কলিগে বিয়েতে গেলাম, একটু বেশিই ফিট-ফাট হয়ে, আমারও যদি একটা
গতি-তটি হয়ে যায়, কারণ আমিও অবিবাহিত।
গিফট বক্স আর পকেটে কয়েকটা প্রাইজ নিলাম গোপনে। গিফট বক্সটা রিচিপশনিষ্টে জমা দিলাম আর পকেটের গুলা সবার
অগোচরে কলিগের পকেটে ঢুকিয়ে দিলাম।
কলিগ : (হেসে বললো) আপনি আর ঠিক হলেন না।
আমি : কলিগ হয়ে যদি এতটুকু না বুঝি, তবে হবেনা।
কলিগ : আসছেন ভালই হলো, একা একা ভরসা পাচ্ছিলাম না।
আমি : আগে বলবেন না, আমিতো প্রস্তুতি নিয়ে আসি নাই।
কলিগ : প্রস্তুতি মানে?
আমি : আমিও শেরওয়ানী-পাগড়ী পরে আসতাম।
কলিগ : (মুচকি হেসে) আপনার লাগবেনা।
আমি : ঠিক আছে, তবে আপনাকে যে পেকেটগুলা দিয়েছি তার থেকে
দুই প্যাকেট আমারে দেন।
কলিগ : কেন?
আমি : লাগবে, এক বড় বলেছে এসময় নাকি এগুলা লাগে।
কলিগ : (হাসতে হাসতে) দু'প্যকেট দিয়ে বললো, সাধান কেউ
যেন না দেখে।
তার পর কনের বাড়ি গেলাম সবে। গেটে যেতেই মেয়েরা লাল-নীল হরেক রকম
সরবদ নিয়ে হাজির। লোভ সামলা পারছিলাম না, সরবদ দেখে নয় সরবদ
ওয়ালিদের দেখে। বর(কলিগ) সরবদ খাচ্ছিলোনা, আমি ভাবলাম যে, সে
বোধয় ভরসা পাচ্ছে না। তাই এক গ্লাস হাতে নিলাম, বড়ও আমার দিখে
চেয়ে এক গ্লাস হাতে নিলো, ভাবলাম ভরসা পেল সে। আমি তো এক
ঢুকে শেষ (ওমাগো গলা জ্ববলে গেলোগো)। চিৎকার করিনি লজ্জায়, এত
সুন্দর মেয়েদের সামনে প্রেস্টিজ পানচার করলাম না। না হয় চিৎকার কারে
কয় বুঝাইয়া দিতাম তাগোরে। ভাবলাম বিয়ের সরবদ বুঝি এভাবেই বানায়।
যাই হোক কলিগকেতো বাচাইয়া দিলাম। দুই গ্লাস খাইলে বিয়েতো পরে
নিশ্চিত হাসপাতালের কাম লাগতো। মনে মনে ভাবলাম সবকিছুর ভাগ
যখন পামু, নাহয় কষ্ট করলাম। দুই গ্লাস সরবদ খাইয়ে দাবি ৫০, ভাবলাম
৫০ টাকা যাক মরিচের কেজিও ৫০টাকার বেশি। পরে ২০ নির্ধারিত হলো।
আমিতো আরো অবাক, সুন্দরীরা এত ভাল কেন। ভাবলাম আমি ১০ টাকা
শেয়ার করবো, পকেটে হাতও দিলাম। পরে টাকা দিলো বি....শ হাজার।
খাইছে আমারে দুই গ্লাস মরিচের সরবদের দাম বিশ হাজার টাকা। তাও
ভালো করে বানাতে পারেনাই হলুদ-মরিচ অভার হইছে। বিশের ভয়ে
বিয়ের প্রতি অনীহা পয়দা হইলো।
অবশেষে বিয়ের পিড়িঁ নমে শুধু, আসলে চকির উপরে সাজানো ঘড়।
বরকে কনের একপাশে বসিয়ে দেওয়া হলো, আমিও বসে পরলাম
কনের অপর পাশে। মনে হলো সবাই অবাক, বড় বড় চোখে আমাকে
যেন কি বলতে চাইছে। আমি কারও কথা শুনতে রাজি না, কারণ
কলিগ আগেই বলেছে একা একা ভরসা পাচ্ছে না।
কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো আরাম্ব করেন.................... অবশেষে
কাজী : (কনেকে) বল মা কবুল
কনে : (চুপ)......
কাজী : বল মা কবুল
কনে : ক.......
কাজী : জোড়ে বল মা কবুল
কনে : কবুল।
সবাই অনেক খুশি, আমিও। কেন তা জানিনা।
কাজী : ( বরকে) জামাই বাবাজি বল কবুল।
বর : (হুট করেই) কবুল।
কলিগকে তো ভরসা দিতে হবে, তাই সাথে সাথে আমিও বললাম।
আমি যা বললাম তা শুনে সাবার খুশির বাধ ভেঙ্গেছে, অনেকেতো
জোড়ে হাসছে এমন কি বর-কনে সহ। ভাবলাম বিয়েটা বোধয়
অপূর্ণ ছিলো আমি বলাতে বুঝি পূর্ণ হল।
পরে বুঝলাম কথাটা তা না। আমার মুখ দিয়া যেটা সজোড়ে বের
হয়া গেছে সে সব্দটা হচ্ছে
বকুল....
কেমনে বের হইলো বুঝলামনা।
কনে নিয়া ফিরলাম। আমি রইলাম, কলিগকে ভরসা দিতে হবে না.?বাসর তো সাঁজানো আছে।
থাকবো তিন জনে কত আশা মনে মনে, কলিগকে ভরসা তো দিতে হবে।
রাতে খাওয়ার পরে কলগ নিয়ে গিয়ে এক রোমে,
কলিগ : আপনার বিচানা এই রোম, শুয়ে পরুন
আমি : (হতবাক হয়ে) কেন বাসর ঘর?
কলিগ : সেটা সাজানো আছে।
আমি : আপনি একা একা ভরসা পাবেন.?
কলিগ : একন আর একা নইতো, বউ আছে না.?
আমি : ও.. তাই.?
কলিগ : শুয়ে পরেন, আমি যাই।
এবার বুঝেছি কষ্টের ভাগ পাওয় যায় কিন্তু সুখের ভাগ পাওয়া যায় না।
আসলে সব কিছু যে ভাগ হয়না তা হারে হারে টের পাচ্ছি।
এবার আমি ভরসা হারিয়ে ফেলছি। পকেটের প্যাকেটগুলা বুঝি আর কাজে
লাগল না। একবার ভাবলাম যাই বাসর ঘরে কলিগকে দিয়ে আসি আবার
যে ঘরে আমার থাকতে দিলোনা আমি যাব কোন দঃখে।
কলিগের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে, আসলে ভরসা পাচ্ছে নাকিন পাচ্ছেনা।
নিজের চিন্তায় আসি, প্যাকেটগুলি ভাবলাম জানালা দিয়ে ফেলে দেই,
পকেটে হাত দিয়েও পারলাম না।
কারণ
ভরসা পাচ্ছিলাম না
পকেটে রাখলাম কিন্তু পারলাম না।
কারণ ভরসা পাচ্ছিলাম না।
পকেটেই রাখলাম কিন্তু সারারাত ঘুমাতে পারিনি ভয়ে কেউ যদি পকেটে
হাত মারে।
ভরসা পাচ্ছিলাম না।
আমার মৃত্যু নেই কারণ আমি মানুষ।
আল্লাহ মানুষকে অমর বানিয়েছেন তবে এ দেহের মৃত্যু হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৪