র। অসাধারণ একটি বই। প্রাক স্বাধীন ভারতের প্রেক্ষাপটে রচিত এই উপন্যাসের কাহিনী। দুই খন্ডের বিশাল উপন্যাসটি দেখে আমার মত অনেকেই ভয় পেতে পারে। তবে এই বইটি না পড়লে আমার বই পড়া জীবনটি অসম্পূর্ন থেকে যেত। কিছু বই আছে যা পড়লে কখনও ভুলা যায় না। কড়ি দিয়ে কিনলাম বইটি সে ধরনের একটি বই। এত বড় উপন্যাসটি পড়ার সময় একবারও আমার মনোযোগ ছুটে যায়নি। বিমল মিত্রের অসাধারন লেখনি পাঠকদের নিয়ে যাবে কাহিনীর গভীর থেকে গভীরে।
.
১৭। 'ন হন্যতে' লেখক- মৈত্রেয়ী দেবী। আমাকে অনেক কাঁদিয়েছেন মৈত্রেয়ী দেবী, আর বোধ করি আমার মতো অনেককেই অতি অনায়াসে সত্যের সামনে দাঁড়িয়ে আপনমনে নিজেকে বিশ্লেষণ করতে শিখিয়েছেন। এ উপন্যাসটি আমি লাইনকে লাইন মুখস্থ বলতে পারি। বাংলা ভাষায় এক তুলনাহীন উপন্যাস এটি।
.
১৮। 'তিতাস একটি নদীর নাম' লেখক- অদ্বৈত মল্লবর্মণ। এই একটি উপন্যাস লিখে লেখক খ্যাতি অর্জন করেন। এই উপন্যাসে গ্রামের দরিদ্র মালো শ্রেণীর লোকজনের দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী ফুটিয়ে তুলেছেন। পরবর্তীকালে এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।
.
১৯। 'ওদের জানিয়ে দাও' লেখক- শাহরিয়ার কবির। এই বই সম্পর্কে লেখক বলেছেন, এটি কাল্পনিক উপন্যাস নয়। তার ভাষায়, ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে বসে লেখা। কেবল ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে। উপন্যাসটি ছোট আকারে ১৯৭৪ সালে বিচিত্রায় ছাপা হয়েছিল। পড়ে এটিকে খানিকটা বড় করা হয়েছে। শাহরিয়ার কবির এটি লিখেছিলেন ১৯৭৪ সালে।
.
২০। ‘পার্থিব’ ও 'দূরবীন' লেখক- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। অজস্র চরিত্র, নানান ঘটনাবলী, মানুষের জীবনের নানা টানাপোড়েন, উত্থানপতন, ঘাত-প্রতিঘাত ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি এখানে, এবং যেভাবে সবাইকে একজায়গায় জড়ো করে এক স্রোতে মিলিয়েছেন, সেটা এককথায় অতুলনীয়। পার্থিব উপন্যাসের প্রথম লাইন হচ্ছে- "বাদামতলায় রামজীবনের পাকা ঘর উঠছে ওই ।" আর শেষ লাইন হচ্ছে- "এসো আমার সঙ্গে তুমিও কাঁদো, এসো কান্নায় একাকার হয়ে যাই। একাকার হয়ে যাই ।" এই উপন্যাসে শহর গ্রাম মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে- কখনও লন্ডন-আমেরিকা । বুড়ো বিষ্ণুপদর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে । এক মেয়ে নিখোঁজ। বড়ো ছেলে কৃষ্ণজীবন একজন বিজ্ঞানী । মেজ ছেলে রামজীবন- একজন ডাকাত । আর কন্যা বীনাপানি-যাত্রাপালা অভিনয় করে এবং তার সাধু স্বামী নিমাই । অ্ন্য দিকে হেমাঙ্গ - হেমাঙ্গ খুব সৌ্খিন এক যুবক। রশ্মি রায় ।হেমাঙ্গর চাচাতো বোন চারুশীলা । চয়ন- মৃগী রোগী । কিন্তু ছাত্রদের পড়ায় ভালো । ঝুমকি-, ঝুমকির বোন অনু- মনীশ, রিয়া এবং আরও অনেক চরিত্র।
দূরবীন উপন্যাসে তিনটি প্রজন্মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমজন পুর্ববঙ্গের জমিদার হেমকান্ত চৌধুরী, দ্বিতীয়জন ব্রিটিশ ভারতের বিপ্লবী এবং স্বাধীন ভারতের ডাকসাঁইটে রাজনীতিবিদ ও হেমকান্তর নয়নের মণি কৃষ্ণকান্ত চৌধুরী ও কৃষ্ণকান্তের বখে যাওয়া ছেলে ধ্রুব চৌধুরী; লোফার, হৃদয়হীন থেকে শুরু করে অনেক বিশেষনই তার সাথে যুক্ত করা যায়। উপন্যাসের ব্যাপ্তি অনেক বিশাল। তিনটি প্রজন্মের তিন ধরণের মানুষের কাহিনী বা জীবনাচরণ এখানে বিধৃত করা হয়েছে। এটি শুধু সাড়ে পাঁচশো পৃষ্ঠার একটি উপন্যাস নয়; মানুষের ভাব, প্রেম, পদস্খলন, সংগ্রাম, বিরহ, জীবন-জীবিকা, আনন্দ-বেদনার- সব কিছুর এক প্রতিচ্ছবি।
.
