somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

বাংলা সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (এক)

২০ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেককেই দেখেছি ১০০টি ভাল বইয়ের তালিকা তৈরি করেছে। কিন্তু আমার ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও আমি আমার প্রিয় বইয়ের তালিকা তৈরি করতে পারিনি। কারন সেই বই গুলো আমি পরে শেষ করতে পারিনি। এখন মনে হচ্ছে, বাংলা সাহিত্যের সেরা বইয়ের তালিকা তৈরি করা যেতে পারে। এবং আমার ধারনা আপনারা সবাই আমার সাথে একমত হবেন। বই আমাদের মানুষ করেছে, আমাদের সুসভ্য করেছে৷‌ তাই আজ যারা বই-বিমুখ, যারা শুধু কম্পিউটার, পানশালা আর টিভি সিরিয়ালে আনন্দ পায়, তাদের কি সভ্য বলা যাবে?

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার। তাকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, 'ভালো বই কাকে বলে?' উত্তরে তিনি বলেছিলেন, 'যে বইটা পাঠককে ভাবায়, সেটাই ভালো বই।' বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই আমার পছন্দের বইয়ের তালিকার সাথে একমত হবেন আশা করি। পাঠকদের কাজ হল বই পড়া। বইয়ের মধ্য থেকে নিজের জন্য আনন্দ খুজে ফেরা। ''তিনটি ভাল বই একবার করে পড়ার চেয়ে একটি ভাল বই তিনবার পড়া বেশি উপকারী।”

আমাদের জীবনের আয়ু তো সীমিত। বইপত্র নিয়ে এলোমেলো পড়তে গিয়ে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। বইটি পড়ার আগে ভাবতে হবে আমি এই বইটি কেন পড়ব, বইটি থেকে কী চাই। যা পড়া হয়, তা আত্মস্থ করা গুরুত্বপূর্ণ। বই পড়ার মূল উদ্দেশ্য থাকতে হবে আত্মিক উন্নয়ন। আপনার বইয়ের শেলফ যত বেশি সম্ভব ভিন্ন ধরনের বই দিয়ে ভর্তি করবেন, আপনার অ্যাডভেঞ্চারও তত বেশি হবে।

১। 'শেষের কবিতা' ও 'গোড়া' লেখক- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উপন্যাসের নায়কের নাম গোরা। মূলত গোরার পিতা ইংরেজ। সিপাহি বিদ্রোহের সময় এক ব্রাম্মন পরিবারের গোয়ালে তার জন্ম। জন্মের সময় সে মাকে হারায়। ব্রাম্মন দম্পতি তাকে মাতা-পিতার পরিচয়ে বড় করে। এই গোরা কালক্রমে বড় হিন্দু নেতা হয়ে যায় এবং ইংরেজ বিরোধী। এবং শেষের কবিতায় বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার অমিত রায় প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত এবং রোমান্টিক যুবক। তর্কে প্রতিপক্ষকে হারাতে সিদ্ধহস্ত। এই অমিত একবার শিলং পাহাড়ে গেল বেড়াতে । আর সেখানেই এক মোটর-দুর্ঘটনায় পরিচয় ঘটল লাবণ্যর সাথে। এই বইটি দুটি আমি প্রতি বছর একবার করে পড়ি। ঠিক করেছি আমৃত্যু পড়ে যাব।

২। 'প্রদোষে প্রাকৃতজন' লেখক- শওকত আলী। উপমহাদেশের এক কোনায় বাংলাদেশে হঠাৎ করে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের ইসলাম গ্রহণ যে কারণেই হোক একটি সর্ব অজ্ঞাত ঘটনা। লীলাবতীর মধ্যে আবহমান বাঙালী নারীকেই পাই। বইটি লিখতে লেখকের প্রায় ১৫ বছর লেগেছে। আজীবন মনে রাখার মত অসাধারণ একটি বই।

