somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুলক্রমে ছাত্রী টয়লেটে অনুপ্রবেশ; বাকিটা ইতিহাসঃ একটি বিড়ম্বনায় পরিপূর্ণ দিবসের স্মৃতিচারণ

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বহুকাল পূর্বেকার কথা। আমি তখন সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তি হইয়াছি। অতি নাদান এক পোলা। মুখ দিয়া দুধের গন্ধ আসে। দুনিয়ার হাবভাব তেমন কিছু বুঝি না। আপনাকে লুকাইয়া রাখি, আড়ালে-আবডালে থাকি। জনসম্মুখে মাপিয়া মাপিয়া কথা বলি, টিপিয়া টিপিয়া পথ হাঁটি।

আমাদের ক্লাস আরম্ভ হইতো দুপুর দেড়টায়। এইখানে বলিয়া রাখা প্রয়োজনঃ আমাদের নিজস্ব কোন শ্রেণিকক্ষ ছিলো না, হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ক্লাস করিতাম; সেইখানে ক্লাস ফাঁকা না পাওয়া গেলে অর্থনীতি বা ফিন্যান্স বিভাগে ক্লাস করিতে হইতো। আমাদের বিভাগটি নতুন হওয়ায় কিছু অবহেলা সহ্য করিতে হইতো। মধ্যাহ্নভোজ সম্পন্ন করিয়াই ক্লাস অভিমুখে দৌঁড়াইতাম।

আমার মেস হইতে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় দশ মিনিট এর পথ। বেশিরভাগ সময় হাঁটিয়াই যাইতাম। তো সেইদিন মধ্যাহ্নভোজ করিতে বেশ দেরি হইয়া গিয়াছিলো। খুব সম্ভব বুয়া রান্নাবান্না করিতে বিলম্ব করিয়াছিলেন।

পানাহার সম্পাদনপূর্বক বইপত্র লইয়া ক্লাস অভিমুখে দিলাম ভোঁ দৌড়। ক্যাম্পাসে পৌঁছিয়া দেখিলাম দশ মিনিট বিলম্ব হইয়া গিয়াছে। অর্থনীতি, ফিন্যান্স বিভাগে গিয়া দেখিলাম আমাদের কেহ নাই। ভাবিয়া লইলাম হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ এ ক্লাস হইতেছে।

যাহা ভাবিয়াছি তাহাই হইলো। হিসাব বিজ্ঞান বিভাগেই ক্লাস হইতেছে। দৌঁড়াইয়া শ্রেণিকক্ষে ঢুকিলাম; বুঝিতে পারিলাম আমার বিলম্ব দেখিয়া মাস্টারমশাই বেশ বিরক্ত হইয়াছেন।

টানা দেড় ঘন্টা ক্লাস হইলো। হঠাৎ নিম্নদেশে প্রচন্ড চাপ অনুভব করিলাম। জলবিয়োগ করা ফরজ হইয়া গিয়াছে। মেস হইতে বের হওয়ার সময়ই বেগ পাইয়াছিলো, সময়ের অভাবে করা হয় নাই। মনে মনে রাগ হইলো এই ভাবিয়া যে, কোন কুক্ষণে এতো জল পান করিয়াছিলাম।

ক্লাস শেষ হয় না। অনুমতি লইয়া বাহিরে যাইবো সেই সাহসও হয় না। শক্ত হইয়া বসিয়া রহিলাম। ক্লাস শেষ হইলেই হাঁফ ছাড়িয়া বাঁচিবো। পাশের বন্ধুকে বলিলাম, "আমার জন্য দোয়া করো। কোন দুর্ঘটনা যেন না ঘটে। মান-ইজ্জত যেন বজায় থাকে।"

আধা ঘন্টা পর ক্লাস শেষ হইলো। আমার অবস্থা ততক্ষণে কাহিল। স্যার বের হইতেই দৌঁড়াইয়া বাহিরে আসিলাম। বামপাশে ওয়াশরুম। ঢুকিয়া পড়িলাম। হঠাৎ লক্ষ্য করিলাম আমার পাশের টয়লেট হইতে জনৈকা বালিকা বাহির হইতেছে। আমাকে দেখিয়া সে থমকাইয়া দাঁড়াইলো। তখনও আমার কিছু খেয়াল হয় নাই।

সহিসালামতে কাজকর্ম সারিয়া বেশ আরাম পাইলাম। কোন দুর্ঘটনা না ঘটায় খোদাকে ধন্যবাদ দিয়া যখন বাহিরে আসিলাম, দেখি হিসাববিজ্ঞান বিভাগ এর দুইজন আপু আমাকে ডাকিতেছেন। টয়লেট হইতে কিছু দূরেই তাহারা বসিয়াছিলেন।
সম্মুখে যাইতেই এক আপু জিজ্ঞাসা করিলেন, "মেয়েদের টয়লেট এ ঢুকেছেন কেন? এটা যে মেয়েদের টয়লেট জানেন না?"
আমি কী বলিবো; বলিলাম, "জানি না তো।"
"ওই যে বড় করে লেখা আছে দেখুন। অন্ধ নাকি?" আপুটি বলিলেন।
খেয়াল করিয়া দেখি দরজার উপরে বড় বড় অক্ষরে লিখা, "ছাত্রী টয়লেট"।
বড় লজ্জায় পড়িয়া গেলাম; বলিলাম, "খুব সিরিয়াস ছিলো, তাই খেয়াল করি নি।"

আপুটির দয়া হইলো; বলিলেন, "চোখ-কান খোলা রাখবেন।"
আমি "আচ্ছা" বলিয়া কাটিয়া পড়িলাম। চারিপাশে চোখ বোলাইলাম; মনে মনে আপনাকেই জিজ্ঞাসা করিলাম, "আমার এহেন বোকামি কর্মকান্ড কেহ দেখিতে পায় নাই তো?"

না, কেহই দেখিতে পায় নাই। মনটিকে শক্ত করিয়া দ্বিতীয়বারের মতো খোদাকে ধন্যবাদ জানাইয়া অন্য ক্লাসে আসিয়া আসন গ্রহণ করিলাম।
আমার মুখ গোমড়া দেখিয়া জনৈক বন্ধু জিজ্ঞাসা করিলো, "কী খবর?"
যেন কিছুই হয় নাই এমন ভাব ধরিয়া "ভালোই" বলিয়া অন্যদিকে মুখ ফিরাইলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৭:১৪
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×