somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সমাধি

১৩ ই মে, ২০১৭ সকাল ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুর্শিদাবাদে গিয়ে ইতিহাস স্পর্শ করে শিহরিত হয়েছিলাম বারে বার। মনে হচ্ছিল আমার চারপাশের আকাশে বাতাসে এমনকি রাস্তার প্রতিটা ধূলিকণায় ও শুধু ইতিহাস আর ইতিহাস। তাদের মধ্যে খোশবাগে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের সমাধি অন্যতম। মুর্শিদাবাদের ভাগীরথী নদীর উপারে খোশবাগে যিনি ঘুমিয়ে আছেন অসীম নিঃশব্দতায়। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী মুর্শিদাবাদ এর পলাশী নামক প্রান্তরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ ঊদ্দৌলার সাথে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ বণিক সংগঠন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নবাবের প্রধান সেনাপতি মীর জাফর আলী খাঁন এর বিশ্বাসঘাতকতা তথা বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার ইতিহাসকে হাতে ছুয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। আসুন আজকে আপনাদের নিয়ে যাই আমার ছুয়ে দেখা কিছু ইতিহাসের ভেতর।


(২) মুর্শিদাবাদের সদর ঘাট থেকে এমন ফেরি দিয়া ভাগীরথী নদী পার হয়ে যেতে হয় খোশবাগের ঘাটে।


(৩) ঘাট থেকে অটো রিক্সায় করে এমন গ্রামীন রাস্তা দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার গেলেই মিলবে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সমাধি।


(৪) বাম পাশে একটা বড় বটবৃক্ষ, তার নিচে ছোট্ট একটা গ্রামীন দোকান, তারই ডান পাশে খোশবাগের প্রধান গেইট। খুবই সাধারণ আর নির্জন।


(৫) ঢোকার মুখে সাধারণ একটা কাঠের বেঞ্চি, তারপর সোজা পথ চলে গেছে সমাধীগুলোর দিকে।


(৬/৭) সোজা গেলে প্রথম যে ছাদ খোলা দেয়াল ঘেরা কবরস্থানটা সামনে দেখা যায় এখানে কাদের কবর জানা হলোনা, আমরা যখন ওখানে ঢুকেছি কোথাও কোন লোকজন ছিলনা বলে তথ্য জানার কোন উপায় ছিল না।




(৮) এটা পার হয়ে আরো কিছু দূরে এগিয়ে গেলে আরো একটা কবরস্থান, এটা ছাদ দিয়ে ঢাকা। এখানেই ঘুমিয়ে আছে আলিবর্দি খাঁ, সিরাজদ্দৌলা, লুৎফাউন্নিসা সহ নবাব পরিবারের বিশিষ্টজনেরা।


(৯/১০) সামাধীক্ষেত্রের বাউন্ডারির ভেতরে পুরোটাই সুনসান সবুজে ভরপুর।




(১১) একেবারে শেষাংশে রয়েছে এই মসজিদটি, অবশ্য এখানে এখন আর নামাজ পড়া হয় না।


(১২) এই সাইবোর্ডে লিপিবদ্ধ আছেঃ নবাব আলিবর্দি খাঁ দিল্লির জামা মসজিদের অনুকরণে ৭.৬৫ একর জমির উপরে 'খোশবাগ' বা গার্ডেন অব হ্যাপিনেস তৈরি করেন। এটি চারদিকে ২৪৭১ ফুট উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। এখানকার সাজানো সুন্দর বাগানের মাঝে নবাব আলিবর্দি খাঁ, আলিবর্দি খাঁ-এর মা, সিরাজ-উদ-দৌলার বেগম লুৎফউন্নিসা এবং নবাব পরিবারের অন্য সদস্যদের সমাধি রয়েছে। তাছাড়াও, এখানে চারদিকে কারুকার্য খচিত বারান্দা দিয়ে ঘেরা চৌকাকৃতি সমতল ছাদ বিশিষ্ট ঘরের মধ্যে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সমাধি রয়েছে। এখানে চারদিকে দেয়াল বিশিষ্ট চত্বরের মধ্যে বৃটিশদের গুলিতে নিহত দানিশ ফকিরের সমাধিও রয়েছে, যিনি নবাবের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে সিরাজ-উদ-দৌলার গুপ্ত স্থান বৃটিশদের দেখিয়ে সিরাজকে হত্যা করতে সাহায্য করেছিলেন। সিরাজের মৃত্যুর পর তার বেগম লুৎফউন্নিসা ঢাকা থেকে ফিরে আসেন এবং মৃত্যুর আগে বেশ কয়েক বছর এই খোসবাগে ছিলেন, যেখানে পরে তাকে গোলাপ বাগানে সমাধিস্থ করা হয়। এই বাগানে ১০৮ প্রকার গোলাপ পাওয়া যায়। ১৭৮৬ খৃষ্টাব্দে লুৎফউন্নিসার মৃত্যুর পর তাঁকে সিরাজের পাশেই সমাধিস্থ করা হয়। বাগানের একেবারে দূরবর্তি প্রান্তে রয়েছে খোসবাগ মসজিদ। ১৭৪০ খৃষ্টাব্দে এই মসজিদ নির্মিত করা হয়। বর্তমানে আর্কিওলোজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া খোসবাগের রক্ষণাবেক্ষণ করে।


(১৩) ছাদ দিয়ে ঘেরা সমাধিগুলোর মাঝে এটাই সব থেকে বড় সমাধি দেখে আমরা ভেবেছিলাম এটাই সিরাজউদ্দৌলার সমাধি। কোন সমাধি ফলক না পেয়ে মনের ভেতরটা খচখচ করছি। সঙ্গীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এটাই কি জিরাজের সমাধি? উনি ১০১ পার্সেন্ট নিশ্চয়তা দিলেন, ছবি তুলে বেড়িয়ে এসে একটা ১২/১৩ বছরের বাচ্চার দেখা পেয়ে ওর কাছে তথ্যটা না পেলে আজকে হয়তো আমার ভুল ব্লগ লেখা হতো। এটা আসলে নবাব সিরাজউদ্দৌলার নানা আলিবর্দি খাঁ-র সমাধি।


(১৪) এটা হলো সিরাজউদ্দৌলার সমাধি, পাশেরটা সম্ভবত বেগম লুৎফউন্নিসার সমাধি।


(১৫) মাথার পাশে থাকা এই সমাধি ফলকটা দেখে মনে আর কোন সন্দেহই রইল না।


(১৬) এক সাথে নবাব সিরাজের সমাধি আর শেষাংশে থাকা মসজিদ।


(১৭) পাশের বিশাল আম গাছটায় ফুলে থাকা পরগাছা ফুলগুলো যেন এই নির্জনে আমাদেরকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল।


(১৮/১৯) খোলা যায়গায় উঁচু বেদীর উপর বেশ কিছু কবর রয়েছে, যাদের সম্পর্কে কোন তথ্যই জানা হলো না।




(২০) নবাব পরিবারের সমাধি ছেড়ে আসার সময় তোলা শেষ ছবি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৭ সকাল ৯:২৭
৫৫টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×