৩। 'লৌহকপাট' লেখক, 'জরাসন্ধ' (ছদ্মনাম)। আসল নাম- চারুচন্দ্র চক্রবর্তী। বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্ব শেষ করে এক তরুণ যুবক চাকরির সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে শেষপর্যন্ত যে কাজটি পেলেন, সেটি হল কারা বিভাগে। ছোটখাটো একটি জেলের ডেপুটি জেলারের পদ। সম্পূর্ণ একটা নতুন জগতের সঙ্গে পরিচয় ঘটল সেখানে।
পরিচয় হল বদর মুন্সীর মত ভয়ঙ্কর ডাকাতের সঙ্গে - খুন,জখম, নারীধর্ষণ যার কাছে ছেলেখেলা। কিন্তু সেই লোকটিই একবার ডাকাতি করার সময়ে গৃহস্বামীকে কথা দিয়েছিল, শুধু টাকা-গয়নাই নেবে - নারীর সম্মান নষ্ট করবে না। কিন্তু দলের একজন সেই হুকুম মানে নি বুঝতে পেরে, নিজেই ধরা দিল সেই অপবাদের বোঝা নিজের মাথায় নিয়ে।

৪। 'অন্তর্লীনা' লেখক- নারায়ণ সান্যাল। গল্পের নায়ক কৃশানু মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। বুদ্ধিদীপ্ত, কিন্তু সাধারণের দৃষ্টিতে স্মার্ট নয়, কারণ সে লাজুক, ইন্ট্রোভার্ট, নিজের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে ভালবাসে। এছাড়া তার মধ্যে আছে এক শিল্পীমন, সে সাহিত্যের ছাত্র, ছবিও আঁকে। অথচ তার স্কেচবুকে নেই কোনও নারীর ছবি। তার বয়সী এক যুবক শিল্পীর কাছে একটু অস্বাভাবিক ঘটনা, সন্দেহ নেই। শুধু স্কেচবুক বলে তো নয়, সে ট্রামে উঠে চেষ্টা করে লেডিজ সীট থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে, তার সহপাঠী মেয়েদের মুখের দিকে সে কখনও তাকায়না পর্যন্ত। উপন্যাসটা পড়তে শুরু করলে, ভাল লাগতে শুরু করবে।

৫। 'খোয়াবনামা' পূর্ববাংলার আঞ্চলিক ভাষাকে অবলম্বন করে যে কি চমৎকার উপন্যাস লেখা যায় তার সার্থক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস খোয়াবনামার মাধ্যমে। আঞ্চলিক ভাষার অধিক ব্যবহার রয়েছে বইটিতে, রয়েছে কিছু খিস্তি-খেউরও। ’৪৭ এর দেশভাগ গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে খোয়াবনামা।


৬। 'শুন বরনারী' লেখক- সুবোধ ঘোষ। জন্মেছিলেন ১৯০৯ সালে ঢাকার বিক্রমপুরে জেলায়, মৃত্যু ১৯৮০ সালে। সহজ সরল একটি উপন্যাস। এ উপন্যাসকে সম্পর্কে হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন- অতি সাধারণ উপন্যাস মুগ্ধ হয়ে বারবার পড়েছি। হিমাদ্রিশেখর দত্ত ওরফে হোমিও হিমু। পেশায় হোমিও চিকিৎসক। যদিও কেউ তাকে ডাক্তারি করতে দেখেনা। লোকের ছেলেপেলে পড়িয়ে রোজগার চলে। আর,আসল কাজ হচ্ছে পরোপকার, মানে, অমুকের সাথে অমুক জায়গায় যেতে হবে,অমুকের মেয়েকে ট্রেনে করে হোস্টেলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা, অমুক কে তীর্ত্থে নিয়ে যাওয়া, এইসব। না করতে পারেনা হিমু। এমন কাজেই ডাক পড়ে তার।