বই পড়া আমার প্রিয় শখ। যদি আমাকে কেউ প্রশ্ন করে তুমি কি করতে বেশি পছন্দ কর? তাহলে আমি এক কথায় উত্তর দেব বই পড়তে। সত্যিই কেন জানি বই পড়তে আমার বেশি ভালো লাগে। প্রত্যেক রাতেই আমি বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ি। এমন কিছু বই আছে, যেগুলো পড়লে মনের মধ্যে ‘দোল’-এর অনুভূতি একটু বেশি অনুভূত হয়। আর সেটা দোলায়মান থাকে বহুদিনের জন্য। পড়ার ক্ষেত্রে আমি সর্বভুক শ্রেণির পাঠক। যা পাই তাই পড়ি।
.

~ ২১। 'কেরী সাহেবের মুন্সী' লেখক- প্রমথনাথ বিশী। ঐতিহাসিক কাঠামোতে গঠিত অসাধারণ এক উপন্যাস। ১৯৬০ সালে "কেরী সাহেবের মুন্সী" গ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র' পুরস্কার পান লেখক। বই থেকে কয়েকটা লাইন তুলে দিলাম- “ এমন সময় একটা হাতী দেখে কেরী ভাবল, যাক হাতীতে আজ রক্ষা করল বাঘের হাত থেকে।
কেরী বলল, ঐ দেখ।
সকলে দেখতে পেল গজেন্দ্রগমনে প্রকান্ড এক হাতী চলেছে, কাঁধের উপরে তার মাহুত, আর পিছনে জন দুই-তিন বর্শাধারী পাইক।
কিন্তু কেরী আজ এত সহজে রক্ষা পাবে না.
মিসেস কেরী উদ্বিগ্নভাবে বলল, বাঘ শিকারে চলেছে বুঝি?
টমাস ব্যাপারটা অনুমান করতে পেরেছিল, তাই বলল , না না, এদিকে বাঘ কোথায়! আর দু-চারটে থাকলেও তারা মানুষ খায় না।
কেন, সবাই বাইবেল পড়েছে বুঝি?—পত্নীর এবম্বিধ অখ্রিস্তানোচিত উক্তিতে মর্মাহত কেরী প্রমাদ গনল।
রামরাম বসু মনে মনে বলল —বাঘগুলো এখনও বাইবেল পড়েনি, তাই রক্ষা।”
.
২২। 'খেলারাম খেলে যা' ও 'নিষিদ্ধ লোবান' লেখক- সৈয়দ শামসুল হক। বাবর আলী। সুন্দর নিপাট গোছানো মানুষ। কথার মায়াজাল বুনায় তার জুড়ি মেলা ভার। জীবন নিয়েও আপাত অর্থে তার কোনো টানাপোড়েন নেই। ব্যাবসার টাকায় বেশ আয়েশে, নিশ্চিন্তিতে দিন কাটে তার। নিজের বাড়ি, গাড়ি, টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করার সুবাদে সমাজের কাছে পরিচিতি— সবই আছে তার। ফলে, বলা যায় নির্ভার আনন্দময় জীবন বাবরের। শিক্ষিত, সুদর্শন, অবিবাহিত, সুকথক, সমাজের অন্য দশজনের থেকে বিত্তবান, মাঝবয়সী এই বাবরের যেন কোনো দুঃখ নেই। পিছু টান নেই। মনে হয়, যেন নিজের শরীরের সুখের জন্যই, শিশ্নের ইচ্ছেকে চরিতার্থ করবার জন্যেই সে কেবল উদগ্রীব।
তার লেখা অসংখ্য বইয়ের মধ্যে নিষিদ্ধ লোবান বইটি অন্যতম। ভেতরের আবেগী মনটাকে শক্তকরে নাড়া দেবার মতো উপাদানে সমৃদ্ধ ছোট পরিসরের এ উপন্যাসটির পরিশীলিত ভাষা ও সুলীখন সত্যই আবিষ্ট করে রাখবে পাঠককে।
.
২৩। 'রাইফেল রোটি আওরাত' লেখক- আনোয়ার পাশা। শহীদ বুদ্ধিবীবি আনোয়ার পাশার এই একটি বইই যুক্তিশীল যে কোন মানুষকে ৭১ এর বাংলাদেশের যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যেতে পারে। শ্রদ্ধা জানাই এই বীরকে।
.
