কিছু কিছু কষ্ট আছে যাহা বলার ভাষা থাকেনা। তার পরেও আপনাদের কাছে কেনো জানি বলতে ইচ্ছে করছে, কেনো জানি আপনাদেরকে খুব বিশ্বাস হচ্ছে।
তাহলে শুনুন, আমি আজ থেকে চার বছর আগে সৌদি আরব এসেছি। আমার দালাল ছিলো ঢাকার, তখন আমি ঢাকা কাজ করতাম, দুমাস হয়েছে এই দালালের সাথে পরিচয়, সে আমাকে খুবই ভাল বাসতো, আমিও তাকে শ্রদ্ধা করতাম। একদিন সে আমাকে বললেন,এনায়েত, আমার ভাই একটা ভিসা পাঠিয়েছে সৌদি আরব থেকে, খুব ভালো ভিসা, টাকাও কম, তুমি আপন জন তাই তোমাকে বললাম। আমি তার কথা মতো আর্জেন্ট এম আরপি (ডিজিটাল) পাসপোর্ট বানালান, পাসপোর্ট বানানোর পর ১৫দিনের মধ্যেই আমাকে সৌদি আরব পাঠিয়ে দিল। সৌদি আরব এয়ারপোর্ট থেকে একটি লোক আমাকে রিসিভ করলেন, সে আমাকে বললেন, আপনার পাসপোর্ট আমার কাছে দিন, ইকামা বানানো লাগবে, আমি দিয়ে দিলাম। দুইদিন পর আমাকে নিয়ে সে একটি অফিসে গেলেন, আমাকে বললেন তুমি এখানে ধারাও আমি একটু ভেতর থেকে আসি, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঐখানেই ধারিয়ে রইলাম কিন্তু সে আর এলোনা। এদিকে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েগেছে। পকেটে রিয়ালও নেই, ছিল বাংলার দুইশত টাকা আর চোখ ভরা জল। মানিব্যাগ ঘাটাঘাটি করে মামাতো ভাইয়ের নাম্বার পেলাম, নাম্বার হাতে নিয়ে বসে বসে কান্না করছিলাম, এমন সময় এক বাংলাদেশী ভাই আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো আমি কেনো কান্নাকাটি করছি, বাংলাদেশী ভাইয়ের সাথে কিছু কথা শেয়ার করলাম সে আমাকে শান্তা দিলো, তার তার কাছথেকে মোবাইলটা নিয়ে মামাতো ভাইকে ফোন দিলাম, কিছুক্ষণ পরেই ভাই এসে আমাকে নিয়ে গেলো। ভাইয়ের কাছে থেকে একবছর কাজ করলাম। হঠাৎ একদিন শুনলাম অবৈধ প্রবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছে সৌদি সরকার। কিন্তু কিভাবে বৈধতা পাবো আমি, আমারতো কিছুই নেই, আমাকে কিভাবে যে সৌদি আরব এনেছে ঐদালাল তাইতো জানিনা। বাংলাদেশী বিভিন্ন ভাইদের সাথে এব্যাপারে আলোচনা করতে করতে এক পর্যায় দেখা হলো লেবার সাপ্লাইয়ার এক বাংলাদেশী ভাইয়ের সাথে, আমার সব কথা তার কাছে খুলে বললাম, সে বলল বৈধ করা যাবে, টাকা লাগবে ২৫হাজার রিয়াল। কোনো কুল কিনারা না পেয়ে রাজি হয়ে গেলাম। ভাইবন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধারদেনা করে পুরো ২৫ হাজার রিয়াল তার হাতে তুলে দেই। কয়েক দিন পরেই, কোথা থেকে একটি পাসপোর্ট এনে ঐ পাসপোর্ট দিয়ে আমাকে ইকামা বানিয়ে দিলো। সব অতিত ভুলে গিয়ে টেনশন ফ্রি ছিলাম এই ভেবে যে আর যাইহোক বৈধ হতে পেরেছিতো।
ইদানীং একটুআধটু ফেসবুক চালাই, তো হঠাৎ চোখে পড়ল আপনাদের এই পেইজ আমরা সৌদি আরব প্রবাসী বাংলাদেশী পেইজে লাইক দিয়ে ডুকতেই প্রবাসীদের জন্য "সতর্কতা মুলুক পোষ্ট" দেখলাম, পুরোটা পড়ে আবার চিন্তায় পড়ে গেলাম, হায় হায় আমি যেই পাসপোর্ট দিয়ে কফালা হয়েছি সেটিতো হাতে লেখা পাসপোর্ট! আপনাদের করা বিভিন্ন পরামর্শ মুলুক পোষ্ট পড়ে ও পাশেপাশের লোকজনের পরামর্শে বাংলাদেশ এম্বাসিতে গিয়ে নতুন করে ডিজিটাল পাসপোর্ট করার জন্য ফরম জমা দেই, ফরম জমা ঠিকি নেয় কিন্তু ফিঙ্গার দেয়ার সময় যত ঝামেলা! ফিঙ্গার ছাপ দিলেই আগের পাসপোর্ট ভেসে উঠে, যেটা নিয়ে আমি প্রথম সৌদি আরবে প্রবেশ করি। এম্বাসি কর্তৃপক্ষ সোজা না করেন, যে এটা কোনো ভাবেই করা সম্ভব নয়। তখন আমার মাথায় জেনো আসমান ভেঙে পড়ল। আমি হাল না ছেড়ে সৌদি আরবে বাংলাদেশী দুইটা এম্বাসি ও বিভিন্ন মোবাইল টিমের কাছে ঘুরতে থাকি কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
বিঃদ্রিঃ এনায়েত মোল্লা সাহেব পরামর্শ চেয়েছেন সবার কাছে???
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৮