somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের গন্ধমাখা হাজারদুয়ারি প্রাসাদ

২২ শে জুলাই, ২০১৭ ভোর ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই প্রাসাদে আসল-নকল মিলে এক হাজার দরজা আছে বলে এটাকে হাজার-দুয়ারী বলা হয়। সাধারণ জনগণ এর ধারণা এটা নবাব সিরাজউদ্দৌলার নির্মিত। সিরাজের নিজ প্রাসাদ ভাগীরথীর পশ্চিমতীরে হীরাঝিল। এটা অনেক আগেই ভাগীরথীর ভাংগনে বিলীন হয়ে গেছে। সিরাজের মৃত্যুর ৮০ বছর পর নবাব হুমায়ুন জা নামের এক সৌখিন নবাব হাজার দুয়ারী প্যালেস নির্মাণ করেন ভাগীরথীর পূর্ব তীরে। হুমায়ুন জা ছিলেন মীরজাফর প্রতিষ্ঠিত নবাবীর অষ্টম উত্তরাধিকারী এবং বংশধর হিসেবে পঞ্চম। স্থপতি ডানকান ম্যাকলিয়দের পরিকল্পনায় ইউরোপিয়ান স্থাপত্যের ধাঁচে প্রায় নয় বছর সময়ে এই প্রাসাদে নির্মাণ সম্পন্ন হয়। হাজার দরজার এই প্রাসাদের ৯০০টা দরজা সত্যিকারের। বাকি ১০০টা, শত্রুর চোখে ঝিলমিল লাগানোর জন্য।

এর এক তলায় অস্ত্রাগার গ্যালারিতে প্রায় ২৬০০টি অস্ত্র সজ্জিত আছে, তার মধ্যে এমন অস্ত্রও রয়েছে, যা পলাশি যুদ্ধে ব্যবহার হয়েছিল। এছাড়াও আলিবর্দি খাঁয়ের ব্যবহার করা তলোয়ার ও বহু নল বিশিষ্ট বন্দুক, নাদির শাহের শিরস্ত্রাণ, মীরকাশিমের ছোরা, বিভিন্ন ধরণের কামান ও ছোরা এমনকী যে ছোরা দিয়ে সিরাজদ্দৌলাকে হত্যা করা হয়েছিল, সেটিও ওই গ্যালারিতে ঠাঁই পেয়েছে। দোতলায় বিভিন্ন আর্ট গালারিতে মুর্শিদকুলি খাঁয়ের মার্বেল পাথরের সিংহাসন, সিরাজদ্দৌলার রূপার পালকি, পানপাত্র, চিনামাটির বিভিন্ন রকমের ফুলদানি, হাতির দাঁতের সোফাসেট ও পালকি, রূপার পালকি, নবাবদের ব্যবহার করা বিলিয়ার্ড বোর্ড, ম্যাজিক আয়না, মমি করা দুষ্প্রাপ্য পাখি। দরবার কক্ষে রয়েছে ভিক্টোরিয়ার উপহার দেওয়া ১০১টি বাতির সুদৃশ্য ঝাড়বাতি। হারুণ অল রশিদের স্বহস্তে লিখিত ১০ ইঞ্চি লম্বা ও ৬ ইঞ্চি চওড়া একত্রিশ পাতার কোরান ও আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরীর পাণ্ডুলিপি। ক্যামেরা বা মোবাইল নিয়ে ঢোকা নিষেধ বলে ভেতরের কোন ছবি দিতে পারলাম না।


(২) টিকেট কেটে হাজারদুয়ারি প্রাসাদে ঢোকার মুখেই কাধের ব্যগ ক্যামেরা মোবাইল সব কিছু রেখে যেতে বলল, মনটা চরম খারাপ। কি আর করা মনের ক্যামেরায় ইতিহাসের ছবি তুলে রাখার প্রত্যয় নিয়ে ঢুকে গেলাম প্রাসাদে।


(৩) প্রাসাদের ভেতরে ঢোকার মুখেই রাখা আছে এই কামানটা, নিশ্চয়ই কোন ইতিহাস আছে এর পেছনে, সেটা অজানাই থেকে গেছে।