২৪। 'প্রথম আলো' 'সেই সময়' এবং 'পূর্ব-পশ্চিম' লেখক- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ওপর আমার একটা দূর্বলতা আছে। তিনখানা টাইম ট্রিলজি নিয়ে আমার বিস্ময়ের শেষ নেই। আমার প্রথম পড়া হয়েছিল পূর্ব পশ্চিম। সেসময় বলতে গেলে সমাজতন্ত্রে দীক্ষা পেয়েছিলাম এখান থেকেই। এই তিনটি উপন্যাস শেষ করে ওঠা মাত্রই একধরণের বিষণ্ণতা জেগে ওঠে। কারন উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র পাঠকের মনের ভেতর একটা জায়গা তৈরি করে নেয় এর মধ্যেই। সুনীল একবার বলেছিলেন ‘প্রথম আলো’ লিখতে তাকে সারা জীবনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় স্টাডি করতে হয়েছিল।
.
২৫। 'নন্দিত নরকে' 'শঙ্খনীল কারাগার' এবং 'জোৎস্না ও জননীর গল্প' লেখক- হুমায়ূন আহমেদ। নন্দিত নরকে বাংলা কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদের প্রথম উপন্যাস। নন্দিত নরকে পড়ে চোখ ছলছল করেনি এমন পাঠক কি আছে?
বাকৃবিতে শিক্ষকতা করার সময়ে তিনি শঙ্খনীল কারাগার উপন্যাসটি লিখেছিলেন। কোনো কোনো রাতে অপূর্ব জোছনা হয়। সারা ঘর নরম আলোয় ভাসতে থাকে। ভাবি, একা একা বেড়ালে বেশ হতো। আবার চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। যেন বাইরে উথাল পাথাল চাঁদের আলোর সঙ্গে আমার কোনো যোগ নেই। মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে শব্দ।
গ্রেট হুমায়ুন, গ্রেট জোছনা ও জননীর গল্প। "জোছনা ও জননীর গল্প" মূলত মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে উপন্যাস হলেও এতে প্রেম,ভালোবাসা সবই আছে। হুমায়ুন তার স্বভাবসুলভ গল্প বলার ভঙ্গিতে ৭১'এর সেই ভয়াল ৯ মাসের কথা বলেছেন পাঠকদের।উপন্যাসের শুরু হয়েছে নীলগঞ্জ স্কুলের আরবী শিক্ষক মাওলানা ইরতাজুদ্দীন কাশেমপূরীকে দিয়ে যিনি ঢাকায় তার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আসেন।... তারপর শাহেদ আর আসমানীর মমতায় পরিপূর্ণ সংসারজীবনের গভীরে যেতে যেতে পাঠকের পরিচয় ঘটবে নিজের চেনা জগতের সঙ্গে। শাহেদের বড় ভাই ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরির ঢাকায় আসা, রাস্তা হারিয়ে ফেলা, ভুল ঠিকানা, পরিশ্রম আর ক্লান্তিতে বিপর্যস্ত জীবন অস্থির উত্তাল মিছিল স্লোগানমুখর ঢাকায় তার বিপন্ন জীবনবোধ শুরু করিয়ে দেয় এক মহাযাত্রার।
.
২৬। 'নারী' ও 'ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল' লেখক- হুমায়ূন আজাদ। শুরুতে কখনও নারীবাদ নিয়ে কাজ করেননি হূমায়ন আজাদ। কিন্তু যখন শুরু করলেন তখন যেন বাংলা সাহিত্যের নারীবাদী ধারায় গোলাভরে গেল নতুন ফসলে। তবে তার এই প্রচেষ্টাকে তির্যক দৃষ্টিতে দেখতে ছাড়েননি অনেকেই। ‘নারী’ গ্রন্থটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে হুমায়ন আজাদ প্রথাবিরোধী লেখক হিসাবে পরিচিতি পান। পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীকে কি কি রূপে দেখা হয় বইটির প্রতিটি পৃষ্টায় তা ছড়িয়ে আছে।
হুমায়ুন আজাদ মানুষকে সচেতন করার প্রয়াসী ছিলেন। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মানুষ তার কবিতায় উঠে এসেছে। মানুষের মনোভঙ্গি, স্মৃতি, দুঃখ-কষ্ট, যাপিত জীবন ঘিরে কবির আগ্রহ। তিনি মানুষের মধ্যে খুঁজে পেতে চেয়েছেন শুভ্রতা। হুমায়ুন আজাদ বাংলাদেশের সবুজ বনভূমি, উদার মানুষ ও নিসর্গের কাছে সমর্পিত। বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামগ্রিক অবস্থা কবিচিত্তে আলোড়ন তোলে।তার কবিতা পাঠককে সমৃদ্ধ করে।
.
২৭। 'মেমসাহেব' লেখক- নিমাই ভট্টাচার্য। নিমাই ভট্টাচার্য এখানে যেন তার নিজের জীবনেরই কাহিনী লিখছেন খানিকটা কল্পনা আর অনেকটা বাস্তবের মিশেলে। মনে দাগ কেটেছে যে কয়েকটা বই, মেমসাহেব এর একটি, সম্ভবত এই বইটা পড়ে চোখে পানি এসে গিয়েছিল। নিমাই ভট্টাচার্যের মূল জীবিকা সাংবাদিকতা।
.
