somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

খালেদ সাইফুল্লা
কবে আসবে তুমি ভালোবাসা...আমারও পেতে ইচ্ছে করে তোমার স্পর্শ..ইচ্ছে হয় ভোরের শিশির হয়ে হারিয়ে যাই...মনের জমে থাকা কষ্টগুলো তোমায় বলতে ইচ্ছে হয়...ইচ্ছে হয় তোমার হাতটি ধরে অজানা কে পাড়ি দিতে,বলনা কবে আসবে??

হারিয়ে গেছি এই পথে ..(যৌনকর্মীদের নিয়ে লেখা একটি গল্প)

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাসুদ আখন্দ ভাইয়ের ডকুমেন্টরিটা দেখে গল্পের প্লটটা মাথায় এলো ।ডকুমেন্টরিটির নাম ছিলঃ দাসের রানী ।এই নিয়ে ওনি একটা ছবিও বানাতে চান ।

এক
কুপিটার আলো কমে এসেছে ।আবছা আবছা চোখে ওটার দিকে তাকিয়ে আছে রেশমা ।পাশে একটা লোক নাক ঢেকে ঘুমোচ্ছে ।গরর ..গরর ..ক্রমাগত আওয়াজ ।ঘৃনার চোখে লোকটার দিকে তাকাল সে ।গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি ,ফোলা ফোলা চোখ ,নাকটা খাড়াই বলতে গেলে ।বয়স ৫০এর নিচে হবেনা ।কে জানে রেশমার বাবার বয়সও হয়তো পঞ্চাশ হবেনা ।
দরজায় হঠাত্ শব্দ হয় ।ঠক ! ঠক !
তারপর একটা চড়া গলার আওয়াজ ।
: হারামজাদী ! কাম শেষ অয়ছে ?
রেশমার কথা বলতে ইচ্ছে করেনা ।মহিলার নাম রমেজা ।এই পতিতাপল্লির রানী বলা চলে ।এই মহিলার গলা শুনলেই ওর মুখে এক দলা থুথু চলে আসে ।মনে হয় পুরো মুখ থুথু দিয়ে ছেয়ে ফেলে ।
: অয় !
কথা বলতে কষ্ট হয়।তবু বলে ।মারের ভয়ে বলে । মহিলার গায়ে অশুরের শক্তি ।হাত নয় যেন লোহা ।মারেও নির্দয়ভাবে ।
: দরজা খোল হারামজাদী ।
বাইরের থেকে আবার কথা ভেসে আসে ।
রেশমা উঠে বসে । কুপিটা নিভু নিভু হয়ে এসেছে ।হাতে তুলে নিতেই নিভে যায় ওটা ।একরাশ অন্ধকার ঘিরে ধরে ওকে ।
হাতরে হাতরে দরজার খিল খোলে দেয় ।
: ঘুমাইছে ?
ফিসফিস করে বলে মহিলা ।
: হয় !
অন্যদিকে তাকিয়ে বলে রেশমা ।রমেজার দিকে তাকাতে ওর বড্ড ঘৃনা হয় ।
ওর মাও তো মহিলা ।আহা ! কত দিন দেখেনা মাকে ও ।
সহসা মায়ের জন্য খুব দুঃখ হয় ওর ।মন চায় এক ছুটে মায়ের কাছে চলে যায় ।ঝাপিয়ে পড়ে মায়ের কোলে ।
ততখনে রমেজা চৌকির কাছে চলে গেছে ।কুপিটাও ধরেয়েছে।ঘরটায় দুদ্যলমান আলো ছায়া খেলা করছে ।
চৌকিতে ওপুর হয়ে লোকটা এখনও ঘুমোচ্ছে ।
দরজায় দাড়িয়ে ওদিকে তাকিয়ে থাকে রেশমা ।
রমেজা লোকটার প্যান্ট হাতরে হাতরে দেখে কিছু আছে কিনা ।একটা মানি ব্যাগ বেরোয় ।তাতে দুশো টাকা ।
টাকাটা ট্যাকে গুজে মানি ব্যাগটা দরজার দিকে ছুড়ে মারে রমেজা ।
: শালা খচ্চর !
টাকা কম থাকায় মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যায় ।
: ঐ মিয়া উডো !ভোর অয়ে গেছে !হালা বুইড়া !

লোকটা নড়েনা ।তেমনি বেঘোর ভাবে ঘুমোতে থাকে ।
: মইরা গেল নাহি ?
ভয়ে ভয়ে বলে রেশমা ।
: মরা বাইর করতেছি ।কুত্তার বাচ্ছা খাড়াইয়া দেহছ কি ?লাডিডা আন !