(৪) কয়েক ঘন্টা ভেতরে ঘুরে বাহিরে এসে দেখলাম অনেকেই ছবি তুলছে, যখন বুঝতে পারলাম শুধু প্রাসাদের ভেতরে ছবি তোলা নিষেধ, তখন ছুটে মেইন গেইটে গিয়ে ক্যামেরা নিয়া ক্লিকবাজীতে মত্ত হলাম।


(৫) হাজার দুয়ারির ঠিক বিপরিত পাশেই ভারতের সব চেয়ে বড় ইমামবাড়াটি। মহররম মাসের এক থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত এটি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়, তখন উপমহাদেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে আসেন। মহররম মাসের শেষ দিন সকাল বেলা এখান থেকে শোভাযাত্রা বের হয়।


(৬) মদিনা। ইমামবাড়া ও হাজার দুয়ারি প্রাসাদের মধ্যিখানে রয়েছে এই মদিনা মসজিদটি। এর আকার একেবারেই ছোট। আসলে এটি মসজিদের আকৃতি বিশিষ্ট একটি ছোট্ট ভবন। এটি মূলত হযরত মুহম্মদ (সঃ) মদিনা রওজা মোবারকের অনুরূপ একটা প্রতিকৃতি। নবাব সিরাজ নিজে এই 'মদিনা'র জন্য কারবালা থেকে পবিত্র মাটি নিয়ে এসেছিলেন। মায়ের প্রতিজ্ঞা পালনে এটি করেছিলেন বলে কথিত আছে।


(৭/৮) বাচ্চাওয়ালি কামান। হাজার দুয়ারি প্রাসাদের উত্তর দিকে মদিনার পাশেই রয়েছে এই কামান। ১৬৪৭ সালে ঢাকার বিখ্যাত কর্মকার জনার্দন এটি তৈরি করেন। এর দৈর্ঘ ১৮ ফুট ও প্রস্থ ২২ ইঞ্চি। এর ওজন আনুমানিক ৭ হাজার ৬শত ৫৭ কেজি। এ কামানটি দাগার জন্য ১৮ কেজি বারুদ লাগত। শুধু একবারই এই কামান দাগা হয়েছিল। এর তীব্র আওয়াজে তখন বহু গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত ঘটে। সেই কারণেই এর নাম দেওয়া হয় বাচ্চাওয়ালি কামান বা তোপ। এই ঘটনায় নবাব ব্যথিত হন এবং পরে এটি আর ব্যবহৃত হয়নি।




(৯) হাজার দুয়ারি প্রাসাদ আর ইমামবাড়ার মাঝখানে বিশাল ময়দান, আর তাতে দর্শনার্থীদের বসার জন্য রয়েছে অনেক চেয়ার।


(১০) এছাড়া ইমামবাড়া ও হাজার দুয়ারি প্রাসাদের মধ্যিখানে মদিনার বিপরিতে রয়েছে একটা উঁচু টাওয়ার ঘড়ি যা এখন সচল নেই। আগে বিরাট শব্দ করে এটা সময় জানান দিত। সেই সাথে নবাব বা ইংরেজ শাসকরা এলে ঘন্টাও বাজানো হতো।


(১১) উত্তর পশ্চিম পাশ থেকে তোলা হাজার দুয়ারি প্রাসাদের ছবি।


(১২) প্রাসাদের উত্তর পশ্চিম কোনে থাকা এই কামানটার ইতিহাসও অজানা।


(১৩) একটা উৎসুক ভাট শালিক আমাদের যেন দেখছিল।


(১৪) হাজার দুয়ারির ঠিক বাইরেই ভাগীরথীর তীর ঘেষে দাঁড়িয়ে এই হলুদ মসজিদটি।


(১৫) হাজার দুয়ারির পশ্চিম দিক থেকে তোলা ছবি এটি।


(১৬) প্রাসাদের পেছনের অংশ, মানে দক্ষিণ পাশ থেকে তোলা।


(১৭) ইতিহাস খ্যাত ভাগীরথী নদী, কতো ইতিহাসের সাক্ষী এই নদী কে জানে?


(১৮) আমাদের ফুল ল্যান্টানা। দেখলে কতো আপন মনে হয়, ফুটে আছে ভাগীরথীর তীরে।


(১৯) হাজার দুয়ারির সামনে বাচ্চাওয়ালি কামানের পাশে আমি নিজে ;)


(২০) অনেক তো হলো এবার ভাগীরথীর তীরে বসে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৪
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×