দেখতে দেখতে এক বছরের বেশী হয়ে গেল আমি দেশের বাইরে আছি। অনেক কিছু লিখতে চেয়েছি কিন্তু আমার আলসেমির জন্য আর লিখতে পারিনি। হঠাৎ কি মনে হল ভাবলাম আমার প্রবাস জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে ভাগ করে নেই।
২০১২ সালের ১৭ই সেপ্টেমবার আমার বিয়ের ২৪ দিন পর হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকালে এসে পৌছায় ব্যাংকক হয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য। বিমানবন্দরে দেখা হয় আরেক বাংলাদেশী জাকির ভাইয়ের সাথে। আমরা দুজন একই স্কলারশীপে কিন্তু ভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করতে জাপানে যাচ্ছি। উনি আমার সাথে ব্যাংকক পর্যন্ত যাবেন। আমরা দুজন খুব তারাতারি চলে এসেছিলাম বিমানবন্দরে। ভেবেছিলাম ইমিগ্রেশনে খুব দেরী হবে, কিন্তু দেখি ৫ মিনিটে আমাদের ইমিগ্রেশন শেষ। তখনও আমাদের বিমানের বোর্ডিং গেট দেয় নাই। আমরা থাই এয়ারলাইন্সে যাব। আমি ব্যাংকক হয়ে কানসাই আর জাকির ভাই ব্যাংকক হয়ে টোকিও। দুজনের প্রথম জাপান যাওয়া। আমি জাপানিজ ভাষা কিছুই জানিনা। জাকির ভাই কিছুটা জানে।
জাকির ভাই
আমরা দুজন বিমানবন্দর ঘুরে আর ছবি তুলে সময় কাটালাম। একসময় আমাদের বিমানের বোর্ডিং গেট খুলে দিল। আমরা বিমানে উঠে শেষবারের মত বাংলাদেশকে দেখে নিচ্ছিলাম।
শেষবারের মত বাংলাদেশকে দেখে নিচ্ছিলাম।
একসময় বিমান আকাশে উঠলো। ঢাকা থেকে ব্যাংকক ফ্লাইট খুবই অল্প সময়। সময়মত ব্যাংকক এয়ারপোর্টে বিমান ল্যান্ড করল। ফ্লাইটে দুপুরের খাবার দিয়েছিল সাদা ভাত, মুরগির মাংস, সালাদ, পুডিং এবং জুস।
ব্যাংকক এয়ারপোর্ট
ব্যাংককে আমার ট্রানজিট ছিল ৬ ঘন্টা আর জাকির ভাই এর ৪ ঘন্টা। এখানে ইমিগ্রেশনে কড়া চেকিং হয়েছে। জুতা, বেল্ট সব খুলা লাগছিল। চেকিং শেষে আমরা ট্রানজিট লাউন্জ্ঞে ঘুরাঘুরি করেছি। ব্যংককের ট্রানজিট লাউন্জ্ঞ অনেক বড়। এক মাথা থেকে আরেক মাথা যেতে ২০ মিনিট লাগে। এখানে আমরা হালাল খাবার না পেয়ে দিয়ে কফি খেয়েছি। এয়ারপোর্টে ফ্রী ইন্টারনেট ছিল, তাই দিয়ে আমরা বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ করেছি। রাত দশটায় জাকির ভাই টোকিও চালে যায়। ফ্লাইট আরও ২ ঘন্টা পর। এই ফাকে আমি ওয়েটিং চেয়ারে ১ ঘন্টা ঘুমাই নিয়েছি। রাত বারটার দিকে আমি প্লেনে উঠি। এই ফ্লাইটে হালাল খাবার না থাকার কারনে আমি কিছুই খাইনি। ৬ ঘন্টার ফ্লাইটে ঘুমানোর অনেক চেস্টা করেছি কিন্তু ঘুম আসিনি টেনশনে। সকাল ৭:১৫ তে আমাদের বিমান কানসাই এয়ারপোর্টে অবতরণ করে। কানসাই এয়ারপোর্টটা সমুদ্রের মধ্যে। নামার সময়ই মনে হয় এই বুঝি সমুদ্রের মধ্যে নেমে পড়লাম।
কানসাই এয়ারপোর্টে বিমান অবতরণ
বিমান থেকে নেমে সাটল ট্রেনে করে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে আসলাম। এখানে ইমিগ্রেশন লাইনে দাড়ায়ে ইমিগ্রেশনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, হঠাৎ একজন ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে লাইন থেকে বের করে পাশে একটা অফিসে নিয়ে গেল। আমার তখন অবস্হা খারাপ। এর আগে একজন আমার পাসপোর্ট চেক করে গেছে। এরপর শুরু হল কথাবার্তা। তার ইংলিশ মাশা আল্লাহ আর আমার জাপানিজ তো বকলম। সে কি বলে আমি বুঝিনা, আর আমি কি বলি সে বুঝে না। পরে আমি আমার সব কাগজপত্র তার কাছে দিলাম। সে কাগজপত্র নিয়ে ভিতরে গেল। আমি তো এই দিকে টেনশনে শেষ, পড়তে এসে শেষে জেলে যাওয়া লাগে নাকি। অবশেষে আধাঘন্টা পর সেই অফিসার ফিরে এল। আমার সব কাগজপত্র ফেরত দিল, সাথে ১টা রেসিডেন্ট কার্ড। আর বলল ১৪ দিনের মধ্যে এই কার্ড নিয়ে আমি যে শহরে থাকব সেই শহরের সিটি অফিসে যেতে। আমি হাপ ছেড়ে বাচলাম। এরপর ইমিগ্রেশন সীল নিয়ে বের হয়ে দেখি এয়ারপোর্ট স্টাফরা আমার ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছে কারন আমি বের হতে অনেক দেরি করেছি। তারাতারি করে যেয়ে তাদের কাছ থেকে ব্যাগ নিলাম। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে দেখি আমার ইউনিভার্সিটির স্টাফ আমার জন্য ওয়েট করছে। তারা আমকে রিসিভ করে আমাকে ইউনিভার্সিটির বাসে তুলে দিল। ক্লান্তিতে বাসের পুরা সময় ঘুমাই ছিলাম। সকাল সাড়ে দশটাই ইউনিভার্সিটির ডরমেটরীতে আমাদের বাস এসে পৌছায়। (চলবে)