বৈশ্যিক উষ্ণতা বৃদ্ধি জীবন, স্বাথ্য, সম্পত্তি, সংস্কৃতি, জীবন-জীবিকা, বাসস্থান ও চলাচলসহ সকল প্রকার মানবাধিকারের প্রতি আজ চরম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তেনের ফলে সৃষ্ট অনাবৃষ্টি, খড়া, অতিবৃষ্ট, বন্যা, তাপদাহ, ঝড়, সমুদ্রপৃষ্টের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি কৃষি, খাদ্য ও গবাদি পশু উৎপাদনে প্রভাব ফেলে যা জনসাধারণের জীবন হানি ও জীবন হানির ঝুকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রপৃষ্টে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র ও নদী সংগ্লগ্ন এলাকার জনগনের বাসস্থান থেকে জোড়পূর্বক উচ্ছেদের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে সমুদ্রপৃষ্টে পানির উচ্চতা আরো বেশী বৃদ্ধি পেলে অবস্থা কি হবে তা আর বলার অবকাশ রাখে না।
আমাদের মনে হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কিভাবে মানবাধিকার লংঘিত হতে পারে অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানবাধিকারের সম্পর্ক কি? বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করতে হলে আমাদের প্রথমেই মানবাধিকারের মূল বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হবে। মানবাধিকার হল হল এমন কিছু সহজাত মৌল অধিকার ও স্বাধীনতা যা সকল মানব শিশু আপনা আপনি পাওয়ার অধিকারী। স্থান-কাল-পাত্রভেদে সেসকল অধিকার ও স্বাধীনতার লংঘন প্রতিরোধে বিশ্বের সকল রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহনে দায়বদ্ধ।
সভ্যতা উন্নয়নের সাথে সাথে বিভিন্ন দূষণমূলক ও ধবংসাত্ত্বক কার্যকলাপের ফলে জলবায়ুর যে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে তা থেকে মানব জাতিকে সুরক্ষিত করার জন্য বিংশ্ব শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং স্থানীয় আইন ও বিধিবিধান প্রনীত হয়েছে। কিন্তু এইসব চুক্তি, আইন ও বিধিবিধানে প্রথম দিকে জলবায়ু সুরক্ষাকে মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। পরবর্তিতে বিংশ্ব শতাব্দীর ৭০ এর দশকের শুরুতে সর্বপ্রথম জলবায়ু ও মানবাধিকারের মধ্যে একটি যোগসুত্র আছে বলে বিবেচনা করতে থাকে এবং একপর্যায়ে জলবায়ু সুরক্ষার অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
একই সাথে জীবন, স্বাধীনতা, দাম্পত্য জীবন, স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের মত অন্যান্য মৌলিক মানবাধিকারের মত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জলবায়ুর অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে আরো বেশী বেশী বিবেচনা করতে শুরু করে। কারন মানুষের সকল মানবাধিকারই মূলত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করে। এমন কি ইন্টার-আমেরিকান কমিশন অব হিউম্যান রাইটসও অনেকগুলো মানবাধিকার যে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জলবায়ুর সাথে সম্পর্কযুক্ত তা স্বীকৃতি দিয়েছে।
তাছাড়া, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস এর মতে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সকল মানবাধিকারের প্রতি হুমকি। আবার অ্যাডভাইজারী কাউন্সিল অব জুরিস্ট অব দি আশিয়া-প্যাসিফিক ফোরাম অন ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইন্সটিটিউশনস এর মতানুযায়ী পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষা করা স্বাস্থ্যের অধিকার ও জীবনের অধিকারের মত কনটেম্পোরারি হিউম্যান রাইটস ডক্ট্রিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বস্তুত, সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র, নাগ্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি, নির্যাতনের বিরুদ্ধে চুক্তি এবং শিশু অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি সহ সকল ঘোষণা পত্র ও চুক্তির স্বীকৃত অনেকগুলো মানবাধিকার শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হুমকির সম্মুখীন হয়। তাইত এইসকল ঘোষণা ও চুক্তির সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে প্রত্যেক রাষ্ট্রের দায়িত্ব জল্বায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসকল মানবাধিকার লংঘিত হয় তা প্রতিকারের ব্যবস্থা করা অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জলবায়ু নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:২১