২৮। 'সূর্য দীঘল বাড়ি' লেখক- আবু ইসহাক। ‘জোঁক’ গল্পের সার্থক গল্পকার আবু ইসহাক উল্লেখযোগ্য কিছু সাহিত্যকর্ম রেখে গেছেন বাংলা সাহিত্যে বলার অপেক্ষা রাখে না। তার প্রথম উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ একটি শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি জীবনাখ্য। পূর্ব বাংলার বিস্তীর্ণ নদ-নদী জলাভূমি-কৃষি ক্ষেতের পটভূমিকায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, তার মধ্যে রক্তচক্ষু বের করা কতিপয় মানুষ নামের চারপায়া জানোয়ার, কিভাবে দিনের পর দিন বছর শতাব্দী যাবৎ ধর্মীয় ভণ্ডামিতে আবদ্ধ করে রেখেছে আমাদের, তার প্রতিচ্ছবি তার সাহিত্যকর্মে তার মেধা মননে আমরা প্রত্যক্ষ করি। উপন্যাসের গতিপ্রকৃতি দেখে বিশ্বাস হবে, আবু ইসহাক খুব কাছ থেকে সমাজের এই পিছিয়ে পড়া অন্ত্যজ এবং অনগ্রসর নিুবৃত্তকে বড় বেশি মমতা মাখিয়ে তার উপন্যাসে স্থান করে দিয়েছেন।
.
২৯। 'আগুনপাখি' লেখক- হাসান আজিজুল হক। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তাঁর গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ। আগুনপাখি কেবল প্রথাগত চরিত্র নির্মাণ ও সংলাপ ধারণার বাইরের কোনো উপন্যাস নয় বলেই বলছি না, এর কাহিনীতে সেই অর্থে কোনো গল্প ফাঁদা নেই, বলবার মতো কোনো প্রণয় নেই, আকৃষ্ট করবার মতো ন্যূনতম কোনো যৌনতা নেই; এমন কি যে ভাষায় কাহিনীটি কথিত হয়েছে, সেই ভাষাটির সাথেও এদেশের অধিকাংশ পাঠকের বিশেষ কোনো যোগাযোগ নেই।
.
৩০। 'পদ্মা নদীর মাঝি' ও 'পুতুল নাচের ইতিকথা' লেখক- মানিক বন্দোপাধ্যায়। 'পদ্মা নদীর মাঝি' উপন্যাসের লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে লিখেছিলেন জীবনের প্রথম গল্প 'অতসী মামী'। তার লেখাটি 'বিচিত্রা' নামক পত্রিকাতে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে তা ছাপা হয়েছিল। উপন্যাসের শেষে জেলে পাড়ায় থাকতে না পেরে কপিলাকে নিয়ে ময়নাদ্বীপেরর অজানা রহস্যময় দ্বীপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় কুবের। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে আবহমান বাংলার সামজিক জীবনের টানপোড়নের ছবি একেছেন, একটা মেসেজ দিয়েছন, বার বার পড়েন, অনেক বার পড়েন, অবশ্যই একদিন মেসেজটা বুঝতে পারবেন!
মানুষ যত উপরের দিকে উঠতে থাকে ততই বুঝি সে একা হতে থাকে?! কর্তব্যের চাপে, ব্যস্ততার কোলাহলে বুঝি বা একে একে হারিয়ে যেতে থাএক সব চেনা চেনা মুখ! শ্বাশত এই কথাই যেন "পুতুল নাচের ইতিকথা"য় বলে দিয়েছেন অমর কথাশিল্পী মানিক বন্ধ্যোপাধ্যায়। এই উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্র পরাণের স্ত্রী তেইশ বছরের বাঁজা মেয়ে কুসুম । প্রকৃ্তপক্ষে কুসুম এক অস্থির, বেপরোয়া,ও দূর্বোধ্য গ্রাম্য রমণী।
.

~ ৩১। 'নূরজাহান' লেখক- ইমদাদুল হক মিলন। বিশাল ক্যানভাসের উপন্যাস ‘নূরজাহান’। হুমায়ুন আহমেদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদারসহ আরো প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিকদের মতে; ইমদাদুল হক মিলনের লেখা শ্রেষ্ঠ উপন্যাস এটি । শুধু তাই নয়, ‘নূরজাহান’ উপন্যাসটিকে ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক ‘আনন্দ বাজার’ বাংলা সাহিত্যের সাম্প্রতিক সময়ের শ্রেষ্ঠ রচনা বলে উল্লেখ করেছে । ‘নূরজাহান’ ধারাবাহিকের প্রধান চরিত্র নূরজাহান । এক উচ্ছল প্রাণবন্ত কিশোরী । বাবা দবির গাছি । আর মা হামিদা । অভাবের সংসারে তাদের একমাত্র আলো নূরজাহান । কিন্তু গ্রামের ফতোয়াবাজ ভন্ড মাওলানা মান্নানের বিরূদ্ধে প্রতিবাদ করায় নূরজাহানের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ । সমাজের ফতোয়াবাজ ও কালো মনের মানুষদের দেওয়া এই দুভোর্গের বোঝা মাথায় নিয়ে চলতে থাকে নূরজাহানের দিনরাত্রি।
.
