somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুজুগে ফ্যাশন; স্বাতন্ত্র্যের বিলুপ্তি

০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়ের সাথে সমতালে পদক্ষেপন না করলেই নয়। তবে নিজস্ব ব্যক্তিসত্ত্বা বা স্টাইলকে একেবারে যাচ্ছেতাই ভাবে লাঞ্ছিত না করেও যুগের সাথে সমহারে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। উগ্রতা বা উদ্ভটতা আর যা-ই হোক, কখনো ফ্যাশান হতে পারে না। সাধারণের চেয়ে স্বাভাবিক সুন্দর আর কিছু কি হতে পারে?

ফ্যাশান বলতে আমি অনুকরণটাই বুঝি। আর স্টাইল তো সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত, নিজস্ব। এর অনুকরণ সম্ভব নয়। একে মাত্র অনুসরণ করা যায়। কিন্তু ফ্যাশান এক সার্বজনীন অনুকরণীয় ক্ষেত্র। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ফ্যাশানের দুনিয়ায় তাই প্রতিনিয়তই রকমারি হেরফের ঘটছে। আজ যে ফ্যাশান হাস্যকর ঠেকছে, পরশুই তা অত্যাধুনিক ফ্যাশানের কাতারে এসে দাড়াবে। যেমন- প্রায় দুই যুগ আগে মেয়েদের লম্বা জামা, ঢিলে পায়জামা, মাথার সামনের চুলগুলো উঁচু ঢিবির মত করে ফুলিয়ে রাখার ফ্যাশান ছিল, যা কিনা সময়ের চাকা ঘুরে এখনকার চলতি ফ্যাশানে জায়গা করে নিয়েছে। এই যুগ-ওই যুগ; এর মধ্যবর্তী যুগে আবার নারীগণ লম্বা ছেড়ে শর্ট কামিজের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। কার জামা কত ছোট হবে যেন তারই প্রতিযোগীতা চলছে! ছেলেদের ফ্যাশানেও আধুনিকতার তুমুল বৈচিত্র্য এসেছে বৈকি! ফাঁড়া-ছেঁড়া প্যান্ট আর কিম্ভুতকিমাকার চুল নিয়ে কি অদ্ভুত ভঙ্গিমায় আঙুল বাঁকিয়ে বলছে, 'ইয়ো-ইয়ো বেইবস্'। সেসব শুনে আবার ফ্যাশানেইবল নারীরাও ইমপ্রেসড্! ব্যস্ হয়েই তো গেল হালের ফ্যাশান!
এভাবেই সময়ভেদে ফ্যাশানেরও রকম-সকম বদলাতে থাকে। সেই সাথে আমরাও অন্যের দেখাদেখি সঙ সাজবার নিরন্তর প্রয়াসে নিজেদের গেট-আপ, আচরণ, বাহ্যিকতায় নিয়ে আসতে থাকি আমূল পরিবর্তন। এতে কতটুকু সুশ্রী দেখাচ্ছে কিংবা আদৌ দেখাচ্ছে কিনা থোরাই পরোয়া করি! আসলে নিজেদের প্রতিচ্ছবি আমরা স্মার্টফোনগুলোয় দেখে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি যে আয়নার ব্যবহার বেমালুম ভুলতে বসেছি কিনা, তাই এই বিড়ম্বনা।
অত্যাধুনিক ফ্যাশানের বদৌলতে আমাদের কাছে স্বাভাবিকটাই এখন দৃষ্টিকটু ঠেকছে, আর উদ্ভট কিছু দেখলেই নিউ ফ্যাশান বলে মনে হচ্ছে। সুস্থ মানসিকতার সাথে হারিয়ে ফেলছি বোধ ক্ষমতাও। মুখ ও মুখোশের মধ্যেও পার্থক্য করতে পারছি না আর।