৭। 'কবি' লেখক- তারাশঙ্কর। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর মধ্যে এটি একটি।কবি উপন্যাসের নায়ক একজন কবি । তবে কবি বলতে আমরা সাধারনত যা বুঝি সেই কবি তিনি নন,উপন্যাসের নায়ক নিতাইচরন একজন কবিয়াল । একবার এক মেলাতে এক বিখ্যাত কবিয়াল না থাকাতে নিতাইকে মঞ্চে তুলে দেয়া হয়,তারপরে নিতাই তার প্রতিদ্বন্দ্বী কবিয়ালকে প্রায় ঘায়েল করে ফেলে শেষে তার প্রতিপক্ষ কবিয়াল নিতাইয়ের পরিবার নিয়ে অশ্লীল আক্রমণ করে কবিয়াল লড়াইয়ে জিতে যায়,কিন্তু অই মঞ্চেই নিতাই জয় করে নেই হাজারো মানুষের মন ।

৮। 'তবুও একদিন' লেখক- সুমন্ত আসলাম। বইটি একটু সময় নষ্ট করে পড়ে ফেলুন। ভালো লাগবেই।

৯। ‘লালসালু’ লেখক- সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ। বেশ কয়েকটি শক্তিশালী নারী চরিত্রের প্রাধান্য পেয়েছে এই উপন্যাসে,তাদের মধ্যে জমিলা অন্যতম। জমিলা অত্যন্ত সাহসী এক নারী। মজিদ নামের প্রতিকী দ্বারা ভ্রান্ত না হয়ে, মজিদের সাথে না লেগে থেকে সে পরিবর্তন চেয়েছে। ধর্মকে পুঁজি করে যারা সমাজকে শোষন করে জমিলার মৃত্যু তাদের কপালে কলংকের চিহ্ন এঁকে দেয়।

১০। 'হাজার বছর ধরে' লেখক- জহির রায়হান। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র টুনি,অবশ্য অনেকে আম্বিয়াকেও কেন্দ্রীয় চরিত্র বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। তবে আম্বিয়ার চেয়ে টুনির জীবনের উত্থান পতনকেই লেখক বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। টুনি গ্রামের সহজ, সরল, চঞ্চল এক মেয়ে। টুনির পরিণতি হয়েছে হৃদয় চিরে যাওয়ার মতো কষ্টকর। শেষ পর্যন্ত শূন্য বুকে বাপের বাড়ি ফিরে টুনি,তবুও শৃংখল ভাঙ্গেনি।

নিজের পছন্দের উপর ভিত্তি করেই বই পড়া উচিত। অন্যের পছন্দ বা ভাললাগার মূল্য না দিয়ে নিজের পছন্দ অনুসারে বই বাছাই করুন। অনেকের কাছে ভাল লেগেছে, এমন বই আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। এছাড়া কোন বই অনেকেই পড়েছে বলে আপনাকেও পড়তে হবে এমন কোন কথা নেই। অন্যের পছন্দের বই আপনাকেও পড়তে হবে, এমন মনে করাটা বোকামী। প্রত্যেকের নিজস্ব একটি ভাললাগার জগৎ থাকে। কারো ভূতের গল্প পছন্দ, কারো ফুটবল আবার কারো বা ভ্রমণকাহিনী। কারো পছন্দ বা প্ররোচনায় বই বাছাই না করে নিজের দিকে তাকান। নিজে যা চান তাই করুন, অন্যের চাপে নয়।

নিজের যে বইটি পড়তে ভাল লেগেছে, অন্যকেও সেই বই পড়তে উৎসাহ দিন। পছন্দের বই নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা করুন। ভাই-বোনকে নিজের পছন্দের বই পড়তে উৎসাহ দিন। তাদেরকে তাড়াতাড়ি বইটি শেষ করতে তাগাদা দিন, যাতে আপনি তাদের সাথে কথা বলতে পারেন। বই পড়ার আনন্দ ভাগাভাগি করা বই পড়ার চেয়ে আরো বেশি আনন্দদায়ক।

( দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল পাবেন।)
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×