৩২। 'শেষ বিকেলের মেয়ে' লেখক- জহির রায়হান। উপন্যাসের জাহিনী এই রকম- কাসেদ । মধ্যবয়সী এক যুবক । কেরানিগিরি তার পেশা । মা ছাড়াও তার ছোট্ট পরিবারে আছে নাহার । নাহার তার কেউই নয় । ছোট্টবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে কাসেদদের বাড়িতে তার আশ্রয় হয়েছে । কাসেদের মা এই মেয়েকে নিজের সন্তানের মত মায়া-মমতা দিয়েই বড় করেছেন । কাসেদের মত নাহারকে নিয়েও মায়ের সমান চিন্তা । ভালো দেখে একটা পাত্র জুটিয়ে নাহারকে বিয়ে দিবেন, মেয়েটি যেন তার চিরকালই সুখে থাকে । বেশিরভাগ সময় কেরানিগিরি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও কাসেদের ভিতরে আছে এক রোমান্টিক মন । মাঝেমধ্যে টুকটাক কবিতাও লেখে কাসেদ । অবসর পেলেই সে জীবিকার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে এক অন্যরকম রোমান্টিক ভাবসাগরে আত্মনিমগ্ন হয় । জাগিয়ে তোলে কল্পনার চিত্রপটে আঁকা তার মানসীর ছবি । মানসীর নাম জাহানারা।
.
৩৩। 'সাতকাহন' ও 'গর্ভধারিণী' লেখক- সমরেশ মজুমদার। সাতকাহন উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র দীপা ছিলো সাহসী ও স্বতন্ত্র চরিত্রের অধিকারীনি এক নারী। যার নামের মধ্যেই নিহিত ছিলো অন্ধকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পুর্বাভাস। সাহস আর একাগ্রতা ছিলো বলেই নিজের নিষ্ঠুর অতীতকে মুছে ফেলে শুরু করেছিলো নতুন জীবন, জয় করেছিলো নিজের ভাগ্য, পড়াশুনা। কাছের মানুষ এমনকি নিজের মায়ের ঘৃণা, শত্রুতা, তাদের ভিতরকার বিভৎস লোভী চেহারাও দীপাকে পর্যুদস্ত করতে পারেনি। সে সময়ের কাঁধে মাথা ঠেকিয়েছে, কিন্তু ভেঙ্গে পড়েনি। কাছের মানুষ বলতে কেউই ছিলো না দীপার, দু-ফোঁটা চোখের জল ফেলার সময় কেউ কাঁধ বাড়িয়ে দেয়নি দীপার দিকে। সুযোগ ছিলো অনেক,চাইলেই তা হাত বাড়িয়ে নিতে পারতো দীপা। কিন্তু তা সে করেনি। সাধারনের মাঝেই দীপা অসাধারন। যার জীবনে এসে মিশেছে নানা নাটকীয়তা, আর এসব নাটকীয়তাকে ছাপিয়েই যার জীবন এগিয়ে গেছে সমান্তরালভাবে-সেই দীপা। দীপাবলি বন্দোপাধ্যায়।
'গর্ভধারিণী'র কাহিনী এই রকম- জয়িতা বড়লোক বাবা মার স্বেচ্ছাচারী আধুনিক মেয়ে। জয়িতার সাথে তথাকথিত নারী বা নারীত্বের সংজ্ঞা মিলে না। সে ছেলেদের পোশাক পড়ে, ধূমপান করে, ছেলেদের সাথেই মিশে। তাই এটা সেটা নিয়ে জয়িতার সাথে তার বাবা মার ঝামেলা লেগেই থাকে। কিন্তু এত কিছু সত্বেও জয়িতা অনেক পুরুষেরই স্বপ্নের নায়িকা। জয়িতা স্বপ্ন দেখে সমাজকে বদলে দেবার। তিন বন্ধুকে নিয়ে নেমে পড়ে যুদ্ধে, এভাবেই সে একসময় জড়িয়ে পড়ে রাজনীতির সাথে। সমাজপতিদের কৌশলের মারপ্যাঁচ, রাজনৈতিক গ্যাঁড়াকলে পড়ে জয়িতা শহর ছাড়তে বাধ্য হয়। তারপর ও থেমে থাকেনা তার যুদ্ধ। গ্রামে গিয়েও নানান জটিলতায় পরতে হয় জয়িতাকে। জীবনের সহজ সরল অংকগুলো জটিল মারপ্যাঁচে হারাতে চায় জয়িতাকে।
.
