আজ (গতকাল) সকালে টিভিতে দেখলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। স্ক্রিমিংএ লেখা ‘সর্বস্তরের মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন’। ভাবছি সর্বস্তর বলতে কি বোঝাচ্ছে, আসলেই কি একদম সব স্তরের মানুষ এসেছে ? সবাই লাইন দিয়ে ধীরে সুস্থে এগুচ্ছে। চকিতে মনে পড়লো ইন্ডিয়া যাওয়ার সময় বেনাপোল বর্ডারে এরকম লাইন ধরে দাঁড়ানোটা আমাদের একজনের কাছে গরুর লাইন মনে হয়েছিলো। ভাবলাম, নাহ, এখানের লাইন সুন্দর, বেনাপোলের টা তো দড়ি দেয়া ছিল। কিন্তু কথা হল, আমাদের দেশের আসলে সর্বস্তরের মানুষ কি এত সুশৃঙ্খলভাবে লাইন ধরে কিছু করা শিখেছে ? অবশ্যই না। সেটা করে উচ্চ স্তরের মানুষজন। সর্বস্তরের মানুষ কেমন লাইন ধরে সেটা একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারের লাইন দেখলে বোঝা যায়। কোন মলিন পোশাকের কিংবা এই যেমন লুঙ্গি-গেঞ্জি অথবা বুয়া টাইপ শাড়ি পরা এমন কাউকেও তো দেখলাম না, তাহলে সর্বস্তরের মানুষ হল কি করে ? নাকি রাষ্ট্র এই গোটা স্তরটাকেই অস্বীকার করে ? এটা ভাবতে ভাবতে শেখ হাসিনার শাড়ির দিকে আমার চোখ গেলো । মূলত বেগুনী জমিনের কয়েক রঙা শাড়ি। ঠোঁটে বেগুনী লিপিস্টিক। ছোট বোন দেখেই বলে উঠলো, “যত বয়স বাড়তাছে তত শেখ হাসিনাকে ডাইনির মত লাগতাছে”। আমি একমত নই, কিন্তু আমার হাসি পেয়ে গেলো। এরপর চিন্তা এলো, শেখ হাসিনার শপিং করে কে? উনাকে কখনো এক শাড়ি দ্বিতীয়বার পরতে দেখেছি কি-না সেই ভাবনাও এলো। আম্মু দেখেছে কি-না জিজ্ঞেস করাতে বললো, “কেইবো, আমি কি চাইয়া রইছি”। চিন্তা বাদ দিলাম। ঈদের খাবার খেয়ে আবার টিভির রিমোট নিয়ে বসলাম। আরটিভিতে এসে ভয়ে আমার হাত থেমে গেল,কারন সেখানে ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ সিনেমা দেখাচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়লো, কোন চ্যানেলে যেন আজ ‘গহীন বালুচর’ দেখাবে। নেট ঘেটে দেখলাম ‘দীপ্ত’-তে। হ্যাঁ, ঠিকই শুরু হয়েছে। দুটো ছবি অল্টার করে দেখতে লাগলাম। কাহিনী এবং রিভিউ দুটোরই কমবেশি জানি। কিন্তু কাহিনী জানার পর এবং অন্যের রিভিউ পড়ার পরেও সিনেমাতে এমন কিছু পাওয়া যায় যা প্রত্যেকের একান্ত অর্জন হয় যদি তেমন সিনেমা হয়। তো ভাবলাম, দেখি সংলাপে বা দৃশ্যায়নে এমন কিছু পাই কি-না। ‘ভয়ংকর সুন্দর’টা যে দেখতে এতটাই ভয়ঙ্কর লাগবে ভাবতেই পারিনি। পরমব্রত-র অভিনয় মেধাকে রীতিমত অসম্মান করা হয়েছে। অসহ্য চরিত্রায়ন হয়েছে তার। কিছুই ভালো নয় এই ছবির, কিছুই নয়। অথচ পানির জন্য হাহাকারের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এখানে ছিল। বোন বলে, “বাংলাদেশে কিন্তু পানির অভাব নাই, কত নদী,খাল-বিল, ঢাকা শহরের মাটির নিচেও পানির অভাব নাই শুধু প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার জন্যই এই অবস্থা। মনডা কয় ধইরা পিডাইতাম”। ‘গহীন বালুচর’ তাও কিছুটা সওয়া যায় চোখে। কিন্তু বিশেষ কিছু সেখানেও নেই। দলাদলির গ্রামে এমন মহিলা লিডার বাংলাদেশে আছে বলে মনে হয় না। কেন জানি শুরুতে দেখেই বানশালির ‘... রাম-লীলা’ ছবির কথা মনে হয়েছে। যাইহোক, ছবি শেষে গোসল করে ঈদের জামা পরে সেজো খালার বাসায় গেলাম।আমার সেজো খালা আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী।সেখানে ঈদের খাবার খেয়ে রাজ্যের গল্প করে খেলা দেখতে বসলাম। আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার নই, কিন্তু মেসিকে খুব পছন্দ করি। পেনাল্টি মিস করলেও ওর খেলা আমার ভালো লেগেছে। তারপর ঘরে ফেরা, ঈদ শেষ। জীবনে এই প্রথম একটা ঈদ গেলো, আমি বাবার কাছ থেকে সালামী নেইনি।তবে এটা কোন ব্যাপার না।
( হাসতে দেখো, গাইতে দেখো, অনেক কথায় মুখর আমায় দেখো, দেখো না কেউ হাসি শেষে নীরবতা।
আমি কোন সমস্যায় না থাকলেও কিংবা আমার সবকিছু আমার কাছে থাকলেও কেন আমি নির্ভার হতে পারি না, সেটা নিজেকে প্রশ্ন করেছি অনেকবার। অথবা দেখা গেলো তুমুল আনন্দের আড্ডাতেও আমি খুব বেশি সময় নির্মল হাসি ধরে রাখতে পারি না। একটা কৃত্রিম হাসি মুখে ধরে রাখলেও ভেতরে সেটা আমার মোটেই থাকে না। আমি সবসময়ই অজান্তেই গভীর চিন্তায় ডুবে যাই আর অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি। সেই গভীর চিন্তা যে আমার ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট থাকে তা নয়, অনেক হাবিজাবি বা অপ্রয়োজনীয় চিন্তাও করি। যেমন উপরের লেখাটি)।
বি.দ্রঃ- গুগোল থেকে পাওয়া এই ছবিটি আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৮ রাত ১০:০১