somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিল্লির আখড়া ও একটি মিথ

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নাম শুনে ভাবছেন ভারতের রাজধানীতে এর অবস্থান? মোটেও না। এই দিল্লির আখড়া কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত মিঠামইন উপজেলার শেষ প্রান্তে একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। চারিদিকে প্রায় তিন হাজার হিজল গাছ বেষ্টিত সাড়ে চারশত বছরের পুরোনো এই আখড়া। দিল্লির আখড়ার প্রতিষ্ঠাকাল সম্পর্কে জানা যায়, দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে সাধক নারায়ন গোস্বামী এই আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন।

ইতিহাস বা মিথঃ প্রাচীন কালে এই এলাকাটি ঝোপ জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল, কোনো হিজল গাছ ছিল না। এলাকাটির চতুর্দিকে ছিল নদীবেষ্টিত। ফলে আখড়ার এলাকাটিকে মনে হতো দ্বীপের মতো। এ নদীপথে কোনো নৌচলাচল করতে পারত না। রহস্যজনক কারণে এ নদীপথে চলাচলকারী নৌকা ডুবে যেত বা অন্য কোনো দুর্ঘটনায় পতিত হতো, একদিন এ নদীপথে দিল্লির সম্রাট প্রেরিত একটি কোষা নৌকা মালামালসহ ডুবে যায়।

আরোহীরা অনেক চেষ্টার পরও কোষাটি উঠাতে গিয়ে ব্যর্থ হন এবং তাদের একজন সর্পদংশনে মারা যান। বানিয়াচং এর বিতঙ্গলের সাধক রামকৃষ্ণ এ খবর পেয়ে শিষ্য নারায়ণ গোস্বামীকে এখানে আসার নির্দেশ দেন। গুরুদেবের নির্দেশ মোতাবেক সাধক নারায়ণ গোস্বামী এখানে এসে নদীর তীরে বসে তপস্যায় রত হলেন। হঠাৎ অলৌকিক ক্ষমতা বলে কে যেন তাকে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দেয়। ঐশী ক্ষমতাবলে তিনি তীরে উঠে আসেন। এভাবে প্রায় ৭ দিন একই ঘটনা ঘটান। একদিন দৈববাণীর মতো কে যেন বলল, আপনি এখানে থাকতে পারবেন না, এখান থেকে চলে যান। উত্তরে সাধক বললেন, তোমরা কারা? উত্তর এলো আমরা এখানকার বাসিন্দা। পূর্বপুরুষ ধরে এখানে আছি। আপনার কারণে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। সাধক বললেন, তোমরা স্পষ্ট হও, অর্থাৎ রূপ ধারণ করো। সঙ্গে সঙ্গে তারা একেকটা বিকট দানব মূর্তি ধারণ করল।

নারায়ণ গোস্বামী দেখলেন, তার চারপাশে হাজার হাজার বিশালাকার দানব মূর্তি। যা দেখলে সাধারণত গা শিউরে উঠবে। সাধক নারায়ণ গোস্বামী তাদেরকে আদেশ করলেন, তোমরা আমার চতুর্দিকে সবাই হিজলগাছের রূপ ধারণ কর। সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি দানব একেকটি হিজলগাছে রুপান্তরিত হয়ে গেল।

এদিকে সাধক নারায়ণ গোস্বামীর ঐশী ক্ষমতা বলে সেই ডুবে যাওয়া কোষাটি মালামালসহ উঠিয়ে দেয় এবং সর্প দংশনে মৃত ব্যক্তিটিকেও বাঁচিয়ে তোলেন। পরে দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছে এ খবর পৌঁছার পর তিনি এখানে এসে সাধক নারায়ণ গোস্বামীর নামে প্রায় ৪০০ একর বিশাল এলাকা দান করে দিয়ে একটি আখড়া প্রতিষ্ঠা করে দেন। সে থেকে আখড়াটিকে ‘দিল্লির আখড়া’ নামে পরিচিতি হয়ে আসছে।