৩৪। 'তিথিডোর' লেখক- বুদ্ধদেব বসু। সত্যেন, "তিথিডোর" উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র, সাধাসিধে রাজেনবাবুর কনিষ্ঠ কন্যা স্বাতীকে কবিগুরুর শেষযাত্রায় নিয়ে যেতেই ছুটে এসেছে জোড়াসাঁকো হতে টালিগঞ্জের স্বাতীদের বাড়িতে। অনবদ্য একটি মধ্যবিত্তের কাহিনী জুড়ে পাতায়-পাতায় চরিত্রদের সঙ্গে একাত্ম আঠা হয়েই বহুবার পঠিত এই বাইশে শ্রাবণের কবিগুরুর মহাপ্রয়াণের ক্ষণটি যতবার পড়েছি ততবারই অদেখা মুহূর্তটি আশ্চর্য জীবন্ত দৃশ্যমান যেন বা!
.
৩৫। 'দেশ বিদেশে' লেখক- সৈয়দ মুজতবা আলী। "দেশে বিদেশে" মূলত একটি ভ্রমন কাহিনী নির্ভর রচনা। প্রকাশকাল – ১৯৪৮। সৈয়দ মুজতবা আলী’র লেখায় সাবলীল বর্ণনা থাকে, আর থাকে রসাত্মক উক্তি। তার লেখার প্রতিটি পরতে সূক্ষ্ম রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। উপযুক্ত শব্দচয়ন, প্রাঞ্জল ও রসাত্মক বর্ণনা এবং আফগানিস্থানে তার বিচিত্র অভিজ্ঞতা ‘দেশে বিদেশে’ বইটি-কে পাঠকপ্রিয় করেছে। কিছুদূর এগোলেই বোঝা যায় মুজতবা’র লেখায় বাঙলার কালচার ও সাহিত্যের সাথে মিশে গিয়েছে ইউরোপীয় নানা দেশের কালচার এবং সাহিত্য, আর তাতে উপযুক্ত অনুপাতে যোগ হয়েছে অভারতীয় প্রাচ্যদেশীয় বিষয়ও।
.
৩৬। 'পঞ্চম পুরুষ' লেখক- বাণি বসু। যোগাযোগটাই নাটকীয়। সেই কবেকার কলেজ জীবনের কিছু পাত্র-পাত্রীর আবার কুড়ি বছর বাদে দেখা হবে মহারাষ্ট্রে। কলকাতা থেকে বক্তৃতার কাজে এসেছেন অধ্যাপক মহানাম। অজন্তার টানে এসেছে মহানামেরই এক পুরনো ছাত্রী এশা।... পড়ুন এবং তারপর দেখবেন মন প্রান আনন্দে ভরে উঠবে।
.
৩৭। 'মাধুকরী' লেখক- বুদ্ধদেব গুহ। বইটির ছোটো একটি অংশ তুলে ধরছি, ”পৃথু ঘোষ চেয়েছিল, বড় বাঘের মতো বাচঁবে। বড় বাঘের যেমন হতে হয় না কারও উপর নির্ভরশীল না নারী, না সংসার, না গৃহ, না সমাজ সেভাবেই বাচঁবে সে, স্বরাট, স্বয়ম্ভর হয়ে। তার বন্ধু ছিল তথাকথিত সমাজের অপাংতেয়রা। পৃথু ঘোষ বিশ্বাস করত, এই পৃথিবীতে এক নতুন ধর্মের দিন সমাসন্ন। সে ধর্মে সমান মান-মর্যাদা এবং সুখ-স্বাধীনতা পাবে প্রতিটি নারী-পুরুষ।” “মাধুকরী” শুধু পৃথু ঘোষের বিচিত্র জীবঙ্কাহিনী নয়। “মাধুকরী” এই শতকের মানুষের জীবনের যাবতীয় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আগামী প্রজন্মের মানুষের সার্থক ভাবে বেঁচে থাকার ঠিকানা। এই কারণেই এ উপন্যাস উৎসর্গ করা হয়েছে ‘একবিংশ শতাব্দীর নারী ও পুরুষদের হাতে’।
.
৩৮। 'হাজার চুরাশির মা' লেখক- মহাশ্বেতা দেবী। উপন্যাসটি একটি লাশের গল্পকে কেন্দ্র করে নির্মিত। মহাশ্বেতা দেবী একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক ও মানবাধিকার আন্দোলন কর্মী। তিনি ১৯২৬ সালে বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন । তিনি সাঁওতালসহ অন্যান্য আদিবাসীদের ওপর কাজ এবং লেখার জন্য বিখ্যাত । তাঁর লেখা শতাধিক বইয়ের মধ্যে হাজার চুরাশির মা অন্যতম।
.