আবার মেজাজ খারাপ হয়ে রেশমার ।রমেজা যখন তখন ওর বাবা মাকে তুলে গালি দেয় ।
দরজার একপাশে রাখা লাঠিটা নিয়ে এগিয়ে যায় রেশমা ।
: হারামজাদি এতখন লাগে ? তোর বাপেরে খেদান লাগব খেল নাই ?
এবার আর নিজেকে সামলাতে পারেনা রেশমা ।ঐ পশুটার সাথে ওর বাবার তুলনা ?
যে কিনা তাকে সাড়াটা রাত ক্ষুধার্ত পশুর মত খোবলে খেয়েছে ।আর দ্ধিধা করেনা ও ।হাতের লাঠিটা সজোরে চালিয়ে দেয় রমেজার মাথায় !
রমেজা এলিয়ে পড়ে ।কুপিটা গড়িয়ে পড়ে আলমারিটার কাছে ।কেরোসিন পড়ে মুহুর্তে আগুন ধরে যায় কাপড় গুলোতে ।
ঘটনার আকস্মিকতায় বিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে থাকে রেশমা ।
আগুন জ্বলতে থাকে দাউ দাউ করে ।এ আগুন যেন ওর মনে জমতে থাকা কষ্টের ,যন্ত্রনার বহিঃপ্রকাশ !
দুই
আগুনের আচে সম্বিত্ ফিরে পায় রেশমা ।পালাতে হবে ।এখুনি পালাতে হবে ।এই সুযোগ ।এইই একমাত্র সুযোগ মুক্ত হবার ।মায়ের কোলে ফিরে যাবার ।সচেতন মন বারবার তাগাদা দেয় ওকে ।দ্রুত ঘরে থেকে বেরিয়ে যায় ও ।আরে !লোকটাতো এখনও ঘরে আছে ।রমেজাও ।পুড়ুক !পুড়ে মরুক দুই পাপী ।ছুটতে গিয়েও আবার থমকে দাড়ায় ও ।জানালা দিয়ে ঘরে উকি দেয় ।লোকটার ঘুম বটে ।মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন মায়া হয় ওর ।বাবার সাথে কোথাও মিল আছে ।
ছিঃছিঃ কি ভাবছে ওসব ও । আবার ছুটতে গিয়ে থমকে দাড়ায় ।ঘরে ঢুকে টেনে হিচরে লোকটাকে বের করে আনে ।ঘুম ভেঙ্গে গেছে লোকটার ।অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে লোকটা ওর দিকে ।
রেশমা লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেনা ।ও অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে ।ওর চোখে জমে আছে তখন একরাশ ঘৃনা !

তিন

অবশেষে বাড়ি ফিরে আসে রেশমা ।প্রিয় মায়ের কোলে ।মায়ের বাড়িতে ।তবু কেমন যেন সবকিছু অন্যরকম লাগে ওর ।ঘর থেকে বের হতে পারেনা ও ।ভাল লাগেনা ওর ।সবাই জেনে গেছে ওর কথা ।ও কোথায় ছিল তাও ।সবাই ঠাট্টা মস্করা করে ওকে নিয়ে ।
খেয়াল করে দেখেছে রেশমা ,সে ঠাট্টার আনাচে কানাছে লুকিয়ে থাকে শত সহস্র কাটা ।খুব বিধে ওর কথা কথাগুলো ।কষ্টও হয় খুব ।
ওর জন্য মা বাবা এমনাকি ছোট ভাইটাও স্কুলে যেতে পারছেনা ।
: কিরে দিনে কত করে কামাতি ?
কে জেন বাড়ির পিছন থেকে উচু স্বরে বলে ।
: টাকা পয়সা তো কম না ।মউজ মস্তিউতো খুব ।ফিরলি ক্যান ?
আরেকজন গলা মেলায় ।
মা বাবা কেউ ঘরে নেই ।থাকলেও কিছু করার নেই ।কজনের মুখ আটকাবে ওরা ? কজনকেই বা গালি দিয়ে তাড়িয়ে দিবে ?
ঠোট তির তির করে কাঁপে ওর ।চোখ দিয়ে জল আসেনা ।সত্যিই একটুও জল আসেনা ওর চোখে ।চৈত্রের প্রখর রোদ্রে যেমন খাল বিল শুকিয়ে যায় ,তেমন নির্দয় সমাজের ধিক্কার ধিক্কারে শুকিয়ে গেছে ওর চোখের সব জল ।সে চোখ এখন শুধু বড় বড় হয়ে আশপাশটায় তাকিয়ে থাকে ।একটু ঠাই খোঁজে ।একটু শান্তি খোঁজে ।একটু বাঁচার আশ্রয় খোঁজে ।
সহসা বিছানা থেকে উঠে দাড়ায় রেশমা ।দরাম করে বন্ধ করে দেয় দরজাটা ।
আলনায় রাখা উড়নাটা আর চৌকাঠের কাঠটার দিকে একবার তাকায় ও ।
হ্যা একটা পথ পাওয়া গেছে ।এই পথেই হারিয়ে যাবে ও ।বড় অপরাধ করে ফেলেছে সে সমাজের কাছে ।
তাকে হারিয়ে যেতেই হবে !

সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৬
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×