রবি ঠাকুর বলেছিলেন, "ফ্যাশান হল মুখোশ, আর স্টাইল হল মুখশ্রী।"
ফ্যাশান আর স্টাইলের মধ্যে পার্থক্য কদ্দূর? মিথ্যে ও সত্যের মধ্যে দূরত্ব যতদূর। ফ্যাশানটা অতিরঞ্জিত বলেই তা মিথ্যে, বড্ড রংচটা আর মেকি। আর স্টাইল তো ব্যক্তিত্ব বা স্বকীয়তা যা সত্যের মতই স্বাভাবিক অথচ দৃঢ়, আলোক-ঝলক নেই বটে; তবু শত ধুলেও যার রং চটবে না সামান্যতম।
তাই ফ্যাশান নামক মিথ্যে মুখোশ পরিহিতদের বলতে চাই- "বাছারা, মুখোশ পড়তে চাইছো পড়ো, তবে এমনই ভীতিকর মুখোশ পড় না যেন লোকে দেখে ভিমরি খায়। একটি বার আয়নায় স্বচিত্রখানি দেখে এসো"

আশপাশের বন্ধুবান্ধব যখন দমাদম যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দম্ভভরে এগিয়ে যাচ্ছে, আমি এখনো সেই চুড়ি-টিপেই পড়ে আছি। আসলেই বড্ড সেকেলে রয়ে গেছি বৈকি। একবার এক বন্ধুও এ নিয়ে বেশ একটা খোঁচা মেরেছিল। 'ক্ষ্যাত' সম্বোধন করে বলেই ফেলেছিল আমি নাকি ফ্যাশানের কিছুই বুঝি না। তা বটে। আমি এর অস্বীকার বা প্রতিবাদ কিছুই করি নি। কারণ আমার স্বাতন্ত্রতা সম্বন্ধে আমি মোটেই অজ্ঞাত ছিলাম না। আজ যেটা আমার স্টাইল, কাল সেটাই হয়তো অন্যেরা ফ্যাশানরূপে চাইবে। অনুকরণ আমার ধর্ম নয়; তা সে বিকৃত ফ্যাশানেই হোক কিংবা অন্য যে কোনো বিষয়ে। আমি সকল স্বাস্থ্যকর বিষয়েই সুস্থ অনুসারীর দলে।

যে কোনো ক্ষেত্রেই কোনো নির্দিষ্ট কিছুকে আদর্শ ধরে অনুসরণ না করলে যেমন বহুদূর এগোনো যায় না, ঠিক তেমনি নটের মত অন্ধ অনুকরণ করতে গেলেও মুখ থুবড়ে পড়তে হয়। কেননা স্টাইল বা আদর্শের কোনো নড়চড় হয় না, এটি সত্যের মতই ধ্রুব; একইভাবে একে লালন করে যেতে হয় দিনের পর দিন। অন্যদিকে অনুকরণপ্রিয় ফ্যাশানেইবলরা বানরের মত এ ডাল-ও ডাল করতেই থাকে; এক আদর্শে স্থির হতে পারে না। ফ্যাশানের মতই ক্ষণে ক্ষণে আদর্শেও বদল চায়। ফলশ্রুতিতে, অন্যের ঢঙ নকল করে সঙ সাজতে গিয়ে নিজেদের এক অস্বাভাবিক উদ্ভট জন্তুতে পরিণত করে। তবে প্রায়শই আবার সগোত্রীয়দের বাহবায় এদের আপ্লুত হতে দেখা যায়, যা কিনা যথেষ্ট বিনোদনমূলক।

তবে আমার সবচেয়ে কষ্ট হয়, যখন দেখি আমাদের বহু আরাধ্য 'বাংলা' ভাষাকে এক বিদঘুটে ফ্যাশানীকরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। এটি সত্যিই অত্যন্ত পীড়াদায়ক। আমরা আমাদের সুসমৃদ্ধ হাজার বছরের ঐতিহ্য ভুলে অন্ধভাবে পাশ্চাত্যের অনুকরণ করে যাচ্ছি। এর করুণ পরিণতি অপেক্ষা করছে, নতুন প্রজন্ম মেরুদন্ডহীন ও পঙ্গু হয়ে পড়বে। সচেতনতার বড়ই অভাব। যাহোক আমি অন্তত বিশ্বাস করি, যারা সর্বদা অনুকরণে ব্যস্ত তারা কখনোই অনুসরণীয় হতে পারে না; তাদের সার্কাসেই ভালো মানায়।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৪০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×