৩৯। 'ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা' লেখক- শিবরাম চক্রবর্তী। শুরুতেই শিবরাম বলে নিয়েছেন তাঁর শৈশব ছিল ঈশ্বর-পীড়িত । মা বাবা দুজনই অসাধারণ দুটি মানুষ কিন্তু তাঁর । পরে বুঝতে পারি তাঁর Bohemian জীবনের বীজ ওই বাবার বৈরাগী পদ্ব্রাজক ভাব, আর মার নিরাসক্ত আত্মশক্তির মধ্যেই বোধ হয় । চাঁচোলের এক রাজ-পরিবারেই তাঁর জন্ম — সম্পর্কের কাকা ছিলেন রাজা, কিন্তু রাজ-জোটক ছিল না তাঁর কপালে । বাবা ছোট বেলায় সংসার-ত্যাগী সন্ন্যাসী হয়ে ছিলেন, পরে এসে বিয়ে করেন তাঁর মা-কে । দুজনই সাদাসিধে মানুষ, গন্য মান্য ছিলেন, কিন্তু মনে হয় কোনো উন্নাসিকতার মধ্যে ছিলেন না । মা-ই ছিলেন শিব্রামের গুরু, বন্ধু, সবই । তাঁর কাছেই তিনি যা কিছু সার শিখেছেন । তার পর তার সঙ্গে জারিয়ে নিয়েছেন জীবনের অভিজ্ঞতা । শিব্রামের ভাষায়, পেলেই পড়ি, পড়লেই পাই !
.
৪০। 'শাপ মোচন' লেখক- ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়। একটা ঘটনা বলি- বাড়িতে পুরোনো কাগজের গাদা ছিল। কী মনে করে ঘাঁটতে গিয়ে একটি বই পেলাম। নাম শাপমোচন। লেখক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়। এক দুই পাতা করে পড়তে লাগলাম। পড়া শেষে হাউমাউ করে কাঁদলাম। সেই থেকে বইয়ের জন্য মনটা কাঁদতে শুরু করল। এরপর যেখানে বই পাই, পড়ে ফেলি।
.

~ ৪১। 'সংশপ্তক' লেখক- শহীদুল্লাহ কায়সার। সংশপ্তক শব্দের অর্থটি চমৎকার- হয় জয় না হয় মৃত্যু। ১৯৬৪ সালে রচিত এই উপন্যাসটি ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। সংশপ্তক উপন্যাসের কাহিনির শুরু ইংরেজ আমলের অন্তিমকালে, শেষ পাকিস্তান আমলের সূচনাপর্বে ।কাহিনির অনেকখানি স্থাপিত পূর্ববঙ্গের গ্রামাঞ্চলে,খানিকটা কলকাতা ও ঢাকায়। এর বৃহত্তর পটভূমিতে আছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ,মন্বন্তর ,পাকিস্তান আন্দোলন , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ঘটনা। এতে প্রধান্য ভাল করেছে শাখা প্রশাখাসমেত এক সৈয়দ পরিবারের কথা। তার এক সৈয়দ প্রাচীন পন্থী নান সংস্কারের সঙ্গে ইংরেজি শিক্ষা ও ইংরেজের চাকরি সমন্বিত করেছেন। আরেক সৈয়দ স্ত্রী-কন্যা ফেলে নিরুদ্দেশযাত্রা করে দরবেশ হয়েছেন। প্রথমোক্তজনের পুত্র জাহেদ আধুনিক শিক্ষা জীবন বোধ আয়ত্ত করে প্রথমে পাকিস্তান-আন্দোলন এবং বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। প্রাচীনতার সঙ্গে তার ভয়াবহ দ্বন্দ্ব। কাহিনির শেষ হয় বাম রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতার কারণে জাহেদের গ্রেফতারে এবং তার প্রতি রাবুর দেহাতীত প্রেমের স্থিতিতে।
.
৪২। 'জীবন আমার বোন' লেখক- মাহমুদুল হক। জীবন আমার বোন গ্রন্থের পেছনের প্রচ্ছদে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন-‘খুব বেশি নয় তার রচনার পরিমাণ কিন্তু মাহমুদুল হক যখনই লেখেন, লেখেন স্থায়ীভাবে, বারবার পড়তে হয় তার প্রতিটি বই, অসামান্য ভাষা শিল্পী তিনি। উপন্যাসে তিনি একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোর ছবি এঁকেছেন কাব্যের ভাষায়। ভিন্ন চোখে দেখে ঘটনার বর্ণনা করেছেন একান্তই নিজস্ব শৈল্পিক ভাষায়। অশরীরী উপন্যাসেও একাত্তরের কথা, পাক হানাদার ক্যাম্পে অম্বিয়ার করুণ যন্ত্রণা-পরিণতি পাঠকের কাছে দাঁড় করিয়েছেন।
.
৪৩। 'উপনিবেশ' লেখক- নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়। উপন্যাসটি তিন খন্ড।
.
৪৪। 'অলীক মানুষ' লেখক- সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ। এই উপন্যাস সম্পর্কে লেখক নিজেই বলেছেন- 'অলীক মানুষ উপন্যাসটা লেখার পেছনে ছিল অগ্রজ গৌরকিশোর ঘোষের প্রণোদনা। মুসলিম জীবন নিয়ে এতকাল যা কিছু লিখেছি তার নির্যাস বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। নিরন্তর সংবাদ লিখতে লিখতে যখন আমার হাত বসে যাওয়ার দশা, ঠিক সে অবস্থায় আর কোনো কিছু না ভেবে আমার মাওলানা দাদা সম্পর্কে লিখতে শুরু করলাম। ফরায়েজি আন্দোলনের প্রবক্তা এই মানুষটি, গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ানোটাই ছিল যাঁর কাজ, 'আংরেজ হঠাও' স্লোগান দেওয়া কট্টর মৌলবাদী এই পিতামহটি যে রসকষহীন ছিলেন তা নয়, নানা বৈপরীত্যে গড়া আশ্চর্য এক আকর্ষণীয় চরিত্র।
.