সম্রাট জাহাঙ্গীর ১২১২ সালে আখড়ার নামে একটি তামার পাত্রে উক্ত জমি লিখে দেন। কিন্তু ১৩৭০ সালে ডাকাতরা এই পাত্রটি নিয়ে যায় বলে আখড়ার সেবায়েতরা জানান। দিল্লির আখড়ায় প্রতিবছর ৮ চৈত্র মেলা বসে।


(২) কিশোরগঞ্জের চামড়া ঘাট, এখান থেকেই শুরু হয় আমাদের দিল্লির আখড়া অভিযান।


(৩) এমন পাল তোলা নৌকা হাওড় অঞ্চলে এখনো অনেক দেখা যায়।


(৪) ঘোড়াউত্রা নদীতে মাছ ধরছে জেলেরা।


(৫) মিঠামইন লঞ্চ ঘাট। চামড়া ঘাট থেকে বড় ট্রলারে এখানে আসি। অতঃপর এখান থেকেই ছোট ট্রলার রিজার্ভ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি দিল্লির আখড়ার উদ্দেশ্যে।


(৬) একজন সাদা মনের মানুষ। যিনি আমাদের ভ্রমণটাকে অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছিলেন। দিল্লির আখড়া নামটাই মিঠামইনের বেশীর ভাগ মানুষ জানে না। অথচ তিনি সব তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের জন্য সর্ব নিম্ন রেটে ট্রলার রিজার্ভ করে এবং নিজের পকেটের টাকায় চা খাইয়ে তবেই ছেড়েছিলেন। তিনির জন্য শুভ কামনা সব সব সময়।


(৭) ছোট ট্রলারে করে যাত্রা শুরুর সাথে সাথেই নামে ঝুম বৃষ্টি।


(৮) মিঠামইনের এই বেড়ি বাধ পাড় হওয়ার পরে এতো বেশী ঢেউ ছিল যেন মনে হচ্ছিল এগুলো সাগরের ঢেউ। আর সন্ধ্যার পর ফেরার সময় ঢেউ এতোটাই ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল যে, মনে হচ্ছিল নিশ্চিৎ আজই আমাদের সলিল সমাধি ঘটবে।


(৯) ঝুম বৃষ্টিতে হাওড়ে চলাচল কারি একটা নৌকা।


(১০/১১) চারিদিকে পানির মাঝে বাড়িগুলোকে মনে হয় এক একটা দ্বীপ।




(১২) হেমন্তগঞ্জ বাজারে পৌছে বিপরিত দিকে দেখলাম এমন সাড়ি সাড়ি হিজল গাছ গলা পানিতে দাঁড়িয়ে।


(১৩/১৪) কিছু গাছ ন্যাড়া আবার কিছু গাছ সবুজ পাতায় আচ্ছাদিত, আবার কিছু গাছে পানকৌড়ি পাখিরা আবাস গড়ে তুলেছে।




(১৫) একটা গাছে দেখলাম প্যাঁচা আর প্যাঁচি বসে কি নিয়ে যেন প্যাঁচাপ্যাঁচি করছে। চলন্ত এবং দুলন্ত নৌকায় থেকে ছবি ভালো উঠাতে পারিনি।


(১৬) এক সময় আমরা পৌছে গেলাম দিল্লির আখড়ার ঘাটে।


(১৭) সদ্য বৃষ্টিস্নাত উলট কমল ফুলটা দেখে মনটা স্নিগ্ধতায় ভরে গেল।


(১৮/১৯) আখড়ার ডান বামে ঘুরে কিছু ছবি উঠাইলাম।




(২০) আখড়ার প্রধান দরজা।


(২১) দরজার উপরে লেখা ছোট সাইনবোর্ড।


(২২) আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ গোস্বামী সমাধি। হাতে সময় ছিল খুবই কম। রাতের অন্ধকার হওয়ার আগে হাওড় যতটা পাড়ি দেওয়া যায় ততটাই ভালো, তাইআখড়া ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ি খুব তাড়াতাড়ি।


(২৩) যখন ফিরছিলাম তখন সুর্য্যি মামা ও ফিরে যাচ্ছি রাতের আঁধারে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৬
৪৩টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×