somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেড়াল অথবা আত্মহত্যার গল্প-১

১৭ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেড়ালটা এসেছিল নিঃশব্দে এবং ইচ্ছা ছিল নিঃশব্দে ফিরে যাওয়ার। কিন্তু তার মনষ্কামনা পূর্ন হয় না; শব্দ একটা শেষমেষ হয়েই যায়, ঠেকানো যায় না। লেজে বাড়ি লেগে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে একটা ঢাউস সাইজের পারফিউমের টিন গড়িয়ে পড়ে নিচে, কার্পেটে; আর কার্পেটে পড়ার কারণে পতনের আওয়াজটা একটা ‘থপ’ ধ্বনিতে ব্যঞ্জনা লাভ করে। বেড়ালটা কেন এসেছিল?
ও এসেছিল ভালোবাসার টানে। দুদিন ধরে নাসরিন বাড়িতে নেই, আছে নার্সিং হোমে; বাচ্চা হবে। দুদিনের অদর্শনেই হাঁফিয়ে উঠেছিল বেড়ালটা, তাই সে সংগোপন এসেছিল নাসরিনের ব্যবহৃত কসমেটিক্সের ডিব্বাডাব্বাগুলো ছুঁয়ে-ছেনে ভালোবাসার আবেশ নিয়ে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে। এ ধরনের নস্টালজিয়া মানুষেরও হয়। কিন্তু বেড়ালটা বেড়াল বলেই বোধ হয় পুরো বিষয়টাকে ম্যানেজ করতে পারে না, গোল বেঁধে যায়; শব্দ ওঠে। সবটুকু সতর্কতা মাঠে মারা গেল দেখে বেড়ালটা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে চট করে ঘাড় ফেরায় খাটে শুয়ে থাকা ইলিয়াসের দিকে।
শব্দটা কানে যায় ইলিয়াসের; বদখদ একটা শব্দ। এতক্ষণ সে সিলিঙে দৃষ্টি স্থাপন করে চিৎ হয়ে শুয়েছিল বিছানায়; শব্দে ঘাড় ফেরায়। বেড়ালটা। চোখাচোখি। বেড়ালটার সর্বাঙ্গ শাদা, শুধু ডান গালে খানিকটা জায়গায় একটা উপবৃত্ত আকৃতির কালো ছোপ। এই কলঙ্কটুকু, ইলিয়াসের ধারণা, বেড়ালটার সবটুকু নিরাপরাধ সারল্য শুয়ে নিয়ে তাকে করেছে কুদর্শন, রুঢ় আর নিষ্ঠুর; কিন্তু নাসরিন বিপরীত ধারণা পোষণ করে: এই কালো ছোপটুকু ঈশ্বরের বিশেষ দান যা বেড়ালটাকে দিয়েছে একটা স্পেশাল লুক, ওয়েস্টার্ন সিনেমার নায়কদের মত একটা কর্কশ সৌন্দর্য। সৌন্দর্য না বুনো ওল...ব্লাডি ফেম! গালিটা বাকযন্ত্র থেকে বের হতে না পেরে কণ্ঠনালীর ভেতরে ক্ষীপ্র বাঘের মত আছড়ে পড়ে আর তার শকওয়েভে চোখদুটো হারাতে থাকে তাদের স্বাভাবিক রং।
ইলিয়াস তাকিয়ে আছে বেড়ালের দিকে, বেড়াল তাকিয়ে আছে ইলিয়াসের দিকে। বেড়ালের চোখদুটো ধক ধক করে জ্বলছে। দ্যাখো শালা একটা অপরাধ করেছে অথচ চোখে অপরাধবোধের কোন ছায়া নেই- উল্টো উদ্ধত অহংকারে জ্বলছে! ইলিয়াসের ক্রোধ উঠে যায়, মনে হয় তার, একটা লাথি মেরে ঐ বুনো জানোয়ারটাকে ৭ তলা থেকে নিচে ফেলে দেয়। বেড়াল ম্যাও করে ডেকে উঠে। আবার দ্যাখো কণ্ঠে বিদ্রোহ! শা-লা! হঠাৎ চমকে ওঠে ইলিয়াস। বেড়ালের মুখাবয়ব রূপান্তরিত হচ্ছে, ঠিক র্হর ফিল্মের অভিশপ্ত আত্মার মত; প্রথমে ডান গালের কালো ছোপটা পাল্টে একটা কালো তিল হয়ে যায়; এরপর কপালটা আরো একটু চওড়া হয়, নাকটা ওরকম চ্যাপ্টাই থেকে যায়, শুধু মাত্রাটা পাল্টে মানবীয় হয়; পরিশেষে দুইচোখের উপর জন্ম নেয় এক জোড়া ঘন কালো ভ্রু; হবহু মানুষের মুখ, চেনা এক মানুষের মুখ বুঝি; বেড়ালটা এখন মানুষমুখো বেড়াল।
চেহারাটা দেখা মাত্রই দুচোখের মণিতে আগুন ধরে যায় ইলিয়াসের, তারপর আগুন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে শিরায় শিরায়। বেড়াল এখন শত্রু পক্ষ; শত্রু বধ করার সিদ্ধান্ত নেয় ইলিয়াস। আজ বাসাতে বাঁধা দেয়ার মত কেউ নেই, এই হচ্ছে মোক্ষম সুযোগ শত্র“কে খতম করার। ইলিযাস ঝট করে বিছানা থেকে নেমে আসে; খাটের তলা থেকে বের করে আনে হকিস্টিক। এক সময় ভালো হকি প্লেয়ার হিসেবে শহরে কিঞ্চিৎ নামডাক ছিল ওর, হাতের ৩৪ বছরের পুরোন কিলবিল করা মাসল তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। এখন সে আর প্লেয়ার নয়, যোদ্ধা; এটা খেলা নয়, যুদ্ধ।
ওদিকে যুদ্ধের আয়োজন বুঝে নিয়েছে বেড়ালটা, বুঝে গেছে এখন আত্মরক্ষার সময়; একটা যথাযথ আড়াল খুঁজতে ৩ সেকেন্ড সময় নষ্ট করে ফেলে সে; ইলিয়াস ততক্ষণে প্রস্তুত; হাতে উদ্যত হকিস্টিক, দ্রুতবেগে নেমে আসছে ঘাতক-লাঠি।...শেষ মুহূর্তে লাফ দেয় বেড়ালটা; ড্রেসিং টেবিল থেকে এক লাফে নিচে পড়ে ইলিয়াসের দু পায়ের ফাঁক গলে ত্বড়িৎগতিতে ঢুকে পড়ে খাটের নিচে। হকিস্টিকের ঘায়ে চূর্ণ হয় নাসরিনের কিছু দামী কসমেটিক্স। শত্রু ফসকে বেরিয়ে যাওয়ায় ইলিয়াস পরিণত হয় ‘কিল দা ক্যাট’ প্রোগ্রামিং করা হাই এফিসিয়েন্ট রোবটে। পরমুহূর্তেই তাকে দেখা যায় খাটের নিচে মাথা ঢুকিয়ে দিয়েছে আর বেড়ালটা ইলিয়াসের আপাত অন্ধত্বকে কাজে লাগিয়ে খাটের অন্যদিক দিয়ে বের হয়ে ছুট মারে ঘরের হাট করে খোলা দরজার দিকে এবং প্রায় বিনা বাঁধায় দরজা পার হয়ে খোলা স্পেসে এসে পড়ে; সেখানে শুরু হয় গোল্লাছুট...

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ৮:৪৯
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×