৪৫। 'আমরা হেঁটেছি যারা' লেখক- ইমতিয়ার শামীম। ইমতিয়ার শামীম স্পষ্টতই একই সঙ্গে গল্প ও উপন্যাস-লেখক, তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ডানকাটা হিমের ভেতর ও গল্পগ্রন্থ শীতঘুমে একজীবন একই বৎসর প্রকাশিত হয়েছিল। এই শীতঘুমে…-র গদ্যে যে-কাব্যময়তা ছিল তার থেকেও তিনি সরে এসেছেন অনেক। তার লেখায় আগের মতোই রাজনীতি উপস্থিত কিন্তু তা কোনওভাবেই কাহিনিকে নিয়ন্ত্রণ করে না বরং অনেক বেশি অন্তঃস্রোতে এই আবহ ধরা পড়ে। তাঁর উপন্যাস আমার হেঁটেছি যারা এবং গল্পগ্রন্থ গ্রামায়নের ইতিকথা তার পূর্বেকার রচনা থেকে আলাদা করে তুলেছে। বিষয় ও আঙ্গিকের দিক দিয়ে এটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগ্রন্থ।
.
৪৬। 'আমি তপু', 'আকাশ বাড়িয়ে দাও' এবং 'আমার বন্ধু রাশেদ' লেখক- মুহম্মদ গাফর ইকবাল। “আমি তপু” মুহাম্মদ জাফর ইকবালের এক অনন্য কিশোর উপন্যাস। এই উপন্যাসে লেখক মানুষের এমন বয়সের এমন এক পরিস্থিতির করেছেন যেই বয়সে যেই পরিস্থিতিতে আমরা কেউ পড়লে কি ঘটবে আমাদের জীবনে তা এই বই পড়লে সহজেই উপলব্ধি করা যায়। জাফর ইকবালের সেরা কিশোর উপন্যাসের মধ্যে এই উপন্যাস নিঃসন্দেহে অন্যতম। একজন মানুষ সে বড় হোক কিংবা ছোট, তার জন্য একটা পরিবার যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা এই গল্প পড়লে অনুধাবন করা যায়। সেই সাথে বোঝা যায়, প্রতিভার বীজ লুকিয়ে থাকে সবার মাঝে, প্রয়োজন অঙ্কুরোদ্গমের পরিবেশ।আর প্রত্যেক খারাপ মানুষের জীবনে থাকে এক ভয়ংকর খারাপ ইতিহাস। কেউ খারাপ হয়ে জন্মায় না।
'আকাশ বাড়িয়ে দাও' শুধু বলব, বইটা পড়ুন। তারপর আপনি বলুন।
'আমার বন্ধু রাশেদ' সম্পর্কে লেখক বলেছেন- ‘আসলে আমার বন্ধু রাশেদের ঘটনাগুলো ১৯৭১-এ দেশের সবখানেই ঘটেছে। আমাদের দেশের কিশোরেরাও কিন্তু অসম্ভব সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে। সেদিক থেকে বলতে গেলে ঘটনাগুলো সবই সত্যি। কিন্তু যে চরিত্রগুলোর কথা আমি বইয়ে লিখেছি, তারা সবাই কাল্পনিক।’
.
৪৭। 'ক্রাচের কর্নেল' লেখক- শাহাদুত জামান। লেখক শাহাদুজ্জামান'র টান টান উত্তেজনায় ভরা 'ক্র্যাচের কর্নেল' বইটিকে শুধুমাত্র একটি উপন্যাস বললে কম বলা হবে। কারন, এই অসাধারণ বইটি পড়লেই বুঝা যায় লেখক অনেক সময় নিয়ে, অনেক গবেষণার পর এই বইটি লিখেছেন। তার লেখনি ক্ষমতার গুণে এই বইটি একটি সাধারণ উপন্যাস থেকে কর্নেল তাহের-এর অসাধারণ জীবনী হয়ে উঠে। যারাই এই বইটি পড়বেন, তাদের কেউই যে বইটি শেষ না করে উঠতে পারবেন না এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে বলে দেওয়া যায়।
.
৪৮। 'ফুল বউ' লেখক- আবুল বাশার। সম্পর্ক, সমাজ এবং ধর্ম নিয়ে চমৎকার উপন্যাস।
.
৪৯। 'কৃতদাসের হাসি' লেখক- শওকত ওসমান। সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন এবং রাজনীতির অন্ধকার দিক লেখক সহজ সরল সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।
.
৫০। 'নিশি কুটুম্ব' লেখক মনোজ বসু। মনোজ বসুর বই গুলর মধ্যে একটা আলাদা বন, জঙ্গলএর গান্ধ পাওয়া যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫৬
৩০টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×